লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সম্পাদকীয়
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই সম্ভবত আমাদের এ পৃথিবীটাকে এখনও মানুষের বসবাসের উপযোগী করে রেখেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি না থাকলে হয়তো বিগত শতাব্দীর শুরুতে দেয়া বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আরও অর্ধশত বছর আগেই এ পৃথিবীটা মানুষের বসবাসের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেমনি মানুষের সামনে এনে হাজির করেছে নানা বিকল্প, তেমনি আমাদের জীবনে এনেছে গতি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া শহর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র প্রতিদিনের মানবজীবন অচল। তাই আমরা বলি, বিজ্ঞান মানবজীবনের জন্য এক অনন্য আশীর্বাদ। কিন্তু এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যখন তৈরি ও ব্যবহার হয় মারণাস্ত্র, ব্যাপক-বিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্র, তখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আমরা মানবজীবনের এক অভিশাপ হিসেবেই আখ্যায়িত করি। সেই সূত্রে চলমান এক বিতর্ক হচ্ছে- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ? এ বিতর্কের শেষ নেই। তবে আমাদের কাজ হবে এ অভিশাপের মাত্রা কমিয়ে আশীর্বাদের পালস্না ভারি করা। অবধারিতভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এর অভিশাপ ঠেকাতে হবে। কথাগুলো বলা, সম্প্রতি আমাদের দেশে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে।
সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরে প্রকাশ, আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোতে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড নিয়ে ব্যাপক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। আর উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, এ ধরনের জালিয়াতির সাথে খোদ ব্যাংক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞেরা জড়িয়ে পড়ায় এসব কার্ডধারী চরম শঙ্কায় ভুগছেন। এর ফলে দেশের ৫০ লাখ কার্ডধারী কার্ড জালিয়াতি হওয়ার আতঙ্কে আতঙ্কিত। এ ব্যাপারে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এটিএম বুথগুলোতে এখন জালিয়াতেরা নানা ডিভাইস স্থাপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে তথ্য চুরি করছে। এতে করে খোয়া যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভয়ঙ্কর এ জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকায় গ্রাহকদের আশঙ্কা আরও শতগুণে বেড়ে গেছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, এরই মধ্যে সেলিম নামে এক প্রতারককে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, হলেন প্রতারক। প্রতিভাবান নিঃসন্দেহে। প্রতিভায় অনেক ওপরে উঠেছিলেন। লোভী মন এখন তাকে পথে বসিয়েছে। অনার্স করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, কিন্তু তার অধীনে কাজ করেছেন বুয়েটের পাস করা কয়েক ডজন প্রকৌশলী। ছাত্রাবস্থায় উদ্ভাবন করেন খনিজ পদার্থ শনাক্ত করার যন্ত্র। জনকল্যাণকর আরও কয়েকটি যন্ত্র আবিষ্কার করে ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ সালে পান উদীয়মান বৈজ্ঞানিকের খেতাব। তার প্রবন্ধ সংরক্ষেত আছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। ১৯৯৫ সালে অ্যাপল ও ডিজিটাল কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব পান। সাইটেক থেকে টেক্সাস ইলেকট্রনিক্সে চাকরি করেছেন। অল্প কয়েক দিনে মেরামত করেছেন শত শত মাদারবোর্ড। ইলেকট্রনিক জগতের যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। টেক্সাস ইলেকট্রনিক্সের প্রথম এটিএম বুথ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তার হাত ধরেই। পর্যায়ক্রমে এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ৯০০ বুথ রাজধানীসহ সারাদেশে স্থাপন হয় তার হাত দিয়েই। তার বেতন বেড়েছে হু হু করে। ২০০৮ সাল থেকে মাসে দেড় লাখ টাকা করে বেতন তুলেছেন। কিন্তু ফেনসিডিলের নেশায় সব টাকা উড়িয়েছেন। এখন কার্ড জালিয়াতি চক্রের গডফাদার।
ক্রেডিট কার্ড ব্যাংক ব্যবসায়ে গতি এনেছে। এখন এ কার্ড জালিয়াতি ঠেকিয়ে গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে মানুষ প্রযুক্তির ওপর আস্থা হারাবে। প্রযুক্তিকে অভিশাপ হিসেবেই ভাবতে শিখবে। এর ফলে প্রযুক্তির এগিয়ে চলার ওপর পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব। তা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। কারণ, প্রযুক্তির পথের সব বাধা দূর করে প্রযুক্তিকেই করতে হবে আমাদের এগিয়ে চলার হাতিয়ার। অতএব সরকার দ্রম্নত এ কার্ড জালিয়াতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, কার্ডধারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে- এটাই কাম্য।
আমাদের প্রযুক্তির জগতে আরেকটি অশুভ সংবাদ। দেশের ৬ মোবাইল কোম্পানির আপত্তির কারণে বাতিল হয়ে গেছে ভ্যাস (মূল্য সংযোজিত সেবা) লাইসেন্সিং গাইডলাইন ২০১২। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় মূলত অপারেটরদের দাবি মেনে নেয়ায় চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এ ভ্যাস লাইসেন্সিং গাইডলাইন। যদিও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলেছে, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের মার্কেট ও ভ্যালু চেইনের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আইপিআরসহ সব পক্ষের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয় পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে মত দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি আসলে লোক দেখানো। মোবাইল ফোন অপারেটরদের ভ্যাস নিয়ে ব্যবসায় করার সুযোগ দেয়ার জন্যই উলিস্নখিত নীতিমালা বাতিল করে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে অপারেটরেরা একচেটিয়া ভ্যাস ব্যবসায় করতে পারবে। উল্লেখ্য, মোবাইল ফোন অপারেটরদের ৩০ শতাংশ রাজস্ব আসে ভ্যাস থেকে, যা এরা স্বীকার করতে চায় না। আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থে অবিলম্বে ভ্যাস লাইসেন্সিং গাইডলাইন চালু করে তা বাস্তবায়ন করা হোক।
এদিকে জানা গেছে, মুখ থুবড়ে পড়েছে ডিজিটাল পুলিশ প্রটেকশন সিস্টেম। ডিজিটাল যন্ত্রের সাহায্যে সহজে ও দ্রম্নত অপরাধী শনাক্ত করার ‘ওয়াচম্যান’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য বিদেশ থেকে দুই শতাধিক যন্ত্র আনার পরও আজো তা কার্যকর করা হয়নি। অবিলম্বে তা চালু করলে দ্রম্নত অপরাধী চিহ্নিত করা সহজ হতো।
সামনে ঈদ-উল-ফিতর। এ ঈদের প্রাক্কালে আমাদের লেখক, পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা। সবার জীবনে নেমে আসুক অনাবিল আনন্দ।
কজ