শেখ হাসিনার কণ্ঠে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি শোনার পর সবারই প্রশ্ন- এ দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে? জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কী বোঝাচ্ছেন, তা নিশ্চয়ই আমরা তার কাছ থেকে এক সময় জানবো। এ দেশের প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে সেটি হলো এমন : ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন জনগণের রাষ্ট্র, যার মুখ্য চালিকাশক্তি ডিজিটালপ্রযুক্তি। তথ্যযুগ বা ডিজিটাল যুগ যে নামেই আমরা ডাকি না কেন, কৃষি ও শিল্প যুগের পর মানবসভ্যতার জন্য আসা এ যুগের সার্বিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হিসেবে ডিজিটালপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর জীবনধারা গড়ে তুলে পুরো জাতির জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারের ২০২১ রূপকল্পে বিশ একুশ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। গত ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ শেখ হাসিনা তার দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করার সময় দেশের মানুষের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেন। প্রথম দিকে শেখ হাসিনার এই বক্তব্য কারও কারও সমালোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। কিছু বুদ্ধিজীবী, কমপিউটার শিল্পের লোকজন এমন কথা বলার চেষ্টা করেন যে, প্রসঙ্গটি ইউটোপীয়। রাজনীতিক মাহি বি চৌধুরী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যটিকে ব্যঙ্গ করে তাকে প্রথমে এনালগ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান। কোন কোন বুদ্ধিজীবী বলার চেষ্টা করেছেন, আমরা কি এনালগ বাংলাদেশে আছি যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হবে?
বলা প্রয়োজন, ডিজিটাল বিষয়টি এখন সারা দুনিয়ার প্রবণতা। একটি বিষয়ে তাদের অনুরোধ করবো, তারা যেন অনুগ্রহ করে এই বিষয়টি সম্পর্কে ইন্টারনেটে পরিবেশিত তথ্যাবলী পর্যালোচনা করেন এবং এটি নিশ্চিত করেন যে, একটি ডিজিটাল দুনিয়া গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া সারা বিশ্বে কি অবিশ্বাস্য গতিতে বিকশিত হচ্ছে।
অন্যদিকে যারা মনে করছেন এটি শুধু আইসিটির একটি বিষয়, তাদের জন্যও বলা দরকার, এটি একটি আন্দোলনের নাম- ডিজিটাল লাইফস্টাইল গড়ে তোলার কর্মসূচী। এটি এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর- যাদের সাথে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার মিল রয়েছে তাদের জন্য এই কর্মসূচী। উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ এই প্রতিবেদক এই কর্মসূচীটি হংকং-এর অ্যাসোসিও সামিটে উপস্থাপন করেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সময়ে শেখ হাসিনা দেশটিকে একুশ শতকের উপযুক্ত করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করেন। তার শাসনকালের সময়টিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর সেই ধারা সম্পূর্ণ সত্মব্ধ হয়ে যায়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী নতুন সরকার জনগণের কাছ থেকে যে রায় পেয়েছে, তাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী বাসত্মবায়ন করা কঠিন কোনো কাজ নয়। অন্য অর্থে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। এই বিজয়ের ম্যান্ডেট হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। একাত্তরের পর আমরা যে সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি, এবার তাকে সফল করতে হবে।
তিনটি অগ্রাধিকার : ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীতে অমত্মর্ভুক্ত আছে আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনেক বিষয়। এসবের মাঝ থেকে শেখ হাসিনার চলতি মেয়াদের সরকারের জন্য তিনটি অগ্রাধিকার বেছে নেয়া যায়। প্রথম অগ্রাধিকারটি হলো ডিজিটাল সরকার, পেপারলেস গভর্নমেন্ট। এই সরকারের দ্বিতীয় অগ্রাধিকারটি হলো ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা। এই কর্মসূচীতে শুধু বাধ্যতামূলক কমপিউটার শিক্ষাই অমত্মর্ভুক্ত নয়, এতে আছে শিশুশ্রেণী থেকে সণাতকোত্তর পর্যমত্ম সব পাঠ্য বিষয়কে ইন্টারেকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারে পরিণত করা। প্রতি শিশুর হাতে কমপিউটার এবং প্রতি ঘরে ইন্টারনেট এ কর্মসূচীর আওতায় থাকবে। তৃতীয় অগ্রাধিকারটি হলো ডিজিটাল কমার্স। ব্যবসায়-বাণিজ্য-শিল্প সর্বত্র লেনদেন থেকে যন্ত্রপাতিতে থাকতে হবে ডিজিটাল পদ্ধতি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীর সম্ভাব্য রূপরেখা
