আমরা সবাই জানি ফটোশপ একটি অত্যাধুনিক ফটো এডিটিং সফটওয়্যার, কিন্তু আমাদের অনেকেরই খুব একটা বেশি ধারণা নেই যে এই সফটওয়্যার দিয়ে কী ধরনের এডিটিংয়ের কাজ করা সম্ভব। এ লেখায় দেখানো হয়েছে কিভাবে ফটোশপ ব্যবহার করে একটি সাধারণ ছবিকে কার্টুন ছবিতে পরিণত করা যায়।
প্রথমে ফটোশপে একটি ছবি ওপেন করে সেটিকে ডিস্যাচুরেট করতে হবে। অর্থাৎ ছবিটিকে সাদাকালো করতে হবে। চিত্র-১-এ মূল ছবিটি এবং চিত্র-২-এ সাদাকালো ছবিটি দেখানো হলো। সাদাকালো করার জন্য ইমেজ ট্যাব থেকে অ্যাডজাস্টমেন্টে গিয়ে ডিস্যাচুরেট অপশন সিলেক্ট করতে হবে। অথবা shift+ctrl+U চাপলে সরাসরি ছবিটি ডিস্যাচুরেট হবে।
এবার ছবিটির একটি ডুপ্লিকেট লেয়ার তৈরি করতে হবে। লেয়ার ট্যাব থেকে ডুপ্লিকেট অপশন সিলেক্ট করলে একটি ডুপ্লিকেট লেয়ার তৈরি হবে। এবার ইমেজ ট্যাব থেকে অ্যাডজাস্টমেন্ট অপশনে গিয়ে ইনভার্ট অপশন সিলেক্ট করলে লেয়ারটির কালার ইনভার্ট হয়ে যাবে। লেয়ারটির ব্লেন্ডিং মোড পরিবর্তন করে কালার ডজ সিলেক্ট করতে হবে। এবার ছবিটিকে একটু ব্লার করা প্রয়োজন। এর জন্য ফিল্টার ট্যাবে গিয়ে ব্লার অপশনে গশিয়ান ব্লার সিলেক্ট করতে হবে। ব্লারের মান এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন প্রাপ্ত ছবিটি দেখতে চিত্র-৩-এর মতো হয়। এক্ষেত্রে ব্লারের মান ৫.৭ ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও ছবিটির আউটলাইন বর্ডার বেশ ভালো হয়েছে, তবুও চিহ্নিত অংশগুলো একটু ঘোলা রয়ে গেছে। তাই একটু পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এটি করার জন্য ছবিটিকে প্রথমে ফ্ল্যাট করতে হবে। বামদিকে লেয়ারে ডান বাটন ক্লিক করে ফ্ল্যাটেন ইমেজ অপশন সিলেক্ট করে ফ্ল্যাট করা সম্ভব। এবার ফ্ল্যাট করা লেয়ারের ওপর ডাবল ক্লিক করে নামটি পরিবর্তন করে ‘outlining’-এ পরিবর্তন করুন। এবার আউটলাইনিং লেয়ারটির নিচে আরেকটি লেয়ার তৈরি করুন এবং সেটি পেইন্ট বাকেট টুল ব্যবহার করে সাদা রঙ দিয়ে পূর্ণ করুন। নতুন লেয়ারটির নাম দিতে পারেন ‘bg (for background)’। এবার আউটলাইনিং লেয়ারের জন্য একটি লেয়ার মাস্ক তৈরি করতে হবে। আউটলাইনিং লেয়ারটি সিলেক্ট করে ফটোশপ উইন্ডোটির একদম নিচের দিকে ‘add layer mask’ নামের একটি বাটন চাপলে সিলেক্ট করা লেয়ারটির একটি লেয়ার মাস্ক তৈরি হবে। এবার লেয়ার মাস্কটি (মূল লেয়ারটি নয়) সিলেক্ট করে ব্ল্যাক ফোরগ্রাউন্ড সহকারে ব্রাশ টুল দিয়ে রঙ করতে হবে, তাহলে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ক্লোথ টেক্সচার দূর হবে, যা চিত্র-৪-এর মতো দেখাবে। লেয়ার মাস্কের কাজটি শেষ করার পর মূল আউটলাইন লেয়ারটি সিলেক্ট করলে দেখা যাবে টেক্সচারের কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
এবার একটু ভিন্ন ধরনের কাজ করতে হবে। ছবিটির ডিটেইল আরও ভালো করা প্রয়োজন, যাতে ঠিকমতো এডিট করা সম্ভব হয়। এর জন্য আউটলাইন লেয়ারটির ব্লেন্ডিং মোড পরিবর্তন করে ‘multiply’ মোড সিলেক্ট করতে হবে এবং লেয়ারটি কয়েকবার ডুপ্লিকেট করতে হবে, যাতে ছবির বিভিন্ন অংশ আরও ভালোভাবে ফুটে ওঠে। এখানে ছবিটি ৫-৭ বার ডুপ্লিকেট করা হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন ছবির জন্য এটি ভিন্ন সংখ্যক হতে পারে। ডুপ্লিকেট করার সহজ পদ্ধতি হলো আউটলাইন লেয়ারটি সিলেক্ট করে ctrl+j চাপতে হবে।
এখন ছবিটি যথেষ্ট সুন্দর হয়েছে, কিন্তু ছবিটির কিছু কিছু জায়গায় অতিরিক্ত ইফেক্ট পড়েছে যা অপ্রয়োজনীয়। এটি দূর করার জন্য ডুপ্লিকেট লেয়ারগুলো মিশিয়ে একটি একক লেয়ার তৈরি করতে হবে। এটি করার জন্য ctrl বাটন চেপে সব লেয়ার সিলেক্ট করে রাইট বাটন ক্লিক করে ‘merge layers’ অপশন সিলেক্ট করলে একটি একক লেয়ার পাওয়া যাবে। এই নতুন লেয়ারটির নাম দেয়া যাক ‘outlining detail’ এবং এটির জন্যও একটি লেয়ার মাস্ক তৈরি করুন। এবার ‘outlining detail’-এর লেয়ার মাস্কটি সিলেক্ট করে ফোরগ্রাউন্ড কালো রঙ সহকারে চিত্র-৫-এর মতো রঙ করুন। তাহলে মূল ছবিটি আরও ফুটে উঠবে। আউটলাইন লেয়ারটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর একটু এডিট করতে হবে। এবার ‘lineart’ নামে আরেকটি নতুন লেয়ার তৈরি করে লেয়ারটি একটু এডিট করুন। ৪-৫ px ব্রাশ (১০০% হার্ডনেস সহকারে) দিয়ে ছবিটির আউটলাইনগুলো একটু এডিট করুন যাতে ছবিটি দেখতে কার্টুনের মতো হয়। ‘shape dynamics’ অন করে এবং ‘size jitter’ অপশনটি ‘pen pressure’-এ সিলেক্ট করে এডিট করলে ছবিটি দেখতে অনেকটাই কার্টুনের মতো হবে। আউটলাইনের এডিট শেষ হলে ‘outlining’, ‘outlining detail’ এবং ‘lineart’ লেয়ারগুলো মার্জ করে একটি লেয়ার তৈরি করুন এবং লেয়ারটির নাম দিন ‘Lineart’।
এবার কালারিংয়ের কাজ। ‘base colors’ নামে একটি লেয়ার তৈরি করুন এবং লেয়ারটির ব্লেন্ডিং মোড ‘multiply’-এ সিলেক্ট করুন। খেয়াল রাখতে হবে পেন ট্যাবলেটের ‘phase dynamics’ মোডটি যেন অন থাকে এবং paint-এর opacity যেন ১০০% থাকে। যদি পেন ট্যাবলেট না থাকে তাহলে পেন টুল ব্যবহার করে সিলেকশনের কাজ করতে হবে। ছবিটিকে চিত্র-৬-এর মতো সিলেক্ট করে সিলেকশনের ভেতরে রাইট বাটন ক্লিক করে ‘make selection’ অপশনটি সিলেক্ট করুন এবং ‘feather ratio’ ০-তে রাখুন।
সিলেকশন শেষ হলে ফোরগ্রাউন্ড কালার করতে হবে। এক্ষেত্রে #fedbc9 রঙটি ব্যবহার করা হয়েছে। alt+backspace চাপলে সিলেক্টেড অংশের ফোরগ্রাউন্ড কালার করা যাবে অথবা পেইন্ট বাকেট টুলও ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবে ‘base colors’ লেয়ারের বিভিন্ন অংশের ফোরগ্রাউন্ড নিজের ইচ্ছেমতো রঙ করে নিন। ভুলবশত সিলেকশনের বাইরে কালার চলে গেলে ইরেজার ব্যবহার করে তা মুছে ফেলা যাবে। এখানে চিত্র-৭-এর মতো করে ফোরগ্রাউন্ডের কালারিং করা হয়েছে।
কালারিং শেষে ছবিটির ডেপথ বাড়াতে থাকুন। কিছু hilights এবং shadow ব্যবহার করে এটি করা সম্ভব। এখানে ডেপথ বাড়ানোর কাজটি আলাদা একটি লেয়ারে করুন। নতুন লেয়ারটির নাম দিন ‘highlights/shadow’ এবং লেয়ারটির ওপর রাইট বাটন ক্লিক করে ‘creat clipping mask’ অপশনটি সিলেক্ট করুন। ক্লিপড করার ফলে এই লেয়ারটির উপাদানগুলো শুধু বেস লেয়ারে দেখা যাবে।
এখন কাজ হলো ছবিটির লাইট সোর্স ঠিক করা। পরিমাণমতো লাইট সোর্স ঠিক করে দিলে ছবিটির ডেপথ অ্যাডজাস্ট হবে অর্থাৎ ছবিটির shadow ঠিকভাবে বোঝা যাবে। লাইট সোর্স ঠিক করার নিয়ম হলো ছবিটির যেসব অংশে অন্ধকার থাকা উচিত সেসব অংশে শেডিং করতে হবে আর যেসব অংশ উজ্জ্বল হওয়া উচিত সেসব অংশ হাইলাইট করতে হবে। মাউস দিয়ে এডিট করতে opacity ৩০%-৪০% সহকারে ব্রাশ ব্যবহার করাই ভালো। চিত্র-৮-এ দেখানো হলো কোথায় কতটুকু পরিমাণে শেডিং এবং হাইলাইট করতে হবে। কাজ শেষ হলে base color লেয়ারে গিয়ে দেখুন ছবিটি আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। সবশেষে একটি স্ক্রিন টোন দিন। ইন্টারনেট থেকে পছন্দমতো একটি স্ক্রিন টোন ডাউনলোড করে ইমপোর্ট করে দিন ‘screen tone’ নামের একটি লেয়ারে। খেয়াল রাখতে হবে লেয়ারটির ব্লেন্ডিং মোড যেন ‘multiply’-এ সিলেক্ট করা থাকে। স্ক্রিন টোন লেয়ারে একটি লেয়ার মাস্ক তৈরি করুন এবং ১২০-১৩০ px-এর ব্রাশ (৮০% হার্ডনেস) সহকারে চিত্র-৯-এর মতো কালার করুন। এবার ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়ার জন্য আবার ছবিটিকে ফ্ল্যাট করতে হবে। ফ্ল্যাট করার পর background লেয়ারের নাম ‘girl’ দিন। এখন সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে ফেলার জন্য ম্যাজিক ওয়ান্ড টুল নিন (টলারেন্স=৩২) এবং ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড সিলেক্ট করুন। shift চেপে সিলেক্ট করলে মূল ছবির ভেতরের অংশ ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে একসাথে সিলেক্ট করা যাবে (চিত্র-১০)। ব্যাকগ্রাউন্ড সিলেক্ট করা হয়ে গেলে লেয়ার ট্যাবে গিয়ে layer mask-এ hide selection অপশনটি সিলেক্ট করলে সম্পূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ডটি মুছে যাবে এবং ইমপোর্ট করা ব্যাকগ্রাউন্ডটি চলে আসবে।
এবার girl লেয়ারের নিচে background নামে আরেকটি লেয়ার তৈরি করুন এবং #f07e0f কালার দিয়ে পূর্ণ করুন। background লেয়ারের ওপরে Zoom Lines আরেকটি লেয়ার তৈরি করুন। ব্রাশ টুল সিলেক্ট করে তা ৮ px এবং হার্ডনেস ১০০%-এ সেট করুন। ব্রাশ টুল সিলেক্ট অবস্থায় ব্রাশ প্যানেলে ক্লিক করুন, Brush Tip Shape সিলেক্ট করে Spacing ১৭৫%-এ সেট করুন, Shape Dynamics সিলেক্ট করে Size Jitter ১০০%-এ সেট করুন এবং সাথে ফোরগ্রাউন্ডের রঙ সাদা করুন। এবার girl লেয়ারটি হাইড করুন, shift চেপে মাঝ বরাবর ব্রাশ টুল দিয়ে ‘zoom lines’ লেয়ারের ওপর ভূমির সমান্তরাল একটি রেখা টানুন। লাইনটি পরিবর্তন করতে ctrl+t চাপুন। এবার alt চেপে মিডল বক্সটি চিত্র-১১-এর মতো করে রাখুন। এখন Filter ট্যাবের Distort অপশনে গিয়ে Polar Coordinates সিলেক্ট করুন। সেখানে Rectangular to Polar সিলেক্ট করুন। Ctrl+t চাপার পর Alt+Shift চেপে রিসাইজ করুন। এবার আবারও Filter-এ গিয়ে blur-এ গিয়ে গশিয়ান ব্লার ১৪.৮-এ সেট করুন। এবার zoom lines লেয়ারটির opacity ৫২%-এ সেট করুন এবং girl লেয়ারটি আনহাইড করুন (চিত্র-১২)।
এভাবে ফটোশপ ব্যবহার করে যেকোনো ছবিকে কার্টুন ছবিতে পরিণত করা যায়। এখানে কার্টুন ছবি বানানোর একটি সাধারণ ধারণা দেয়া হলো। এর সাথে আরও ইফেক্ট দিয়ে আরও সুন্দরভাবে এডিট করা সম্ভব।