লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ই-কমার্সে সেবা নির্বাচন ও উন্নয়ন
ই-কমার্সে পণ্যের পাশাপাশি সঠিকভাবে সেবা নির্বাচন করা এবং এর উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ভুল সেবা ই-কমার্সে সফল হওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। সেবা নির্বাচনের সাথে সাথে সেবার বিশ্লেষণ, সেবা উন্নয়নের ধাপ ইত্যাদি বিষয় ই-কমার্সে সফলতার জন্য জরুরি।
ই-কমার্সে সেবা নির্বাচন
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একজন সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই সঠিক সেবা নির্বাচন এবং তা ক্রেতাদেরকে অফার করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কেননা, ভুল সেবা নির্বাচন করে একদিকে যেমন সফল হওয়া সম্ভব নয়, অন্যদিকে মূল্যবান সময় ও অর্থের অপচয় হয়। পরে দেখা যাবে ভুল পথে হাঁটতে গিয়ে হাঁটার ইচ্ছেটাই চলে যেতে পারে। অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে সেবা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এর ওপরই নির্ভর করে ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়া যাবে না কি না।
আজকে যেসব পণ্য বা সেবা আমরা ভোগ করছি তাদের ৮০ ভাগই আজ থেকে পাঁচ বছর আগের পণ্য বা সেবা থেকে ভিন্ন। ঠিক একই ব্যাপার হবে আজ থেকে পাঁচ বছর পর। তখনকার পণ্য বা সেবার ৮০ শতাংশই হবে আজকের পণ্য বা সেবা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন ভোক্তাদের হাতের নাগালে রয়েছে হাজারো সেবা। তা একজন উদ্যোক্তার জন্য দারুণ সুযোগ। নতুন কিন্তু কার্যকর সেবা বেছে নিয়ে ই-কমার্স বাজারে প্রবেশ করে বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ই-কমার্সে সফলতা নির্ভর করে সেবা পছন্দের দক্ষতার ওপর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কী সেবা বিক্রি করতে চাচ্ছেন তা নিয়ে ভাবা। কোনো একটি সেবা বাজারে নিয়ে আসার আগে সেটা নিয়ে যত বেশি চিন্তাভাবনা করা হবে, সিদ্ধান্ত সফল হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। তাই ভাবতে হবে কীভাবে শুরু করা যায়।
ই-কমার্স সেবা বিশ্লেষণ
কোনো একটি সফল ই-কমার্স সেবার সফলতার জন্য ব্যক্তিগত এবং আবেগিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। একবার কোনো সেবার কথা মাথায় চলে এলে নিজে নিজে সে সেবার বিশ্লেষণ শুরু করে দিতে হবে-
ঙ কী ধরনের সেবা নিজে পছন্দ করেন, উপভোগ করেন এবং তাদের থেকে কী কী সুবিধা পেয়ে থাকেন?
ঙ যে ধরনের সেবা বিক্রি করতে চাচ্ছেন, সেটাকে নিজে পছন্দ করছেন কি?
ঙ নিজে ভাবনার সেবা নিয়ে উত্তেজিত কি না?
ঙ নিজে সেবাটি কিনে ব্যবহার করবেন কি না?
ঙ এই সেবা কি আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব?
ঙ আগামী ১০ বছর এই সেবাটি বাজারে বিক্রি করা যাবে কি?
ঙ এটি কি এমন একটি সেবা, যা বাজারে নিয়ে আসার স্বপ্ন মনের ভেতর লালন করে আসছেন?
ঙ একজন ক্রেতার দৃষ্টিকোণ থেকেও সেবাটিকে বিশ্লেষণ করতে হবে-
ঙ এই সেবাটি ক্রেতাদের জন্য কী কী সুবিধা নিয়ে আসতে যাচ্ছে?
ঙ ক্রেতাদের জীবন বা কাজের ক্ষেত্রে এই সেবা কীভাবে কাজে লাগবে?
ঙ কী ধরনের ক্রেতাদের কাছে সেবাটি বিক্রি করা যাবে?
ঙ এই সেবাটি যারা কিনবেন তাদেরকে কি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন?
চিন্তাভাবনা না করে হুট করে কোনো একটি সেবা বাজারে নিয়ে আসা কাজের কথা নয়। একটা সেবা বাজারে নিয়ে আসার আগে অনেক কিছু ভেবে দেখতে হবে। ভেবে দেখতে হবে, এই সেবা নিয়ে কতদিন কাজ করা যাবে। এই সেবাকে বিদ্যমান অন্যান্য সেবার সাথে সমন্বয় করা কতটা সম্ভব। এই সেবার বাজার বাড়ার সম্ভাবনা বা কতটুকু ইত্যাদি।
সেবা উন্নয়নের ধাপ
সেবা ধারণা : সেবার ধারণার মাধ্যমে একটি সেবা উন্নয়ন শুরু হয়। সেবা উন্নয়নের বাকি ধাপগুলো এটা নিশ্চিত করে, সেবা ধারণা বা বাজারে চলার উপযোগী। শুরুতে সব আইডিয়া বা সেবাই ভালো। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে নানা ধরনের আইডিয়া বা সেবা ধারণা আসতে পারে। সব সেবা ধারণার সোওট (ঝডঙঞ- ঝঃৎবহমঃযং, ডবধশহবংংবং, ঙঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ধহফ ঞযৎবধঃং) অ্যানালাইসিস করে দেখতে হবে। কেননা, যেকোনো সেবার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো থাকবে। এগুলো দেখে সেবা সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা লাভ করা যাবে। বর্তমান বাজারের ধারাটি কেমন সে বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। মানে বর্তমান বাজারে এমন কোনো সেবা আছে কি না? হতে পারে সেবা ধারণাটি অনেক ভালো, কিন্তু বর্তমান বাজারে এটি চলবে কি না ইত্যাদি। এর জন্য বাজার গবেষণা করতে হবে। টার্গেটেড অডিয়েন্সদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। এর মধ্যে তাদের ফিডব্যাকও থাকতে পারে। থাকতে পারে বাজারে আছে এমন সেবার শক্তিশালী বা দুর্বল দিকগুলো কী ইত্যাদি বিষয়। অংশীদার ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া প্রতিযোগীদের সফলতা বা ব্যর্থতার বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে।
সেবা ধারণা যাচাই-বাছাই : সেবা উন্নয়নের এই ধাপে আদর্শ নয় এমন ধারণাগুলোকে বাতিল করে দিতে হবে। কারণ যাই হোক, সমস্যা আছে এমন ধারণাগুলো বাতিল করতে হবে। এই ধাপে আইডিয়া বা সেবা ধারণা নির্বাচন করার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা ঠিক করে দিতে হবে। দেখতে হবে রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) কেমন, ধারণাকে বাজারে নিয়ে আসা কতটা সম্ভব এবং বাজার সম্ভাব্যতাই বা কেমন। এসব প্রশ্নের উত্তর খুবই সতর্কতার সাথে বের করে আনতে হবে। অন্যথায় দেখা যাবে অনেক টাকা, শ্রম ও সময় বিনিয়োগের পর কোনো ধারণা বাতিল করে দিতে হচ্ছে। প্রাথমিক সেবা ধারণাগুলো থেকে বেছে নিতে হবে সেরা ধারণাগুলোকে।
উন্নয়ন ও টেস্টিং : এই ধাপে আইডিয়াগুলোকে বাস্তবে ক্রেতারা কেমন চোখে দেখেন, সে বিষয়ে জানতে হবে। কেননা, নিজেদের অভিমত বা ধারণাই সব কিছু নয়। ক্রেতাদের কাছ থেকে আইডিয়া সম্পর্কে বাস্তব অনেক তথ্য পাওয়া যাবে, যা দিয়ে আইডিয়াটির একটি মোটামুটি ছবি তৈরি করা যাবে। লক্ষ রাখতে হবে, ক্রেতারা ধারণাটি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে কি না? এর কোনো অভাব তাদের মধ্যে আছে কি না? এই ধাপের তথ্য থেকে বোঝা যাবে, সেবা ধারণাগুলোর কোন কোনটি পরের ধাপে যাবে। উন্নয়ন ও টেস্টিং সেবা ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয়।
ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ : ধারণা চূড়ান্ত হওয়ার পর এই ধাপে একটি ব্যবসায় কেসের মাধ্যমে দেখতে হবে ধারণাগুলো লাভজনক হবে কি না। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিস্তারিত বাজারজাতকরণ কৌশল, টার্গেট মার্কেট ও কী ধরনের সেবা পজিশনিং এবং সেবা মিক্স ব্যবহার করা হবে ইত্যাদি বিষয়।
এই বিশ্লেষণে থাকবে- এই সেবার কোনো চাহিদা আছে কি না, মোট ব্যয়ের একটি আনুমানিক হিসাব, ব্রেক ইভেন পয়েন্ট চিহ্নিত করা। সেবা ধারণাগুলো কতটা লাভজনক জানতে হবে।
সেবা উন্নয়ন : নতুন সেবা ধারণা ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হলে প্রটোটাইপ বা লিমিটেড এডিশনের সেবা প্রস্ত্তত করা হয়। এটি করা হয় যেন সেবাটির ডিজাইন, স্পেসিফিকেশন, উৎপাদন পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখা যায় এবং ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহার করে নিজেদের মতামত দিতে পারে, যা পরে এ সেবার আরও উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে সেবা বাজারজাতকরণ : পরীক্ষামূলক বাজারজাতকরণ বা বাজারজাতকরণ পরীক্ষা ক্রেতা পরীক্ষা থেকে আলাদা। এই ধাপে প্রটোটাইপ ডিজাইনের সেবাটি আগে থেকে পরিকল্পিত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় কেমন করে, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
বাজারজাতকরণ ও অন্যান্য পরিকল্পনা : এই পর্যায়ে এসে সেবাটি বাজারে ছাড়ার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেজন্য কীভাবে সেবাটি বাজারজাতকরণ করা হবে এবং তার দাম কত হবে ইত্যাদি বিষয়ও চূড়ান্ত করে নেয়া হয়।
সেবা রিলিজ : সেবা রিলিজের জন্য বিস্তারিত কীভাবে পরিকল্পনা নেয়া হয় এই পর্যায়ে। এখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কখন, কোথায়, কোন কোন টার্গেটেড ক্রেতার কাছে সেবাটি রিলিজ করা হবে। সবশেষে সেবাটি বাজারে কেমন করছে জানার জন্য বাজার থেকে রিভিউ নিতে হয়