• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল বাংলাদেশে উপেক্ষিত ডিজিটাল বাংলা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল বাংলাদেশে উপেক্ষিত ডিজিটাল বাংলা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের আলোচনায় গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ হয় অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্টের। ভাষার নামে সৃষ্ট এই দেশটি সম্পর্কে বিশদ জানতে চান তিনি। অনুষ্ঠানে হাতে পাওয়া একটি বাংলা বইয়ের কিছু ছবি তার দৃষ্টি কাড়ে। পর্তুগিজ ভাষাতে পড়তে চান বাংলা অক্ষরে লেখা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ওই ইতিহাস বইটি। এজন্য প্রথমে অনলাইনে বাংলা ওসিআর (অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন) ও বাংলা করপাস (ডিজিটাল অভিধান যেখানে টেক্সট টু স্পিচ ও স্পিচ টু টেক্সট সুবিধা থাকে) খুঁজতে থাকেন। একই সাথে ভাষা নিয়ে গবেষণা করছে দৃষ্টিপ্রতিন্ধী এক বন্ধুর জন্য বাংলা বই ব্রেইলে রূপান্তর করা যায়, এমন একটি অ্যাপ সার্চ দেন। কিন্তু হতাশ হন তিনি।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
৭১তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলছে। অধিবেশনে উপস্থিত রাষ্ট্রনেতাদের কানে হেডফোন। সামনের ডিসপ্লেতে বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট। সেখানে বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আর বিশ্বের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানরা তা শুনছেন নিজ নিজ ভাষায়। সামনের মনিটরে আবার তা প্রকাশ হচ্ছে ইংরেজি ও তাদের ভাষাতেও।
গত কয়েক বছর ধরেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে উপেক্ষেত ডিজিটাল বাংলা’ নিয়ে নিয়মিত আমরা লিখে আসছি। গোড়া থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার রয়েছে কমপিউটার জগৎ। তারপরও সেই তিমির যেনো কাটছে না। আমরা আশাবাদী, তাই হাল ছাড়ছি না।
বৈচিত্র অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষে মানুষে মেলবন্ধন গড়ে তুলছে প্রযুক্তি। ঘুচে দিচ্ছে দূরত্ব, বাধা-ব্যবধান। সঙ্গত কারণেই বিশ্ব আজ এনালগ পদ্ধতি ছেড়ে আবৃত হচ্ছে ডিজিটাল চাদরে। সেই বিনি সুতার সালুতে জড়িয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে এগোচ্ছে বাংলাদেশও। এনালগ পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে আগেই ডিজিটাল পথে হাঁটতে শুরু করেছি আমরা। প্রামিত্মক পর্যায়ে দেশের মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে মুঠোফোন। ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছেন এরা। ঘরে বসেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম পূরণ করছেন। ইতোমধ্যেই বাংলা ভাষা সব যন্ত্রে ব্যবহারোপযোগী হয়েছে। প্রামিত্মক পর্যায়েও বাড়ছে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার। ব্যবহার-চাহিদা বাড়লেও ভাষার ক্ষেত্রে ডিজিটাল বৈষম্য ঘুচতে আমাদের ঐকামিত্মক ইচ্ছেটাই যেনো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ডিজিটাল হলেই সেখান থেকে বাংলা বিদায় নিচ্ছে। অফিসগুলো ইংরেজিনির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ডিজিটালায়নের সাথে সাথে সেখান থেকে বাংলা ভাষা অপসৃত হতে চলেছে। মুঠোফোন থেকে শুরু করে তড়িৎ বার্তায় ই-মেইল ব্যবহার হচ্ছে। রোমান অক্ষরে যোগাযোগ স্থাপনের চল দিন দিনই বাড়ছে। ফলে এখনও আমরা সরকারের বার্তাগুলো ইংরেজি রোমান হরফে পাচ্ছি। জাতীয়ভাবে বাংলার জন্য একটি প্রমিত কিবোর্ডকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারিনি। এই কিবোর্ড নিয়েও বিজয়-অভ্র-রিদ্মিক মেধাস্বত্ব লড়াইয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ফলে ব্যাকরণ ও বাংলা ভাষার বিজ্ঞান ও প্রাযুক্তিক সৌন্দর্য থেকে মুখ ফিয়ে ফনেটিকনির্ভর হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। বাংলা ‘করপাস’ আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ঘড়ির কাঁটা।
এর মধ্যে সীমিত আকারে হলেও সরকার ও ব্যক্তি পর্যায়ে এগিয়ে চলছে বাংলাবান্ধব নানা উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমানভাবে এগোচ্ছে ই-বইয়ের প্রকাশনা। ই-বই প্রসঙ্গ এলেই উঠে আসে বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ্যাক আসিমভের বিখ্যাত উক্তি- ‘আগামীতে কাগজের বই বলে কিছু থাকবে না। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কাগজের বই হয়ে যাবে ডিজিটাল।’ তার কল্পনা একেবারে মিথ্যা হয়নি। সত্যি সত্যিই পৃথিবীজুড়ে ডিজিটাল বই অথবা ই-বুক কিংবা ই-বইয়ের পাঠকপ্রিয়তা বাড়ছে। সঙ্গত কারণে কমপিউটারে, ল্যাপটপে পড়ার পাশাপাশি বই পড়ার জন্য ট্যাব অথবা ই-বুক রিডারেরও কদর বাড়ছে। কমপিউটারে টাইপ করা ফাইল কাগজে প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয় না বলে ই-বুক কাগজের বই অপেক্ষা দামে সস্তা। কয়েক হাজার ই-বুক ছোট্ট একটা ডিভাইসে সংরক্ষণ করা যায় বলে কাগজের বইয়ের চেয়ে অনেক হালকা এবং সব স্তরের পড়ুয়া বিশেষ করে ছাত্র এবং ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক। উন্নত বিশ্বে কাগজের বই ছাপার ঝামেলা, খরচ ইত্যাদি নানা কারণে ডিজিটাল বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশেও সেই জোয়ার এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখকদের ‘ই-বুক’ পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেটে। বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকেই পাঠকরা সেসব লেখার স্বাদ নিতে পারছেন।
কয়েক দিন আগেও বাংলা ই-বুক তেমনভাবে পাওয়া যেত না, অথচ এখন তার ছড়াছড়ি। এমনিতেই পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়ার অভ্যাস কমে আসছে বলে নানামুখী আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের সৃজনশীল বই প্রকাশকেরা ধুঁকছেন। এ পরিস্থিতিতে ডিজিটাল বইয়ের প্রসার ঘটলে এই প্রকাশনা খাতের অবস্থা কী দাঁড়াবে সেটা ভাবার বিষয়। শুরুতে ডিজিটাল বইকে যেভাবে কল্পনা করা হয়েছিল, তা এখন আর নেই। প্রথম দিকে ডিজিটাল বুক বা ই-বুকগুলো কমপিউটারে পিডিএফ (পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফরম্যাট) হিসেবে সংরক্ষিত থাকত। তাই অনেকে একে পিডিএফ বইও বলত। এখনও এই পদ্ধতিটি বিশ্বে চালু রয়েছে। ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইটে এখনও এই পদ্ধতিতে বই সংরক্ষিত আছে, যা বিশ্বের কোটি কোটি পাঠক নিয়মিত পড়ছেন এবং সংগ্রহ করছেন। বিশ্বের অনেক ওয়েবসাইট এখন বিভিন্ন জনপ্রিয় পিডিএফ বইগুলো বিনামূল্যে ডাউনলোড করার সুযোগ দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। কারণ, বাংলাদেশের বেশ কিছু ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখকদের বই বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে সময়ের সাথে সাথে এ পদ্ধতিরও কিছুটা উন্নতি ঘটে। পিডিএফ প্রযুক্তির পরবর্তী প্রযুক্তি হিসেবে এসেছে ‘ডিজেভিইউ’ (DJVU)। এ পদ্ধতিটির সুবিধা হচ্ছে, এতে বই পড়ার ক্ষেত্রে চোখে চাপ কম পড়বে। পিডিএফে বই পড়ার প্রধান অসুবিধা হল, এতে একসাথে একটির বেশি পৃষ্ঠা পড়া যায় না এবং ছবি প্রকাশের সুবিধাও তেমন নেই। অন্যদিকে ডিজেভিইউতে একইসাথে দুই বা এর বেশি পৃষ্ঠা পড়া যায় এবং এসব পৃষ্ঠা এমনভাবে দেয়া হয় যাতে ব্যবহারকারীর মনে হয়, তিনি কোনো কাগজে বাঁধাই করা বই পড়ছেন।
আগের পদ্ধতি দুটির জন্য ব্যবহারকারীর কমপিউটার থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বর্তমান যুগে ডিজিটাল বই পড়ার জন্য কমপিউটার থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে যে জিনিসটি থাকতে হবে, তা হচ্ছে ডিজিটাল বুক রিডার। এই ডিভাইসটি আকারে ছোট, হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য। শুধু তাই নয়, এগুলো দেখতেও যথেষ্ট স্মার্ট। বর্তমান সময়ে ই-রিডারগুলোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ- এগুলো যেমন ছোট এবং হাতব্যাগে বহন করার মতো হালকা, তেমনি পড়ার জন্য একগাদা বই কিংবা সংবাদপত্রের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯৩০ সালে আমেরিকায় বব ব্রাউন তার সবাক চলচ্চিত্রে প্রথম ই-রিডারের ধারণা দেন। এ সম্পর্কে তিনি একটি বইও লেখেন ‘দি রিডার্স’ নামে। যেখানে তিনি এমন একটি যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন, যা মানুষকে পড়তে সাহায্য করবে আর সেখানে অনেক বইয়ের সংগ্রহ রাখা সম্ভব হবে। সেই কল্পনা এখন বাস্তবতা।
ই-বুকের প্রসারে বইয়ের প্রকাশকেরাও বসে নেই। তারাও বুঝতে পেরেছেন, আগামীতে ব্যবসায় ধরে রাখতে হলে তাদের বইকে ডিজিটালে রূপ দেয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। তাই তারাও এখন উঠেপড়ে লেগেছেন বইকে ডিজিটাল করার কাজে। তবে এই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কপিরাইট আইন। পুরনো যে বইগুলোর কপিরাইট নেই, এখন শুধু সেগুলোকেই গুরুত্ব দিয়ে জোরেশোরে ডিজিটাল করার কাজ চলছে। অবশ্য আজকাল অনেক প্রকাশনা সংস্থাই তাদের নতুন প্রকাশিত বইগুলোর ক্ষেত্রে মুদ্রণ এবং ডিজিটাল উভয় সংস্করণেরই কপিরাইট করিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে এসব বইয়ের ক্ষেত্রে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না। ডিজিটালে রূপায়িত এই বইগুলো বিক্রি করা হবে ই-বুক রিডার ব্যবহারকারীদের কাছে।
ডিজিটাল বাংলা প্রকাশনা
ডিজিটাল বিশ্ব বাস্তবতায় চলমান ভাষার মাসের প্রথম ভাগেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রকাশিত হয়েছে বাংলা বাইয়ের নতুন ওয়েব সাইট ‘জ্ঞান বিকাশ’। মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘বাংলা ই-বই’। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত শিক্ষা উপকরণ (OER) নির্ভর ই-লার্নিং সেবা ‘মুক্তপাঠ’।
জ্ঞান বিকাশ : দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতীয় লেখকদের রচিত বাংলা ভাষার বিভিন্ন ধরনের বই পাঠ-উপযোগী করে তা প্রকাশ হচ্ছে জ্ঞানবিকাশ ডটকমে (http://www.gyanbikash.com)। ফ্রিল্যান্সারদের প্লাটফর্ম আপওয়ার্কের সহায়তায় এই ওয়েবটি ডেভেলপ করেছেন শৈশবে টাইফয়েড জ্বরে দৃষ্টিশক্তি হারানো আবুল কালম আজাদ। বর্তমানে তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। তার তৈরি এই ওয়েবে অন্তর্ভুক্ত বইগুলো পড়তে প্রয়োজন নেই ই-ব্রেইলের। রয়েছে অডিও বই এবং কমপিউটার ই-বুক। ফলে এই ওয়েবে প্রবেশ করে মুঠোফোন, পিসি বা ট্যাব থেকে পছন্দের বইয়ের পাঠ শুনতে পারবেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। জীবনী, রম্য, মুক্তিযুদ্ধ গল্প-উপন্যাস ছাড়াও শিশুদের জন্য দারুণ সব কবিতার বই রয়েছে সাইটটিতে। বিষয়ভিত্তিক সুবিন্যস্তভাবে সাজানো ওয়েবসাইটটিতে রয়েছে ইতিহাস, কবিতা, হরর, গণিত, বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান ও ইসলামী বই। আপাতত এখানে রয়েছে অর্ধশতাধিক বই।
ই-বই : শুরু থেকেই বহুমাত্রিক ই-বইয়ে এখন ডিজিটালায়নের স্বাদ পেতে শুরু করেছে অমর একুশে বইমেলা। মেলায় নতুন নতুন বইয়ের ই-সংস্করণ প্রকাশ করছে ‘বেঙ্গল ই-বই’ (http://banglar-eboi.com)। মেলা থেকে ভিসা, মাস্টার কার্ড ও বিকাশের মাধ্যমে পিডিএফ, ই-পাব ও মোবি সংস্করণের ডিজিটাল বই সগ্রহ করতে পারছেন পাঠক। প্রায় ২৫০টি ই-বই বিনামূল্যে পরিবেশন করছে সেইবই (https://play.google.com/store/apps/details?id=raven.reader)। জনপ্রিয় থ্রিলার রাকিব হাসানের নরবলি, পাগলা ঘণ্টা, যাও এখান থেকে এবং বিষধর বইটির ছাপ সংস্করণ ৪৮০ টাকা এবং ডিজিটাল সংস্করণ ১২০ টাকায় বিক্রি করছে এই প্রকাশনাটি। কালজয়ী উপন্যাসের ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশ করেছে চড়ুই ডটকম (www.chorui.com/catalog)।
একুশ ই-বুক : বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় রচিত বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম ও গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে নিয়ে আসার প্রয়াসে প্রকাশিত হয়েছে দেশের প্রথম ইলেকট্রনিক বুক ‘একুশ ই-বুক’। বদলে যাওয়া সময়ে বই পড়ার আগ্রহ আরও বাড়াতে পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা বাঙালি সাহিত্যানুরাগীদের কাছে সহজে বাংলা সাহিত্য পৌঁছে দিতে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মাত্রা’র সহযোগিতায় মোবাইল ফোন কোম্পানি ‘ওকে মোবাইল’ বের করেছে এই ই-বুক। গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর ধানম--র মাইডাস সেন্টারে এবং ২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ই-বুকটির উদ্বোধন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একুশ ই-বুক প্রকাশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘ছাপার অক্ষরের বইয়ের বাইরে ই-বুকের একটা বাড়তি আকর্ষণ আছে। কিন্তু আমরা এখন ছেলেমেয়েদের বই পড়তে উৎসাহ দিই না।’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে যে ডিজিটাল সমাজ তৈরি হচ্ছে, তাতে ই-বুক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আশা করব একুশ ই-বুক সচেতন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরিতে সহায়ক হবে।’
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ‘মাত্রা’র ম্যানেজিং পার্টনার সানাউল আরেফিন, ফরিদুর রেজা সাগর ও আফজাল হোসেন। এটি মূলত ওকে মোবাইলের একুশে ট্যাবের একটি অ্যাপ। প্রাথমিকভাবে এই অ্যাপে জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল হক মিলন, শিশুতোষ সাহিত্যিক ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং অভিনেতা আফজাল হোসেনের ৩০টি বই সংযুক্ত হয়েছে। বইগুলো পড়তে হলে পাঠককে একুশে ট্যাব কিনে পড়তে হবে। ট্যাবটির দাম ১১ হাজার ৯৯০ টাকা। পরবর্তী সময়ে এপার বাংলা-ওপার বাংলার বহু লেখকের অসংখ্য লেখার বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে এই একুশ ই-বুক।
ওকে মোবাইলের কর্ণধার কাজী জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসে একসাথে বিশ্বের ৩৮টি দেশে একুশ ই-বুক উন্মুক্ত করা হবে।’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে একুশ ই-বুকে ১০ লাখ বই সংযুক্ত হবে। পাঠক এই অ্যাপটির মাধ্যমে অনলাইনে বই কিনতে পারবেন। আবার একুশ ই-বুক গ্রন্থাগারের সদস্য হয়েও পছন্দের বইগুলো পড়া যাবে।
জানা গেছে, একুশ ই-বুক মূলত ওকে মোবাইলের একুশে ট্যাবের একটি অংশ। একুশ ই-বুকের স্বাদ নিতে হলে পাঠককে কিনতে হবে ওকে একুশ ট্যাব। যাতে অন্যান্য বিনোদনমূলক অ্যাপের পাশে থাকবে এই ‘একুশ ই-বুক’। পাঠক এর মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার করে বিশ্বের যেকোনো বই কিনতে পারবেন। আবার একুশ ই-বুক লাইব্রেরির মেম্বার হয়েও পড়তে পারবেন অসংখ্য বই।
এদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ডিজিটাল বইয়ের প্রচলনে সরকার বেশ জোরেশোরেই এগোচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রচলিত পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য ইন্টারেকটিভ ডিজিটাল টেক্সটবুক চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা অন্যান্য ক্লাসের জন্যও করা হবে। নব এ উদ্যোগের ফলে নতুন প্রজন্মের জন্য প্রযুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বইয়ের ইন্টারেকটিভ ডিজিটাল বই তৈরি করা হবে।
তবে অনেকেই বলেন, বই যতভাবেই পরিবর্তিত বা বিবর্তিত হোক না কেন, কাগুজে বইয়ের আবেদন কোনোদিন ফুরাবে না। কারণ, কাগুজে বই পড়া ভারি মজার একটা কাজ, যে বই পড়েছে সেই এ কথাটা জানে। এখন দেখার বিষয়, ই-বই আসলেই কি হটিয়ে দিতে পারবে এত দিন ধরে কালজয়ী আবেগ সৃষ্টিকারী কাগজে লেখা বইকে? তবে অনেকের মতে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রবল প্রতিপত্তির যুগেও ছাপা বই তার গুরুত্ব হারায়নি, হারাবেও না। কেননা, নতুন বই কেনার পরে তার প্রচ্ছদ, বইয়ের বাঁধাই সবকিছু মিলিয়ে যে আবেগ জড়িয়ে রয়েছে, তা কখনই পাঠকের মন থেকে হারিয়ে যাবে না। উন্নত বিশ্বে ই-বুকের জোয়ারের কালেও ছাপা বইয়ের কদর একেবারেই হারিয়ে যায়নি। সঙ্গত কারণেই পূর্ণাঙ্গ বাংলা, ওসিআর, করপাস, টেক্সট টু স্পিচ, স্পিচ টু টেক্সট ইত্যাদির অভাব প্রকট রূপে ধরা দিয়েছে। শুধু ঐকামিত্মক ইচ্ছে আর দেখভালের সময় মতো নেয়া উদ্যোগের বাস্তবায়নের অভাবেই আমরা এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে আমরা পুঁথি ও বাংলা করপাস নামে দুটি বাংলা ওসিআর পেলেও তা অসম্পূর্ণ হওয়ায় এখনী সাধারণের কাজে আসছে না।
আবার বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে গত ২৬ মার্চ ২০১৫ দেশজুড়ে পালিত হয় ‘বাংলার জন্য চার লাখ’। উদ্দেশ্য ছিল এদিনে দেশ ও বিদেশের আপামর জনসাধারণ গুগলের ইংরেজি-বাংলা ট্রান্সলেটরের জন্য অন্তত চার লাখ শব্দ বা বাক্যাংশ অনুবাদ। এভাবে ক্রাউড সোর্স করে প্রাপ্ত করপাসকে বিশেস্নষণ করে এই যান্ত্রিক অনুবাদকটি আরও কার্যকরভাবে বাংলা রচনাকে অনুবাদ ও বিশেস্নষণ করতে পারবে। এই আয়োজন চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। চারের জায়গায় প্রায় সাত লাখ শব্দ, বাক্যাংশ যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের সবার মধ্যে বাংলার জন্য কাজ করতে চাওয়ার যে অন্তর্গত প্রেরণা এই সাফল্য তার একটা প্রমাণ।
মুক্তপাঠ : ‘শিখুন... যখন যেখানে ইচ্ছে’ সেস্নাগানে উন্মুক্ত হয়েছে ওয়েবভিত্তিক ই-লার্নিং সেবা ‘মুক্তপাঠ’ (www.muktopaath.gov.bd)। এখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো বটেই, আগ্রহী যেকেউ অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে পারছেন। সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা-বিষয়ক কোর্স কৃষকদের শস্য উৎপাদনের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো-সার নিয়ে ৭০টি ভিডিও রয়েছে এতে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রস্ত্ততির বিষয়টিও বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে তৈরি এই ওয়েবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ই-লার্নিং : অমর একুশে বইমেলায় এবার প্রকাশ করা হয়েছে ই-লার্নিং নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম বই ‘ই-লার্নিং : উন্মুক্ত এবং বিভাজিত শিখন পরিবেশ’। বইটি লিখেছেন আধুনিক ই-লার্নিংয়ের পথিকৃৎ ড. বদরুল হুদা খান। তার তৈরি ই-লার্নিং ফ্রেমওয়ার্ককে ভিত্তি ধরে চালু করেছে পিএইচডিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কোর্স।
এটি প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প। বইটির বিষয়ে লেখকের অভিমত, ই-লার্নিং নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম এই বইটি সম্পূর্ণ ই-লার্নিং ফ্রেমওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে। ই-লার্নিং ফ্রেমওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে রচিত এই বইয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- শিক্ষার্থীদের চাহিদামতো ফ্লেক্সিবল ও উন্নতমানের অর্থপূর্ণ ই-লার্নিং শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদে বিশ্বে কম খরচে বা বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে এটি এক নতুন বিপ্লব। এটি আশির দশকে দেশের মানুষ ভাবতেও পারেনি। ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর সময় যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেখাপড়া করার সুযোগ থাকত, তবে তাকে হয়তো এত কষ্ট করে বিদেশে যেতে হতো না। শিক্ষায় প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা বিশ্বখ্যাত অ্যাসোসিয়েশন ফর এডুকেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির (এইসিটি) সাবেক সভাপতি ও ভার্চুয়াল এডুকেশনে হোয়াইট হাউস অফিস অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পলিসির (ওএসটিপি) পরমার্শক ড. বদরুল হুদা খান আরও জানান, ই-লার্নিং নিয়ে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত তার ‘ওয়েব-বেইজড ইনস্ট্রাকশন’ বইটি যুক্তরাষ্ট্রে বেস্ট সেলার। বইটি বিশ্বের প্রায় ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক ও রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ই-লার্নিংয়ে তার বিভিন্ন বই প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের ১৭টি ভাষায়।
বাংলা অপেরা : চলতি মাসেই বাংলাসহ ৯০টি ভাষায় ব্যবহার সুবিধা চালু করছে জনপ্রিয় ব্রাউজার অপেরা মিনি। ব্রাউজারটির হালনাগাদ সংস্করণ কাজে লাগিয়ে অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং সিস্টেমে চলা ডিভাইসে এ সুবিধা মিলবে। ফলে ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে নিজ ভাষায় ব্রাউজারটির বিভিন্ন সেবা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন বাংলা ভাষাভাষীরা। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, অসমিয়া, গুজরাটি, কানাড়া, মালয়ালাম, মারাঠি, উড়িয়া, পাঞ্জাবি এবং তেলেগু ভাষাও সমর্থন করবে নতুন এ সংস্করণ। নতুন ভাষা-যোগের পাশাপাশি কিউআর কোড রিডার সমর্থনও করবে অপেরা মিনি।
অ্যাপ : মেলায় বাংলালিংক গ্রাহকদের জন্য ই-বুক রিডার ‘বাংলালিংক বই ঘর’ এনেছে ইবি সলিউশন লিমিটেড। এই ই-বুক রিডারের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়িড এবং আইওএস ডিভাইসে পাতা উল্টেই বই পড়ার স্বাদ নিতে পারছেন অগ্রসর পাঠকেরা। আর এ সুবিধা নিতে প্রতিটি ই-বুকের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫ থেকে ২০ টাকা করে চার্জ করা হচ্ছে।
অ্যাপবাজার : গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয় বাংলা ভাষা সুবিধার অ্যাপ্লিকেশন কেনাবেচার প্লাটফর্ম ‘অ্যাপবাজার’। বাংলা ভাষায় ব্যবহার সুবিধা ছাড়াও অ্যাপবাজার ব্যবহারকারী এবং ডেভেলপারদের জন্য রয়েছে আলাপন (চ্যাটিং) সুবিধা। অ্যাপবাজার ব্যবহারকারীরা তার পছন্দের যেকোনো অ্যাপ তার বন্ধুদের গিফট দিতে পারবেন। অন্যান্য অ্যাপস্টোর থেকে পুরোপুরি ভিন্ন আদলে তৈরি করা হয়েছে অ্যাপবাজার। এখানে একজন ডেভেলপার কোনো টাকা ছাড়াই সহজে বিনামূল্যে অ্যাপ আপলোড করতে পারবেন। ব্যবহারকারীরা সহজে নিজেদের মুদ্রায় তথা দেশীয় টাকায় অ্যাপ কিনতে পারবেন এবং কম দামে অ্যাপ বিক্রিও করতে পারবেন (যেখানে গুগল প্লেতে একটি অ্যাপের সর্বনিমণ দাম ০.৯৯ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫ টাকা) এবং মাস শেষে কোনো ধরনের কার্ডের ঝামেলা ছাড়াই নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অ্যাপ বিক্রির টাকা পাওয়ার সুবিধা পাবেন।
এ বিষয়ে অ্যাপবাজার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্সড অ্যাপস বাংলাদেশ লিমিটেডের (এএপিবিডি) প্রধান নির্বাহী শফিউল আলম বিপ্লব বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো দেশীয় অ্যান্ড্রয়িড ডেভেলপারদের অ্যাপসের বিশাল এক সমারোহ নিয়ে চালু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ অ্যাপসের বাজার ‘অ্যাপবাজার’। যেখানে একজন ব্যবহারকারী খুব সহজেই তার পছন্দের অ্যাপস দেশীয় টাকায় কিনতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, অ্যাপবাজারে এখন থেকে অ্যাপ কেনাবেচা করা যাবে। আজ থেকে পরীক্ষামূলক সংস্করণে সম্পূর্ণভাবে লাইভ হবে দেশি এ অ্যাপস্টোর। বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, শিক্ষাক্ষেত্র, ব্যবসায় এবং চাকরির প্রতিটি ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তথা মোবাইল অ্যাপস বর্তমানে একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্ত্ততে পরিণত হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা চায়ের আড্ডায়- কোথায় নেই এই অ্যাপসের ব্যবহার। অ্যাপবাজার অ্যাপপ্রিয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সেই চাহিদা পূরণ করবে বলে আমি আশা করি। পাশাপাশি দেশীয় অ্যাপ নির্মাতাদের তৈরি অ্যাপ সহজে কেনাবেচার সুযোগও উন্মুক্ত হলো সবার জন্য।
বিজয় : উইন্ডোজ ৮ ও ১০ অপারেটিং সিস্টেমের টাচস্ক্রিন ডিভাইসে বাংলা লেখা ও পড়ার সুবিধা সংযুক্ত করেছে প্রকাশনায় সর্বাধিক ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন ‘বিজয়’। এর ফলে এখন আইওএস, অ্যান্ড্রয়িড ও উইন্ডোজ সব অপারেটিং সিস্টেমেই ব্যবহার করা যায় ব্যাকরণ রীতিকে বৈজ্ঞানিক কৌশল মেনে তৈরি এই জনপ্রিয় সফটওয়্যারটি। এর রয়েছে নিজস্ব লে-আউট। প্রকাশনা জগতে বাংলাকে মেশিন ভাষায় রূপান্তরে অগ্রজ ও দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী বাংলা সফটওয়্যারটিতে গেল বছরে অ্যাপবান্ধব নতুন ফিচার উন্নয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্ড্রয়িডের ব্যবহারিক শব্দ বাছাই, যুক্তাক্ষর সরাসরি যুক্ত করার সুবিধা। বৈচিত্র্য ও নান্দনিকতার ছোঁয়া নিয়ে ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ফন্ট। যুক্ত করা হয়েছে ১০০ বাংলা ফন্ট। এর পাশাপাশি স্কুল ব্যাগকে উধাও করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে শিক্ষণ কার্যক্রম প্রচলনে ডিজিটাল শিশু শিক্ষা ব্যবস্থাকে শহর ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রামিত্মক মানুষের কাছে। এ বিষয়ে বিজয় বাংলার কর্ণধার প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘বিজয় বাংলা’ স্মার্টফোন (অ্যান্ড্রয়িড) উপযোগী সংস্করণ গুগল প্লেতে উন্মুক্ত করা হয়। ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যেই ইনস্টল করতে পারছেন অ্যাপটি। https://play.google.com/store/apps/details?id=bijoy.key-board লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করার পর অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইসের সেটিংস অপশনের Language & Input-এ গিয়ে Bijoy key-board সিলেক্ট করলে বাঁ পাশে একটি টিক চিহ্ন দেখা যাবে। এটি সচল করলেই বাংলা লেখা যাবে।
এদিকে অ্যাপ ছাড়াই সম্প্রতি বাজারে আসা স্মার্টফোনগুলোতে লেখালেখির জন্য বিল্টইন বাংলা কিবোর্ড অপশন রাখা হচ্ছে। এসব কিবোর্ড দিয়ে অনায়াসেই বাংলা লেখা যায়। বাংলা লেখার জন্য বাড়তি অ্যাপ আর দরকার পড়ে না। তারপরও বাড়তি ফিচার বা সুবিধা, প্রচলিত লেআউট ও অভ্যস্ততার কারণে বাংলা লেখার অ্যাপ ইনস্টল করেন। শুধু স্মার্টফোনেই নয়, সাধারণ ফিচার ফোনেও ইদানীং বাংলা লেখার অপশন দেখা যাচ্ছে। যদি স্মার্টফোনে বিল্টইন বাংলা কিবোর্ড না থাকে, আর অ্যাপ ইনস্টল ছাড়াই বাংলা লিখতে http://bnwebtools.sourceforge.net/ অথবা http://bnwebtools.net/ লিঙ্কে যেতে হবে।
মার্চে যাত্রা করছে ডটবাংলা
কথা ছিল এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেমে (আইডিএন) বাংলা (ডটবাংলা) চালু হবে। তবে সবকিছু প্রস্ত্তত হলেও ‘অনুমোদন’ জটিলতায় তা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইক্যান) ওয়েবসাইটে রুট জোন ডাটাবেজে স্পন্সরিং অর্গানাইজেশনে ঝুলে আছে ‘নট অ্যাসাইন’ স্ট্যাটাস। ফলে ডোমেইন নেম চালুর মূল সোর্স বিশ্বের ১৩টি টপ লেভেল ডিএনএস সার্ভারে ডটবাংলা ডোমেইন সংরক্ষণের ছাড়পত্রও দেয়নি সংস্থাটি। আশা করা হচ্ছে, কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ডটবাংলার বরাদ্দ থাকলেও আইক্যান কর্তৃক বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ডোমেইন ম্যানেজারের ছাড়পত্র হাতে পেলেই ২৬ মার্চ আলোর মুখ দেখবে ডটবাংলা।
অবশ্য ইতোমধ্যেই ডোমেইন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সরকারি সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) সহযোগিতায় বিটিসিএল প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, সার্ভার স্থাপন, বিভিন্ন কারিগরি প্রক্রিয়া ও ডোমেইন বিক্রির নীতিমালা চূড়ান্ত করে রেখেছে। এ বিষয়ে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বললেন, ডটবাংলা চালু করতে বাংলাদেশ প্রস্ত্তত। বাকি আছে আইক্যানের ছাড়পত্র। সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স ডিপার্টমেন্ট থেকে এখনও ছাড়পত্র পায়নি আইক্যান। তাই ডটবাংলাকে টপ লেভেল ডিএনএস সার্ভারগুলোতে লিপিবদ্ধ করতে অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাই এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি তা আর চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে অনুমোদনটাই মূল বাধা। অনুমোদনের পর এটি চালু করতে যেসব কারিগরি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়, তা সব মিলিয়ে দুই দিনের কাজ।
অপরদিকে আইক্যানের সাথে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ স্থাপনকারী ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম পাপ্পু জানিয়েছেন, আইক্যান এখনও ডটবাংলার রুট জোন অ্যাসাইন করেনি। সার্ভার কনফিগারেশনসহ বিটিসিএলের সব কাজ শেষ। এখন আইক্যানকে রুট জোন ডেলিগেশন করতে হবে। ডটবাংলার জন্য পিসিএইচ ব্যাকআপও সম্পন্ন হয়েছে। ফলে কোনো কারণে বিটিসিএলের সার্ভার ডাউন থাকলেও ডটবাংলার নেটওয়ার্ক যেনো বিঘ্নিত না হয়।
এ বিষয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ডোমেইন ম্যানেজার হিসেবে সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আইক্যানের কাছে বিস্তারিত আবেদন করা হয়েছে আগেই। সংস্থাটির বোর্ডসভায় এটি অনুমোদনের অপেক্ষা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।
সূত্রমতে, ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ডোমেইন হিসেবে ‘ডটবাংলা’ কার্যকর করতে আইক্যানের কাছে আবেদন করেছিল। বাংলাদেশের আবেদনের পর সংস্থাটি বাংলা ভাষাকে মূল্যায়ন করে। এরপর ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেমে (আইডিএন) লেখার ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায় বাংলাদেশ। এরপর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বিটিসিএলের মধ্যে ডটবাংলার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকায় প্রথম ধাপে ডটবাংলা হাতছাড়া হয়। এই খবর প্রকাশের পর ২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডোমেস্টিক নেটওয়ার্কিং কো-অর্ডিনেশন কমিটির (ডিএনসিসি) সভায় বিটিসিএলকে ডটবাংলার দায়িত্ব দেয়া হয়।


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা