‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের বহুল আলোচিত এক ব্র্যান্ড। আর বর্তমান সরকারের সরস বা কৌতুকে নাম ‘দিন বদলের সরকার’। সরকারের ভেতরে ও বাইরে এ দুটি হচ্ছে বহুল উচ্চারিত দুই পদবাচ্য। কখনো তা উচ্চারিত হচ্ছে ইতিবাচক মনোভাবে নিয়ে, আবার কখনো বা সমালোচনাকর নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে। বর্তমান সময়ে সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে সরকারের সবকিছুতেই ‘ডিজিটাল’ লেভেল লাগানো হচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় দিনের আলোর সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘণ্টা এগিয়ে এনে যে নতুন সময় নির্ধারণ করেছিল, তা এদেশে সাধারণ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ফলে দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে সমালোচনাকর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন এ সময় আখ্যায়িত হতে থাকে ‘ডিজিটাল টাইম’ নামে। তেমনি সরকারি দলের ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নানা বিশৃঙ্খল কর্মকান্ডে ত্যক্ত-বিরক্ত সংক্ষুব্ধ মানুষ এসব অনৈতিক কাজকে ‘ডিজিটাল কর্মকান্ড’ বলে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকল। ফলে এদেশের মানুষকে শুনতে হয় ডিজিটাল টেন্ডারবাজি, ডিজিটাল চাঁদাবাজি, ডিজিটাল মামলাবাজি, ডিজিটাল হামলাবাজি, ডিজিটাল দলবাজি ইত্যাদি ধরনের নানা পদবাচ্য। এমনকি বিদ্যুৎ ঘাটতির এ সময়ে দুঃসহ লোডশেডিং বর্ণনায় এরা আমদানি করে ‘ডিজিটাল ডার্কনেস’ নামের পদবাচ্যটিও।
এসব সমালোচনা সত্ত্বেও এ সরকারের প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিঃসন্দেহে একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হতে পারে আমাদের দিন বদলের নিয়ামক পরিকল্পনা, ব্র্যান্ড ও স্বপ্ন। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারে আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্মের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। এরা পেতে পারে সুখী-সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। আমাদের ছেলেমেয়েদের লালিত স্বপ্নসড়ক হয়ে উঠতে পারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে স্বপ্নকল্প।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার আসছে ১০ জুন জাতীয় সংসদে পেশ করতে যাচ্ছে তাদের দ্বিতীয় জাতীয় বাজেট। আর কদিন পর জাতি পেতে যাচ্ছে ২০১০-১১ অর্থবছরের সেই জাতীয় বাজেট। বাজেট পেশের এই প্রাক-সময়ে সরকারের গোটা বাজেটকেই অনেকে দেখতে শুরু করেছেন সরকার ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এ সরকারের প্রথম বাজেটেও গত বছরের জুনে ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটেও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে প্রথমবারের মতো বড় মাপের চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়। অর্থমন্ত্রীর সে বাজেট বক্তৃতায় ২০২১ সালের মধ্যে জাতিকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উপহার দেয়ার বিষয়টিকে মূলনীতি হিসেবে উপজীব্য করে তোলা হয়। সে বাজেটে সরকার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০০৯ সালে সরকার যে জাতীয় আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন করে তার আগে এটা ছিল সর্বশেষ বাজেট। বলা যায়, ২০০৯ সালের আইসিটি নীতিমালায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার বিষয়টি বৈষম্যহীন উন্নয়নের একটি একক দৃঢ়প্রত্যয়উদ্দীপক স্বপ্নকল্পের অ্যাজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপিত হয়। এতে প্রধান প্রধান আর্থ-সামাজিক খাতে ১০টি মূল লক্ষ্য, উন্নয়নের প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে ৫৬টি কৌশলগত ধারণা চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি আগামী ১০-১১ বছরের মধ্যে এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ৩০৬টি ওয়ার্কস প্রোগ্রামের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এসব নীতি-নির্দেশিকাকে সম্বল করে অর্থমন্ত্রীই এখন পারেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামের অ্যাজেন্ডাকে মূলধারায় এনে দাঁড় করাতে। এক্ষেত্রে তার হাতে মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে জাতীয় বাজেট। আইসিটিবিষয়ক উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহে অতিপ্রয়োজনীয় তহবিলের যোগান দিয়েই তার পক্ষে সম্ভব আইসিটির উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকল্পিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় একটি ঝাঁকুনি সৃষ্টি করতে। সেজন্য ২০১০-১১ অর্থবছরের আসন্ন বাজেট প্রণয়নে ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ এক অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
আইসিটি নীতিমালা ২০০৯-এ সরকার তথা অর্থমন্ত্রীকে ম্যান্ডেট দিয়েছে আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন, ই-সরকার প্রয়োগ, ব্যবসায়ের মানানসই বিধিবিধান, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ইত্যাদিসহ সামগ্রিক আইসিটি উন্নয়ন খাতে উন্নয়ন বাজেটের ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার। যেখানে রাজস্ব বাজেটের ২ শতাংশ বরাদ্দ যেতে পারে পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ মানোন্নয়ন ও চলমান আইটি সার্ভিস কেনার পেছনে। বর্তমান বাজেটীয় পরিসংখ্যানের আলোকে এই দু্ই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে, বিগত বাজেটে আইসিটিসংশ্লিষ্ট সামগ্রিক বরাদ্দ (মন্ত্রণালয়/বিভাগ- বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও তার, তথ্য, মন্ত্রিসভা, সংস্থাপন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) দেয়া হয় ৫০০ কোটি টাকারও কম। এখন দেখার বিষয় অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে এ খাতে কত টাকার বরাদ্দ দেন।
সরকার তার দ্বিতীয় জাতীয় বাজেট এমন একটি সময়ে পেশ করতে যাচ্ছে যখন বর্তমান সরকারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯ প্রণীত হওয়ার পর এটি আমাদের প্রথম জাতীয় বাজেট। দেশের মানুষ এখন নজর দিতে শুরু করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার কতটুকু কী করল, আর কতটুকু করল না সে বিষয়ের ওপর। আসন্ন বাজেটে আইসিটি খাতে আইসিটি নীতিমালা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে অর্থবছরের শুরুতেই কাজে নেমে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে বিগত বছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা ও সাফল্যকে আমলে নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ‘ডিজিটাল লক্ষ্যমাত্রা’ নির্ধারণ করতে হবে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে। মনে রাখতে হবে ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে আছে সরকারও। তারই আলোকে তৈরি করা প্রয়োজন আগামী অর্থবছরের ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।
ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে যখন সরকার
ইতোমধ্যেই জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এক খবরে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে, ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে পড়েছে বর্তমান সরকার। আমরা জানি, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া বর্তমান সরকারের এক বহুল আলোচিত লক্ষ্য। সরকার গঠনের আগেই বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার পিছিয়ে রয়েছে। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্র উল্লেখ করে এ দৈনিকটি এ তথ্য জানায়।
খবর মতে, গত দেড় বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কী কী করেছে, সে বিষয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠায়, তা থেকেই বেরিয়ে এসেছে আমাদের এই পিছিয়ে থাকার সত্যটি। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে রয়েছে। আর ৩০টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ ১১টি মন্ত্রণালয় কোনো প্রতিবেদনই জমা দেয়নি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এপ্রিলের শেষে কাগজপত্র আবারো জমা দেয়ার কথা বলা হয়।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আলোকে এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৩০৬টি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় বর্তমান সরকার। ১৮ মাস বা তার চেয়েও কম সময়ের মধ্যে স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কথা। এ লক্ষ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চলমান বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের লক্ষ্যে আলাদা তহবিল গঠন করে। কিন্তু দেড় বছর পর দেখা গেছে বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা ও ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া সরকার ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিজিটাল ইনোভেশন ফেয়ারে’ সম্প্রতি অভিযোগ করা হয় : ডিজিটাল পদ্ধতি ও মানবনির্ভর পদ্ধতি- এ দু’টি একসাথে চলায় আগের চেয়ে ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। আরো অভিযোগ করা হয়, ওয়েবসাইটগুলোতেও তথ্য সব সময় হালনাগাদ করা হয় না। সূত্রমতে, সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করে এমন সব কাজ এখন পর্যন্ত খুব ধীরগতিতে চলছে।
ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া চালুর ক্ষেত্রে বিদ্যমান রয়েছে সীমাহীন ধীরগতি। সারাদেশে দরপত্র নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারি চলছে অব্যাহতভাবে। দরপত্র নিয়ে সংঘর্ষ এড়াতে সরকার ই-টেন্ডারিং চালুর কথা বলেছিল। কিন্তু পরিকল্পনামতো সে কাজ এগুচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের ৪ মাস পর এ প্রক্রিয়া চালুর জন্য পরামর্শক হিসেবে জিএসএস অ্যামেরিকা ইনফোটেক লিমিটেড, ইন্ডিয়াকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অথচ অর্থমন্ত্রী গত বছরের আগস্টে জানিয়েছিলেন, দুই মাসের মধ্যে ই-টেন্ডারিং চালুর কথা।
সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৮০০ অফিসের মধ্যে ২০টিতে ই-টেন্ডারিং চালু করা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-টেন্ডারিং চালু করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজও এগোয়নি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ডেমরা অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হয়। বর্তমান সরকারের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় মানিকগঞ্জ ও ঢাকায় এ পদ্ধতি চালু করার কথা ছিল। কিন্তু কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, নারায়ণগঞ্জ ও দোহারে এ বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শুধু দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
শুরু হয়নি বিচারপ্রার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সরবরাহের কাজ। আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগের ও হাইকোর্ট বিভাগের শুনানির দিন কবে, মামলার অগ্রগতি কেমন ইত্যাদি তথ্য ওয়েব ও মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত বার্তা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের জানানোর কাজ স্বল্পমেয়াদে শেষ হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে সামান্য কাজ হচ্ছে, তবে প্রত্যাশিত পর্যায়ে নয়।
এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা যায়নি। কৃষিপণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেয়ার কথা থাকলেও কৃষক লাভবান হয়েছেন এমনটি জানা নেই। শুধু শিল্প মন্ত্রণালয় ফরিদপুর ও মোবারকগঞ্জের মিলে আখচাষীদের মুঠোফোনে আখ কেনাবেচার তথ্য দিচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদফতর স্বীকার করেছে, কৃষকদের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের সব বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ওয়েবসাইটে দেয়ার কথা থাকলেও তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনটি স্বীকার করে এরা মন্ত্রণালয় বরাবরে চিঠিও দিয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সরকারের অন্যতম কাজ হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা। সে ব্যবধান দূর করার কাজটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরুই করতে পারেনি। স্বল্পমেয়াদে এ মন্ত্রণালয়ের প্রথম লক্ষ্য ছিল শারীরিকভাবে অক্ষম এবং বিশেষ সহায়তা লাগতে পারে, এমন ব্যক্তিদের কথা বিবেচনায় রেখে বাংলায় সফটওয়্যার উন্নয়নে সুবিধা দেয়া। এ কাজে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগেরও সহায়তা করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরুই হয়নি। মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ফোকাল পয়েন্ট এসএস আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্বল্পমেয়াদে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব না হলেও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে কাজ শেষ হবে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপিউটার সরবরাহ, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছে, ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যতই কৃতিত্বের দাবি করুক, আমরা সন্তুষ্ট নই’।
বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির বাজেট প্রস্তাব
ইতোমধ্যে এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি তথা বিসিএস আসন্ন ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সামগ্রিক কমপিউটার পণ্যের ওপর পরোক্ষ কর অর্থাৎ আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর আরোপ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য পেশ করেছে। এ প্রস্তাবে ৫৩ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের কথা উল্লেখ করে এসব পণ্যের ওপর কর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
লক্ষণীয়, এসব পণ্যের ওপর বর্তমানে শুধু কমপিউটার সাউন্ড কার্ড ছাড়া বাকি সব পণ্যে বিভিন্ন হারে এসআরও ডিউটি কার্যকর রয়েছে। এই শুল্ক ৩ শতাংশ হারে আরোপিত রয়েছে ২৬ ধরনের পণ্যে, ৫ শতাংশ হারে ৪টি পণ্যে, ৭ শতাংশ হারে ১টি পণ্যে, ১০ শতাংশ হারে ৩ ধরনের পণ্যে, ১২ শতাংশ হারে ২টি পণ্যে, ১৫ শতাংশ হারে ৮টি পণ্যে, ২৫ শতাংশ হারে ৫টি পণ্যে এবং ৩০ শতাংশ হারে ১টি পণ্যে কার্যকর রয়েছে। বিসিএস এ শুল্কহার সব পণ্যের ক্ষেত্রেই শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব রেখেছে। একইভাবে বিসিএস এসব পণ্যের ওপর সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ও ভ্যাট পুরো প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে শুধু সার্ভার ব্যাকের ওপর ২০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ছাড়া আর কোনো পণ্যে এ ডিউটি কার্যকর নেই। তবে উল্লিখিত ৫৩ ধরনের পণ্যের মধ্যে ৩৫টির মতো পণ্যের কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। বাকি পণ্যগুলোর বেশিরভাগ পণ্যেই ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর রয়েছে। বিসিএস তা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায়। উল্লিখিত সব ধরনের পণ্যে বর্তমানে ১ শতাংশ হারে যে পিএসআই চার্জ বহাল আছে, তা বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএস।
এছাড়া এসব পণ্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্তমানে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্সড ট্রেড ট্যাক্স কার্যকর রয়েছে। অবশিষ্ট ২২টি পণ্যে এ করের বর্তমান হার ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিসিএসের প্রস্তাব হচ্ছে, কমপিউটার সামগ্রীর সব পণ্যের ওপর ১ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে এই কর আরোপ করা হোক আগামী অর্থবছরের বাজেটে।
বিসিএস তাদের এই বাজেট প্রস্তাবের পক্ষে যে যুক্তি তুলে ধরছে তা হলো- কমপিউটারের নির্দিষ্ট ড্রাইভ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার সম্ভব নয় এবং উল্লিখিত পণ্যগুলোর কোনো বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব নয়। তাই এগুলোর জন্য শূন্য শুল্ক আরোপ করার অনুরোধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মাল্টিফাংশনাল প্রিন্টার- অল ইন ওয়ান অর্থাৎ একই মেশিনে প্রিন্টার, স্ক্যানার ও ফ্যাক্স, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়েবক্যাম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ইত্যাদি এখন পূর্ণমাত্রায় সংযোজিত হয়ে কমপিউটার এক্সেসরিজ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তাই এসবের ক্ষেত্রেও শূন্য শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সিডি-আর/ডিভিডি-আর ব্ল্যাঙ্ক এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর কমপিউটারের এক্সেসরিজ ও পেরিফেরাল হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই এসব পণ্যের জন্য অন্যান্য পণ্যের মতো শুল্কায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের মতো ডিজিটাল ক্যামেরার জন্য নির্ধারিত শুল্ক ধার্যের প্রস্তাব করার কারণ, ডিজিটাল ক্যামেরার কার্যক্রম কমপিউটারের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
বেসিসের বাজেট প্রস্তাব
০১. আইসিটি শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে সরকার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।
০২. মেলা, ডিজিটাল ফোরাম এবং বর্তমান বিশ্বের প্রধান প্রধান আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের সাথে নানাধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় আইসিটি আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন করে তোলার জন্য বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়কে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বাড়বে।
০৩. যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ডালাস ও লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ডেনমার্ক, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যের সম্ভাবনাময় আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশনের মতো বিশ্বের কমপক্ষে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে রোড শো আয়োজনের জন্য বাজেটে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হোক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভবিষ্যতের সেবা আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন হওয়ার ক্ষেত্রে এর ভাবমর্যাদার উত্তরণ ঘটবে।
০৪. IDCOL-এর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিং ফান্ড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করে সর্বোচ্চ সুদহার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। একবার সুদহার কমলে ও বন্ধুসুলভ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংক এ প্রক্রিয়া পরিচালনা করলে ইতোমধ্যেই সৃষ্ট বেশ চাহিদার এ ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল লোন দিনের আলো দেখবে। বর্তমানে এ তহবিল পর্যাপ্ত নয়। অতএব ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল ফিন্যান্সিং তহবিল ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে।
০৫. বর্তমান বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নির্ধারণ এবং উন্নত দেশে আমাদের সক্ষমতা পৌঁছানোর উপায় অবলম্বনের জন্য সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ম্যাকেঞ্জির মতো বৈশ্বিকভাবে সুপরিচিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
০৬. মহাখালী সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের জন্য বরাদ্দ করা জমিটি এখন অনেক অস্থায়ী বস্তির দখলে। এসব বস্তিবাসী পুনর্বাসনের বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজন অনুমোদিত এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে পর্যালোচনা ও পুনর্বাসনের জন্য ৫০ কোটি টাকা তহবিল বরাদ্দ প্রয়োজন।
০৭. আইসিটি খাতে উৎপাদনশীলতা ও রফতানি বাড়ানোর জন্য চারটি উপযুক্ত স্থানে চারটি সফটওয়্যার টেকনোলজি সেন্টার (এসটিসি) গড়ে তোলার জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য তা প্রয়োজন। এসব এসটিসি-তে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান আইসিটি ইনকিউবেটরের মতো এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে আইসিটি মন্ত্রণালয়।
০৮. ‘সফটওয়্যার ও আইটিনির্ভর সেবা ক্রয়’-এর মতো একটি আলাদা খরচের খাত বাজেটে সৃষ্টি করা যেতে পারে, যাতে করে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সুনির্দিষ্ট এ খাতের অধীনে সম্পাদিত সব কেনাকাটা মনিটর করতে পারে। এখন পর্যন্ত সফটওয়্যার ও আইটিনির্ভর সেবা কেনার আলাদা কোনো খরচের খাত নেই। এ খরচের খাত সৃষ্টি করা হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প উদ্যোগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
০৯. ভ্যাট প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে, ভ্যাট আরোপ হয় পণ্য ও সেবা বিক্রিয় ওপর। সফটওয়্যার ও আইটিইএস-এর বেলায় ভ্যাট প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
১০. দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পকে শক্তিশালী করতে ও বাংলাদেশী সফটওয়্যারকে উৎসাহিত করতে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। বিদেশী মুদ্রা সাশ্রয় করার জন্য বিদেশী সফটওয়্যার পণ্যের ওপর একটা নির্দিষ্ট হারের কর আরোপ করা যেতে পারে। বিশেষ করে কর আরোপ করা দরকার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের ওপর। এ ট্যাক্সের হার কমপক্ষে হতে পারে ১৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় কমিয়ে আনা যাবে।
১১. কমপিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বিনিয়োগের ওপর ডেপ্রিসিয়েশন রেট বর্তমানের ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ করা দরকার।
১২. আইটিইএস-এর ক্ষেত্রে আয়কর মওফুক বর্তমানে মাত্র ৬টি ক্ষেত্রে কার্যকর আছে। গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিস এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কারণ, এটি আইটিইএস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত।
১৩. আইটি সেবা শিল্পের জন্য ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রণোদনা হিসেবে যে আয়কর রেয়াত দেয়া হয়েছে, সে সুযোগ ২০১৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
১৪. কমপিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পণ্যের ক্ষেত্রে পিএসআই তথা প্রিশিপমেন্ট ইনস্পেকশনের প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাহার করতে হবে।
আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের বাজেট প্রস্তাব
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স তথা আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যবহারের যন্ত্রাংশের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আরোপিত শুল্কহার এখনো অনেক বেশিমাত্রায়। এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট সেবা যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য হয়ে তাদের গ্রাহকদের উচ্চমূল্যে সেবা দিতে হয়। তাদের মতে, এর ফলে বর্তমান সরকার ঘোষিত ‘ভিশন ২০২০-২১’ রূপকল্প বাস্তবায়ন গতি হারিয়েছে। তাছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত গতি আসছে না। উপরন্তু তা বাস্তবায়নে অনেকের মনে এক ধরনের সংশয়ের জন্ম নিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ পরিস্থিতিকে আরো উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট-পূর্ব সময়ের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট বাজেট প্রস্তাব রেখেছে।
প্রস্তাবে ৯টি পণ্যের ওপর শুল্ক ও করের বর্তমান হার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে আরোপিত শুল্কহার অনুযায়ী ভিওআইপি এটিএ’র জন্য ৩ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক বা কাস্টম ডিউটি হয়। অপটিক্যাল ফাইবারের জন্য আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ, ইউটিপি- কোঅ্যাক্সিয়েল ক্যাবল কানেক্টরের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ; ইউপিএস/আইপিএসের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ; ইন্টারনেট ইন্টারফেস কার্ড, নেটওয়ার্ক সুইচ রাউটার ও হাবের ওপর ৩ শতাংশ; টেলিফোনসেট, ভিডিও ফোন, খুচরো যন্ত্রাংশ ও মিডিয়া কনভার্টার চেসিসের ওপর ২৫ শতাংশ; মিডিয়া কনভার্টার, মিডিয়া কনভার্টার কার্ড ও প্রটোকল কনভার্টারের ওপর ২৫ শতাংশ; হিট শ্রিঙ্ক টিউবের ওপর ১২ শতাংশ এবং কমপিউটার/সার্ভারের ওপর ৩ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক বা কাস্টম ডিউটি দিতে হয়। আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাব হচ্ছে- এই নয়টি পণ্যের প্রতিটির ক্ষেত্রে কাস্টম ডিউটির হার ১ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে আসন্ন ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে।
বর্তমানে ভিওআইপি এটিএ, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ইউপিএস/আইপিএস, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, নেটওয়ার্ক সুইচ, রাউটার, হাব, হিট শ্রিঙ্ক টিউব, কমপিউটার/সার্ভার ইত্যাদির ওপর কোনো রেগুলেটরি ডিউটি নেই। আগামী বাজেটে এ সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব রেখেছে এ অ্যাসোসিয়েশন। পাশাপাশি ইউটিপি/কোঅ্যাক্সিয়েল ক্যাবল, কানেক্টর, টেলিফোন সেট, ভিডিও ফোন, যন্ত্রাংশ, মিডিয়া কনভার্টার চেসিস, মিডিয়া কনভার্টার, মিডিয়া কনভার্টার কার্ড, প্রটোকল কনভার্টার ইত্যাদির ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ হারে যে রেগুলেটরি ডিউটি আদায় করা হচ্ছে আগামী বাজেটে এ হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে বলে মনে করে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন।
উল্লিখিত ৯ ধরনের পণ্যে বর্তমানে কোনো সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি দিতে হয় না, এ সুযোগ আগামী বাজেটে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব রেখেছে এ অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন লক্ষ করেছে উল্লিখিত ৯ ধরনের মধ্যে ৫ ধরনের পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে এখন ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর আদায় করা হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে : ইউটিপি/কোঅ্যাক্সিয়েল ক্যাবল, কানেক্টরস, ইউপিএস/আইপিএস, টেলিফোন সেট, ভিডিও ফোন, যন্ত্রাংশ, মিডিয়া কনভার্টার চেসিস, মিডিয়া কনভার্টার, মিডিয়া কনভার্টার কার্ড, প্রটোকল কনভার্টার ও হিট শ্রিঙ্ক টিউব। এসব পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৫ শতাংশ হারের ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায় এ অ্যাসোসিয়েশন।
উল্লিখিত ৯ ধরনের পণ্যের ৬টিতে অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স বর্তমানে আদায় করা হয় ৩ শতাংশ হারে। আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন সে হারও শূন্যে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে : ইউটিপি/কোঅ্যাক্সিয়েল ক্যাবল, কানেক্টর, ইউপিএস/আইপিএস, টেলিফোন সেট, ভিডিও ফোন, যন্ত্রাংশ, মিডিয়া কনভার্টার চেসিস, মিডিয়া কনভার্টার, মিডিয়া কনভার্টার কার্ড, প্রটোকল কনভার্টার, হিট শ্রিঙ্ক টিউব, কমপিউটার/সার্ভার ইত্যাদি।
তবে অ্যাসোসিয়েশন এসব প্রতিটি পণ্যের ওপর বর্তমানে কার্যকর ২ দশমিক ২৫ শতাংশ হারের অ্যাডভান্সড ট্রেড ট্যাক্স তথা এটিভি অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। পাশাপাশি এসব পণ্যের ওপর বর্তমান ১ শতাংশ হারের পিএসআই তথা প্রিশিপমেন্ট ইনস্পেকশন কর একইভাবে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছে এ অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে বাজেটে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা দরকার।
জাতীয় আইসিটি নীতিমালা
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির উন্নয়নের প্রয়োজন অনুভব করে পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৯ সালের ১০ মে জাতীয় আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকারের আমলে ২০০২ সালে প্রণীত হয় জাতীয় আইসিটি নীতিমালা। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই গঠন করে জাতীয় আইসিটি নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি। এ কমিটিই প্রণয়ন করে ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯’।
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯-এর রূপকল্প (vision) ও উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে : ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমাজ স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
এই নীতিমালা রাষ্ট্রের সব পরিকল্পনাবিদ ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশিকা। পাশাপাশি এটি ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগ, এনজিও এবং সুশীল সমাজের জন্য সামাজিক উদ্যোগ ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে জনসেবা যোগানোর জন্য একটি সার্বিক নির্দেশনা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ আইসিটি’র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে। আমরা এখনো তা পারিনি। সময়ের সাথে আইসিটির গুরুত্ব বেড়েছে। এখন পৃথিবীতে আইসিটি ছাড়া ভবিষ্যৎ কল্পনা অসম্ভব। অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির তুলনায় আইসিটি’র ক্ষেত্রে সম্পদের প্রয়োজন অনেক কম এবং মানব সমাজের ভবিষ্যৎ নিবিড়ভাবে আইসিটি’র সাথে সম্পর্কিত। তাই দেশের কর্মসূচিতে ও জাতীয় বাজেটে এ প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন করে বর্তমান পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠতে হবে। একটি অগ্রসর দেশ তথা বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আইসিটির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯-এর সারকথা এটিই। এ নীতিমালায় একটিমাত্র রূপকল্প, ১০টি লক্ষ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয়বস্ত্ত এবং ৩০৬টি করণীয় বিষয়কে পিরামিড আকারে ক্রমবিভক্ত করে সাজানো হয়েছে। রূপকল্প ও উদ্দেশ্যকে জাতীয় লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে।
উল্লিখিত রূপকল্পের সারকথা হচ্ছে : আইসিটির সম্প্রসারণ এবং বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা; দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন নিশ্চিত করা; ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ত্রিশ বছরের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করার জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। এ রূপকল্প বাস্তবায়নে একটি যথার্থ দূরদর্শী বাজেট প্রণয়নের তাগিদটা এসে যায় বৈকি। সেই সাথে উপরে উল্লিখিত বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণেও একই তাগিদ সামনে এসে দাঁড়ায়। সে উপলব্ধিকে সামনে রেখে আসন্ন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সচেতন বিবেচনার জন্য কিছু সুপারিশ রাখা হলো। পাশের বক্সে দেখুন।
আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি
আমরা জানি, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিশ্রুতি দানে জোরালো উচ্চারণের অধিকারী ছিল। ‘দিন বদলের বাংলাদেশ’ গড়ায় প্রযুক্তির প্রয়োগকে এরা অগ্রাধিকারের পর্যায়ে রেখেছে। সেই সূত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছে। যার প্রতিফলন জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯-এও রয়েছে। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাক-মুহূর্তে আইসিটি বিষয়ে এ সরকারের দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো স্মরণে আনতে চাই তাদের ভাষায় :
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত এবং জোট সরকারের আমলে নিষ্ক্রিয় করা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক টাস্কফোর্স সক্রিয় ও কার্যকর করা হবে। এ ছাড়া নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া হবে :
ক. তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা, ব্যবহার এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। নিম্ন মাধ্যমিক থেকে কমপিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে তা সরবরাহ করা হবে। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষামূলক মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারে রূপান্তর করা হবে এবং সব স্তরের শিক্ষা পদ্ধতিকে ডিজিটাল করা হবে।
খ. দেশের ভেতরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সবক্ষেত্রে (প্রশাসনিক কর্মকান্ডে, ব্যাংকিং, গণযোগাযোগ, চিকিৎসা ব্যবস্থায়, ব্যবসায়-বাণিজ্যে ও গণমাধ্যম ইত্যাদিতে) পরিব্যপ্ত করে এবং সফটওয়্যারের রফতানি শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও দক্ষ প্রোগ্রামার তৈরির লক্ষ্যে সাধারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর সবিশেষে গুরুত্ব দেয়া হবে।
গ. কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনকিউবেটর ও কমপিউটার ভিলেজ স্থাপন করা হবে।
ঘ. দেশের জন্য আরো একটি আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ স্থাপন করে সারাদেশে এর সুযোগ-সুবিধা পৌঁছানো হবে।
ঙ. দেশে ইলেকট্রনিক, ইলেকট্রিক্যাল এবং কমপিউটার ও এর যন্ত্রাংশ তৈরি/সংযোজনকে উৎসাহিত করা হবে।
চ. তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণায় সরকারিভাবে বরাদ্দ দিয়ে তা যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ছ. জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় পুনর্বিন্যাস করা হবে এবং সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতকে রফতানি সহায়তা দেয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ এবং আগামী দেড় দশকের মধ্যে অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করা হবে।
জ. তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব মেধাসম্পদ সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। কপিরাইট আইনের সঠিক প্রয়োগ করা হবে এবং প্যাটেন্ট-ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক যুগোপযোগী করে তা প্রয়োগ করা হবে। ই-কমার্স চালুর জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।
ঝ. টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তির আরো সম্প্রসারণ ও সহজলভ্য করা হবে এবং সারাদেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য করা হবে।
ঞ. তথ্যপ্রযুক্তিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পেছনে সুষ্ঠু তহবিল যোগানোর বিষয়টি অপরিহার্য। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব মাথায় না রাখলে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না।
বিনিয়োগ বাড়াতে কমাতে হবে সিম ট্যাক্স
বাংলাদেশে টেলিডেনসিটি বিগত দশকে বেশ বেড়েছে। কিন্তু দেশের টেলিফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর প্রত্যাশা ছিল এই টেলিডেনসিটি আরো বেশিমাত্রায় তুলে আনার। কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা যথাযথভাবে পূরণ হয়নি বলে তাদের অভিমত। এ প্রসঙ্গে নোকিয়া ইমার্জিং এশিয়ার জেনারেল ম্যানেজার প্রেমচাঁদের মন্তব্য টেনে আনা যায়। সম্প্রতি তিনি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের টেলিকম বাজার প্রসঙ্গে তার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ বাজার প্রসঙ্গে আমাদের উঁচুমাত্রার প্রত্যাশা ছিল। আমরা এ প্রত্যাশার কিছুটা পূরণ করতে পেরেছি মাত্র। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা পূরণের গতিটা কমে গেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। তবে প্রত্যাশা পূরণে কাঙ্ক্ষিত গতি আনার ব্যাপারটি অসম্ভব কিছু নয়।’
তার মতে, এখানে অ্যাফর্ডেবিলিটি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ এখনো মোবাইল পেনিট্রেশনের ক্ষেত্রে তালিকার সর্বনিম্ন পাঁচ দেশের মধ্যে একটি। ২০০৬ সালে এদেশে ছিল ১ কোটি ফোনগ্রাহক। গত তিন বছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটিতে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি গতি হারানোর কারণ ‘অ্যাফর্ডেবিলিটি’ নামের বাধাটি। বাংলাদেশের মানুষের প্রতিদিনের জনপ্রতি গড় আয় ১০০ টাকা। অতএব একটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি সিমকার্ড কেনা তাদের পক্ষে সহজ কাজ নয়।
তিনি বলেন, সিম ট্যাক্স, মোবাইল ফোনের ওপর আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য করের কারণেই এখানে টেলিফোন পেনিট্রেশনের গতিটা কমে গেছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। মোবাইল ইন্টারনেট এক্ষেত্রে হতে পারে সর্বোত্তম সমাধান। কারণ, ফিক্সড টেলিফোন এদেশের মানুষের জন্য সহজলভ্য নয়। সেজন্য টেলিফোন পেনিট্রেশন বাড়াতে হলে সিম ট্যাক্স, মোবাইল ফোনসেটের ওপর আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য কর পর্যালোচনা দরকার।
এদিকে মিসরভিত্তিক টেলিকম অপারেটর ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিং (ওটিএইচ) বাংলাদেশে তাদের মালিকানাধীন বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণসহ গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে মূলধন বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়াতে চায়। তবে এর পরিমাণ কত, তা নির্ভর করবে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের সিম ট্যাক্স কমানোর ওপর। এরা আশা করছে, আগামী বাজেটে সিম ট্যাক্স কমানো হবে। সেক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ও পদ্ধতি নিরূপণের জন্য আগামী ১০ জুনের বাজেট ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে এ কোম্পানি।
গত ১৮ এপ্রিল মিসরের রাজধানী কায়রোতে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদলের সাথে আলাপের সময় এমনটিই জানিয়েছেন ওটিএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী খালেদ বিশারা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের যদি ১০০ টাকার মধ্যে ৯০ টাকাই ভর্তুকি দিতে হয়, তাহলে বাকি ১০ টাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মান বাড়ানোয় নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সিম ট্যাক্স যত কমবে, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মানোন্নয়নে মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ তত বাড়বে। এতে করে গ্রাহকরা উপকৃত হবেন। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাব।
উল্লেখ্য, ওরাসকমের খালেদ বিশারাও নোকিয়ার প্রেমচাঁদের মতোই মনে করেন, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক বাড়ানোর হার প্রতিবেশী ও অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম। সিম ট্যাক্স, মোবাইল ফোনসেটের ওপর ট্যাক্স ও অন্যান্য ক্ষেত্রের ট্যাক্স এক্ষেত্রে বড় বাধা। খালেদ বিশারা স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন সংযোগ কর তথা সিম ট্যাক্স বাতিল বা না কমালে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে না ওরাসকম। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগের উন্নয়নের স্বার্থে তার পরামর্শ হচ্ছে, সংযোগ কর একেবারে বাতিল না করলেও কমপক্ষে ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।
মোবাইল ফোনসেটের আমদানি শুল্ক হোক ১০০ টাকা
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনসেটের ওপর এক স্তরবিশিষ্ট সুনির্দিষ্ট কর আরোপের দাবি জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে এই শুল্ক সেটপ্রতি ১০০ টাকা হওয়া উচিত বলে এরা মনে করছেন। গত ২৫ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে এরা এ দাবির কথা জানান। অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় এ দাবি তোলেন। তা ছাড়া বাংলাদেশে নোকিয়া, স্যামসাং, সনি এরিকসন, মটোরোলা, এলজিসহ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির প্রতিনিধি এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, এ দাবির প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্রেড ভ্যাটসহ প্রতি মোবাইল ফোনসেটের ওপর ১০০ টাকা হারে কর নির্ধারণ করা উচিত। এর ফলে বাংলাদেশে সব মোবাইল ফোনসেট বৈধপথে আমদানি হবে এবং সরকার প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারবে। পাশাপাশি এতে করে হুন্ডির মাধ্যমে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। উল্লেখ্য, বর্তমান ১২ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যার ফলে বৈধপথে মোবাইল ফোনসেট আমদানি কমে গেছে। অপরদিকে বেড়ে গেছে অবৈধপথে আমদানি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। ২০১১ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৭ কোটি উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে মোবাইল ফোনসেটপ্রতি ১০০ টাকা হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা উচিত।
সুপারিশমালা
০১.
জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় অর্থমন্ত্রীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন বাজেটের ৫ শতাংশ বরাদ্দের যে ম্যান্ডেট রয়েছে, অর্থমন্ত্রীকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে আগামী জাতীয় বাজেটে।
০২.
তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।
০৩.
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট বাজেটীয় উদ্যোগ থাকা চাই।
০৪.
দেশে টেলিডেনসিটি বাড়ানোর ব্যবস্থা বাজেটে থাকা চাই।
০৫.
সিমকার্ডের কর কমপক্ষে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে।
০৬.
দেশের টেলিফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর দেয়া বাজেট প্রস্তাব বিবেচনায় আনতে হবে।
০৭.
আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন, বেসিস ও বিসিএসের দেয়া বাজেট প্রস্তাব সুবিবেচনার দাবি রাখে।
০৮.
বন্দর ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
০৯.
টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সহজলভ্য করার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বাজেটে থাকা চাই।
১০.
সর্বব্যাপী দুর্নীতির অবসান ঘটাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরো পরিব্যপ্ত করতে হবে।
১১.
কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
১২.
মহাখালী সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক গড়ে তোলার পদক্ষেপ বাজেটে থাকা প্রয়োজন।
১৩.
সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশের পথ খুলতে হবে।
১৪.
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করতে হবে।
১৫.
দেশে ইলেকট্রনিক, ইলেকট্রিক্যাল ও কমপিউটারের যন্ত্রাংশ উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
১৬.
তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগে বাংলাভাষার প্রয়োগক্ষেত্র সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
১৭.
প্রশাসনিক কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে বছরব্যাপী সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৮.
তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা রফতানির ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে হবে।
১৯.
দেশী সফটওয়্যার ব্যবহারে প্রণোদনা/উৎসাহ দিতে হবে।
২০.
গতিশীল ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com