কলসেন্টারের জন্য ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
এক সময় মনে করা হতো কমপিউটার ও কমপিউটার প্রযুক্তিপণ্যের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটলে দেশের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে অনেক। এ শঙ্কা দূর হয়েছে অনেক দিন আগেই। শুধু তাই নয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির অপার কল্যাণে উন্মোচিত হচ্ছে নিত্যনতুন কর্মক্ষেত্র, যেখানে কর্মরত আছেন, দেশের হাজার হাজার তরুণ। এরা যে দেশের বেকার সমস্যা লাঘবে ভূমিকা রাখছে তাই নয়, বরং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেরও ভূমিকা রাখছে। এসব ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কলসেন্টার।
কলসেন্টার সারা বিশ্বে এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থান হতে পারে বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত বেকার তরুণের। কলসেন্টার হতে পারে বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় শিল্প। তাই এই শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। কলসেন্টার শিল্প বিকাশে সরকার ও বিটিআরসি তথা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সে লক্ষ্যে কিছু কিছু কাজও করছে।
বিটিআরসি এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ কলসেন্টারের লাইসেন্স দিলেও সক্রিয় আছে মাত্র ৫৮টি। এ ছাড়া বিধিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে কলসেন্টার চালু করতে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণার পরপরই প্রায় শ’দুয়েক কলসেন্টার বাতিল বা বিটিআরসিতে ফেরত এসেছে। মূলত বিটিআরসির পক্ষ থেকে কিছু নজরদারি হওয়ায় এমনটি হয়েছে। অন্যথায় একসময় কমপিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠত অসংখ্য কলসেন্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যার ফলে হাজার হাজার বেকার তরুণের অর্থের শ্রাদ্ধ হতো তথা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কলসেন্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পেছনে অর্থ খরচ করে, কেননা হাতেগোনা কয়েকটি কলসেন্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়া বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যেমন মানসম্মত প্রশিক্ষক নেই তেমনই নেই কোনো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এ ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেয়া মানেই যে অর্থের শ্রাদ্ধ হতো তাই নয়, বরং সহজ-সরল এসব বেকার যুবক যে আশার আলো দেখতে পাচ্ছিল কলসেন্টারকে ঘিরে, তা আগের মতোই হতাশার অতল গহবরে নিমজ্জিত হতে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি করতে পারে বিটিআরসি কলসেন্টার লাইসেন্সিং নীতিমালায় নজরদারি থাকায়।
কলসেন্টারের লাইসেন্স নীতিমালা নজরদারির পাশাপাশি কলসেন্টার ব্যবহারের জন্য ব্যান্ডউইডথের দামও কমিয়েছে যথেষ্ট, যাতে এ শিল্পটি দ্রুত বিকশিত হয়। বর্তমানে ব্যান্ডউইডথের নির্ধারিত দাম থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে সেকেন্ডপ্রতি মেগাবাইটের দাম ৬০০০ টাকা করা হয়েছে, যা নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। যদিও এ দাম কমানো আশানুরূপ নয়, তবুও আমি বলব সরকারের এ উদ্যোগের ফলে কলসেন্টার শিল্পের বিকাশ আরো ত্বরান্বিত হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও বিটিআরসি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করবে এবং এ শিল্পের সাথে জড়িতরা সততার সাথে যথাযথভাবে কাজ করে যাবেন।
পারুল
পল্লবী, মিরপুর
কজ ওয়েব