লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
প্রকাশ কুমার দাস
মোট লেখা:৫৫
লেখা সম্পর্কিত
গণিতের অলিগলি
দ্রুত গুণ করার একটি কৌশল
৫৩ x ৫৭ = কত?
৪৬ x ৪৪ = কত?
৩১ x ৩৯ = কত?
৬৯ x ৬১ = কত?
১১৭ x ১১৩ = কত?
ধরা যাক, আমাদের বলা হলো ওপরের গুণ অঙ্কগুলো করতে হবে খুব দ্রুত। অর্থাৎ এজন্য প্রতিটি গুণের জন্য আমাদের সময় দেয়া হলো ৩ সেকেন্ড। গুণ করার যে স্বাভাবিক নিয়ম আছে সে নিয়ম অনুসরণ করে মাত্র ৩ সেকেন্ডে তা করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদেরকে একটি কৌশল অনুসরণ করতে হবে। সে কৌশলটাই আমরা এখানে জানার চেষ্টা করব।
ধরা যাক, আমরা প্রথমেই জানতে চাই ৫৩ ৫৭ = কত? প্রকৃতপক্ষে এই গুণের কাজটি আমরা যেভাবেই করি না কেনো, এর গুণফল হবে ৩০২১। প্রশ্ন হচ্ছে, কী করে তা ৩ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে বের করা যায়? লক্ষ করি, গুণফলে রয়েছে চারটি অঙ্ক। প্রথম দুটি অঙ্ক নিয়ে গঠিত হয় ৩০, আর শেষ দুটি অঙ্ক নিয়ে গঠিত হয় ২১। এই দুটি সংখ্যা পাশাপাশি বসালেই আমরাই কাক্সিক্ষত গুণফল ৩০২১ পেয়ে যাব। এখন আমাদের কৌশল জানতে হবে, এই প্রথম দুটি অঙ্ক এবং শেষ দুটি অঙ্ক কী করে দ্রুত বের করা যায়।
লক্ষ করি, আমরা গুণ করতে যাচ্ছি ৫৩-কে ৫৭ দিয়ে। এই সংখ্যা দুটির উভয়ের বামে রয়েছে ৫। এই ৫-এর পরের সংখ্যাটি হচ্ছে ৬। এই ৬ ও ৫-এর গুণফল ৩০। এই ৩০ নির্ণেয় গুণফলের প্রথম দিকে বসবে। আর ৫৩-এর শেষ অঙ্ক ৩ এবং ৫৭-এর শেষ অঙ্ক ৭। এই ৩ ও ৭-এর গুণফল ২১। এই ২১ বসবে নির্ণেয় গুণফলের শেষদিকে। তাহলে আমরা দ্রুত পেয়ে যাব ৫৩ ও ৫৭-এর গুণফল হচ্ছে ৩০২১।
এবার আসি ৪৬-কে ৪৪ দিয়ে গুণফল বের করার কাজে। এই সংখ্যা দুটির উভয়ের প্রথমে রয়েছে ৪। এই ৪ ও এর চেয়ে ১ বেশি অর্থাৎ ৫-এর গুণফল হচ্ছে ২০, যা আমাদের নির্ণেয় গুণফলের প্রথম দিকে বসবে। আবার প্রদত্ত সংখ্যা ৪৪ ও ৪৬-এর শেষ দুটি অঙ্ক হচ্ছে যথাক্রমে ৪ ও ৬, যাদের গুণফল ২৪। এই ২৪ নির্ণেয় গুণফলের শেষদিকে বসবে। তাহলে ৪৪ ও ৪৬-এর গুণফল দাঁড়ায় ২০২৪।
এর পরের কাজটি হচ্ছে ৩১ ও ৩৯-এর গুণফল বের করা। এই গুণফলের প্রথমে বসবে আগের নিয়মে উভয় সংখ্যার প্রথমে থাকা ৩ এবং এর চেয়ে ১ বেশি ৪-এর গুণফল, অর্থাৎ ১২। আর কাক্সিক্ষত গুণফলের শেষ দিকে বসবে প্রদত্ত সংখ্যা দুটির শেষ অঙ্ক ১ ও ৯-এর গুণফল অর্থাৎ ০৯। মনে রাখতে, সব সময় শেষের অঙ্ক দুটির গুণফলকে দুই অঙ্কের আকারে লিখে বসাতে হবে, তাই এখানে ০৯ লিখতে হব। এই ০৯ না লিখে শুধু ৯ লিখলে ভুল হবে। অতএব ১২০৯ হচ্ছে ৩১ ও ৩৯-এর গুণফল। ১২০৯ না লিখে এর জায়গায় ১২৯ লিখলে ভুল হবে।
একইভাবে আমরা যখন ৬৯ ও ৬১-এর গুণফল করতে যাব, তখন ওই গুণফলে বসবে ৬ ও ৭-এর গুণফল, অর্থাৎ ৪২ এবং শেষে বসবে ১ ও ৯-এর গুণফল ০৯। অতএব ৬৯ ও ৬১-এর নির্ণেয় গুণফল হচ্ছে ৪২০৯।
এবার ধরা যাক, গুণফল বের করতে চাই ১১৭ এবং ১১৩-এর গুণফল কত? লক্ষ করি, প্রদত্ত সংখ্যা দুটির প্রথমে রয়েছে ১১। অতএব নির্ণেয় গুণফলের প্রথমে থাকবে ১১ এবং ১২-এর গুণফল, অর্থাৎ ১৩২। আর নির্ণেয় গুণফলের শেষে থাকবে প্রদত্ত সংখ্যা দুটির শেষ অঙ্ক ৩ ও ৭-এর গুণফল, অর্থাৎ ২১। তাহলে ১১৭ ও ১১৩-এর গুণফল আমরা পাই ১৩২২১।