০১. জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য রাষ্ট্র তথা সরকারকে পরিপূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে। জনগণ রাষ্ট্রকে কর দেবে, কিন্তু রাষ্ট্র জনগণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান বা চিকিৎসার মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাবে না, এটি হতে পারে না। টাকার অঙ্কে লাভ-লোকসানের সরকার এবং মানুষের মৌলিক চাহিদার বাণিজ্যিকীকরণ করা থেকে এই রাষ্ট্রের গতি ফেরাতে হবে। রাষ্ট্র জনগণের ন্যূনতম চিকিৎসা, আশ্রয়, পরিধেয়, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। রাষ্ট্রকে সব নাগরিকের জন্য সমসুযোগের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি একচেটিয়া ধনিক ও লুটেরা শ্রেণীর অপকর্ম থেকে রক্ষা করতে হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য নিরসন করার পাশাপাশি অভ্যমত্মরীণ ও আমত্মর্জাতিক ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে হবে। রাষ্ট্রকে অক্ষম, কর্মহীন, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক, যুদ্ধাহত, বিধবা ও সমাজের সব সত্মরের অনগ্রসর অংশকে ন্যূনতম জীবনধারণের উপযোগী ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাছে ডিজিটালপ্রযুক্তি সহজলভ্যভাবে পৌঁছাতে হবে।
০২. রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি হবে বৈষম্যহীন ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী, ছাত্র, নিমণবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অনুকূলের। ডিজিটাল মাধ্যমসহ সব মিডিয়ায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই সংক্রামত্ম সব তথ্য প্রকাশ করতে হবে, যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণ অনায়াসে পাবে।
০৩. রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব জনগণের ওপর ন্যসত্ম করার জন্য একটি কার্যকর ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় সরকারের সব সত্মরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়েই দেশটি পরিচালিত হতে হবে। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার থাকতে হবে। জাতীয় সংসদই একমাত্র আইন প্রণয়ন করবে এবং সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে সরকার গঠিত হতে হবে। এর সাথে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা হিসেবে জেলা-নগর সরকার, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ থাকতে হবে। এছাড়া জাতীয় সংসদকে সহায়তা ও পরামর্শ দানের জন্য পেশাজীবীদের নির্বাচিত একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। দেশের জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধীনে থেকে কাজ করবে ও জনগণকে সেবা দিতে হবে। সমগ্র সরকারি ব্যবস্থাটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করবে। দেশটি পুরোপুরিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে এবং এর সব কর্মকান্ড এমনভাবে পরিচালিত হবে যে, জনগণ রাষ্ট্রীয় সব কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নিতে পারবে এবং রাষ্ট্রীয় সব তথ্যে জনগণের অবাধ প্রবেশাধিকার থাকতে পারবে। প্রশাসনকে ফাইলনির্ভর প্রচলিত পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হবে। প্রশাসনের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হতে হবে। সরকারকে হতে হবে ডিজিটাল সরকার। জনগণ ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে যাতে সরকারের সাথে ইন্টারেকটিভ প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনায় অংশ নিতে পারে ও মতামত দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
০৪. দেশের ভূমি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। ভূমির মালিকানা ব্যবস্থার সংস্কার করে ভূমিহীন ও গরিব মানুষদের ভূমির মালিকানা দিতে হবে। ভূমির অপব্যবহার বা যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করে পরিকল্পিত উপায়ে ভূমি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি সংক্রামত্ম সব তথ্য, মালিকানা ও নিবন্ধন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে হবে। কৃষিকে একটি অত্যমত্ম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করে এই খাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিতে হবে। উচ্চ ফলনশীল শস্য উৎপাদনের জন্য উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সার-বীজ-কীটনাশক ন্যায্য/ভর্তুকি মূল্যে পাবার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি অর্থকরী ও রফতানিমুখী কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে হবে। কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের সব কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। জমির ব্যবহার সর্বোচ্চ করার জন্য সমবায়-সামাজিক পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হবে। কৃষিখাতের গবেষণায় সরকারকে অন্যতম অগ্রাধিকার দিতে হবে। ধান-সবজিসহ খাদ্য, ফলমূল, মাছ-হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু এবং অর্থকরী-রফতানিমুখী কৃষিপণ্যের জন্য ব্যাপকহারে গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণার ফলকে যথাশিগগির মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে। বিল-জলাশয়ের বিদ্যমান ইজারাপ্রথা বাতিল করে সমাজবদ্ধতার মাধ্যমে বিল-জলাশয়গুলোতে সামাজিকভাবে মাছ চাষ করতে হবে। কোনোভাবেই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। এজন্য যথাযথ পর্যায়ে মাছ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে হবে। এসব বিষয়ের সব তথ্য অনলাইনে পাওয়ার যোগ্য হতে হবে।
০৫. দেশে ইংরেজি-বাংলা-মাদ্রাসা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে একই ধারার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকতে হবে এবং শিশুশ্রেণী থেকে কমপিউটারসহ অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ করার ব্যবস্থাসহ কমপিউটারকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল যুগ বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব হবে। দেশের প্রতিটি শিশুর হাতে পর্যায়ক্রমে কমপিউটার তুলে দিতে হবে। প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিতে হবে স্বল্প বা বিনামূল্যের দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা থেকে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে প্রবেশ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
০৬. সামরিক, আধা সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। এই দেশের সীমারেখা, ধনসম্পদসহ সব কিছুর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হতে হবে প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা বিধান করা। একই সাথে রাষ্ট্রকে ব্যক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে। নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়টি অনলাইন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
০৭. প্রচলিত আইনসমূহ পরিবর্তন করতে হবে এবং নতুন আইনসমূহ ডিজিটাল বাংলাদেশ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা চিমত্মা করেই প্রণীত হতে হবে। রাষ্ট্র ডিজিটাল ডাটা সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে, ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ করবে এবং মেধাসম্পদ সুরক্ষার জন্য কার্যকর আইন প্রণয়নসহ প্রয়োগ করবে। পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট নতুন ধরনের অপরাধ, সাইবার অপরাধ, সাইবার কমিউনিকেশন, অনলাইন আদানপ্রদান, নিউজ মিডিয়া, ডিজিটাল কমার্স, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, ডিজিটালপ্রযুক্তি এবং মেধাসম্পদ ইত্যাদি বিষয়কে পর্যালোচনা করে অপরাধ সংক্রামত্ম ফৌজদারি কার্যবিধিসহ অন্যান্য আইন পরিবর্তন করতে হবে। অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজিটালসহ নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনমতো বায়োমেট্রিক্স, জিন পরীক্ষা, অপরাধীর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম, অপরাধীর ডাটাবেজ তৈরি করা ছাড়াও বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করতে হবে। আইনসমূহ অনলাইনে পাবার পাশাপাশি, ডিএলআর ও অন্যান্য আইন প্রকাশনা ডিজিটাল ও অনলাইনে পাওয়ার যোগ্য করতে হবে। বিচারপ্রার্থী অনলাইনে বিচার প্রার্থনা করার পাশাপাশি তার মামলা কোথায় কী অবস্থায় আছে, তা যেন অনলাইনে জানতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আইনজীবীরা অনলাইনে তাদের বক্তব্য পেশ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের সহায়তায় বাদী-বিবাদীর বক্তব্য বা সাক্ষ্য নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
০৮. নিউ ইকোনমি বা নলেজ ইকোনমি ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। এটি বিদ্যমান পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে প্রতিস্থাপিত করবে। নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি পুঁজিবাদী হবে না, আবার পুরোপুরি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মতো সরকার নিয়ন্ত্রিতও হবে না। অর্থনীতি প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করলেও প্রয়োজনে সরকার অর্থনীতির ক্ষেত্রবিশেষে হসত্মক্ষেপ করতে পারবে। এতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা থাকবে, তবে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই জনগণের অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে বিকশিত হতে হবে। সরকার বেসরকারি খাতের কাছে লাভজনক নয় অথচ জনকল্যাণমূলক, এমন খাতে সরাসরি বা বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ করবে। রফতানি, জনকল্যাণমূলক, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও কৃষিসহ জরুরি সেবাখাতে রাষ্ট্রকে প্রয়োজনমতো ভর্তুকি দিতে হবে। অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অবশ্যই দুই ডিজিটের বা শতকরা ১০ ভাগের বেশি করতে হবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় দুই হাজার ডলারে উন্নীত করতে হবে। ধীরে ধীরে জিডিপির বৃহৎ অংশ মেধাজাত সম্পদ থেকে উৎপন্ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিসহ প্রযুক্তিপণ্য ও সেবা, কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য, গার্মেন্টস এবং সেবাখাতের রফতানিকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে এসব খাতে অর্থের যোগান দিতে হবে এবং রফতানি সহায়তাও করতে হবে। ব্যবসায় বাণিজ্য হবে ডিজিটাল কমার্স। বাণিজ্যিক লেনদেন ও যোগাযোগ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। শিল্প কলকারখানায় প্রয়োগ করতে হবে ডিজিটালপ্রযুক্তি।
