লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
সাবরিনা নুজহাত
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - ফেব্রুয়ারী
আগামীর ইন্টারনেট প্রযুক্তি
বর্তমান বিশ্বকে বদলে দিতে কমপিউটার যতটা ভূমিকা পালন করেছে, এরচেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে ইন্টারনেটের! ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠ কিংবা এর বাইরের জগতের নজরদারি সহজেই করা যাচ্ছে। প্রযুক্তিবিশ্বকে এগিয়ে নিতে তাই গবেষকেরা প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছেন ইন্টারনেটের মানোন্নয়নে। আসছে নানা সফলতার খবর। আগামীতে কী ধরনের ইন্টারনেট প্রযুক্তি আসতে পারে, তেমনই কিছু সুখবর এখানে প্রকাশ করা হলো।
ইন্টারনেটের বিকল্প বিটক্লাউড
ইন্টারনেটের বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। বিকল্প ইন্টারনেট ব্যবস্থা হিসেবে বিটক্লাউড নামে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন মার্কিন গবেষকেরা। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিকল্প ইন্টারনেট সেবা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিটক্লাউড উদ্যোক্তাদের।
বিটকয়েন মাইনিং পদ্ধতির মতো পদ্ধতিতে বিটক্লাউডের সেবা দেয়া হবে বলে দাবি করছেন এ প্রকল্পের উদ্যোক্তারা। স্বাধীন গ্রাহক থেকে গ্রাহকের মধ্যে অনলাইন লেনদেনের ডিজিটাল মাধ্যম এটি। ওপেনসোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রটোকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাঙ্কেতিক মুদ্রার নাম বিটকয়েন। এ ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেনের জন্য কোনো ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না।
বিটক্লাউড পদ্ধতিতে অর্থের বিনিময়ে তথ্য সংরক্ষণ, রাউটিং ও ব্যান্ডউইডথ দেয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বিটক্লাউড তৈরির লক্ষ্যে ডেভেলপার খুঁজছেন উদ্যোক্তারা। এদের দাবি, ইন্টারনেট বিকেন্দ্রীকরণ শুরু করবেন এরা এবং নতুন ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমানের ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিকল্প গড়ে তুলবেন।
২০০৮ সালে বিটকয়েন উদ্ভাবন করেন কমপিউটার বিজ্ঞানী সাতোশি নাকামোতো। এটি তার ছদ্মনাম। বিটকয়েন ব্যবহার করে অনলাইনে খুব সহজে কেনাবেচা করা যায় বলে এ মুদ্রা ব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন বা স্বাধীন গ্রাহক থেকে গ্রাহকের মধ্যে অনলাইন লেনদেন নামে অবহিত করা হয়। বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভারের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে।
পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কমপিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। বিটকয়েনের ক্ষেত্রে কমপিউটার যেভাবে কাজ করে, বিটক্লাউডের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সেভাবে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকবেন।
২০২০ সালে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যখন মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের তৃতীয় প্রজন্মের সেবা নিয়ে যারপরনাই উলস্নসিত, তখন আরও দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ইন্টারনেট দুনিয়ায় সেবার মানে এক নম্বরে থাকা এশিয়ার এই দেশ এবার ঠিক করেছে তাদের নতুন লক্ষ্য ফাইভ জি বা পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট। প্রকল্পটির জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ১৫০ কোটি ডলার খরচ করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