সবশেষ গুণের কাজটি আমরা করেছি তিন অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে। এ ধরনের তিন অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে গুণের কাজটি ৩ সেকেন্ডের মধ্যে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারব। তবে এর চেয়ে বেশি অঙ্কের সংখ্যার বেলায় এই নিয়মে গুণফল বের করার কাজটি দ্রুত করা যাবে না। তাই এ ধরনের সংখ্যার দ্রæত গুণনের কাজটি তিন অঙ্কের সংখ্যার মধ্যে সীমিত রাখব।
এবার লক্ষ করার বিষয় ওপরের নিয়মে দ্রুত গুণফল বের করতে পারব শুধু সেইসব সংখ্যার, যেগুলো নিচে উল্লিখিত শর্ত দুটি পূরণ করে।
প্রথম শর্ত হচ্ছে : যে দুটি সংখ্যার গুণফল বের করতে হবে এই উভয় সংখ্যার একদম শেষে থাকা অঙ্ক দুটির যোগফল সব সময় হতে হবে ১০। যেমন ৫৩ ও ৫৭-এর গুণফল বের করার বেলায় শেষ দুটি অঙ্ক ৩ ও ৭-এর যোগফল হচ্ছে ৩ + ৭ = ১০। আবার ৪৪ ও ৪৬-এর গুণফলের ক্ষেত্রে শেষ দুটি অঙ্কের যোগফল হচ্ছে ৪ + ৬ = ১০। একইভাবে ৩১ ও ৩৯-এর গুণফলের বেলায় শেষ দুটি অঙ্কের যোগফল হচ্ছে ১ + ৯ = ১০। ৬৯ ও ৬১-এর গুণফলের বেলায় শেষ দুটি অঙ্কের যোগফল হচ্ছে ৯ + ১ = ১০। এবং সবশেষ উদাহরণ ১১৭ ও ১১৩-এর গুণফলের বেলায় শেষ দুটি অঙ্কের যোগফল হচ্ছে ৭ + ৩ = ১০।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে : যে দুটি সংখ্যার গুণফল বের করতে হবে, সেগুলোর শেষ অঙ্কটি ছাড়া এর আগে থাকা অঙ্কগুলো বা সংখ্যাগুলো একই হতে হবে। যেমন ৫৩ ও ৫৭ এই সংখ্যা দুটির উভয়ের মধ্যে শেষ অঙ্কটি ছাড়া আগে রয়েছে উভয় সংখ্যায়ই ৫। ৪৪ ও ৪৬-এর গুণনের সময় শেষ অঙ্কের আগের অঙ্ক উভয় সংখ্যার বেলায়ই ৪। ৩১ ও ৩৯-এর গুণনের সময় শেষ অঙ্কের আগে উভয় সংখ্যায়ই রয়েছে ৩। আর ৬৯ ও ৬১-এর গুণনের বেলায় উভয় সংখ্যায়ই শেষ অঙ্কের আগের অঙ্ক ৬। আর ১১৭ ও ১১৩-এর গুণ করার সময় সংখ্যার শেষ অঙ্কের আগের সংখ্যা ১১।
মনে রাখতে হবে, যেসব সংখ্যার গুণনের বেলায় এই দুই শর্ত পূরণ করবে না, সেগুলোর গুণের কাজ এই নিয়মে করা যাবে না।
বোনাস তথ্য
কোন সংখ্যা কত দিয়ে বিভাজ্য
কোনো সংখ্যা ১০ দিয়ে বিভাজ্য হবে যদি সংখ্যাটির শেষে ০ থাকে। ৯ দিয়ে বিভাজ্য হবে যদি সংখ্যাটির সবগুলো অঙ্কের যোগফল ৯ দিয়ে বিভাজ্য হয়। একটি সংখ্যা ৮ দিয়ে বিভাজ্য হবে যদি সংখ্যাটির শেষ তিনটি অঙ্ক ৮ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হয় অথবা শেষ তিনটি অঙ্ক ০ হয়। কোনো সংখ্যা ৬ দিয়ে বিভাজ্য হবে সংখ্যাটি হবে একটি জোর সংখ্যা এবং একই সাথে ৩ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হয়। কোনো সংখ্যা ৫ দিয়ে বিভাজ্য হবে যদি সংখ্যাটির শেষে ০ বা ৫ থাকে। কোনো সংখ্যা ৪ দিয়ে বিভাজ্য হবে যদি সংখ্যাটির শেষে দুটি ০ থাকে, কিংবা শেষ দুটি অঙ্ক ৪ দিয়ে বিভাজ্য হয়। একটি সংখ্যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য হবে যদি সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ৩ দিয়ে বিভাজ্য হয়। আর একটি সংখ্যা ২ দিয়ে বিভাজ্য হবে, যদি সংখ্যাটির শেষে ০, ২, ৪, ৬ অথবা ৮ থাকে