০৯. বাংলাদেশের শিল্পসমূহ কৃষিভিত্তিক, ভোক্তা বা লাইফস্টাইলভিত্তিক এবং জ্ঞানভিত্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রধানতম উদ্দেশ্য হবে দেশের কৃষিসম্পদের উন্নয়ন, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, দেশবাসীর খাদ্যের যোগান দেয়া এবং উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য রফতানি করা। ভোক্তা বা লাইফস্টাইলভিত্তিক শিল্প মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন, জীবনযাপনের মান বাড়ানো এবং সমৃদ্ধি ও সহায়তার জন্য গড়ে উঠবে। জ্ঞানভিত্তিক শিল্প ও সেবার ভিত্তি হবে মেধাভিত্তিক। পূর্বোল্লিখিত খাতসমূহে প্রযুক্তি সরবরাহ, উচ্চতর প্রযুক্তির জন্য গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি রোধ ছাড়াও রফতানি আয় এই খাতের অন্যতম লক্ষ্য হবে। শিল্প কারখানাকে রাজধানী বা মেট্রোসিটির বদলে জেলা, উপজেলা এবং গ্রামে স্থাপন করতে হবে। কৃষি ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপনে গ্রামই হবে আদর্শ স্থান। দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্য গ্রামেই উৎপাদিত হবে। প্রতি দশ হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্ষুদ্র শিল্প প্লট থাকতে হবে। উপজেলা ও জেলায় একটি শিল্প এলাকা থাকতে হবে।
সরকারকে শিল্পখাতে ব্যাপক সহায়তা দিতে হবে। সরকার শিল্পের বিকাশের অনুকূল শিল্পনীতি থাকা ছাড়াও শিল্প স্থাপনে জমি, সরঞ্জামাদি এবং অর্থের যোগান দিতে হবে। দেশে উপযুক্ত স্থানে হাইটেক পার্ক, শিল্প পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, গার্মেন্টস পল্লী, চামড়া পল্লী ইত্যাদি স্থাপন করতে হবে। ভেনচার ক্যাপিটাল ও ইক্যুইটি এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে রফতানি সহায়তা ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা তহবিল গড়ে তুলে সরাসরি উদ্যোক্তাকে সহায়তা করতে হবে।
১০. বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত, শোষিত, দরিদ্র জনগণের পক্ষে থাকবে। একই সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ইউনিয়ন বা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দিতে হবে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মাঝে আমত্মঃযাতায়াত এবং তথ্যপ্রযুক্তিগত যোগাযোগকে সুদৃঢ় ও সম্প্রসারিত করতে হবে। আঞ্চলিক ও আমত্মর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই দেশকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে । আমত্মর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রহণ ও প্রদান করতে হবে।
১১. দেশের গণবাহন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাকে দ্রুতগতির, আরামদায়ক, নিরাপদ এবং স্বল্পব্যয়ী করতে হবে। জাতীয় রুটে দ্রুতগামী ট্রেন সার্ভিস চালু করার পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরীতে পরিকল্পিত নগর রেল, চক্রাকার রেল, উপশহর রেল, আকাশ রেল বা পাতাল রেল স্থাপন করতে হবে। ঢাকাসহ বড় বড় মহানগরীতে ক্রসরোড, লেবেল ক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার-সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ করতে হবে। সিগন্যালিংসহ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কমপিউটার নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। সারাদেশে জাতীয় সড়ক ব্যবস্থাকে প্রশসত্ম, আধুনিক ও নিরাপদ করার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের, আঞ্চলিক মহাসড়ক নেটওয়ার্ককে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করতে হবে। যেসব এলাকায় স্থায়ী সড়ক নির্মাণ করা যাবে না, সেসব জায়গায় ডুবোসড়ক নির্মাণ করতে হবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌপথকে শুধু নাব্য করা হবে না, এতে আরামদায়ক নৌযান চালু করাসহ স্পিডবোট, সিট্রাক ও হোভার ক্রাফ্টসহ দ্রুতগামী যানবাহন চালু করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যমত্মরীণ, আঞ্চলিক ও আমত্মর্জাতিক আকাশপথে চলাচল সুসংহত, উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। সব গণবাহনের সময়সূচী ও চলাচলের তথ্য, বুকিং, অবস্থান ইন্টারনেটে সর্বক্ষণিকভাবে পাওয়া যেতে হবে।
১২. শাসনতন্ত্রের গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক ধারাসমূহ সংশোধন করতে হবে এবং বিচার বিভাগ, কর্ম কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলসমূহ বিধিবদ্ধ ও জবাবদিহিমূলকভাবে স্বচ্ছতাসহ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। এসব ব্যবস্থার সব তথ্য জনগণের কাছে পাওয়ার উপযোগী করার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। সব রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও রাজনীতিকদের রাজনৈতিক জীবনাচার সংক্রামত্ম সব তথ্য উন্মুক্তভাবে সব জনগণের জন্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১৩. রাষ্ট্রকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালির সংস্কৃতিসহ দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি রক্ষার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাল দুনিয়াতে রাষ্ট্র ভাষাসহ বাংলাদেশের সব ভাষার প্রচার, প্রকাশ ও বিকাশসহ বাঙালি ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সার্বিক সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রকে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা ছাড়াও ডিজিটাল প্রকাশনাকে সর্বোৎভাবে উৎসাহিত ও সহায়তা করতে হবে।
দেশবাসী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ভাববে ও তারা ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচী বাসত্মবায়ন করবে। এর ফলে দেশটি প্রথমে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ ও পরে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপামত্মরিত হবে।
‘ই-গভর্নেন্স চালু হলে দুর্নীতির ফাঁকফোকর বন্ধ হয়ে যাবে’
নূহ-উল-আলম লেনিন
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং মানুষের মেধা-মননের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা হোক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক, দুর্নীতি দমন হোক, শিক্ষা-দীক্ষার উন্নয়ন হোক, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হোক- অর্থাৎ জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে বিজ্ঞানের সর্বশেষ অবদান অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি স্পর্শ করেনি। সুতরাং বিশ্বের এবং আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা চিমত্মা করেছি যে, আমাদের দেশের সামগ্রিক বিকাশ এবং উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির মতো একটি হাতিয়ারের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।
আমাদের দেশে দুর্নীতি সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। আমরা মনে করি, ভূমিরেকর্ড থেকে শুরু করে সরকারি সব অফিস আদালতের সর্বক্ষেত্রে যদি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় অর্থাৎ যদি ই-গভর্নেন্স চালু করা যায়, তাহলে দুর্নীতির ফাঁকফোকর বন্ধ হয়ে যাবে, সব কিছুতে স্বচ্ছতা আসবে। এবং জনগণের তথ্য জানার অধিকার অবারিত হবে। দুর্নীতি দূর করার একটি প্রধানতম হাতিয়ার হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।
বর্তমানে সফটওয়্যার শিল্পটি একটি প্রধান শিল্পে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ হতে পারে সফটওয়্যার রফতানির একটি অন্যতম প্রধান দেশ। আমাদের দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর মেধা এবং মনন যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা সফটওয়্যার রফতানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে, মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে, সে প্রত্যাশা পূরণে আমরা শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। আমরা এমন কোনো কর্মসূচী নেইনি, যা বাসত্মবায়নযোগ্য নয়। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যমত্ম আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় যে কাজের সূচনা করেছিলাম, সেটা দিয়ে যথারীতি একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এখন আরো উন্নতি হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য কিংবা মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য যা যা করণীয়, তা আমরা করব। আমরা পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমপিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করব এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদিও দিব।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণাটি তরুণ প্রজন্মকে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করেছে। আমার জানামতে, অনেক তরুণেরই এই নির্বাচনে ‘না’ ভোট দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমাদের ইশতেহারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণাটির কারণে এরা এদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে আমাদেরকে ভোট দিয়েছে।‘বেসরকারি খাতের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে’
হাবিবুল্লাহ এন. করিম
সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার ইনফর্মেশন সার্ভিসেস
বাংলাদেশে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো। আশা করি অতীতের সরকারগুলো যে ভুলগুলো করেছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন সরকার একটি যুগোপযোগী সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যকরভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে। সেই সাথে অতীতের সরকারগুলোর মতো আইসিটি যেন অবহেলিত না হয়, সেজন্য নতুন সরকারকে আইসিটিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করে একে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে।
দেশের বেসরকারি খাত সবসময়ই এগিয়ে আসে নতুন কিছু করে দেখানোর জন্য। কিন্তু সরকার এ খাতে সেভাবে এগিয়ে আসেনি। সরকার যদি এ খাতে আরো সদয় হতো, তাহলে এ খাতকে আমরা আরো ছয়-সাত গুণ বেশি কার্যকর করতে পারতাম। একসময় আইসিটিতে মানুষের যে আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে অনেকাংশেই স্তিমিত হয়ে যায়। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। এর একটি কারণ হলো আমাদের নিজস্ব পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এজন্য আমাদের অতীত সরকারগুলোই অনেকাংশে দায়ী। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বেসরকারি খাত এই আইসিটিতে যথেষ্ট উপযুক্ততার পরিচয় দিতে পারেনি।
সফটওয়্যার শিল্পে বেসরকারি খাতের অবদানকে উন্নত করতে এজন্য সবার আগে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। সরকারি অনুদান বাড়াতে হবে। দেশে সফটওয়্যারের চাহিদা বাড়াতে হবে, যাতে দেশী সফটওয়্যার বিক্রি বাড়ে। এজন্য আমাদের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন করতে হবে। এই উন্নয়নগুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হবে সরকারি পর্যায়ে।
সফটওয়্যারের বেসরকারি খাতকে উন্নত করার জন্য কালিয়াকৈরে যে হাইটেক পার্ক এবং মহাখালীতে যে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কাজ থেমে আছে প্রথমেই এ দুটোর অতিসত্বর বাস্তবায়ন করা। প্রায় দশ বছর ধরে এগুলো ফেলে রাখা হয়েছে, যা ঠিক হয়নি। এসব পার্কের উন্নয়ন এই শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।
আইসিটি খাতের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রধানত সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য সরকারের কিছু নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। যেমন কোনো দেশী প্রতিষ্ঠান বিদেশী সফটওয়্যার কিনতে পারবে না। দেশী সফটওয়্যার কিনলে ইনসেনটিভ দেয়া ইত্যাদি। এসব কাজে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমেরিকা, জার্মানি, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সরকার দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পোন্নয়নে এভাবে কাজ করছে। সেই সাথে একবার শুরু করে ফ্রি মার্কেট ইকোনমির কথা বলে বন্ধ করা যাবে না।
ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্পগুলো দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যেই এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু হাতে নিলেই হবে না, দ্রুততার সাথে এসব প্রকল্প সবার জন্য ছেড়ে দিতে হবে। আর দেশের মানুষ দিয়েই এ ধরনের সব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব। দেশের মানুষ দিয়েই কাজ করা যায়, এমন দিকনির্দেশনা নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন
বিভাগীয় প্রধান, কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশ
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকারকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধ মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে। এই মানবসম্পদকে যথোপযুক্ত কাঠামোতে উন্নীত করতে হলে আমাদের আইটি সার্ভিসগুলোকে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে পরিবর্তন দরকার। অর্থাৎ বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সার্ভিস চালু করতে হবে। তাহলে সরকারের বিভিন্ন খাতে এক ধরনের মোটিভেশন আসবে। এর প্রভাব পড়বে আমাদের তরুণ সমাজের ওপরে। তরুণ সমাজ এসব সার্ভিসে মোটিভেটেড হলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির গুরুত্ব বেড়ে যাবে। ফলে একদিকে তরুণরা আইসিটি বিষয়ক পড়াশুনায় আগ্রহী হয়ে উঠবে, অন্যদিকে বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মেধাসম্পন্ন তরুণরা প্রতিযোগিতা করে প্রকৃত মেধাবীরা সরকারের উচ্চপদে চাকরি পাবে। আর এর গুরুত্ব বেড়ে যাবার ফলে যারা এমন চাকরি পাবে না তারাও এই বিষয়কে খুব গুরুত্বের সাথে নিয়ে ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা পাবে।
বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস এখনও বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের স্বপ্ন। তরুণরা এখনও চায় এমন কোনো সিভিল সার্ভিস, যাতে সরকারকে সেবা দেয়া যায়। যে কারণে বিসিএস পরীক্ষায় একটা বিশাল এবং দক্ষ জনবল তৈরি হয়। সুতরাং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সার্ভিসগুলো যদি বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস করা যায়, তাহলে আপনাআপনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির জন্য মানুষ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। যার ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয়ে ছাত্র সঙ্কট দূর হবে। সেই সাথে মেধাসম্পন্ন ছাত্ররাই এসব বিষয়ে পড়াশোনা করতে আসবে। তখন ছাত্রদের স্বপ্ন থাকবে বাংলাদেশের ক্যাডার সার্ভিসে কাজ করার। এটি সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে। যার ফলে তরুণদেরও সরকার মোটিভেট করতে পারবে যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির যেকোনো বিষয়ে কর্মজীবনে চাহিদা আছে।
আরেকটি কাজ নতুন সরকারকে করতে হবে তা হচ্ছে, আমাদের দেশের নেটওয়র্কিং অবকাঠামোতে গুণগত এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনা দরকার। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সংস্পর্শে থেকে আমার মনে হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে দক্ষ জনবলের পাশাপাশি হাইস্পিড নেটওয়ার্কিং অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। অবকাঠামো বলতে দক্ষতাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা জানি, আমাদের ফাইবার অপটিকের ইন্টারনেট লাইন আছে। আরো একটি ফাইবার অপটিক্সের ইন্টারনেট লাইন নেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। কিন্তু এই দ্রুতগতিসম্পন্ন লাইন যথাযথ দক্ষতার অভাবে এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। যেমন ১০ জিবিপিএস কানেকশন লাইন থাকলেও দক্ষতার অভাবে ২ জিবিপিএসের বেশি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
আমরা যদি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে চাই তাহলে আমাদেরকে তার একটি মডেল তৈরি করতে হবে যে কেমন ডিজিটাল বাংলাদেশকে আমরা চাই। সেই মডেলে আমাদের পরিকল্পনাগুলোর ছকে দেখাতে হবে যে, প্রযুক্তিগত কী কী উন্নয়ন আমরা চাই। সেসব উন্নতি বাস্তবায়নে আমাদের কী কী কাজ করতে হবে। বর্তমান সময়ের পরিকল্পনা ছাড়াও ভবিষ্যতের জন্য আমরা কী কী উদ্যোগ নিতে পারি এইসব ঠিক করে রাখতে হবে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। পুরো পরিকল্পনাতে বছর অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা বা অ্যাকশন প্ল্যান নির্ধারণ করতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
‘নতুন সরকারের কাজই প্রমাণ করবে এরা কী ধরনের ডিজিটাল বাংলাদেশ চায়’
রেজা সেলিম
প্রকল্প পরিচালক, আমাদের গ্রাম
নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে এলো। সুশীল সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষার কমতি নেই। সুশীল সমাজের বড় ভূমিকা ‘ওয়াচ ডগ’ হিসেবে। আইসিটিতে তো বাংলাদেশে কী পরিমাণে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই।
নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার আমি দেখেছি। এই ইশতেহার যে কতটুকু পালন করা হয়, তা অতীতে সবাই দেখেছে। এ ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। বড় দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কথাবার্তা এসেছে। আর বিএনপি গতানুগতিক কথাবার্তা বলেছে। সেখানে নির্দিষ্ট করে কোনো কথা বলা হয়নি। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বেশ জোর দিয়ে বলেছে। নির্বাচনের পরও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি আরো জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে। তাদের ইশতেহারে তারা ২০১১, ২০১৩ এবং ২০২১ সালকে টার্গেট করে প্রযুক্তির দিক থেকে কিছু উন্নয়নের কথা বলেছে। তবে এই ২০২১ সালের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়মত্মী কালের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে তার সাথে ২০১৫ সালের জাতিসংঘের সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা এর সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এখন এই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মকান্ডই বলে দেবে। তবে তারা তাদের অঙ্গীকার ঠিকমতো পালন করতে পারলে আইসিটিতে দেশ এগিয়ে যাবে তা বলা যায়।
অতীতে সরকার বাংলাদেশের আইসিটি থেকে যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চেয়েছিল তাতে তাদের কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল। সরকার মনে করে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়াই তাদের কাজ। কিন্তু এটা চিন্তা করে না যে, লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলে তার জন্য পরিকল্পনা দরকার। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে তবেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়। এসব খাতে সরকার কোনো অনুদান বা সহায়তা রাখেনি। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সফটওয়্যার বিদেশের বাজারে রফতানি করা যাচ্ছে না। এ তো গেল বৈদেশিক রফতানি পর্যায়ে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাত। শুধু রফতানিভিত্তিক চিন্তা না করে অভ্যন্তরীণ বাজারে সফটওয়্যার বিক্রি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমাদের আইসিটি বাজারের ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। আমাদের দেশেই এখন প্রতিবছর প্রচুর সফটওয়্যারের চাহিদা আছে। অভ্যন্তরীণ এসব চাহিদা দেশীয়ভাবেই পূরণ করা সম্ভব। দেশে বিদেশী সফটওয়্যার ব্যবহার না করে দেশীয় সফটওয়্যারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশেই এখন অনেক মানসম্পন্ন সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। শুধু প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা।
‘দূরত্বকে জয় করে সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্যই ই-গভর্নেন্স’
আনীর চৌধুরী
পলিসি অ্যাডভাইজার, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
ই-গভর্নেন্স ধারণা বাংলাদেশে নতুন নয়। এত বেশি জনসংখ্যার দেশে ই-গভর্নেন্স অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। ই-গভর্নেন্সের প্রথম তাগিদ হচ্ছে সার্ভিস ডেলিভারি টু সিটিজেন এবং দ্বিতীয় তাগিদ হচ্ছে সরকারের সার্বিক কর্মকান্ডের অটোমেশন। আইসিটির সর্বোত্তর ব্যবহারের মাধ্যমে এ দুটি কাজ সম্পন্ন করার ধারণাই ই-গভর্নেন্স আমাদের দেয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে, কম খরচে মানুষের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে ই-গভর্নেন্স বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। যাদের সার্ভিস নেয়া সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ, এদের জন্য ই-গভর্নেন্স বিশেষ প্রয়োজন। প্রত্যমত্ম অঞ্চলের মানুষের ‘পুওর অ্যান্ড মার্জিনালাইজড’ জনগোষ্ঠী নানারকম সার্ভিস থেকে বঞ্চিত। এরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সার্ভিস পেতে সমস্যা হয় দূরত্বের কারণে। দূরত্বকে জয় করে সেবা কম সময়ে, কম খরচে সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই জন্ম হয়েছে ই-গভর্নেন্সের। ই-গভর্নেন্সের সুবাদে মানুষ ঝামেলামুক্ত থাকতে পারে, হয়রানিও কম হয়। ই-গভর্নেন্সের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া।
নতুন সরকারকে আইসিটি নিয়ে তিনটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। প্রথমত, আইসিটির সহায়তায় সেবার মান বাড়ানো; দিবতীয়ত, শিক্ষা খাতের সব স্তরে আইসিটি ব্যবহার; তৃতীয়ত, আইসিটি ব্যবসায় খাতে আমরা যাকে আইসিটি আউটসোর্সিং বলি সেটিকে আরো বাড়ানোর ব্যবস্থা করা।
এখন সেবার মান বাড়ানো বলতে কোন কোন সেবায় আইসিটি ব্যবহার করা যাবে, তা নয়। সব সেবাতে কিভাবে আইসিটি ব্যবহার করা যাবে, সে ব্যাপারে চিমত্মা করতে হবে। শিক্ষা খাতে আইসিটির ব্যবহার বলতে যে কমপিউটার দিতেই হবে, খরচ করতেই হবে, তা নয়। ভূগোলের বিভিন্ন বিষয়, অঙ্কুরোদগম ইত্যাদি অ্যানিমেশন করে তা টিভির মাধ্যমে খুব কম খরচেই দেখানো সম্ভব। এতে একদিকে আইসিটির ব্যবহার বাড়ানোও হলো, আবার আমাদের শিক্ষার মানও বাড়লো। আর সবশেষে আউটসোর্সিং বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে দেশীয় বাধা আছে, তা দূর করতে হবে। এজন্য বিদেশী মিশনগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকেই ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই কাজও পাওয়া যাবে, কর্মসংস্থান হবে। আর আইসিটির উন্নয়ন তো আপনাআপনিই হবে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাকে স্বাগত জানাই’
অনন্য রায়হান
নির্বাহী পরিচালক, ডি. নেট
আইসিটির ব্যাপারে বলতে হয় যে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যে বিশেষ চিন্তাভাবনা করেছে এবং আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। তাকে আমি ইতিবাচক মনে করি। এর মধ্যে কিছু কিছু ভালো প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার মধ্যে ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়ন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ই-গভর্নেন্স নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিল। এখন এই প্রকল্পগুলো যদি চালু থাকে বা নতুন সরকার এসে বাতিল না করে এবং আরেকটু সংস্কার করে এর ব্যাপকতা বাড়ায়, তাহলে জনগণের সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ই-গভর্নেন্স পুরোপুরি চালু করা গেলে জনগণের কাজে গতিশীলতা বাড়বে এবং তাদের বিভিন্ন সেবা নিতে কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে। এর জন্য সরকারের প্রশাসনিক আধুনিকায়নের প্রয়োজন। দুইভাবে এর আধুনিকায়ন করতে হবে। এর মধ্যে একটি হয়েছে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো তৈরি এবং মানসিকতার উন্নয়ন।
তথ্যপ্রযুক্তির সাথে শিক্ষা খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে যদি বিনিয়োগ না বাড়ে বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার তাহলে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য খাতের বিনিয়োগই ব্যর্থ হবে। অতীতে বিভিন্ন সময়েও কিন্তু সেটাই দেখা গেছে। ভারত যেখানে সফটওয়্যার রফতানিতে দিবতীয় অবস্থানে রয়েছে সেখানে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে, যার একমাত্র কারণ হয়েছে যুগোপযোগী শিক্ষার অভাব। তাই শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য দ্রুত এবং বৈপ্লবিক কিছু পরিবর্তন করা জরুরি।
নতুন সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের কনসেপ্টকে আমি স্বাগত জানাই। এ ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের জাতীয় উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মিশন ২০১১-এর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের জন্য তথ্যসংরক্ষণ ব্যবস্থা সৃষ্টি, ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্টের অন্যতম উপাদান হতে পারে।
ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com