কোরিয়ার সবচেয়ে বড় তিনটি মোবাইল সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান কেটি, এসকে টেলিকম এবং এলজি ইউ-পস্নাসের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা বাজারে আনতে কাজ করছে স্যামসাং এবং এলজি। কোরিয়ার প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে এই প্রাথমিক আলাপের শুরম্ন গত বছরের মে মাসে।
যদিও কোরিয়া সরকার জানিয়েছে, শুধু নিজেদের দেশেই নয়, বরং দুনিয়াজুড়েই ছড়িয়ে দেয়া হবে ফাইভ জি। তার প্যাটেন্ট নিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর ইউরোপের সাথে আলোচনাও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কোরিয়া। দেশটির প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০ সালকে লক্ষ্য করে কাজ শুরম্ন হলেও পঞ্চম প্রজন্মের সেবা হাতে চলে আসবে আগামী বছরই। তবে শুরুতে শুধুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে থাকবে ফাইভ জি, তাও পরীক্ষামূলকভাবে। আর এর দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরীক্ষা করা হবে ত্রিমাত্রিক মোবাইল সেবা অর্থাৎ থ্রিডি মোবাইল। কোরিয়া জানায়, মোবাইল থ্রিডিতে গতি পাওয়া যাবে সেকেন্ডে ১ জিবি। তবে পুরো সেবা চালু হবে ২০২০ সালে। কোরিয়া জানায়, স্যামসাং এরই মধ্যে ফাইভ জি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অনেকটা এগিয়েছে হুয়াওয়েই। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় কমিশনও পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল আর ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।
চাঁদে লেজার প্রযুক্তিতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট
১৯৬৮ সালে প্রথমবারের মতো তোলা চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি পৃথিবীতে পাঠাতে কয়েক দিন সময় লেগে গিয়েছিল। তবে যুগ পাল্টেছে। এখন পৃথিবীজুড়ে ইন্টারনেটের জয়জয়কার। সম্প্রতি চাঁদে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ লেজার প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে নাসা। এ প্রযুক্তির সাহায্যে আগের তুলনায় অনেক দ্রুত তথ্য দেয়া-নেয়া করতে পারবে মহাকাশ সংস্থাটি।
চন্দ্রপৃষ্ঠে দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট সংস্থাপন প্রযুক্তিতে একটি দ্বিমুখী লেজার গাইডেড সিস্টেম ব্যবহার করা হবে বলে জানায় নাসা। নাসার দেয়া বর্ণনাচিত্র অনুযায়ী, লুনার অ্যাটমসফিয়ার অ্যান্ড ডাস্ট এনভায়রনমেন্ট এক্সপ্লজার বা এলএডিইই নেয়ার- ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সহায়তায় লেজারের মাধ্যমে চাঁদে যোগাযোগ স্থাপন করবে। এর ফলে প্রতিসেকেন্ডে ৬২২ মেগাবাইট হারে তথ্য দেয়া-নেয়া সম্ভব হবে, যা আগের তুলনায় ৬ গুণ বেশি দ্রম্নতগতির। ফলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই হাজার হাজার মেগাবাইট ডাটা ট্রান্সফার করা সম্ভব হবে।
নাসার বিবৃতি অনুযায়ী, একটি হালকা টেলিস্কোপের সাহায্যে এলএলসিডি প্রতিসেকেন্ডে কোটি কোটি লেজার-পালস পাঠাবে। পৃথিবীতে অবস্থিত নাসার তিনটি মহাকাশ স্টেশন থেকে সেই পালস বা সিগন্যাল গ্রহণ করা হবে। নাসার এই তিনটি স্টেশন মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়া এবং স্পেনে অবস্থিত। পৃথিবীতে অবস্থিত এই তিনটি স্টেশন থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। যখন যে অঞ্চলের স্টেশনের আকাশ মেঘমুক্ত থাকবে, তখন সেই স্টেশন থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করা হবে। সিগন্যাল গ্রহণের আগে ভূমিস্থ স্টেশন ও মহাকাশ স্টেশনের উভয়ে একে অপরকে চিহ্নিত করবে। এরপরই শুরু করা যাবে তথ্য বিনিময়ের কাজ। অদূর ভবিষ্যতে চাঁদ থেকে শুধু ছবি নয়, সরাসরি থ্রিডি ভিডিও স্ট্রিমিং নিয়েও কাজ করতে চায় নাসা
ফিডব্যাক : bmtuhin@gmail.com