আমরা সঠিক গতিতে এগোচ্ছি কি?
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে আমাদের দেশের প্রযুক্তিগত সফলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আউটসোর্সিংয়ে গার্টনারের তালিকায় শীর্ষ ৩০ দেশের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি পাওয়া অন্যতম একটি সফলতা অর্জন। এরপর বেসিস আয়োজিত সফটএক্সপো ২০১১ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরও কিছু প্রোগ্রামার, ফ্রিল্যান্সার ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবকদের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদ-বার্তাই বয়ে আনে। কিন্তু এই সুবাতাস সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি? সবার কাছে প্রযুক্তি সমানভাবে গুরুত্ব বহন করছে কি? আমরা পুরোপুরি পারছি কি বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে? এখনও কি আমরা সাধারণ মানুষের সাধ্যের সীমার মাঝে পৌঁছে দিতে পেরেছি ইন্টারনেট? এ ব্যাপারে অনেক আলোচনা ও পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং অনেক ইন্টারনেট বিপণন কোম্পানি সৃষ্টি হয়েছে। তবুও আজ আমাদের অনেকের কাছে এখনও রহস্যই রয়ে গেছে প্রযুক্তির বিস্ময়কর আবিষ্কার ইন্টারনেটকে ঘিরে, শুধু এর সহজলভ্যতার অভাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য আমাদের যে দ্বারস্থ হতে হয় বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে, যেখানে ১৫-২০ মিনিটের কাজটি করতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টাখানেক। সেখানকার পিসি ও ইন্টারনেটের গতি হয়তো শুধু ব্যবসায়িক মুনাফার জন্য ইচ্ছে করেই এমন করা। তবুও ভালো-কিছুটা সময়ক্ষেপণযোগ্য হলেও ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার অভাবে মানুষ বসে না থেকে একটি উপায়ে সমস্যা সমাধান করছে। কিন্তু খারাপ লাগে যখন অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে স্কুল-কলেজের মূল্যবান সময়টি নষ্ট করে অনেক শিক্ষার্থীই শুধু গেমের নেশায় বা অপ্রয়োজনীয় কাজে। অনেক তরুণই বিপথগামী হচ্ছে এখান থেকে। কেউ কেউ জানলেও আমরা অনেকেই হয়তো জানি না এসব সাইবার ক্যাফের বেশিরভাগই সঠিক বা বৈধ নীতিমালা অনুযায়ী চলে না। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পুরোপুরি সক্রিয় নয় কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই আমাদের নবপ্রজন্মকে এভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিলে হবে না, আবার ঠিক কমপিউটার বা ইন্টারনেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও চলবে না। এখনই সময় সব শিক্ষার্থীর কাছে কমপিউটার-ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া। আমার মতে, তাদের সেই সাথে দিতে হবে একটি সঠিক দিকনির্দেশনা। নইলে এই ইন্টারনেট সহজলভ্যতার দিনে যারা এটি ব্যবহার করছে সেখান থেকে অনেক তরুণই অনলাইনে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে, যা আমদের কাম্য নয়।
সবার মাঝে গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট যেমন সহজলভ্যভাবে পৌঁছে দেয়া দরকার, তেমনি আমাদের নিজেদেরও সঠিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলা প্রয়োজন। ঠিক একদিকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তির জয়ধ্বনি, অপরদিকে মানুষের সাধ্যের মাঝে গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার চ্যালেঞ্জ। এখনও যেখানে ১০-১৫ হাজার টাকায় ল্যাপটপ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি আমাদের কাঁধে রয়ে গেছে। আজ এই অবস্থানে আমরা ঠিকমতো এগোচ্ছি তো?
শুভ
রামপুরা, ঢাকা
............................................................................................................
ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় চাই সুস্পষ্ট নীতিমালা
এ পর্যন্ত বিজ্ঞানের যত শাখা-প্রশাখা গড়ে উঠেছে বা বিকশিত হয়েছে তার সবই মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে, এতে কারও কোনো দ্বিমত নেই কিছু কিছু ক্ষেত্র ছাড়া, তা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। তবে এ কথা সত্য, বিজ্ঞানের সব আবিষ্কারই যে নিরবছিন্নভাবে মানবজীবনে কল্যাণ বয়ে আনে তা কিন্তু নয়। কেননা বিজ্ঞানের প্রায় সব সৃষ্টির কোনো না কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তথা সাইড ইফেক্ট রয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের বেলায়ও এ কথা সর্বতোভাবে সত্য, যা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। ধারণার বাইরে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, এ সংশ্লিষ্ট পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাবটি মূলত দৃশ্যমান নয়, যা সরাসরি উপলব্ধি করা যায় না এবং আইসিটিসংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রেতারা এ ব্যাপারে তেমন কিছু উল্লেখও করেন না। আইসিটিপণ্য সামান্য পরিবেশ দূষণ করে বলেই যে এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এমন কথা কেউ বলবে না, আমিও না। তবে যে পণ্য পরিবেশবান্ধব তা যেমন ব্যবহার করা উচিত, তেমনি উচিত এসব পণ্য বাতিল করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা। গত মাসে কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত ই-বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার লেখাটি পড়ে মনে হলো আমরা কত বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি নিজেদের অজান্তে।
কমপিউটার ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই কমপিউটার বন্ধ রাখেন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে। আমাদের মধ্যে অনেকের ধারণা, কমপিউটার বারবার শাটডাউন ও রিবুট করলে কমপিউটারের আয়ুষ্কাল কমে যায়। হয়তো এ কথা কিছুটা সত্য। কিন্তু এর ফলে বাড়তি বিদ্যুৎশক্তি যেমন খরচ হয়, তেমনি কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যায়, যা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে যে ক্ষতি হয় তা কমপিউটর বারবার শাটডাউন ও রিবুটের চেয়ে বেশি।
প্রযুক্তিপণ্য খুব তাড়াতাড়ি পুরনো হয়ে যায়, যা আপগ্রেড করতে হয়। সহজ কথায় বলা যায় কমপিউটারের আয়ুষ্কাল অনেক কম। যার প্রধান কারণ আমাদের চাহিদা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া এবং নতুন প্রযুক্তিপণ্যের অতিমাত্রায় আসক্তি।
নতুনের প্রতি আসক্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই আসক্তির কারণেই আমাদের ব্যবহার হওয়া কমপিউটারগুলো খুব তাড়াতাড়ি বাতিল বা আপগ্রেড করতে হয়। কমপিউটার আপগ্রেড করার পরপরই পুরনো কমপিউটারকে অত্যন্ত অসচেতনভাবে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হয় বা ভাঙা পুরনো জিনিস সংগ্রহকারীদের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়, যা পরে বিভিন্ন রিসাইক্লিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত আমাদের দেশে ই-বর্জ্য সংগ্রহকারীরা অত্যন্ত অসতর্কভাবে এসব পণ্য থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করে থাকে। এ কাজে শক্তিশালী অ্যাসিড ব্যবহার করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় যত্রতত্র এবং বাকি পরিত্যক্ত অংশগুলো ফেলে দেয়া হয় উন্মুক্ত স্থানে, যা পরিবেশকে আরও বেশি বিষিয়ে তুলে। ই-বর্জ্য থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা কোনো ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে না। এমনকি মাস্ক বা হ্যান্ডগ্লাভসও ব্যবহার করে না। অর্থাৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়।
এ কথা সত্য, ই-বর্জ্য নিয়ে এদেশে ছোটখাটো কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যা প্রকারান্তরে দেশে কিছু বেকার লোকের কর্মসংস্থান করা ছাড়াও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করছে। আমি চাই এ ই-বর্জ্য নিয়ে ছোটখাটো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক, যেখানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য থাকবে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা, থাকবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, কর্মরত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা থাকবে বাধ্যতামূলক ও প্রতিষ্ঠানের জন্য থাকতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র।
তাওহিদ
কজ ওয়েব