দ্রুত বর্গ করা
ধরা যাক, আমরা জানতে চাই ৫৪-এর বর্গ কত। অর্থাৎ ৫৪২= কত? এর অর্থ হচ্ছে ৫৪-কে ৫৪ দিয়ে গুণ করলে কত হয়। তাহলে ৫৪-এর নিচে ৫৪ বসিয়ে গুণ করে গুণফল বের করলেই আমরা এর উত্তর পেয়ে যাব। তেমনি ৪২-এর বর্গ কত জানতে আমরা ৪২-এর নিচে ৪২ বসিয়ে সাধারণ নিয়মে গুণ করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর গুণের সাধারণ নিয়মটা আমরা স্কুলে ভালো করেই শিখেছি। অতএব কোনো সংখ্যার বর্গফল বের করা আমাদের জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো সংখ্যার বর্গফল কী করে দ্রুত বের করা যায়? এ প্রশ্নের জবাবটাই এখানে আমরা জানবো। এক্ষেত্রে যে কোনো সংখ্যা a-এর বর্গ দ্রুত বের করতে যে সূত্রটি ব্যবহার করব সেটি হচ্ছে :
a2 = (a - b) (a + b) + b2, এখানে b হচ্ছে সুবিধামতো নেয়া যেকোনো একটি সংখ্যা। ধরা যাক ৫৪ সংখ্যাটির বর্গ নির্ণয় করতে চাই। তাহলে এখানে a = ৫৪। আর এক্ষেত্রে ৪ সংখ্যাটিকে আমরা ধরে নিতে পারি b। তাহলে a2 = (a - b)(a + b) + b2 সূত্র প্রয়োগ করে আমরা পাই
৫৪২ = (৫৪ - ৪)(৫৪ + ৪) + ৪2 = ৫০ ৫৮ + ১৬ = ২৯১৬
একইভাবে ৪২ এবং ৩৭-এর বর্গ নির্ণয় করার সময় এই সূত্র ব্যবহার করতে পারি এভাবে :
৪২২ = (৪২ - ২) (৪২ + ২) + ২২ = ৪০ ৪৪ + ২২ = ১৭৬৪
৩৭২ = (৩৭ - ৩) (৩৭ + ৩) + ৩২ = ৩৪ ৪০ + ৩২ = ১৩৬৯
আর হ্যাঁ এক্ষেত্রে এই বর্গফল বের করার কাজটি মনে মনে করার ক্ষেত্রে আপনি যত বেশি দক্ষ হবেন, বর্গফলটিও তত দ্রুত বের করা সম্ভব হবে। দ্রুত বর্গফল বের করার a2 = (a - b) (a + b) + b2 সূত্রটি কাজে লাগিয়ে আরো কয়েকটি বর্গফল বের করে দেখানো হলো। তবে এর আগে বলে নেই, যে সংখ্যাটির বর্গ বের করতে হবে তাকে আমরা ধরছি a। আর b-এর মান এমনভাবে ইচ্ছেমতো ধরছি যাতে (a - b) কিংবা (a + b)-এর মানের একদম ডানে যথাসম্ভব এক বা একাধিক শূন্য (০) থাকে। তাহলে গুণের কাজটি সহজ হবে।
৪১২ = (৪১ - ১) (৪১ + ১) + ১২ = ৪০ ৪২ + ১ = ১৬৮১
২৫২ = (২৫ -৫) (২৫ + ৫) + ৫২ = ২০ ৩০ + ২৫ = ৬২৫
৯৯২ = (৯৯ - ১) (৯৯ + ১) + ১২ = ৯৮ ১০০ + ১ = ৯৮০১
এখন যে সংখ্যাটির বর্গ নির্ণয় করতে হবে সেটি যদি ৩ অঙ্কের কিংবা তারচেয়েও বেশি অঙ্কের হয়, তখনো একই নিয়ম অনুসরণ করে তা সম্ভব। যেমন :
১১৬২ = (১১৬ - ১৬) (১১৬ + ১৬) + ১৬২ = ১০০ ১৩২ + ২৫৬ = ১৩৪৫৬
১০১৬২ = (১০১৬ - ১৬) (১০১৬ + ১৬) + ১৬২ = ১০০০ ১০৩২ + ২৫৬ = ১০৩২২৫৬
আশা করব, দ্রুত বর্গফল বের করার এ সূত্র বা নিয়মটি বোধে এসেছে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য চাই এর বার বার অনুশীলন। আর অনুশীলনই একজনকে পরিপক্ব করে তুলবে এ মানসাঙ্ক বা মেন্টাল ম্যাথ সম্পর্কে।
জাদুর বর্গই বটে!
ধরে নিচ্ছি আপনি ম্যাজিক স্কয়ার বা জাদুর বর্গ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জেনেছেন। না জেনে থাকলে অসুবিধা নেই। নিচে সাজানো ৯টি সংখ্যা লক্ষ করুন :
৮ ১ ৬
৩ ৫ ৭
৪ ৯ ২
এখানে ৯টি সংখ্যা ৩টি সারি (row) ও ৩টি স্তম্ভে (Column) সাজানো হয়েছে। তবে ম্যাজিক বা জাদুর মতো অবাক করা কিছু মজার গুণ রয়েছে এ সাজানোর মধ্যে। এর কোনাকুনি সংখ্যা তিনটি যোগ করলে (৮ + ৫ + ২ অথবা ৬ + ৫ + ৪) আমরা একই যোগফল ১৫ পাই। একইভাবে আমরা এর যেকোনো সারির তিনটি সংখ্যা যোগ করি কিংবা যেকোনো কলামের ৩টি সংখ্যা যোগ করি সব ক্ষেত্রে সংখ্যা তিনটির যোগফল দাঁড়াবে ১৫। অনেকটা ম্যাজিকের মতো নয় কি? আর সংখ্যাগুলো সাজানো হয়েছে বর্গাকারে। সেজন্য গণিতবিদেরা এর নাম দিয়েছেন ম্যাজিক স্কয়ার। বাংলায় যার নাম দিতে পারি ‘জাদুর বর্গ’। আর হ্যাঁ, এই জাদুর বর্গটিতে ৩টি সারি ও ৩টি স্তম্ভ বা কলাম রয়েছে বলে এটি ডাকা হয় ‘৩ ৩ জাদুর বর্গ’ নামে। তেমনি আমরা ৪ সারি আর ৪ কলামবিশিষ্ট কোনো জাদুর বর্গকে বলি ‘৪ ৪ জাদুর বর্গ। একইভাবে সারি ও কলাম বাড়িয়ে আমরা তৈরি করতে পারি ‘৫ ৫ জাদুর বর্গ’, ৬ ৬ জাদুর বর্গ, ...।
যাই হোক, উপরে দেয়া ৩ ৩ জাদুর বর্গটির সারির অঙ্কগুলো কিংবা ৩ কলামের অঙ্কগুলো নিয়ে সারির জন্য সামনে ও পেছন থেকে সাজিয়ে ৩টি-৩টি করে মোট ছয়টি ৩ অঙ্কের সংখ্যা পাই। এখানে মজার ব্যাপার হলো কোনো সারির সামনে থেকে সাজানো ৩টি সংখ্যার বর্গফলের সমষ্টি পেছন থেকে সাজানো ৩টি অঙ্কের বর্গফলের সমষ্টির সমান হয়।
৮১৬২ + ৩৫৭২ + ৪৯২২ = ৬১৮২ + ৭৫৩২ + ২৯৪২
এমনো হতে পারে যে ৩ ৩ ম্যাজিক স্কয়ারটির ৯টি সংখ্যার কোনো কোনোটি এক অঙ্কের না হয়ে হতে পারে দুই অঙ্কের। তখন উপরে উল্লিখিত বর্গফলের সমষ্টি সম্পর্কিত মজার সম্পর্কটি আমরা খুঁজে পেতে পারি একটু ভিন্ন ধাঁচের। নিচের উদাহরণ থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। ধরা যাক, এক্ষেত্রে ৩ ৩ ম্যাজিক সম্পর্কটি নিম্নরূপ :
১৩ ৬ ১১
৮ ১০ ১২
৯ ১৪ ৭
এক্ষেত্রে আমরা পাবো
(১৩০০ + ৬০ + ১১)২ + (৮০০ + ১০০ + ১২)২ + (৯০০ + ১৪০ +৭)২
= (১১০০ + ৬০ + ১৩)২ + (১২০০ + ১০০ + ৮)২ + (৭০০ + ১৪০ + ৯)২
Gardner রেফারেন্স থেকে এ ম্যাজিক স্কয়ারের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কটির কথা প্রথম জানতে পারি। আর Benjamin -Tasuda সব ৩ ৩ ম্যাজিক স্কয়ারের জন্য এ সম্পর্কের সাধারণীকরণের প্রমাণ দেন।
শিলাবৃষ্টি সংখ্যা
যেকোনো পূর্ণসংখ্যা নিয়ে নিচের নিয়ম মেনে কিছু সংখ্যাধারা বা নাম্বার সিকুয়েন্স তৈরি করুন। যে সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করবেন, তাকে বলা হবে initial Seed বা ‘প্রাথমিক বীজ’। সংখ্যাধারা তৈরির নিয়মটি খুব কঠিন নয়। প্রাথমিক বীজ সংখ্যাটি যদি জোড় হয়, তবে তাকে বার বার অর্ধেক করতে থাকুন। আর সংখ্যাটি বিজোড় হলে তাকে ৩ দিয়ে গুণ করে ১ যোগ করুন। প্রক্রিয়াটি বার বার করতে থাকুন। এভাবে বিভিন্ন সংখ্যাটি নিয়ে বিভিন্ন ধারা তৈরি করুন। দেখুন কী ঘটে।
বীজ সংখ্যা = ১, ধারা : ১, ৪, ২, ১, ৪, ২১, ৪, ২, ১...
বীজ সংখ্যা = ২, ধারা : ২, ১, ৪, ২, ১, ৪, ২১, ১...
বীজ সংখ্যা = ৩, ধারা : ৩, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১...
বীজ সংখ্যা = ৪, ধারা : ৪, ২, ১, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১...
বীজ সংখ্যা = ৫, ধারা : ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১...
বীজ সংখ্যা = ৬, ধারা : ৩, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১...
বীজ সংখ্যা = ৭, ধারা : ৭, ২২, ১১, ৩৪, ১৭, ৫২, ২৬, ১৩, ৪০, ২০, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২১, ৪, ২, ১, ৪, ২, ১...
এভাবে আমরা আরো যত ধারা তৈরি করি না এ ধারার সংখ্যাটি এক সময় অবশ্যই ১-এ পৌঁছুবে। আর এর পর বার বার আসবে ৪, ২, ১, ৪২১, ৪২১...।
Collatz নামের এক গণিতবিদ আমাদের জানালেন এ তথ্যটি, তবে তিনি কখনোই সাধারণভাবেই প্রমাণ করতে পারেননি যে এমনটি অবশ্যই ঘটবে। তবে যে সংখ্যা নিয়েই তা পরীক্ষা করা হয়, সেটির ক্ষেত্রে তা সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। এ ধরনের ধারায় সংখ্যা একবার উপরে উঠতে থাকে আবার হঠাৎ করে নিচে নামতে থাকে। এজন্য এ সংখ্যার নাম দেয়া হয়েছে hailstone number বা শিলাবৃষ্টি নাম্বার।
কজ ওয়েব
গণিতদাদ :