• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ব্যবসায়ের পুঁজি সংগ্রহ : প্রেক্ষিত ই-কমার্স
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: জাহাঙ্গীর আলম শোভন
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-বিজনেস
তথ্যসূত্র:
ই-কমার্স
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ব্যবসায়ের পুঁজি সংগ্রহ : প্রেক্ষিত ই-কমার্স
আপাতত বাংলাদেশের একঝাঁক তরুণ অনলাইনে ব্যবসায় করার জন্য বুদ্ধি-পরামর্শ, সাহায্য-সহযোগিতা ও নানা সেবার পিছে ছুটছেন। এতে দেখা যায়, শুধু ব্যবসায়িক জ্ঞান নয় বরং অনেকেরই ভালো যোগ্যতা, সৃজনশীল ধারণা, গঠনমূলক চিন্তা, উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকলেও শুধু মূলধনের জন্য শুরু করতে পারছেন না। একদিকে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় নেই, অন্যদিকে সরকারি কোনো সহায়তা নেই। তবুও যে একটু আশার আলো ও একটু সম্ভাবনা আছে, সেটা তুলে ধরার জন্যই এই পরামর্শমূলক লেখা।
বিনিয়োগকারী আপনার কাছে কী চাইবে?
প্রথমত, বিনিয়োগকারী চাইবে লাভসহ তার টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। জেনেশুনে কেউ ক্ষতিকর খাতে হাত দেবে না। কথায়, কাজে, কাগজপত্রে এবং বাস্তবতায় সেটা বোঝাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, উদ্যোক্তার সামর্থ্য, সততা, আন্তরিকতা, দক্ষতা ও পরিশ্রম এই পাঁচটি মিলিয়ে মূলত যোগ্যতা। পাঁচ আঙুলে এক হাত। একজন মানুষ সৎ কিন্তু কাজটি করার যোগ্যতা নেই, তাহলে তার সফল হওয়ার কোনো কারণ নেই। আবার সৎ ও যোগ্য হয়েও তিনি অলস অথবা আন্তরিক নন, তাতেও তিনি ব্যর্থ হবেন। আর যদি দক্ষতার অভাব থাকে, তাহলে কাঙিক্ষত সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে। একজন বিনিয়োগকারী কিন্তু আপনার এই বিষয়গুলো খেয়াল করবেন। উল্লিখিত পাঁচটি গুণ দেখাসহ শিক্ষা, ভবিষ্যৎ, ব্যবসায়িক নীতি, অতীত ইতিহাস, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি দেখেন।
তৃতীয়ত, একেবারেই আইনগত বা প্রথাগত কিছু জিনিস বিনিয়োগকারী দেখবেন। যেমন : ০১. আপনার ব্যবসায়টি বৈধ ও দেশে আইনসঙ্গত কি না? ০২. প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন ও কাগজপত্র নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছেন কি না? ০৩. আপনার ব্যবসায়িক ইতিহাস কেমন? আপনার ব্যক্তিগত কোনো সম্পত্তি আছে কি না? ০৪. আপনার ভোটার আইডিসহ ব্যক্তিগত কাগজপত্র, নাগরিকত্ব, স্থায়ী ঠিকানা- এসব ঠিক আছে কি না? ০৫. অন্য কারও সাথে আপনার কোনো ঋণ আছে কি না? থাকলে তা কি পরিমাণ এবং কত দিনের? এর আগে আপনি ঋণখেলাপি ছিলেন কি না?
চতুর্থত, একেবারেই ফোকাল পয়েন্ট, ব্যবসায় করতে গেলে অথবা ই-কমার্সের ক্ষেত্রে আপনার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু ঋণ বা বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য খুব দরকারি। যেমন : ০১. ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সের ধরন ও বয়স, টিন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ও কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন। ০২. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বয়স ও লেনদেনের পরিমাণ। ০৩. ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও তার দলিলপত্র। জমি, ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্র, বীমা, ব্যাংক জমা। ০৪. অফিসের ঠিকানা, অফিসের আকার আকৃতি ও বয়স, অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র। ০৫. কোম্পানির ফোন, মোবাইল, ই-মেইল, স্কাইপি। ০৬. ওয়েবসাইটের মান ও বয়স। ০৭. কর্মীসংখ্যা, তাদের বেতন-কাঠামো। ০৮. ব্যবসায়ের ধরন কী পরিমাণ লেনদেন এবং লাভ হয়। ০৯. ওপরের তথ্যগুলোর সত্যতা প্রমাণের জন্য এরা আরও কিছু তথ্য ও ডকুমেন্টস চায়। ১০. প্রতিটি ব্যবসায়ের ধরন ও বিনিয়োগকারীর পলিসি অনুযায়ী আরও কিছু জিনিস চাইতে পারে।
পঞ্চমত, কিছু কিছু বিনিয়োগকারী শর্ত দিয়ে থাকে : ০১. উচ্চ হারে সুদ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চক্রবৃদ্ধি হারে। ০২. অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা একসাথে বিনিয়োগ না করে ধাপে ধাপে করে থাকেন। ০৩. কখনও কখনও বিনিয়োগকারীরা নগদ অর্থ না দিয়ে নিজেরা জিনিসপত্র কিনে দিয়ে থাকেন। ০৪. কখনও বিনিয়োগ করা অর্থ একেবারে ফেরত না নিয়ে কিসিত্মতে নিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি হয়। ০৫. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা চান, বেশিরভাগ লগ্নী যেন উদ্যোক্তার থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভরসা পান।
