চাই আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক হতে চলল। দীর্ঘ এই চল্লিশ বছরে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়েছে, উন্নত হয়েছে প্রায় সবক্ষেত্রেই। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়, তা আমরা সবাই জানি। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নত না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেমন-যুগোপযোগী শিক্ষার অভাব, দুর্নীতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব ও পরনির্ভরশীলতাসহ আরও অনেক কিছু। এতসব প্রতিকূলতার মাঝে আমাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে এবং হবে। অবশ্য এখানে যেসব প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরা হয়েছে আমরা তা সহজেই দূর করতে পারি, যদি থাকে সদিচ্ছা। এ কথা ঠিক, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছি আমাদের দেশের পুরনো শিক্ষাব্যবস্থা ও ভাবধারার কারণে। অর্থাৎ আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার অভাবে।
আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে গণিত, বিজ্ঞান ও আইসিটিসংশ্লিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। সেজন্য তৈরি করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রণয়ন করতে হবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং তার বাস্তবায়নের জন্য নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। গণিত ও বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া মানে শিল্প ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের কাতার থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখা। আর এ কারণেই পিছিয়ে পড়তে হবে অর্থনীতিতেও। এর ফলে আমরা দিন দিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর জাতিতে পরিণত হতে থাকব।
এখানে গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি জোর দেয়ার মানেই এই নয় যে অন্যান্য বিষয় বা ক্ষেত্রে ঢিলেমি মনোভাব পোষণ করা। অবশ্যই আমাদের অভিভাবকদেরকে সন্তানদের মেধা-মনন ও আগ্রহের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তানদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। অথচ এটিই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এতে আর যাই হোক ছাত্রদের মেধার বিকাশ যেমন ঘটবে না, তেমনি উন্নতির শিখরে পৌঁছানো যাবে না। সুতরাং অভিভাবকদের উচিত হবে সন্তানদের মেধা ও আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে পড়াশোনার বিষয় বেছে নেয়া। হতে পারে তা গণিত, বিজ্ঞান বা অন্য কোনো বিষয়। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত মেধা ও আগ্রহ যদি থাকে এবং সেখানে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে তার উন্নয়ন হবেই। এক্ষেত্রে অবশ্যই যুগোপযোগী ও আধুনিক হতে হবে শিক্ষার পাঠক্রমকে। শুধু শিক্ষার বিষয় আধুনিক ও যুগোপযোগী হলেই হবে না, শিক্ষকদের হতে হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী এবং সবসময় তাদেরকে থাকতে হবে আপডেটেড। তাহলেই আমরা নিজেদেরকে নিয়ে যেতে পারব উন্নত জাতির কাতারে।
জালাল
গড়পাড়া, মানিকগঞ্জ
............................................................................................................
সফটওয়্যার শিল্পে চাই আরও পৃষ্ঠপোষকতা
বাংলাদেশে আইসিটির ক্ষেত্রে আগ্রহের ব্যাপকতা পেতে থাকে নববইয়ের দশকের শেষের দিকে। বলা যায় গত এক দশকেই এর ব্যাপকতা পেতে শুরু করে, যদিও প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। আমাদের দেশে আইসিটি নিয়ে যে প্রণোদনা তা মূলত হার্ডওয়্যারনির্ভর, সফটওয়্যারনির্ভর নয়। এটি অবশ্যই উৎপাদনকেন্দ্রিক নয়, পুরোপুরি আমদানিকেন্দ্রিক। এ প্রণোদনা হার্ডওয়্যারকেন্দ্রিক না হয়ে সফটওয়্যারকেন্দ্রিক হলে এই এক দশকে আইসিটি খাতে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম, বিশেষ করে সফটওয়্যার শিল্প খাতে। এর জন্য অবশ্য দরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যা আমাদের নেই মোটেও।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এটা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যা ইতঃপূর্বে ছিল না। সরকারের এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে, তবে উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু নয়। সরকার ঢাকার কারওয়ান বাজারের পরিত্যক্ত জনতা টাওয়ারকে সফটওয়্যার পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে এবং সে লক্ষ্যে কাজও করছে।
লক্ষণীয়, গত ২০ বছরে আমাদের দেশে আইসিটিতে যে প্রণোদনা সৃষ্টি হয়েছে তা মূলত পুরোপুরি হার্ডওয়্যারকেন্দ্রিক অর্থাৎ পুরোটাই আমদানিনির্ভর। অবশ্য হার্ডওয়্যারের ব্যাপক ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করে সফটওয়্যারের চাহিদা। যার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠবে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি। খুব ধীরগতিতে হলেও আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠছে। আমাদের দেশের সফটওয়্যার ডেভেলপারদের ডেভেলপ করা সফটওয়্যার দেশের সীমা পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও বিস্তৃতি লাভ করছে। অথচ এই বিপুল জনগোষ্ঠীর দেশে তরুণ মেধাবী ছাত্রের অভাবে নেই, যারা মানসম্মত সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পারে। এখন সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে, তাই তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করা উচিত। অবকাঠামো যা দরকার তা সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নেয়ার জন্য বেসিসকে আরো সক্রিয় হতে হবে। মানসম্মত সফটওয়্যার ডেভেলপ করা ও তা বাজারজাতকরণের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও বেসিসকে উদ্যোগী হতে হবে।
যেহেতু সফটওয়্যার শিল্প খাতে আমাদের তেমন ব্র্যান্ডিং ইমেজ নেই, তাই দেশীয় বাজারকে প্রথমে টার্গেট করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে এখন থেকে যেনো আর কোনো বিদেশী কোম্পানির ডেভেলপ করা সফটওয়্যার যাতে এখানে ব্যবহার না হয় বা কেনা না হয়। এছাড়া দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো যারা বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ডেভেলপ করে, তারা যেন প্রথমেই উন্নত বিশ্বকে টার্গেট না করে আমাদের আশপাশে বা আমাদের চেয়ে কম উন্নত বা আমাদের মতো দেশ যেমন-ভুটান, নেপাল ইত্যাদি দেশকে টার্গেট করে সফটওয়্যার বাজারজাতকরার উদ্যোগ নেয় এবং সে লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে কার্যকর সহযোগিতা আদায় করে নেয়ার জন্য উদ্যোগী হতে হবে ব্যবসায়ী মহলকে এবং সরকারকে সহযোগী ও উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে সফটওয়্যার শিল্প আরও এগিয়ে যায়। সরকারকে মনে রাখতে হবে, সফটওয়্যার শিল্প গড়ে উঠলে এদেশে বেকারত্ব যেমন কমবে, তেমনি দেশের অর্থনীতির ভিতও মজবুত হবে।
এম. জামান
বাঁশেরপুল, ডেমরা
............................................................................................................
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কার্যকর উদ্যোগ চাই
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের শ্রমমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এমনকি কম শ্রমমূল্যের বাজার হিসেবে খ্যাত চীন ও ভিয়েতনামেও। কম শ্রমমূল্যের কারণে চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশে রাতারাতি বিভিন্ন দেশ ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করতে থাকে। অবশ্য শুধু শ্রমমূল্য কম সে কারণেই এসব দেশে বিনিয়োগ হয়নি। বরং বলা যায় এসব দেশের সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারপ্রধানেরা এবং সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছেন।
সময়ের বিবর্তনের ধারায় এসব দেশে শ্রমমূল্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাই বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের জন্য খুঁজছে ভিন্ন কোনো দেশ। সুতরাং এমন সুযোগ আমরা এখন সহজেই নিতে পারি। কেননা, আমাদের দেশে যেমন রয়েছে প্রচুর মেধাবী বেকার যুবক, তেমনি রয়েছে অনেক সস্তার শ্রমমূল্য। তবে সস্তার শ্রমমূল্যই শুধু বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে না, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সহযোগী মনোভাব, প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও অবকাঠামো। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার, বাংলাদেশে এগুলোর হয়তো কোনোটিই নেই। রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর কমিশনভোগী। এ অবস্থার পরিবর্তন চাই, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়। আমরা সেই দিনের প্রত্যাশায় রইলাম।
পাভেল