• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > রোম টোটাল ওয়ার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সৈয়দ হাসান মাহমুদ
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গেম
তথ্যসূত্র:
গেমের জগৎ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
রোম টোটাল ওয়ার

রোম টোটাল ওয়ার গেমটি একটি স্ট্র্যাটেজি ক্যাটাগরির গেম, তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে গেমটিতে একই সাথে টার্ন বেজড স্ট্র্যাটেজি ও রিয়েল টাইম ট্যাকটিস এই দুই ধরনের গেমপ্লে সাধন করা হয়েছে। গেমটি অবমুক্ত করা হয়েছিল ২০০৪ সালে এবং এই ভিন্নধর্মী ও ঐতিহাসিক গেমটি গেমারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিল। গেমের নাম দেখেই বোঝা যায় যে গেমের কাহিনীর পটভূমি হচ্ছে রোম। এখানে গেমারকে রোমান রিপাবলিকের পতনের শুরু থেকে রোমান এম্পায়ারের আবির্ভাবের সময়কালে (২৭০ খ্রিস্টপূর্ব-১৪ খ্রিস্টাব্দ) বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হবে। গেমটির ডেভেলপার হচ্ছে দ্য ক্রিয়েটিভ আসেম্বলি এবং এটি এই কোম্পানির বানানো টোটাল ওয়ার গেম সিরিজের তৃতীয় গেম। এর আগে টোটাল ওয়ার সিরিজের আরো দুটি আলাদা গেম রয়েছে। এগুলো হচ্ছে শোগান-মঙ্গোল ইনভাশন ও মেডিয়েভাল-ভাইকিং ইনভাশন। গেমগুলো পাবলিশ হয়েছে বিখ্যাত গেম কোম্পানি অ্যাক্টিভেশনের ব্যানারে, কিন্তু বর্তমানে বের হওয়া রোম টোটাল ওয়ার গেমের এক্সপাশন গেম বারবারিয়ান ইনভাশন ও আলেক্সান্ডার পাবলিশ করছে সেগা। গেমটি মনোযোগ দিয়ে খেললে এবং গেমের বিভিন্ন সংলাপ ও আলোচনা লক্ষ্য করলে রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। কারণ গেমটি রোমের তখনকার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বানানো হয়েছে এবং গেমে দেখানো বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধ ও বিভিন্ন ঘটনা বাস্তবের সাথে যথাসম্ভব মিল রেখেই বানানো হয়েছে। যার ফলে রোমানদের শাসন ব্যবস্থা, যুদ্ধকৌশল, বিভিন্ন ধরনের বাহিনীর বর্ণনা, সম্পদ আহরণ, রাজসভার বিভিন্ন সদস্য ও বিভিন্ন নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে।



গেমটিতে গেমারের প্রধান লক্ষ্য থাকবে রোমান রিপাবলিকের অবসান ঘটিয়ে রোমান এম্পায়ারের সূচনা করা। এজন্য গেমের শুরুতে রোমের উচ্চবংশীয় তিনটি ফ্যাকশন (জুলিয়াস, স্ক্রিপিও ও ব্রুটাস) থেকে যেকোনো একটিকে নিয়ে খেলা শুরু করতে হবে। তিনটি ফ্যাকশনেরই প্রধান লক্ষ্য এক হলেও অন্য লক্ষ্যগুলোর মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয় এবং প্রত্যেকের মধ্যে আবার শক্তি ও ক্ষমতার পার্থক্যও বিদ্যমান। যেকোনো একটি রোমান ফ্যাকশন নিয়ে গেম শেষ করার পর অন্যান্য জাতি বা ফ্যাকশন নিয়েও গেমটি খেলা যাবে। গেমটি তুলনামূলকভাবে অন্য গেমগুলো থেকে একটু কঠিন ও জটিল, তাই গেমের শুরুতেই টিউটরিয়াল ক্যাম্পেইন খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। টার্ন বেজড গেমের জন্য আলাদা টিউটরিয়াল ও রিয়েল টাইম ট্যাক্টিসের জন্যও আলাদা টিউটরিয়াল রয়েছে, যার ফলে গেমার গেমটির খেলার ধরন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে, আবার মূল ক্যাম্পেইন খেলার সময়ও যখন ইচ্ছে টিউটরিয়ালের সাহায্য নিতে পারবে। এছাড়া গেমার যখন গেমের কোনো মেনুর আইকন প্রথমবার সিলেক্ট করবে তখন সেই অপশনের নানান ব্যবহার সম্পর্কে অডিও শোনানো হবে এবং সেই সাথে চার্ট আকারেও লেখা দেখাবে। গেমে বিশাল সব যুদ্ধক্ষেত্রে গেমারকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে এবং গেমের গ্রাফিক্স খুবই চমৎকার যে, মনে হবে প্রাচীনকালের সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ আপনি দেখছেন মনিটনের সামনে বসে। গেমের থ্রি-ডি গ্রাফিক্স রেন্ডারিং বেশ উঁচুমানের এবং এর জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রায় ত্রিশ হাজার যোদ্ধা নিয়ে যুদ্ধ করা যাবে অনায়াসে। এছাড়া ইচ্ছে করলে যুদ্ধক্ষেত্রকে জুম-ইন ও জুম-আউট করা ছাড়াও ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘোরানো যাবে। গেমারকে যুদ্ধক্ষেত্রে তার বিশাল সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করতে হবে দক্ষ হাতে, কারণ সঠিকভাবে ও বুদ্ধি খাটিয়ে যুদ্ধ না করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে, এমনকি বিশাল সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও বিপরীত পক্ষের ছোট সৈন্যদলের কাছে পরাজয়বরণ করতে হবে। আবার খুবই বিচক্ষণতার সাথে খেলতে পারলে এবং বিভিন্ন বাহিনীর স্পেশাল এবিলিটির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করতে পারলে ছোট একটি সৈন্যদল নিয়েও বড় সৈন্যদল হারিয়ে দেয়া যাবে। টার্নবেজড ম্যাপে কোনো শত্রুবাহিনীকে আক্রমণ করলে বা গেমার আক্রান্ত হলে সেখানে তিনটি অপশন আসবে, যাতে থাকবে গেমার কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধের নিষ্পত্তি করতে চান? না সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মুখোমুখি হতে চান? নাকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটতে চান? তবে বলে রাখা ভালো, স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধের সমাধান করতে দিলে কমপিউটার নিজে নিজেই দুইপক্ষের বাহিনীর শক্তি ও বিভিন্ন বাহিনীর সংখ্যা হিসেব করে যুদ্ধের পরিণতি দেখাবে, এতে করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক সৈন্য মারা যায়, কিন্তু একই যুদ্ধ যদি গেমার যুদ্ধক্ষেত্রে ভালোভাবে খেলতে পারলে আরো কমসংখ্যক সৈন্য মারা যাবে। তাই সময় থাকলে সবসময় যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে যুদ্ধ করাই যুক্তিযুক্ত।

এভাবে খেলতে খেলতে গেমারকে ম্যাপের বিভিন্ন বসতি দখল করে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে হবে। কোনো বসতি বা দুর্গ আক্রমণের জন্য ভারি অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন পড়বে, আর যদি তা না থাকে তাহলে বসতির চারপাশে পাহারা বসিয়ে রাখা যাবে, যাতে করে কোনো রসদ ও সৈন্যবাহিনী বাইরে থেকে সাহায্য করতে না পারে। এভাবে তাদের কয়েক টার্ন পর্যন্ত আটকে রাখলে তারা দুর্গ থেকে বের হয়ে ময়দানে যুদ্ধ করতে আগ্রহ দেখাবে। কোনো বসতি দখল করার পর যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে কি করবে তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গেমার ইচ্ছে করলে তাদের দাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে, সবাইকে মৃত্যুদন্ডও দিতে পারবে বা অন্য বসতিতে স্থানান্তর করে দিতে পারবে। বসতি দখল করার পর সেখানকার অধিবাসীদের সুখ-দুঃখ, সুযোগ-সুবিধার খেয়াল রাখতে হবে। সেখানে মন্দির, স্কুল, খামার, সৈন্যদের জন্য ব্যারাক, সমুদ্র-বন্দর, বাজার স্থাপনা করতে হবে। তার পর সেই বসতির জন্য একটি কর নির্ধারণ করে দিতে হবে, যার ফলে রোমান এম্পায়ার সেই বসতি থেকে প্রতি টার্ন শেষ হওয়ার পর স্বর্ণমুদ্রা আহরণ করতে পারে। এছাড়া সেখানকার সড়ক ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে, যাতে অন্য বসতির সাথে ব্যবসায়বাণিজ্য করা সম্ভব হয়। এভাবে গেমে প্রায় ৫০টি বসতি দখল করে পূর্ণাঙ্গভাবে রোমান এম্পায়ার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এই গেমের ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর এর প্রথম এক্সপানশন রোম টোটাল ওয়ার- বারবারিয়ান ইনভাশন গেমটি রিলিজ হয় ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে। এই গেমে বারবারিয়ানদের বিভিন্ন ফ্যাকশন নিয়ে খেলতে হবে রোমানদের বিপরীতে এবং প্রথম মূল গেমে গড়ে তোলা রোমান সাম্রাজ্যের ভিত্তি ভেঙ্গে দিতে হবে। এই গেমের পটভূমিও রোম, কিন্তু সময়কাল হচ্ছে ৩৬৩-৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ। এই গেমটিতে সবচেয়ে বেশি জাতির আবির্ভাব হয়েছে। এই গেমে জাতির সংখ্যা প্রায় ২০টি এবং ১১টি জাতি নিয়ে ক্যাম্পেইন মোডে গেম খেলা যাবে। এছাড়া অন্য জাতিগুলো নিয়ে খেলতে চাইলে স্কারমিশ মোড বা মাল্টিপ্লেয়ার মোডে গেম খেলতে হবে। এই গেমের দিবতীয় এক্সপানশন রোম টোটাল ওয়ার-আলেক্সান্ডার মুক্তি পায় ২০০৬ সালে। এই গেমে আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটকে নিয়ে খেলতে হবে, তবে গেম খেলার পদ্ধতি আগের গেমগুলোর মতোই, তবে কিছু আলাদা বাহিনী, ম্যাপ ও বসতি রয়েছে। এই গেমের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে মূল গেম রোম টোটাল ওয়ারের পূর্ববর্তী সময় খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ সালে। আলেক্সান্ডারকে নিয়ে গেমের ম্যাপে ৩০ শহর ও বসতি দখল করতে হবে বেঁধে দেয়া ১০০ টার্নের মধ্যে। গেমে প্রায় আটটি আলাদা জাতি দেয়া হয়েছে, তবে ক্যাম্পেইন মোডে শুধু একটি জাতি নিয়েই খেলা যাবে। বাকি জাতিগুলো নিয়ে মাল্টিপ্লেয়ার মোডে খেলা যাবে।

গেমটি খেলার জন্য ১ গিগাহার্টজ প্রসেসর, ২৫৬ মেগাবাইট র্যাাম, ৬৪ মেগাবাইট ডিরেক্ট-এক্স ৯.০ বি সাপোর্টেড যেকোনো গ্রাফিক্সকার্ড ও ২.৯ গিগাবাইট ফাঁকা হার্ডডিস্ক স্পেসের প্রয়োজন পড়বে। এই গেমের এক্সপানশনগুলোও একই কনফিগারেশনের পিসিতে খেলা যাবে, শুধু প্রসেসর আরেকটু উঁচুমানের হলেই চলবে। গেমে ব্যবহৃত সাউন্ড ইফেক্ট, যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের হুঙ্কার, অস্ত্রের ঝনঝনানি, আহতদের আর্তনাদ সবকিছুই বেশ চমৎকার ও বাস্তবসম্মত।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস