লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গণিতের অলিগলি পর্ব-৯৪
জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বার
গত সংখ্যার আলোচনা করা হয়েছে ডুডিনি নাম্বার নিয়ে। সে আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ডুডিনি প্রাথমিকভাবে কোনো সংখ্যার কিউব বা ঘনফলের ই এ ক্ষেত্রেই মজার সম্পর্ক খুঁজে বের করেন। আর সে ক্ষেত্রে তিনি মাত্র সুনির্দিষ্ট ৬টি ডুডিনি নাম্বার খুঁজে বের করেন। পরে চিন্তা করেন একটি সংখ্যার ঘাত ৩ বা ঘন না ধরে যদি ৪ ধরা হয়, তখন এ সম্পর্কটা কেমন দাঁড়ায়। দেখা গেল সেখানেও কোনো কোনো সংখ্যার ক্ষেত্রে এ মজার সম্পর্ক বজায় থাকে। যেমন :
১ = ১৪; ১ = ১
২৪০১ = ৭৪; ৭ = ২+৪+০+১
২৩৪২৫৬ = ২২৪; ২২ = ২+৩+৪+২+৫+৬
৩৯০৬২৫ = ২৫৪; ২৫ = ৩+৯+০+৬+২+৫
৬১৪৬৫৬ = ২৮৪; ২৮ = ৬+১+৪+৬+৫+৬
১৬৭৯৬১৬ = ৩৬৪; ৩৬ = ১+৬+৭+৯+৬+১+৬
তাহলে আমরা দেখলাম কোনো কোনো সংখ্যা পাওয়ার বা ঘাত ৪-এর ক্ষেত্রেও এ মজার সম্পর্ক মেনে চলে। শুধু তাই নয়, এমন সংখ্যা আছে যেগুলো পাওয়ার বা ঘাত ৩ বা ৪-এর চেয়ে অনেক বেশি হলেও সেসব সংখ্যাও এ মজার সম্পর্ক মেনে চলে। যেমন :
১২০ = ১; আর ১ = ১
৯০২০ = ১২১৫৭৬৬৫৪৫৯০৫৬৯২৮৮০১ ০০০০০ ০০০০০ ০০০০০ ০০০০০; এবং এ সংখ্যাটির সব অঙ্ক বা ডিজিটের যোগফল = ৯০। আবার,
১৮১২০ = ১৪২৪২০১৬৯১ ৯৭৭০ ৫৫০৪১৩৬০৭০৯৪২৩৫৪ ৬২৩১৮৭৯৬০৯০৩৯৬০১; এবং এ সংখ্যার সব অঙ্কের যোগফল ১৮১।
২০৭২০ = ২০৮৬৪৪৪৮৪৭২৯৭৫৬২৮ ৯৪৭২২৬০০৫৯৮১২৬ ৭১৯৪৪৪৭০৪২৫৮৪০০১; এবং এ সংখ্যার সব অঙ্কের বা ডিজিটের যোগফল ২০৭।
আরও বড় সংখ্যার বেলায়
এখানেই শেষ নয়। আরও অনেক বড় সংখ্যা আছে, যা খাতায় সাধারণভাবে লেখা সম্ভব নয়, সেগুলোর বেলায়ও এ মজার সম্পর্ক মেনে চলতে দেখা গেছে। তবে খাতায় লিখে নয়, কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয়েছে। যেমন (৩৫৯০০০০০)৩১২২৩৫৩ সংখ্যাটি এ সম্পর্ক মেনে চলে। এ সংখ্যাটি আসলে হচ্ছে ৩৫৯০০০০০ সংখ্যাটিকে ৩১২২৩৫৩ বার পাশাপাশি বসিয়ে ধারাবাহিকভাবে সবগুলোর গুণফল যা দাঁড়ায় তা। সে গুণফল খাতায় লেখা সম্ভব নয়। তবে কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে জানা এ গুণফল সংখ্যাটির অঙ্ক সংখ্যা বা ডিজিট সংখ্যা ২৩৫৮৯৬৭২টি। আর এ অঙ্কগুলো একসাথে যোগ করলে যোগফল দাঁড়ায় ৩৫৯০০০০০। এটি হচ্ছে এ ধরনের সম্পর্ক মেনে চলা সবচেয়ে বড় সংখ্যা। প্রথমে ঘনফলের ক্ষেত্রে পাওয়া সুনির্দিষ্ট ৬টি সংখ্যা অর্থাৎ ১, ৫১২, ৪৯১৩, ৫৮৩২, ১৭৫৭৬ ও ১৯৬৮৩- কে বলা হয় ডুডিনি নাম্বার। আর এরপর দেখানো ৩-এর চেয়ে বেশি ঘাতের বেলায় যেসব সংখ্যা এ সম্পর্ক মেনে চলে সেগুলোকে বলা হয় ‘জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বার’। একটু আগেই জানলাম, এ জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বারের মধ্যে ৩৫৯০০০০০৩১২২৩৫৩ সংখ্যাটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বার। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এ সংখ্যাটি লিখতে প্রয়োজন ২৩৫৮৯৬৭২টি অঙ্ক বা ডিজিট, যেগুলোর যোগফল = ৩৫৯০০০০০। এ সংখ্যাটির খবর আমাদের জানিয়েছেন রেসতা নামে এক ভদ্রলোক।
বিভিন্ন গণিতপ্রেমী মানুষ এ ধরনের আরও বেশ কয়েকটি বড় আকারের জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বার আমাদের জানিয়েছেন। এগুলো আমরা জানতে পেরেছি ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে। এমন ৭টি জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বারের কথা নিচে উল্লেখ করছি, যেগুলো উদ্ভাবন করেছেন জনৈক স্টিফেন জ্যাকব।
এক : ১০০১৯৮৩৩৭০৯৯; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ২২২৬২৬টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ১০০১৯৮৩।
দুই : ৬৫৩২৩০৩০১৯২; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ১৭৫৫৬৯টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ৬৫৩২৩০।
তিন : ৫৪৭২১০২৫৬৬২; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ১৪৭২৫৩টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ৫৪৭২১০।
চার : ৪৫৮১১০২১৮৫৩; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ১২৩৭১০টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ৪৫৮১১০।
পাঁচ : ৩৫০১১০১৭১৩৬; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ৯৫০০৬টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ৩৫০১১০।
ছয় : ২০০১১০১০৩৪২; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ৫৪৮২৬টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ২০০১১০।
সাত : ৫২২২০৩১০৩; এ সংখ্যা লিখতে প্রয়োজন ১৪৬৪০টি অঙ্ক; আর এ অঙ্কগুলোর যোগফল ৫২২২০।
আশা করি ডুডিনি নাম্বার ও জেনারেলাইজড ডুডিনি নাম্বার সম্পর্কে আমাদের জানাটা স্পষ্ট হয়েছে।
হেবারডেম্যার’স পাজেলের সমাধান
গত সংখ্যায় আমরা জেনিছি হেনরি ডুডিনি একটি মজার গাণিতিক ধাঁধা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। এতে তিনি একটি সমবাহু ত্রিভুজকে এমনভাবে চার টুকরা করেন, সে টুকরাগুলো একটু স্থান অদল-বদল করে জোড়া লাগালে একটি বর্গক্ষেত্র হয়। তিনি কীভাবে এ ধাঁধার সমাধান করেন তাই আমরা এখানে জানব।
প্রথম পদ্ধতি : উপরের চিত্রমতে ABC সমবাহু ত্রিভুজটি আঁকি। AB বাহুকে উ বিন্দুতে সমান দু’ভাগে করি। একইভাবে BC বাহুকে ঊ বিন্দুতে সমান দু’ভাগ করি। AE রেখাকে F পর্যন্ত বর্ধিত করি, যা EF = EB হয়। AF রেখাকে এ বিন্দুতে সমান দুই ভাগে ভাগ করি। এ-কে কেন্দ্র করে অর্ধবৃত্ত AHF আঁকি। EB-কে ঐ পর্যন্ত বর্ধিত করি। E-কে কেন্দ্র করে বৃত্তচাপ HI আঁকি। ইঊ = IJ আঁকি। IE রেখা টানি। D এবং J থেকে ওঊ-এর উপর লম্ব আঁকি। তখন K এবং L বিন্দু পাব। এভাবে আমরা ABC ত্রিভুজে চারটি টুকরা পাব। টুকরা চারটি ভিন্নভাবে সাজালে পাব ডানের বর্গক্ষেত্রটি।
দ্বিতীয় পদ্ধতি : সববাহু ত্রিভুজ ABC আঁকি। অই-এর মধ্যবিন্দু উ নিই। BC-এর মধ্যবিন্দু ঊ নিই। D বিন্দু থেকে AC রেখার ওপর লম্ব আঁকি। ঊ বিন্দু থেকে AC রেখার ওপর লম্ব আঁকি। EF রেখা টানি। D ও এ বিন্দু থেকে EF রেখার ওপর লম্ব টানি। এই লম্ব দুটি EF কে, H ও I বিন্দুতে ছেদ করে। এর ফলে ছবির মতো ত্রিভুজটা চারটি টুকরায় ভাগ হবে। টুকরাগুলো স্থান বদল করে জোড়া লাগালেই পাব ডানের বর্গক্ষেত্রটি।
গণিতদাদু