ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমাদের সফলতা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
ওডেস্ক মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা শীর্ষ দশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে ছিল। মাত্র এক বছরের মধ্যে মোট ১৩ হাজার ঘণ্টার বেশি কাজ করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সাথে সাথে নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পেরেছে এর সদস্যরা। ওডেস্কে অন্যতম সফল টিম হচ্ছে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের আলফা ডিজিটাল। আলফা ডিজিটাল ছাড়া অসংখ্য বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আমরা তাদের সবাইকে সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই কমপিউটার জগৎ পরিবারকেও।
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে বাংলাদেশীদের গড়া টিমের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। তারপরও আমাদের এ অবস্থান নিশ্চয় তরুণ মেধাবীদের সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে। ভারতসহ অন্যান্য দেশে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার টিম রয়েছে, যাদের বিভিন্ন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে আসছে। এর ফলে ফ্রিল্যান্সার টিমের সদস্য সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি লাভবান হচ্ছে সহায়তাদানকারী সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানও। শুধু তাই নয়, এ সংগঠনগুলো দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। এসব দেশের আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সেদেশের তরুণ মেধাবীদের এক্ষেত্রে উৎসাহদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশেও আইসিটিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে যেমন বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি ইত্যাদি। আমাদের দেশে আইসিটির সুফল পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে এ সংগঠনগুলো তাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্য থেকে কাজ করবে তা সবার প্রত্যাশা। কিন্তু আমার বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশের আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যতটা না ব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে। তারা বেশি ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে। কুণ্ঠা বোধ করে অন্যের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিতে, যা রীতিমতো লজ্জাজনক। এমনটি আমরা কেউ আশা করি না। আশা করি এর সুমধুর ইতি ঘটবে।
এছাড়াও আমার মনে হয় আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বেশি ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে বিভিন্ন মেলা আয়োজনের মধ্যে। মেলার প্রয়োজন আছে, তবে ঘন ঘন নয়। এ সংগঠনগুলো যদি ফ্রিল্যান্সারদেরকে উৎসাহ বা প্রেরণা দিত, বিভিন্ন জেলায় জেলায় বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করে গাইডলাইন দিত, তাহলে দেশের বিপুলসংখ্যক আইসিটিসংশ্লিষ্ট ফ্রিল্যান্সারের আত্মপ্রকাশ ঘটত। কেননা এসব কর্মশালার মাধ্যমে আইসিটিসংশ্লিষ্ট তরুণ মেধাবীরা জানতে পারতো কিভাবে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়, কোথায় কাজ পাওয়া যায় ইত্যাদি- যা কমপিউটার জগৎ নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে যাচ্ছে। তরুণ মেধাবীদের প্রেরণা ও উৎসাহ দেয়ার কাজ শুধু কমপিউটার জগৎ-এর একক দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোসহ আমাদের সবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
.................................................................................................................
অবসান হোক বিজয়-ইউনিবিজয়ের সাম্প্রতিক প্রাযুক্তিক বিতর্ক
সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে বিজয় এবং ইউনিবিজয় কীবোর্ড নিয়ে দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকাগুলো, অনলাইনের বিভিন্ন মিডিয়া যেমন কমিউনিটি ব্লগ, স্যোশাল নেটওয়ার্ক, ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় জায়গায় বাংলা কীবোর্ড লেআউট, কপিরাইট প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত বাংলা কমপিউটিংয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, যুক্তিতর্ক এবং প্রত্যেক পক্ষ তাদের সমর্থনে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে পরস্পরকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।
দুই সফটওয়্যারের গঠন পদ্ধতির মূল পার্থক্য হলো- একটি আসকি এবং অন্যটি ইউনিকোডভিত্তিক মুক্ত সফটওয়্যার। বাংলাদেশে যারা দীর্ঘদিন ধরে কমপিউটার ব্যবহার করছেন, তারা নিঃসন্দেহে স্বীকার করবেন এদেশে কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে যে ব্যাপকতা লাভ করে তা মূলত ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের মাধ্যমেই শুরু হয়। আর ডেস্কটপ পাবলিশিং শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে মোস্তাফা জববারের বিজয় কীবোর্ডের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণে। ৯০-এর দশকে আরো কীবোর্ডের যাত্রা শুরু হলেও বিজয় ছাড়া অন্য কোনো কীবোর্ডই তখন ব্যবহারকারীদের কাছে গৃহীত বা সমাদৃত হয়নি। শুধু তাই নয়, আজ অবধি এর জনপ্রিয়তা অটুট। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, আমাদের দেশের কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে আজকে যে অবস্থান, তার পেছনে রয়েছে ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের ব্যাপক বিকাশ তথা মোস্তাফা জববারের অবদান। তার এ অবদানকে খাটো করে দেখার উপায় নেয়।
আমি যেহেতু আসকি বা ইউনিকোডভিত্তিক মুক্ত সফটওয়্যারের টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে তেমন বুঝি না। সুতরাং এই দুইয়ের ভালো-মন্দ তেমন বুঝি না বুঝি শুধু ইউনিকোডভিত্তিক মুক্ত যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার হচ্ছে তা মোস্তাফা জববারের বিজয় কীবোর্ডের অনুরূপ কয়েকটি কী ছাড়া। সেসব কী-এর তেমন ব্যবহারও হতে দেখা যায় না। আমার মতো সাধারণ ব্যবহারকারীর মতে মোস্তাফা জববারে দাবির পেছনে যৌক্তিকতা রয়েছে। আমি কীবোর্ডে টেকনিক্যাল বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বলতে চাই, যার যা কৃতিত্ব তাকে দেয়া হোক, অন্যথায় এদেশের সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে পথ থেমে যাবে শুধু মেধার স্বীকৃতি না থাকার কারণে।
এম. জামান
বাঁশেরপুল, ঢাকা
.................................................................................................................
সাইবার ক্রাইম ও প্রতিকার
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ফেসবুক সম্পর্কিত সাইবার ক্রাইম প্রমাণ করে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সফল করতে হলে ইন্টারনেটের ব্যবহার সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার আগে ইন্টারনেট ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত। শুধু এক ফেসবুক বন্ধ করে সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমরা বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে পড়েছি সাইবার ক্যাফেগুলোতে চলমান অনৈতিক কার্যক্রমের বর্ণনা। শুধু সাইবার ক্যাফে নয়, সবখানে বাস্তব চিত্র এর চেয়ে ভয়াবহ। এর জন্য প্রয়োজন দেশের আইটি অভিভাবকদের যথেষ্ট সচেতনতা।
এখন আমরা শিশুদের হাতে, তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ইন্টারনেট তুলে দিয়ে আনন্দে আত্মহারা হই- আলো আসবে...
আমরা কি কখনও খোঁজ নিয়ে দেখেছি- শুধু আলো আসছে, নাকি সাথে ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি আসছে? গত ১২ বছর যাবৎ আমি ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে আসছি। আমি দেখেছি এর ব্যবহার, অপব্যবহার ও অনৈতিক ব্যবহার। এখন আমার সন্তানের হাতে শিক্ষার প্রয়োজনেই তুলে দিতে হচ্ছে ইন্টারনেট। কী করে ইন্টারনেট আমার সন্তানের হাতে তুলে দেবো? আজ হোক কাল হোক, ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, বন্ধুদের প্ররোচনায় হোক, ইন্টারনেটের অনৈতিক ব্যবহারে আমার সন্তান যদি আসক্ত হয়ে পড়ে? এখান থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন ক্রাইমের হাতেখড়ি। এই অতিপ্রয়োজনীয় ইন্টারনেট থেকে তো দূরে রাখাও সম্ভব নয়। সেই দুশ্চিন্তা থেকে দীর্ঘদিন চেষ্টা করে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য ইন্টারনেট ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত। এটা অ্যান্টিভাইরাসের মতো কমপিউটারে ইনস্টল করতে হয়, যা কমপিউটারে ইনস্টল করলে শুধু ভালো সাইটগুলো ভিজিট করা যাবে, খারাপ সাইটগুলোতে অ্যাক্সেস করা যাবে না। সরকারিভাবে খুব শিগগির প্রতিটি স্কুলে দেয়া হবে ইন্টারনেট সংযোগ। বাসায় বাসায় অভিভাবকরা কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ইন্টারনেট। সব শিশুই আমার সন্তানের তুল্য। তাই অভিভাবকদের কাছে আকুল আবেদন- ফিল্টার ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ বাসায় বা স্কুলে নেবেন না। এতে যেমন ব্যান্ডউইডথ ব্যয়/অপচয় কমবে, তেমনি কাজের সুযোগ এবং সময় বাড়বে। সেই সাথে নিয়ন্ত্রিত হবে সাইবার ক্রাইম।
এ. কে. এম. জাহাঙ্গীর