লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
জুনাইদ আহমদ পলক-
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
তরুণেরাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণশক্তি
জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি
প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ
আমাদের অর্জনের বিশাল ক্যানভাসে উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে তারুণ্যেরই জয়গাথা। নানা সৃষ্টিশীল উদ্যোগ, অর্জনে, কৃতিত্বে তরুণেরাই আমাদেও জন্য নতুন আশার সঞ্চারক। দেশে এখন এই তরুণদেও সংখ্যাই বেশি। মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ। যাদেও বয়স ৩৫-এর নিচে। বিশ্বে খুব কম দেশই এই বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও অবশ্য বাংলাদেশের মতোই জনসংখ্যা তাত্ত্বিকসুবিধা ভোগ করছে। চীন ২০১২ সালে ডেমোগ্রাফিক বোনাস থেকে বের হয়ে গেছে। দেশটিতে এখন নির্ভরশীল জনগনের সংখ্যা বেশি। এই কথা খাটে থাইল্যান্ডসহ বিশ্বেও বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের বেলায়ও। আরউন্নতবিশ্বেরকথাবলতে গেলে সেখানেদিনেদিনে কর্মক্ষম মানুষেরসংখ্যাকমেনির্ভরশীলমানুষেরসংখ্যা বেড়েযাচ্ছে। জনসংখ্যা-সুবিধানিয়েপূর্ব এশীয়অনেক দেশই ষাট থেকে নববই দশকেতাদের অর্থনীতিরউন্নতিকরেছিল। ষাটের দশকে দক্ষেণ কোরিয়াও একই রকমজনসংখ্যাসুবিধাঅর্জনকরেছিল। তারা একে কাজেলাগিয়েআজশিল্প-সমৃদ্ধ দেশ। তারাবিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগামী দেশেরশীর্ষ তালিকায় স্থানকরেনিয়েছে।
২০০৯ সালেপ্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার নেতৃত্বাধীনসরকারতার দূরদর্শীচিন্তা থেকে সামগ্রিককার্যμমে সব মানুষেরজন্য সুযোগসৃষ্টিরপাশাপাশিতারুণ্যের মেধা ও শ্রমকাজেলাগানোরজন্য নানাকার্যμমগ্রহণকরে। এসবকার্যμমেরলক্ষ্য তাদেরজন্য সুযোগসৃষ্টিকরেবিশালতরুণজনগোষ্ঠীকেসম্পদে পরিণতকরা। বিগতসাতবছরেকর্মক্ষমমানুষেরশ্রম ও ঘাম দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতেরউপর দাঁড়াতেসহায়তাকরেছে। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিকপ্রবৃদ্ধি যে রেকর্ড ৭.০৫ শতাংশে পৌঁছেছেতাতেঅবদান রেখেছেজনসংখ্যাতাত্ত্বিকসুবিধায় থাকাকর্মক্ষমমানুষেরা।
ডিজিটালবাংলাদেশ বিনির্মাণেরলক্ষে্য গৃহীত উদ্যোগ ও তারবাস্তবায়নেরদিকেতাকালেতারুণ্যের মেধা, উদ্ভাবনী ও শ্রমকেকাজেলাগানোর ক্ষেত্রেসরকারেরনিরন্তরপ্রয়াসলক্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টাসজীবওয়াজেদ জয়েরপরামর্শে সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সুদূরগ্রামপর্যন্তসম্প্রসারণের উদ্যোগগ্রহণকরেছে। যে কারণেআজআমরা দেখতে পাই তৃণমূলের থেকে শহরেরমানুষসবাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ভোগকরছে। একদিকে চলছে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, অপরদিকে চলছেআইসিটিশিল্পেরউন্নয়নএবং দক্ষ মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থানসৃষ্টিরনানা উদ্যোগ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেরকথাইধরাযাক। বিগতসাতবছরেআমরাআইসিটিঅবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, আইসিটিশিল্পেরউন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিরলক্ষে্য উদ্যোগগুলোরবাস্তবায়নেঅনেকদূরএগিয়ে গেছি। দেশেরঅধিকাংশমানুষএরসুফলপাচ্ছে। এসব উদ্যোগ দেশেরকর্মক্ষমমানুষেরজন্য সম্ভাবনার দুয়ারঅবারিতকরছে। আমিএখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেরকার্যμমসম্পর্কে সংক্ষেপেআলোকপাতকরতেচাই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গোটা দেশকেকানেক্ট করারজন্য কানেক্টিভিটিপ্রতিষ্ঠাকরছে। আমরাইতোমধ্যে আইসিটিঅবকাঠামোগড়ে তোলার অংশ হিসেবে জেলাএবংউপজেলাপর্যন্তকানেক্টিভিটিসম্প্রসারিতকরেছি। বাংলাগভনেটপ্রকল্পেরআওতায় ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২২৭টি অধিদফতর, ৬৪টি জেলাপ্রশাসকেরকার্যালয় ও ৬৪টি নির্বাচিতউপজেলানির্বাহীঅফিসারেরকার্যালয় একই নেটওয়ার্কেরআওতায়আনাহয়েছে। ইনফো সরকার-২ প্রকল্পেরআওতায় জেলা ও উপজেলার ১৮,৫০০টি সরকারি অফিসের কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৮০০ ভিডিওকনফারেন্সিংসিস্টেম, ২৫৪টি অ্যাগ্রিকালচারইনফরমেশনঅ্যান্ডকমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপনকরাহয়েছে। বিসিসিভবন ও বাংলাদেশ সচিবালয়েওয়াই-ফাই স্থাপনকরাহয়েছে। সরকারিকর্মকর্তারাযাতেঅফিসেরবাইরে থেকে দাপ্তরিককার্যμমপরিচালনাকরতেপারে, সে জন্য তাদেরমাঝে ২৫হাজারট্যাববিতরণকরাহয়েছে। ২০১৪ সালেবাংলাদেশ কমপিউটারকাউন্সিলের বিদ্যমানজাতীয়ডাটা সেন্টারটির(Tier-3)সক্ষমতাবাড়ানোহয়েছে। বর্তমানেডাটা সেন্টারটিরওয়েবহোস্টিংক্ষমতা ৭৫০ টেরাবাইটে দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উচ্চতরপ্রশিক্ষণদিয়ে দক্ষ জনবল তৈরিরজন্য বিসিসি’রএলআইসিটিপ্রকল্পেরআওতায়একটিবিশেষায়িতল্যাব স্থাপনকরাহয়েছে। এছাড়াএকটি স্পেশালসাউন্ডইফেক্ট ল্যাব স্থাপনএবং ২০টি পাবলিকবিশ্ববিদ্যালয়েবিশেষায়িতল্যাবপ্রতিষ্ঠারজন্য ইকুইপমেন্টসরবরাহকরাহয়েছে।
হাইটেকপার্ক ও সফটওয়্যারপার্ক ছাড়াএকটি দেশেরআইসিটিরফতানিতেকাঙিক্ষতলক্ষ্যমাত্রাঅর্জন সম্ভব নয়। ২০০৯ সালেপ্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনারসরকারডিজিটালবাংলাদেশ বিনির্মাণের কার্যμমে শুধু কালিয়াকৈওে নয়বিভাগীয়এবংকয়েকটি জেলাশহরেহাইটেক ও সফটওয়্যারপার্ক নির্মাণেরসিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মামলাজটিলতারকারণেকালিয়াকৈরহাইটেকপার্ক এবংকারওয়ানবাজারেঅবস্থিত জনতাটাওয়ারসফটওয়্যারপার্ক স্থাপন স্থবিরহয়েপড়েছিল। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারিদ্বিতীয় মেয়াদে সরকারগঠনের পর গাজীপুরেরকালিয়াকৈরহাইটেকপার্ক এবংজনতাসফটওয়্যারপার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সবপ্রতিবন্ধকতা দূরকরার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ উদ্যোগে দ্রুতসফলতাআসে। কালিয়াকৈরে ২৩২ একরজমিরওপরহাইটেকপার্কেরঅবকাঠামোউন্নয়নেরকাজএগিয়েচলছে। কালিয়াকৈরহাইটেকপার্কের ২৩২ একরজমিসংলগড়ব অতিরিক্ত আরও ৯৭ একরজমিহাইটেকপার্কেরঅনুকূলেঅধিগ্রহণকরাহয়েছে। পার্কটিপ্রতিষ্ঠাহলে ৭০ হাজার লোকেরপ্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানেরসুযোগসৃষ্টিহবে। যশোরে ৯.৪০ একরজমিরউপরসফটওয়্যার টেকনোলজিপার্কে ১৫ তলামাল্টি টেনেন্টভবননির্মাণেরকাজএগিয়েচলছে। এ ভবনের ১০ তলাপর্যন্তনির্মাণকাজের ৯০ শতাংশসম্পন্নহয়েছে। আমি গত ৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে ওইভবনেআইটিপ্রশিক্ষণকার্যকমেরউদ্বোধনকরেছি। ১২ তলাডরমিটরিভবনেরওপ্রায় ৮০ শতাংশকাজ শেষ হয়েছে।
সিলেটইলেক্ট্রনিকসিটি স্থাপনেরজন্য ১৬২.৮৩ একর, রাজশাহীতেবরেন্দ্র সিলিকনসিটি স্থাপনেরজন্য ৩১.৬২ একর, নাটোরেআইটি ট্রেনিংঅ্যান্ডইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনেরজন্য ৭.০৯ একর, আইটিবিজনেসইনকিউবেটর স্থাপনেরজন্য চুয়েটে ৫ একরজমিপাওয়া গেছে। জনতাটাওয়ারেবর্তমানে ১৬টি কোম্পানিতাদেরকার্যμমপরিচালনাকরেছে। এখানে ৫০টি স্টার্টআপ কোম্পানিকে এক বছরেরজন্য অন্যান্য সুবিধাসহবিনাভাড়ায়জায়গাবরাদ্দ দেয়া হবে।
একুশশতকেরউপযোগী দক্ষ মানবসম্পদেরউন্নয়নইআমাদেরলক্ষ্য। বাংলাদেশে বর্তমানেআইটি পেশাজীবীরসংখ্যাপ্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার। ২০১৮ সালেরমধ্যে এই সংখ্যা ১০ লাখেউন্নীতকরারলক্ষ্য নিয়েকাজকরছেসরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেরঅধীনেআগামীতিনবছরেবিশ্বমানেরপ্রশিক্ষণে এক লাখ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিরলক্ষে্য বিভিন্নপ্রকল্প ও কর্মসূচিতেপ্রশিক্ষণকার্যμমঅব্যাহতআছে। এসবপ্রশিক্ষণেরটার্গেটশিক্ষেততরুণেরা। কারণবিভিন্নসরকারি ও বেসরকারিবিশ্ববিদ্যালয় থেকে সড়বাতক-সড়বাতকোত্তরসহউচ্চতরডিগ্রিলাভকরেপ্রায়সাড়েতিনলাখ।পড়াশুনারত অবস্থায়ইযদি তারাআইটিতেপ্রশিক্ষণেরসুযোগপায়ভবিষ্যতে আইটিতেক্যারিয়ারগড়ারকথাভাববে। স্বপড়ব দেখবে গুগল, ফেসবুকেরমতো উদ্ভাবনীর। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেরলিভারেজিংআইসিটি ফর গ্রোথ, এমপস্নয়মেন্টঅ্যান্ডগভর্ন্যান্স (এলআইসিটি) প্রকল্পএসবতরুণেরমধ্য থেকে বাছাইকরেবিশ্বমানেরপ্রশিক্ষণে ৪৫ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে। এরমধ্যে ১০ হাজারকেটপআপআইটিএবং ২০ হাজারকেফাউন্ডেশনপ্রশিক্ষণ দেয়ারজন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট অ্যান্ডইয়ংকেনিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াএলআইসিটিপ্রকল্পউন্নতপ্রশিক্ষণে ১০ হাজারফ্রিল্যান্সার তৈরিএবংবিভিন্নসরকারি ও আইটিপ্রতিষ্ঠানেরকর্মকর্তাসহআরও ৫ হাজারজনকেআইটিতেপ্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেরঅন্যান্য প্রকল্প ও কর্মসূচিতেকলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষেততরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
পরিশেষে, যেসব দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেতারুণ্যেরনতুননতুন উদ্ভাবনীকেযত বেশিকাজেলাগিয়েছে সেসব দেশ ততউন্নত। এমনিবাস্তবতা থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগতরুণদের মেধা ও উদ্ভাবনীকেকাজেলাগানোরনানা উদ্যোগগ্রহণকরেছে। এরমধ্যে স্কুলেরশিক্ষার্থীদেরজন্য প্রোগ্রামিংপ্রতিযোগিতা, উদ্ভাবনীতহবিল থেকে নতুননতুন উদ্ভাবনীতেআর্থিক সহায়তাপ্রদান, কানেক্টিং স্টার্টআপশীর্ষককর্মসূচিরমাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা ও হ্যাকাথনআয়োজনেরমাধ্যমে তরুণদেরআইডিয়ারওপরভিত্তিকরেঅ্যাপ তৈরির উদ্যোগগুলোঅন্যতম। এসবইতারুণ্যের মেধা ও উদ্ভাবনীতেউৎসাহিতকরারকার্যμম। আমাদেরসামগ্রিককার্যμমেরলক্ষ্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নেরগতিকে বেগবানকরে দেশকেশ্রমনির্ভর থেকে জ্ঞাননির্ভরসমাজ ও ডিজিটালঅর্থনীতিতেউত্তরণের পথে এগিয়ে নেয়া,যামূলতডিজিটালবাংলাদেশেরই দর্শন।