• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফরের সাথে একান্ত আলাপচারিতা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এসএম ইমদাদুল হক
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফরের সাথে একান্ত আলাপচারিতা

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। কমপিউটার প্রকৌশলী। ‘কোডিং তুলি’র আঁচড়ে যিনি সেলুলয়েডে দেখিয়েছেন পানি, ধোঁয়ার অবিকল উপস্থিতি। কোনো ধরনের বন্যা-জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই তলিয়ে দিয়েছেন আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। বলছি অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফরের কথা। আজ থেকে ছয় বছর আগে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ডস এন্ড’ মুভিতে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য ২০০৭ সালে সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে বিশ্ব চলচ্চিত্রের নোবেলখ্যাত অস্কার (অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ডস) জেতেন তিনি। অস্কার জয়ের পর অনেকবারই দেশে এসেছেন, কিন্তু গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। এবার দেশে এসেই মুখোমুখি হলেন কমপিউটার জগৎ-এর।

প্রশ্ন : কমপিউটার সায়েন্সে পড়ে সিলিকন ভ্যালিতে না গিয়ে হলিউডে এলেন কেনো?

নাফিস : যখন আমি গ্র্যাজুয়েশন করি, তখন ডটকমের জয়জয়কার এবং প্রথমসারির সব প্রোগ্রামারই ডটকমের জগতে (সিলিকন ভ্যালিতে) কাজ করত। আর তাই ভালো অফার না পাওয়ায় আমি বেছে নিলাম হলিউড।

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলব, শৈশব থেকে পারিবারিক কারণেই আমার ভেতরে শিল্পের প্রতি আকর্ষণ জন্মে। তবে আমি তুলি নিয়ে খুব একটা চর্চা করিনি। খেলাধুলা করেছি। অবশ্য যখন আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন করি তখন বুঝতে পারলাম, কম সময়ে সত্যিকারের আবেগ আর গল্প তুলে ধরতে প্রয়োজন অ্যানিমেশনের। শৈশবে একটি শর্ট অ্যানিমেশন সিনেমা দেখেছিলাম, বাংলা। নামটা মনে করতে পারছি না। বেভারলি হিলস ফিল্ম উৎসবে মুভিটি প্রদর্শিত হয়। খুবই চমৎকার ছিল। তখন বুঝেছি সিনেমার সবটাই সত্য নয়। আর কল্পনাকে সিনেমাতেই জীবমত্ম রূপ দেয়া যায়।

প্রশ্ন : অ্যানিমেটর হওয়ার অনুপ্রেরণা পেলেন কার কাছ থেকে?

নাফিস : জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন আমার মামা আর নানা চিত্রশিল্পী মুসত্মাফা মনোয়ার। মা-ও দারম্নণ পেন্সিল স্কেচের কাজ করেন। পুরো পরিবার আকাআকিতে পটু। ছোটবেলা থেকেই তাদের কাজ দেখেছি। এসব কাজ দেখতে দেখতে অবচেতনভাবেই আর্ট বিষয়টা ভেতরে জায়গা করে নিয়েছে। আমি যে কাজ করছি তার জন্য গণিত আর পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে দখল থাকতে হয়। আমার বাবা অঙ্কে খুবই ভালো ছিলেন। আমার ওপর তার প্রভাবও কিন্তু কম নয়।

প্রশ্ন : আর্ট না সায়েন্স- স্পেশাল এফেক্টে কোনটা বেশি জরুরি?

নাফিস : দুটির গুরুত্বই সমান। এর একটা ছাড়া অ্যানিমেশন সম্ভব নয়। এই যেমন পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান। যারা ফ্লুইড ডায়নামিকস বা গণিত পড়েছেন তারা সহজেই বুঝতে পারবেন এ সিনেমায় স্পেশাল এফেক্ট কীভাবে কাজ করেছে। পানির রং বা উত্তাল ঢেউয়ের রূপ কেমন হয়, এটা আর্ট জানা না থাকলে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। আসলে অ্যানিমেশন হচ্ছে শিল্পের একটি ডিজিটাল মাধ্যম। রং-তুলির বদলে এখানে শিল্পী কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে তার দক্ষতা ফুটিয়ে তোলেন। ভালো প্রোগ্রামার যেকেউ হতে পারেন, কিন্তু ভালো অ্যানিমেটর হতে হলে শিল্পমন থাকাটা জরুরি। এখানে প্রোগ্রামার তার কল্পনাকে ভিজ্যুয়ালাইজ করবেন। তাই দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সণাতক পর্যায়ে ফিল্ম ও মিডিয়া স্টাডি বিভাগ চালু করেছে।
এখানে বিষয় হিসেবে অ্যানিমেশন বা স্পেশাল এফেক্ট যুক্ত হলে আপনি সম্পৃক্ত হবেন?

নাফিস : অবশ্যই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমি অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিই। বাংলাদেশে এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে পারলে আমি খুব সম্মানিত বোধ করব। দেশের নতুন প্রজন্ম যদি অ্যানিমেশন বা স্পেশাল এফেক্ট নিয়ে কাজ করে, আর তাতে যদি আমার কোনো সম্পৃক্ততা থাকে, তা হবে আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। হবে অস্কার জয়ের চেয়েও ভালো কোনো অনুভূতি।

প্রশ্ন : কোথা থেকে অ্যানিমেশনের ক্যারিয়ার শুরু হলো? কতগুলো সিনেমায় অ্যানিমেশনের কাজ করেছেন?

নাফিস : ড্রিম ওয়ার্কসে মূলত ফিচার অ্যানিমেশন দিয়ে ক্যারিয়ার শুরম্ন। এখন কাজ করছি লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক বিশ্বখ্যাত স্পেশাল এফেক্টস ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ড্রিম ওয়ার্কস অ্যানিমেশনের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে। এই সময়ে অনেক ছবিতেই কাজ করেছি। তবে এগুলোয় এককভাবে কাজ করিনি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করেছি। কতগুলো সিনেমায় কাজ করা হয়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যাটা বলতে পারব না। তবে শতাধিক তো হবেই। এর মধ্যে কুংফু, পার্সি ২, পার্সি জ্যাকসন অ্যান্ড অলিম্পিয়ান্স : দ্য লাইটিং থিফ, দ্য সিকার : দ্য ডার্ক ইজ রাইজিং, শ্রেক ফরএভার আফটার, স্টিলথ, মেগামাইন্ড প্রভৃতি মুভির নাম বলা যেতে পারে।

প্রশ্ন : অ্যানিমেশন ও স্পেশাল এফেক্ট তৈরির ক্ষেত্রে তরুণদের কীভাবে শুরু করা উচিত? আমাদের তরুণদের জন্য যদি কিছু বলেন?

নাফিস : এ জন্য দরকার কল্পনাপ্রবণ মন এবং নিবিড় অনুভূতি, একাগ্রতা আর নিষ্ঠা। আসলে চর্চার কোনো বিকল্প। প্রচুর প্রজেক্ট করতে হবে। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। সৃষ্টির মধ্যে যিনি আনন্দ খুঁজে পান তাদের জন্য এটা খুব কঠিন কিছু নয়। তরুণদের জন্য আর কী বলব। আমি তো নিজেই তরুণ। অবশ্য তরুণদের সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এগুনো উচিত। আকর্ষণ না থাকলে চেষ্টা করে লাভ নেই। আকর্ষণ থাকলে দেরি না করে শুরু করতে হবে।

প্রশ্ন : সম্প্রতি ওল্ড স্কুল অর্থাৎ পুরনো প্রযুক্তির স্কেচ ব্যবহার করে নতুন অ্যানিমেশন ‘পেপারম্যান’ তৈরি করে ডিজনি। দারুণ উপভোগ করেছেন দর্শক। আপনার কি মনে হয় চলচ্চিত্রশৈলীতে পুরনো প্রযুক্তি ফিরে আসবে?

নাফিস : সবকিছুই ইউনিক, এটা অলরেডি আছে। সবকিছু আগের মতো আছে। এর অর্থ এই নয়, শুধু পুরনো প্রযুক্তিই আবর্তিত হবে। আমি বলতে চাচ্ছি, ডিজিটাল ফরম্যাটে নবতর সংযোজনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পুরনো প্রযুক্তির গুরুত্ব মোটেই কমেনি। বরং পুরনো প্রযুক্তিগুলো পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে নতুন আবহ তৈরি করছে। বাড়ছে এর ব্যাপ্তি। অবশ্য তাই বলে শুধু যদি স্কেচ দিয়ে অ্যানিমেশন করা হয়, তবে এক বছরের মধ্যেই চলচ্চিত্রে বড় ধরনের ধস নামবে।

প্রশ্ন : আগামী দিনে চলচ্চিত্রের ডিজিটাল ফরম্যাটে নতুন কী আসছে? হলিউড কি নতুন কোনো প্রযুক্তির উপহার দিতে যাচ্ছে?

নাফিস : প্রযুক্তি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয় না। এর জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। ধীরে ধীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই উন্নয়ন করতে হয়। হলিউডও তাই একই নিয়মে কাজ করছে। তবে আগামী দশ বছরের মধ্যে চলচ্চিত্র প্রযুক্তিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না। আবার অভিনব কোনো ফরম্যাট হাজিরেরও সম্ভাবনা দেখছি না।

প্রশ্ন : ভবিষ্যতের চলচ্চিত্রে আমরা কী ধরনের নতুন প্রযুক্তি দেখব? আপনি কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন?

নাফিস : এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। অবশ্য এখন তো বড় পরিসরে ফ্লুইড ওয়ার্ক চলছে। আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে ডিস্ট্রাকশন, ফ্রিকশ্চার, স্যাটায়ার ও সলিড অবজেক্ট নিয়ে। আশা করছি, ফটো রিয়েল রেন্ডারিং ও নিউ অ্যালগরিদম নিয়ে মজার কিছু এফেক্ট উপহার দিতে পারব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা