ইউনিকোডের সদস্যপদ : একটি মাইলফলক ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
জুলাই ২০১০-এ কমপিউটার জগৎ পত্রিকায় প্রকাশিত মোস্তাফা জববারের লেখা ‘ইউনিকোডের সদস্যপদ আরো একটি মাইলফলক’ একটি সময়োপযোগী চমৎকার তথ্যবহুল লেখা। আমি যেহেতু কমপিউটার জগৎ পত্রিকা ১৯৯১ সাল থেকেই পড়ে আসছি সেহেতু আমার মনে আছে কমপিউটার জগৎ ইউনিকোডের সদস্যপদ লাভের তাগিদ দিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করে আসছে ১৯৯৩-৯৪ সাল থেকেই।
আমার যতদূর মনে পড়ে, সে সময় ভারত সরকার তাদের দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া ৮টি ভাষায় ইউনিকোডের সদস্যপদ পাবার জন্য আবেদন করে, যার মধ্যে বাংলাও ছিল। এর ফলে ভারত ইউনিকোডের সদস্যপদ লাভ করে এবং কমপিউটিংবিশ্বে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় ভারতের একটি আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে। তখন কমপিউটার জগৎ এদেশে নীতিনির্ধারক ও আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠকদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিল তার লেখনীর মাধ্যমে- এর ফলে কমপিউটিংবিশ্বে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলা তখন বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাবে ভারতের একটি আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে। সেসময়ে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ পাবার তাগিদ দিয়ে এবং না পাবার লজ্জাজনক অবস্থা সৃষ্টি হবার সমূহ সম্ভাবনার কথা দেশবাসীকে অবহিত করে কমপিউটার জগৎ এক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের বাংলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে’। এ লেখাটি সে সময় এদেশের জনগণের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ভাবতেও অবাক লাগে মাত্র বারো হাজার ডলারের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দুঃখ হয় আইসিটির প্রতি আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের ও সংশ্লিষ্ট সংগঠকদের নির্বিকার ও দায়িত্বহীন অবহেলা দেখে। আইসিটির ব্যাপারে অবহেলা না থাকলে আরো ১৮ বছর আগে এই সদস্যপদ আমরা পেতাম।
গত ৩০ জুন ২০১০ ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ সরকারকে সদস্যপদ দান করে যা কার্যকর হয় ২০১০-এর ১ জুলাই থেকে। প্রতিবছর বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করে এই সদস্যপদ নবায়ন করা সম্ভব। ১৮ মার্চ ২০১০ ইউনিকোড সদস্যপদের জন্য আবেদন করে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সদস্যপদ পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় ধরনের মাইলফলক। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কারণেই এত দ্রুত এটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
আমরা অনেক সময় অনেক কিছুই করি যার অস্তিত্ব পরে বিলীন হয়ে যায় যথাযথ পরিচর্যা বা পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে। আমার সংশয় এক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে। কেননা মাত্র বারো হাজার ডলারের জন্য যদি আমাদের দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হয় এবং যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ বা আগ্রহ থাকতে হয় সেখানে আইসিটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার ছাড়া আলোকিত ও সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের দেশের আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো যদি জাতীয় স্বার্থ বুঝতো, তাহলে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ অনেক আগেই আমরা পেতাম। বলা যেতে পারে, সংগঠনগুলোর নির্বিকার থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আরো বেশি আইসিটি বিষয়ে উদাসীন।
সুতরাং আমরা চাই, এই ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ যেন অব্যাহত থাকে। এর জন্য করণীয় যা তা যেন কোনো মহলের অবহেলার কারণে বিচ্যুতি না ঘটে। সেসাথে এ সংস্থার সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ যারা তারা যেনো যাওয়ার সুযোগ পান, ফলে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের আইসিটি খাত এগিয়ে যাবে আশা করি।
বশির
রুহিতপুর, ঢাকা
..............................................................................................................
আলোচনাধর্মী লেখা বাড়ানো হোক
আমি কমপিউটার জগৎ পত্রিকার নিয়মিত পাঠক এবং দীর্ঘ ১২-১৩ বছর ধরে এ পত্রিকাটি সংগ্রহ করি। এ পত্রিকার আলোচনাধর্মী লেখাগুলোর প্রায় সবই আমি পড়ার চেষ্টা করি।
আমার সন্তানেরা কমপিউটার জগৎ-এর পাঠক। সেই সূত্রে এর সাথে আমার সম্পর্ক। আমি মনে করি, কমপিউটার জগৎ-এর আলোচনাধর্মী বা কলামধর্মী লেখাগুলো এদেশের নীতিনির্ধারক, বিভিন্ন পেশাজীবীর মাঝে আইসিটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী বা আইসিটিসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের উপজীব্য করে পত্রিকা প্রকাশ করলে তাদের কাছে হয়তো ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তবে যারা আইসিটি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না তাদের কাছে এ পত্রিকাটি হবে এক দুর্বোধ্য পত্রিকা।
আমি দীর্ঘদিন ধরে এ পত্রিকার পাঠক এবং আমি দেখেছি এ পত্রিকার জনক মরহুম আবদুল কাদের আইসিটিকে সর্বমহলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও পাঠযোগ্য করে তোলার জন্য টেকনিক্যাল ও ননটেকনিক্যাল উভয় ধরনের লেখা দিয়ে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতেন। যার কারণে এ পত্রিকাটি সবার প্রিয়।
মরহুম আবদুল কাদের যথাযথ উপলব্ধি করেই আইসিটিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ননটেকনিক্যালি উপস্থাপন করতেন। তিনি টেকনিক্যাল ও ননটেকনিক্যাল উভয় ধরনের লেখার অর্থাৎ পাঠকদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতেন।
কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, কমপিউটার জগৎ ছাত্র-ছাত্রী বা আইসিটিসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী বা ব্যবসায়ীদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করতে উৎসাহী। অবশ্য এর যৌক্তিক কারণও আছে। আইসিটিসংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রী বাড়ছে, বাড়ছে এ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা আগের মতো উভয় ধরনের পাঠকদের সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কমপিউটার জগৎ প্রকাশিত হবে যাতে ননটেকনিক্যাল পাঠকরা এ পত্রিকার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে। সুতরাং এ বিষয়টি কমপিউটার জগৎ কর্তৃপক্ষ সুবিবেচনা করবে আশা করছি।
সঞ্চয় মৃধা
আজিমপুর সরকারি কলোনি, ঢাকা
...............................................................................................................
ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানি করবে বাংলাদেশ!
জুলাই ২০১০ সংখ্যায় কমপিউটার জগৎ পত্রিকার একটি খবর পড়ে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। অনেক খবরই থাকে যার জন্য আমরা কখনই প্রস্ত্তত থাকি না। বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানি করবে- এমনই একটি খবর। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকা হয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড তথা বিএসসিসিএল সম্প্রতি সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইডথের লিজের জন্য দরপত্র আহবান করে। সি-মি-উই-৪ ক্যাবল কনসোর্টিয়ামের যেকোনো ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সংযোগ হিসেবে তিন বছরের জন্য লিজ দেয়ার কথা দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএসসিসিএল সূত্রে জানা যায়, দেশে আগামী ৫ বছরের চাহিদা মজুদ রেখে অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ লিজ দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি ৪৪.৬ জিবিপিএস, যার মধ্যে মাত্র ৮ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হয় এবং বাকি ৩৬.৬ জিবিপিএস অব্যবহৃত থাকে। আগামী পাঁচ বছর চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩৭.০৭ জিবিপিএস। এর পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ৭.৫২৫ জিবিপিএস।
এ হিসেব আগামী কয়েক বছর ঠিক থাকবে বা এ হিসেব কতখানি সত্য তা নিয়ে দ্বিমত অনেকেই পোষণ করতে পারেন। অতীতে বিশেষজ্ঞ বা রাজনীতিবিদদের অনেক তথ্যের এমন গরমিল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা দেশবাসী জানেন।
ব্যান্ডউইডথের ব্যাপারটি আলাদা। কিন্তু হিসেবটি নিয়ে আমার সংশয়। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ব্যান্ডউইডথের বর্তমান ব্যবহারের যথাযথ হিসেব নিরূপণ ও ক্রমবর্ধমান হারে আগামী ২-৩ বছরের আনুমানিক ব্যবহারের হিসেব বের করার পর ব্যান্ডউইডথ লিজের উদ্যোগ নিলে ভালো হয়। অন্যথায় এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে দেশবাসীকে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে আশা করি।
প্রশান্ত
স্টেশন রোড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কজ ওয়েব