উপস্থাপন
০১. বিনিয়োগকারী যে বিষয়গুলো জানতে চান, সেগুলো পরিষ্কার ভাষায় যতটা সম্ভব বিস্তারিত তুলে ধরুন। এর মধ্যে কোনো অস্বচ্ছতা বা ভাসা ভাসা ধারণা যেন না থাকে। ০২. যুক্তি ও তথ্যের আলোকে আপনার ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ যে ভালো, সে ব্যাপারে তুলে ধরুন। নেহায়েত লোকসানে পড়লে সেটা রিকভার করার কী পলিসি রয়েছে সেটাও বিস্তারিত তুলে আনুন। ০৩. আপনি এবং আপনার টিম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করুন। ০৪. বিনিয়োগকারীর শর্তের প্রতি সম্মান দেখান। কোনোটা মানতে আপনি অসমর্থ হলে বুঝিয়ে বলুন। ০৫. বিভিন্ন কনসালট্যান্সি ফার্ম বিনিয়োগ পেতে সাহায্য করে, তাদের সহায়তা নিতে পারেন। ০৬. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি কপি সমসময় হাতের কাছে রাখুন, যেন তৈরি করতে বেশি সময় না লাগে। ০৭. ধাপে ধাপে নেয়া এবং কিসিত্মতে পরিশোধ এসব শর্ত আপনার জন্যও ভালো হতে পারে। ০৮. ফার্ম বড় হলে বিনিয়োগকারীর একজন কনসালট্যান্ট আপনি প্রতিনিধি হিসেবে রাখতেই পারেন। ০৯. সুদের শর্তগুলো ভালোভাবে বুঝে নেবেন, যাতে কোনো মারপ্যাঁচ না থাকে। ১০. সব ধরনের তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের একটি প্রোফাইল বানিয়ে রাখুন, কাজে লাগবে।
বিনিয়োগের সোর্স
০১. প্রথম প্রথম ব্যবসায় বাণিজ্য করতে চাইলে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কথাই ভাবুন। ০২. সেটা সম্ভব না হলে বা আপনার ইচ্ছে না হলে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে কাউকে রাখুন, যিনি বিনিয়োগে সক্ষম। ০৩. বর্তমানে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে থাকে, এদের খোঁজ-খবর নিন। আলাপ-আলোচনা করুন। শর্তাবলী দেখুন। যারা এ ধরনের সার্ভিস নিয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা জানুন। ০৪. আশা, ব্র্যাক, টিএমএসএস, এসএমই ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ দিয়ে থাকে। খোঁজ নিন। সম্ভাবনা যাচাই করুন। ০৫. স্থানীয় বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও আজকাল ঋণ দেয়। আছে সমবায় সমিতিও। এদের কথাও ভাবুন। ০৬. ব্যাংক ই-কমার্সে ঋণ দেয় না কথাটা সত্য, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আপনার ব্যাংক ঋণ পাওয়ার রাস্তা বন্ধ। আপনার পণ্যের জন্য একটা শোরুম নিয়ে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করুন। ই-কমার্স ব্যবসায়ী হলেও তো আপনার একটা আউটলেট থাকতেই পারে। অথবা আপনি একজন শোরুমের মালিক হয়েও অনলাইনে মার্কেটিং বেছে নিতে পারেন। সুতরাং ব্যাংক ঋণের রাস্তা আপনার জন্য বন্ধ নয়। ০৭. সহজ শর্তে স্বল্প সুদে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারেন, যদি আপনার ব্যবসায়টা কৃষিভিত্তিক হয়। ০৮. পলস্নী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন তথা পিকেএসএফ সর্বনিমণ শতকরা ৩ ভাগ সুদে টাকা দেয়। শর্ত হলো- প্রকল্পটি হতে হবে উদ্ভাবনী, যা ইতোপূর্বে হয়নি। ০৯. প্রতিটি ব্যাংকের এসএমই লোন শাখা আছে। আপনার যদি ফিজিক্যাল একটা শোরুম থাকে, তাহলে ব্যাংকের অন্যান্য শর্ত মেনে পেতেও পারেন ৫০ হাজার থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ। ১০. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সব ব্যাংকেরই তুলনামূলক কম সুদে একটি প্রকল্প আছে। নিজেরা একটি দোকান নিয়ে চেষ্টা করুন ঋণ পেতে। বেচাকেনাটা না হয় অনলাইনেই বেশি হবে। যেহেতু তারা দোকান বা পণ্য দেখা ছাড়া ঋণ দেবে না, সুতরাং কী আর করা। আপনি নারী হলে এ ক্ষেত্রে মালিকানাটা একজন নারীর নামেই হবে। তাহলে গ্রামীণ ব্যাংককেও আপনি পাশে পেতে পারেন।
বিনিয়োগ পাওয়ার প্রস্ত্ততি
০১. আগে খোঁজ নিন কোন সংস্থার কী শর্ত। ০২. তারপর আপনার দোকান ও কাগজপত্র সেভাবে সাজান। ০৩. যে প্রতিষ্ঠান থেকে নেবেন, তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। ০৪. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপডেট রাখুন। ০৫. কীভাবে টাকাটা খরচ করবেন, তার একটা ভালো পরিকল্পনা করুন।
লাভজনক প্রতিষ্ঠানের ধারণা
০১. যেহেতু আপনি অন্যের সাহায্য নিয়ে ব্যবসায় করছেন। বাড়তি সতর্ক থাকুন। কারণ একবার ব্যর্থ বা খেলাপি হলে ভবিষ্যতে আর ঋণ পাবেন না। ০২. আমাকে সফল হতেই হবে- এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ করুন। ০৩. প্রতিটি ধাপে বিবেচনার পরিচয় দিন। ০৪. আগেই চিন্তাভাবনা করে কাজে হাত দিন। ০৫. ব্যবসায়ের নৈতিকতা মেনে চলুন
ফিডব্যাক : www.facebook.com/jshovon
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা