লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
৩য় মত
কমপিউটার জগৎ ছুঁয়েছে আরেকটি মাইলফলক
আমি কমপিউটার জগৎ-এর একজন পুরনো নিয়মিত পাঠক। আমি এ পত্রিকার প্রতিটি বিভাগ সময়ের অভাবে পড়তে না পারলেও প্রচ্ছদ প্রতিবেদন, আলোচনাধর্মী লেখাসহ ৩য় মত প্রায় সবসময় পড়ার চেষ্টা করি। আমি নন- টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের ইতি টানি প্রায় ১২ বছর আগে। কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত নন-টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর লেখাগুলো পড়ে আমারও মাঝেমধ্যে কিছু লেখা দিতে ইচ্ছে করে, কেননা এক সময় আমি শখ করে কিছু লেখালেখি করতাম, যদিও সেগুলো কখনই কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। সম্প্রতি আমার পুরনো সেই শখ আবার জেগে উঠেছে। আর তাই কমপিউটার জগৎ-এর ৩য় মত বিভাগে প্রকাশের জন্য আমার একান্ত কিছু মতামত তুলে ধরলাম। আমার মনে হয়, এ ধরনের অনেক মন্তব্য ইতোমধ্যে এ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে, তারপরও আমি আশা করব, এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পত্রিকাগুলোর সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয় পত্রিকা মাসিক কমপিউটার জগৎ আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে পাঠকদের সামনে প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে কমপিউটার জগৎ-এর যাত্রা যখন শুরু, তখন এ দেশের সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে শুরু করে সর্বসাধারণের মধ্যে এক মিথ্যে ভয় ছিল কমপিউটারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে এদেশে বেকারত্বের হার অনেক অনেক বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সে সময় সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের কেউ কেউ কমপিউটারকে ‘শয়তানের বাক্স’ বলে অভিহিত করতেও কার্পণ্য করেনি। তখন এ দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ মনে করত যদি এ দেশে কমপিউটারায়নের ব্যাপক বিসত্মার ঘটে, তাহলে বেকারত্ব অনেক বেড়ে যাবে এবং সৃষ্টি হবে এক বিশাল হতাশাময় পরিবেশ। এমনই এক বৈরী পরিবেশে কমপিউটার জগৎ-এর যাত্রা ছিল দুঃসাহসিক।
সেই তখন থেকে আমার প্রিয় পত্রিকা কমপিউটার জগৎ এ দেশের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তিতে সচেতন করার জন্য জাতীয় গুরম্নত্বপূর্ণ ইস্যুতে আয়োজন করে বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন। কমপিউটার জগৎ আয়োজিত বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি ছিল ডাটা এন্ট্রি, বিনামূল্যের ফাইবার অপটিক সংযোগের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিহত করার জন্য ব্যাপক জনমত সৃষ্টির লক্ষ্য সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদি। কমপিউটার জগৎ তথ্যপ্রযুক্তিতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য যখন এসব সংবাদ সম্মেলন করে, তখন এ দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোও আইটি বিষয়ে ছিল অনেকটাই উদাসীন। তাই কমপিউটার জগৎকে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে এসব সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে। বলা যায়, প্রথাগত সাংবাদিকতার অর্গল ভেঙেই কমপিউটার জগৎ আয়োজন করে বাংলাদেশের প্রথম কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, প্রথম মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী, প্রথম ইন্টারনেট সপ্তাহ উদযাপন ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কমপিউটার জগৎ আয়োজন করল বাংলাদেশের প্রথম ই-বাণিজ্য মেলা, যার স্লোগান ছিল ‘ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব’ এবং পর্যায়ক্রমে আয়োজিত হতে যাচ্ছে দেশের সব বিভাগীয় শহরে ই-বাণিজ্য মেলা।
অতীতের ধারাবাহিকতায় কমপিউটার জগৎ ই-বাণিজ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতেই এ মেলার আয়োজন করে। ই-বাণিজ্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর মাধ্যমে যেমনি দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা-- গতি আনা যায়, তেমনি নাগরিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায় অভাবনীয় গতিশীলতা। ই-বাণিজ্য ছাড়া আধুনিক বিশ্বেও ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনা করা অসম্ভব। ই-বাণিজ্য ব্যবহারে জনসচেতনতার অভাবের কারণে এ দেশে ই-বাণিজ্য তেমন প্রত্যাশিত গতি আসেনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কমপিউটার জগৎ আয়োজিত এই ই-বাণিজ্য মেলা এ দেশে ই-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে কমপিউটার জগৎ আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করল। এ ই-বাণিজ্য মেলা তত্ত্বাবধানে ঢাকা জেলা প্রশাসন থাকায় তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি চাই কমপিউটার জগৎ দেশের তথ্যপ্রযুক্তির অঙ্গনে অতীতের মতো অব্যাহতভাবে একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করুক।
কামরুল হাসান
পলস্নবী, মিরপুর, ঢাকা
হাইটেক পার্ক নিয়ে হাইটেক খেলা বন্ধ হোক
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করে, তাৎক্ষনিক তার মর্মার্থ যথার্থভাবে এ দেশের সাধারণ জনগণ বুঝতে না পারলেও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত সবাই ঠিকই বুঝতে পেরেছিল আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে সরকার কী বোঝাতে চেয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ পদবাচ্য নিয়ে প্রথম দিকে বুঝে-না বুঝে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ দেশের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মসহ আইসিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ি-পেশাজীবীরা সমালোচনা না করে সবাই এক সুন্দর নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন। কেননা এ শ্রেণীর লোকেরা সঙ্গত কারণে বুঝতে পেরেছিলেন সত্যি সত্যি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারলে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বরূপ কেমন হতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া খুব সহজ কাজ না হলেও কঠিন নয়। এর জন্য চাই কাজে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার বেশ কিছু কাজ করেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত ৪ বছরে ডিজিটাল বাংলদেশ গড়ার কার্যক্রমের অনেক কাজই প্রত্যাশিত সময়ের অনেক পরে সম্পন্ন হয় বা সম্পন্নণ হওয়ার পথে, যা কিনা ডিজিটাল বাংলদেশ পদবাচ্যের জন্য এক চরম কষাঘাত। কেননা কাজকর্ম ডিজিটালাইজড করার অর্থ হচ্ছে শুধু নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে দ্রুতগতিতে কাজ সম্পন্ন নয় বরং সরকারের কর্মকার বিভিন্ন মেকানিজমকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করা, যা এখনও আমাদের দেশে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকারের মেকানিজমের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে প্রচুর। এসব কারণে সরকারের কাজের গতি অনেক ক্ষেত্রেই ধীর হতে দেখা যায়। সর্বোপরি রয়েছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর গাফিলতি বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। শুধু তাই নয়, এর সাথে আছে দুর্নীতি ও কমিশনভোগীদের দৌরাত্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সরকার যেসব কর্মকা- হাতে নিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এই হাইটেক পার্ক নির্মাণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে বছর বছর ধরে। কিছুদিন আগেও এ ক্ষেত্রে কাজের গতি দেখা গেলেও সম্প্রতি তা আবার বন্ধ হয়ে গেছে বিশেষ কোনো মহলকে বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়ার জন্য, যা আমাদের কাম্য নয়।
বর্তমানে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের খবর শোনা যাচ্ছে তা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি শুধু নষ্ট করবে তা নয়, বরং বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর কাছে আমাদের দাবি, হাইটেক পার্ক নিয়ে যেনো কোনো ছিনিমিনি খেলা না হয়।
মাতলুব আহমাদ
কালিয়াকৈর, গাজীপুর