লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
৩য় মত
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির অস্কার অ্যাপিকটা
কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ পিছিয়ে পড়া এক খাত হিসেবে গণ্য করা হতো। এখন অবশ্য এ খাতটি ধীরে ধীরে বিকশিত হতে শুরম্ন করেছে। তবে আমাদের দেশের প্রতিবেশী দেশগুলো তথ্যপ্রযুক্তিকে অবলম্বন করে যে গতিতে এগিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরম্ন করেছে, আমরা সে গতিতে পারছি না সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে। লÿণীয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার পরও সরকারি কর্মকা- এখনও পুরোপুরি ডিজিটাইজ হয়ে ওঠেনি, এখনও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা থেকে বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী বঞ্চিত। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতটি কেমন, এ খাতের দÿ জনবল কেমন, সে সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। বলা যায়, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিসংশিস্নষ্ট দÿ জনবল সম্পর্কে পরিচিতি প্রকাশ পায় ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে।
এ কথাও সত্য, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা বহির্বিশ্বে তুলে ধরার জন্য সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ পরিলÿÿত হতে দেখা যায়নি আজ পর্যমত্ম। ফলে আমত্মর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে তৈরি হয়নি কোনো ব্র্যান্ডিং ইমেজ। এ ব্র্যান্ডিং ইমেজ সৃষ্টির লÿÿ্য দরকার আমত্মর্জাতিক সভা-সেমিনারে অংশ নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও কিছু ইভেন্ট আয়োজন করা।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স (অ্যাপিকটা)। এ অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় ও সফল উদ্যোগ, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছর অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডসের আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো তথ্যপ্রযুক্তির অস্কারখ্যাত অ্যাপিকটা।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) অ্যাপিকটার সদস্যপদ লাভ করে। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডসে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পুরস্কারও জিতেছে। সদস্যপদ পাওয়ার মাত্র দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ নবীনতম সদস্য হিসেবে অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডসের এই আয়োজন অ্যাপিকটার ইতিহাসে প্রথম।
বলা যায়, ১৭তম অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস ঢাকা ২০১৭-এর আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও সুবিধাগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরার একটা বিরাট সুযোগ পায়। আগে আমাদের এ ধরনের আয়োজনের সক্ষমতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করত। এবারে আমাদের সক্ষমতা তুলে ধরার সুযোগ এসেছে। এ আয়োজন সফল করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল তাদের কাছে নতুন বাংলাদেশকে তুলে ধরা। বাংলাদেশকে তাদের সামনে সুন্দর দেশ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে রাজধানীর র্যা ডিসন হোটেলে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা পেশাদার ও অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) যৌথভাবে ৭ থেকে ১০ ডিসেম্বর আমত্মর্জাতিক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১৬টি দেশ থেকে প্রায় ৪০০ বিদেশি অতিথিকে নিয়ে এ ধরনের আয়োজন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য প্রথমবারের মতো ঘটনা। তাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি আবাসনের জন্য নির্ধারিত হোটেলগুলোতেও বিশেষ নিরাপত্তা ও হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। টেলিটকের সহযোগিতায় তাদের বিনামূল্যে ইন্টারনেটসহ সিম দেয়া হয়। উবারের সহযোগিতায় অংশ নেয়াদের ভ্রমণ সহজ ও নিরাপদ করা হয়। আয়োজনকে উৎসবমুখর করতে বিশেষ পদক্ষেপও নেয়া হয়। আমন্ত্রিত প্রতিযোগীদের নিয়ে ওয়েলকাম রিসেপশন, বাংলাদেশ নাইট ও হংকং নাইট করা হয়।
অতিথিদের ঘুরিয়ে দেখানো হয় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। ১০ ডিসেম্বর বিকেলে ১৭তম অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস, ঢাকা ২০১৭-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আমত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী দেশ ছিল ১৬টি। ১৭ ক্যাটাগরিতে আমত্মর্জাতিক প্রকল্প ১৪১টি, বাংলাদেশি প্রকল্প ৪৭টি, বিদেশি প্রতিযোগীর সংখ্যা ৩৬৬ জন এবং বাংলাদেশি প্রতিযোগীর সংখ্যা ১৬৬ জন, আমত্মর্জাতিক বিচারক ৫৬ জন এবং বাংলাদেশি বিচারক ১৭ জন।
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। তরম্নণেরা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং জরম্নরি। অ্যাপিকটার সদস্য হওয়ার মাত্র দুই বছরের মধ্যেই এর পুরস্কার আয়োজন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ঘিরে বিশ্বে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
এশিয়ার তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স বা অ্যাপিকটা পুরস্কারের সহ-আয়োজক হতে পেরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর গর্বিত। এর মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশামত্ম মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। ব্যবসায় সম্প্রসারণে সুবিধা হবে বলা যায়।
অ্যাপিকটার সদস্যভুক্ত ১৬টি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রম্ননাই, চীন, চীনা তাইপে, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিসত্মান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও নেপাল অংশ নেয়। ১৭টি বিভাগে বিভিন্ন দেশের ১৭৭টি প্রকল্প বাছাই করে অ্যাপিকটার বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ৪৮টি প্রকল্প প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৬ জন বিচারক দুই দিন প্রকল্প বাছাই করেন।
বাংলাদেশ প্রতিবছর অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডসে অংশগ্রহণ করবে, তাই এখন থেকে প্রতিবছরই বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস আয়োজন করা হবে। এবারের আয়োজনে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ১৭টি ক্যাটাগরিতে মোট ৩৬৫টি প্রকল্প জমা পড়ে। সেখান থেকে অভিজ্ঞ বিচারকেরা ১৮১টি প্রকল্প চূড়ামত্ম বাছাই পর্বের জন্য মনোনীত করেন। প্রায় ৪০ জন বিচারক সংশিস্নষ্টদের প্রেজেন্টেশন ও যাবতীয় ডকুমেন্টেশন পর্যালোচনার মাধ্যমে চূড়ামত্ম বিজয়ী নির্বাচন করেন।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা বহির্বিশ্বে তুলে ধরার জন্য সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এ ধরনের কর্মকা- নিয়মিত হওয়া উচিত। ফলে আমত্মর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে ভালো ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। প্রকারামত্মরে যা তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য এক ব্র্যান্ডিং ইমেজ সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আববাস
লালবাগ, ঢাকা