উত্তরবঙ্গের প্রতি নজর দিন
বাংলাদেশের অবহেলিত জনপদের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাশহর বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাশহরের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে- তা অনেকেই স্বীকার করবেন। বিশেষ করে শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। অথচ রাজশাহী শুধু একটি বিভাগীয় শহরই নয়, বরং একটি শিক্ষানগরীও বটে। অবশ্য এর আলামত খুব একটা চোখে পড়ে না রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া। উত্তরাঞ্চলের এমন দৈন্য অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে শুধু দেশের নীতিনির্ধারক মহলের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আর সদয় দৃষ্টির অভাবে।
সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে প্রেক্ষাপটও বদলাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা উত্তরবঙ্গের অধিবাসীরা মাঝেমধ্যে স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ি কিছু ইতিবাচক সংবাদ দেখে। আর কল্পনায় দেখতে পাই উন্নয়নের সুবাতাস বইছে উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে আইসিটি খাতে।
আমার প্রিয় পত্রিকা মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর খবর বিভাগে জানুয়ারি ২০১০-এ প্রকাশিত একটি খবর আমার মতো উত্তরবঙ্গের অনেক আইসিটিপ্রেমীকেই এ স্বপ্নে বিভোর করেছে, তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই হাজারের বেশি কমিউনিটি টেলিসেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে রংপুরের তারাগঞ্জে পরীক্ষামূলক একটি কমিউনিটি টেলিসেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ খাতে অর্থায়ন করছে।
বলা হচ্ছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপন করা প্রতিটি সেন্টারে অন্তত ৫ জনের কর্মসংস্থান হবে। প্রতিটি সেন্টারে কমপিউটার, ইন্টারনেট সংযোগসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা থাকবে। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিটি সেন্টারের মালিকানা ছেড়ে দেয়া হবে শিক্ষিত বেকারদের কাছে। এজন্য প্রার্থী নির্বাচনের পর ওই প্রার্থীকে কমপিউটারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এজন্য কোনো জামানত লাগবে না। যদি সত্যি সত্যি এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে তার জন্য যথাযথ নীতিমালাও যেন সর্বমহলে প্রকাশ করা হয়, যাতে গৃহীত পদক্ষেপে স্বচ্ছতা থাকে। ফলে অর্থ লোপাটের সম্ভাবনা থাকবে না।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এই যৌথ প্রয়াস নিঃসন্দেহে এক প্রশংসনীয় ও আশা জাগানো উদ্যোগ। কিন্তু অতীতে এ ধরনের অনেক উদ্যোগই কাগজেকলমে গৃহীত হয়েছিল, যার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি, যদিও সেগুলো ছিল ভিন্ন সংগঠন, এনজিও বা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি। কিছু কিছু সংগঠনের আইসিটিভিত্তিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড কাগজেকলমে এখনো চালু আছে ঠিকই কিন্তু অর্থ লোপাট ছাড়া বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা উত্তরবঙ্গবাসী আশা করি, এবার অন্তত এর ব্যতিক্রম ঘটবে। বাস্তবায়িত হবে ইউনিয়ন পর্যায়ে টেলিসেন্টার প্রতিষ্ঠা, তথা শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান। সে সাথে অবহেলিত জনপদ ও শিক্ষানগরী রাজশাহীসহ সমগ্র উত্তরবঙ্গ হবে এক প্রযুক্তিনির্ভর জনপদ। শস্যভান্ডার উত্তরবঙ্গ হবে তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞানের ভান্ডার।
প্রিন্স
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
...............................................................................................
কমপিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও বিতরণের মধ্যে চাই সমন্বয়
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও এর সুফল সর্বমহলে ছড়িয়ে দিতে যে উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রেরণা ও উৎসাহদায়ক। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ৬৪ জেলায় ১২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপিউটার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রকল্পের আওতায় ৩২টি কমপিউটার ল্যাব স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিসিসির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমি একজন প্রযুক্তিপ্রেমী হিসেবে মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে বিভিন্ন জেলায় কমপিউটার ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মান নিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কার্যাবলীর ওপর যথাযথ তদারকি থাকা দরকার। অন্যথায় এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করেই পারছি না, সেটি হলো কিছুদিন আগে কমপিউটার জগৎ, ডি.নেট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সারাদেশের প্রযুক্তিপণ্যসংশ্লিষ্ট ই-বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপিউটার শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে প্রযুক্তি শিক্ষার আরো প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে। আমার বিশ্বাস এ ধরনের উদ্যোগ হয়ত আরো আছে যেগুলো নীরবে দেশের আইসিটি খাতের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। আমি প্রত্যেককে সাধুবাদ জানাই। সেই সাথে প্রত্যাশা করছি সবার সাথে যেনো কাজের ও উদ্যোগের সমন্বয় থাকে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সিলেবাস, প্রশিক্ষণের ধরন-প্রকৃতি, প্রশিক্ষণের মেয়াদ, প্রশিক্ষণের মান নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে। তাছাড়া প্রত্যেক সংগঠনের মধ্যে আমত্মঃযোগাযোগ থাকার ফলে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিতে সব সংগঠনই কাজ চালিয়ে যেমন যেতে পারবে, তেমনই প্রশিক্ষণ গ্রহীতারাও তাদের প্রশিক্ষণের মানের ও গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারবে। শুধু তাই নয়, চাকরিতে নিয়োগদাতারা এসব শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারবেন।
জাহিদ হাসান
পাঠানতলী, নারায়ণগঞ্জ
...............................................................................................
আইসিটির মেলার সংঘঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ চাই
মেলা আমাদের দেশে এক উৎসবমুখর পরিবেশের পরিচায়ক। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায়। গ্রাম বাংলার উৎসবমুখর সেই মেলার আমেজ এখন আমরা শহরবাসীরা কিছুটা উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছি সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে এবং ভিন্ন পরিবেশে। এ মেলা হলো তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য সংশ্লিষ্ট, যেখানে পাওয়া যায় না আবহমান বাংলার সেই ঐতিহ্য। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা হয় সাধারণত বছরে একবার এবং একটি সুনির্দিষ্ট সময়-সূচী বা উৎসবকে কেন্দ্র করে যা একটা প্রচলিত রীতি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট যে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে কোনো রীতি নেই। নীতি একটাই বাৎসরিক মেলার আয়োজন।
বর্তমানে ঢাকায় আইসিটি সংশ্লিষ্ট একাধিক সংঘঠন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সারা দেশব্যাপী একাধিক আইসিটি সংশ্লিষ্ট সংঘঠন। প্রতিটি সংঘঠনই স্বতন্ত্রভাবে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য সংশ্লিষ্ট মেলার আয়োজন করে যা দেশের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপারে আরো উৎসাহিত করবে।
আমি যেহেতু ঢাকায় থাকি, তাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবার মেলা নিয়ে কিছু কথা বলছি। আমি আগেই বলেছি, মেলা মানেই এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি যেখানে সমাবেশ ঘটবে বিপুল সংখ্যক লোকের থাকবে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্যের সমাবেশ ও ক্রেতাদের জন্য বিশেষ অফার বা সুযোগ-সুবিধা। অবশ্য ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মেলা যেমন বিসিএস মেলা, সিটিআইটি মেলা, ল্যাপটপ ফেয়ার, মাল্টিপ্ল্যান কমপ্লেক্স মেলা, বেসিস সফটএক্সপো ইত্যাদি। শুধু ঢাকাই এক বছরের মধ্যে এতগুলো মেলার অনুষ্ঠিত হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক হলেও এর প্রতি মানুষের আর্কষণ ধীরে ধীরে কমে যাবে এবং ঘটছেও তাই। এর প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক মেলাগুলোর দর্শকদের সমাবেশ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার প্রবেণতায়। মেলায় দর্শক কম হওয়ার কারণ সংঘঠনগুলোর সাংঘঠনিক তৎপরতার অভাব নয় বরং ঘন ঘন আইসিটি সংশ্লিষ্ট মেলা অনুষ্ঠিত হওয়া। কেননা অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
আমরা আইসিটি সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিপ্রেমীরা মনে করি, দেশের আইসিটি সংশ্লিষ্ট সংঘঠনগুলো যদি সমন্বিত উদ্যোগে বৎসরের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে বা তারিখে এ মেলা প্রতিবছর একবার বা দুইবার আয়োজন করে, তাহলে এ মেলার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমবে না বরং দিন দিন বাড়বে। শুধু তাই নয় এখানে দেখা যাবে নতুন নতুন প্রযুক্তির সমাবেশ। সুতরাং ঢাকার মেলার সংঘঠনগুলো এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আশা করি।
বাপ্পি হাসান