আইসিটিতে ভিয়েতনামের অগ্রযাত্রা আমাদের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনাম স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের অনেক পরে। এ দেশটি সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় শাসিত হলেও অর্থনীতি ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করে দেয়। এতে সমাজতন্ত্রবিদ্বেষী পশ্চিমা অনেক দেশ ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয় সস্তা শ্রমমূল্যের কারণে, ফলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টাতে থাকে দ্রুতগতিতে।
ভিয়েতনাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে তার প্রধান কারণ শুধু সস্তা শ্রমমূল্যই নয় বরং বিনিয়োগবান্ধব এক চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে এদেশে, যা এ লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ছাড়াও রয়েছে ভিয়েতনামে বিপুলসংখ্যক আইসিটি বিষয়ে শিক্ষিত, পরিশ্রমী তরুণ-যুবক সম্প্রদায়। আমাদের দেশও সস্তা শ্রমমূল্যের দেশ। তবে এখানে যে পরিবেশ বিরাজ করছে তা ভিয়েতনামের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী অর্থাৎ দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ভরপুর, যা ভিয়েতনামে নেই।
সাধারণত আমরা মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আমরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অপ্রতুল, প্রয়োজনীয় অকাঠামো নেই, নেই আইসিটিতে দক্ষ জনবল ইত্যাদিতে। এসব কারণে বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হন না এটি অবশ্যই সত্য, তবে এগুলোই প্রধান কারণ বা প্রতিবন্ধকতা নয়। এসব কারণ ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে যার কারণে বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হন না। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে চাইলে প্রথমে দরকার আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সেপ্টেম্বর ২০১০ কমপিউটার জগৎ আয়োজিত ‘আইসিটি খাতে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের বেশ কিছু দুর্বল দিক উন্মোচিত হয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ যদি সেসব দুর্বল দিক কাটিয়ে ওঠে আইসিটিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে পারে তাহলে ভিয়েতনামের মতো আমাদের দেশেও আইসিটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হবেন। সেজন্য অবশ্যই দরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা। অবশ্য এর জন্য সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে।
ইতোমধ্যে স্যামসাংসহ বেশ কিছু কোম্পানি আইসিটিতে এদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয়েছে। কেননা, চীন, ভারতসহ বেশ কিছু দেশে ইদানীং আইসিটি খাতে অল্পদক্ষ ও দক্ষ জনবলের শ্রমমূল্য ক্রমান্বয়ে বেশ বাড়ছে। এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও শ্রমমূল্য অনেক কম। তাই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ এখন বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর প্রতি, যেখানে শ্রমমূল্য কম। সুতরাং এ সুযোগটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলেই বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন। মনে রাখা দরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি কমিশনভোগীদের অবশ্যই নির্মূল করতে হবে, থাকতে হবে সরকারের সহযোগিতা। অন্যথায় সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে।
আবুল কালাম
আদিতমারী, লালমনিরহাট
............................................................................................................
কবে পাবো সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপ?
বেশ কয়েক মাস আগে কমপিউটার জগৎ-এর খবর বিভাগে প্রকাশিত এক খবরের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা তথা টেশিস আগামী জুন মাসের মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান থিঙ্ক ফ্লিম ট্রানজিস্টর তথা টিএফটির সাথে যৌথ উদ্যোগে ল্যাপটপ তৈরি ও বিক্রি করবে। এ খবরে বেশ পুলকিত হয়েছিলাম আর ভেবেছিলাম ল্যাপটপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো এবং নিজের প্রয়োজনীয় নোটগুলো কাগজেকলমে নোট না করে ল্যাপটপে করবো। কিন্তু জুন মাস শেষ হয়ে গেছে সেই কবে। এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো খবরও দেখতে পেলাম না যাতে আশ্বস্ত হতে বা জানতে পারতাম কম দামের ল্যাপটপ প্রাপ্তির বিষয়টি। অবশ্য এ জন্য আমি মোটেও হতাশ নই। কেননা বাংলাদেশের কোনো কাজ আজ পর্যন্ত ঘোষিত দিন-তারিখে পাওয়া গেছে বা সম্পন্ন হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই বিরল।
ইতোমধ্যেই ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় মাত্র এক হাজার ৬০০ রুপির কমপিউটিং ডিভাইস অবমুক্ত করেছে। এ যাবতকালের সবচেয়ে কম দামের এই ট্যাবলেট কমপিউটিং ডিভাইস আগামী বছর পাওয়া যাবে। এটি মূলত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষকরাও এটি ব্যবহার করবেন। এজন্য উঁচুমানের সফটওয়্যারও দেয়া হবে ফ্রি।
আমি মনে করি, বাংলাদেশ যদি সত্যি সত্যি মালয়েশিয়ার টিএফটির সাথে যৌথ উদ্যোগে কম দামে ল্যাপটপ বানানোর উদ্যোগ নিয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। অন্যথায়, ভারতীয় পণ্যের কাছে আমাদের দেশে তৈরি এ পণ্যটিও চরমভাবে মার খাবে যদিও তা একই জিনিস নয়। ফলে অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাবে বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা ও মালয়েশিয়ার টিএফটির যৌথ উদ্যোগ। আর এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে রয়েছে অনেক। বাংলাদেশের এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলো গুণগত মানে ভারতীয় পণ্যের চেয়ে ভালো হওয়া সত্যেও বাজারে টিকতে পারেনি ভারতীয় পণ্যের চাহিদার কারণে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেনো বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ঘোষিত তারিখের মধ্যে এ ল্যাপটপটি বাজারে উন্মুক্ত করবে- অবশ্যই ভারতীয় পণ্য বাজারে আসার আগে।
রমিজ রাজা
লালবাগ, ঢাকা
............................................................................................................
কলসেন্টার প্রসঙ্গ
আমি কমপিউটার জগৎ পত্রিকার নিয়মিত পাঠক। এ পত্রিকার প্রতিটি বিভাগই আমি কমবেশি পড়ার চেষ্টা করি। গত মাসে অর্থাৎ অক্টোবর ২০১০ সংখ্যার খবর বিভাগের একটি খবর সম্পর্কে কিছু বলতে চাই।
আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকসহ বিভিন্ন মহল কলসেন্টার নিয়ে বেশ আশাবাদী। তবে এ নিয়ে কেউ কেউ হতাশাজনক মন্তব্যও করছেন। কেউ কেউ হয়তো না বুঝেই অতি বেশি কথা বলছেন। এসব অতিকথন দেশের জন্য কখনই মঙ্গলজনক নয়, বরং রীতিমতো ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। অতি উৎসাহী ও অবুঝ ব্যক্তিদের অতিকথনের কারণেই দেশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু প্রতারক চক্র, যারা কলসেন্টারে প্রশিক্ষণ দেয়ার নাম করে সহজ-সরল সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রচুর টাকা। আমি মনে করি, এজন্য দায়ী আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের অতিকথন। এই অতিকথন না থাকলে বোধহয় এসব সাধারণ মানুষ প্রতারিত হতো না। আমি অতিকথন বলছি এ কারণেই যে, দেশে যখন কোনো কলসেন্টার গড়ে ওঠেনি, কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি, তখন থেকে এরা সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে।
কলসেন্টার যাতে আরো দ্রুত বিকশিত হতে পারে সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাথে সাথে এ সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণের নীতিমালা প্রণয়ন করা অতিজরুরি। দরকার কলসেন্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ তদারকি, যাতে কলসেন্টারসংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ দানের নাম করে কেউ প্রতারণা করতে না পারে। কলসেন্টারের লাইসেন্স প্রদানের ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে। এর ফলে কলসেন্টার এক শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়ে তরুণ বেকারদের রক্ষাকবচ হতে পারবে।
মাসুদ মিয়া