বর্গসংখ্যার কিছু মজা
এক.
১৫৩ সংখ্যাটির একটা মজার দিক হলো একে বেশ কয়েকটি বর্গসংখ্যার সমষ্টি আকারে প্রকাশ করা যায় :
১৫৩ = ১০২ + ৭২ + ২২
১৫৩ = ১২২ + ৩২
১৫৩ = ৬২ + ৬২ + ৯২
তা ছাড়া এ সংখ্যাটিকে বর্গের অন্তর রূপেও প্রকাশ করা যায় :
১৫৩ = ১৩২ - ৪২
১৫৩ = ১৫২ - ৬২ - ৬২
আবার ১৫৩ হতে পারে কতগুলো ঘনসংখ্যারও সমষ্টি :
১৫৩ = ১৩ + ৩৩ + ৫২
আমরা এ সংখ্যাটিকে বর্গসংখ্যা ও ঘনসংখ্যার মাঝে প্রয়োজনমতো যোগ চিহ্ন বসিয়েও প্রকাশ করতে পারি :
১৫৩ = ১১২ + ৩৩ + ২২ + ১২
১৫৩ = ২২ + ৩৩ + ৪২ + ৫২ + ৯২
১৫৩ = ২২ + ৩২ + ৪২ + ৪২ + ৯২ + ৩৩
১৫৩ = ২৩ + ৩৩ + ৪৩ + ২২ + ৩২ + ৪২ + ৫২
আরো দেখা গেছে :
১৫৩ = ২৭ + ৫২
১৫৩ = ১১২ + ২৫
আবার ১৫৩ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোকে ওলটপালট করে লিখে পাই ৫১৩। আর ৫১৩ = ৫৩ + ১৩ + ৩৩
গণিতে এগুলোকে বলা হয় ১৫৩-এর মাল্টিপল কারেক্টারিস্টিক বা গুণ বৈশিষ্ট্য।
দুই.
এবার আমরা জানব ১ থেকে ৫-এর বর্গসংখ্যা নিয়ে কিছু মজার সম্পর্ক :
৫২ = ২৫। আর ২৫ = ২৬ - ০১ এবং ২৬০১ = ৫১২
৪২ = ১৬। আর ১৬ = ৩৭ - ২১ এবং ৩৭২১ = ৬১২
৩২ = ০৯।আর ০৯ = ৫০ - ৪১ এবং ৫০৪১ = ৭১২
১২ = ০১। আর ০১ = ৮২ - ৮১ এবং ৮২৮১ = ৯১২
তিন.
এবার কয়েকটি ইংরেজি সনে গণিতের কী লুকিয়ে আছে, তা খুঁজে দেখা যাক।
১৯৮৩ : এখানে ৮৩ ও ১৯-এর মধ্যে পার্থক্য ৬৪, যা একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা।
২০১১ : এখানে ২০ ও ১১-এর মধ্যে পার্থক্য ০৯, যা একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা।
১৯৭১ : এখানে ৭১ ও ১৯-এর মধ্যে পার্থক্য ৫২।
লক্ষণীয়, ১৯৭১ আমাদের স্বাধীনতা লাভের বছর আর ১৯৫২ আমাদের ভাষা আন্দোলনের বছর।
চার.
আমরা জানি যে সংখ্যাকে শুধু ১ আর ওই সংখ্যা ছাড়া আর কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না, তাকে বলা হয় মৌলিক সংখ্যা। কতগুলো মৌলিক সংখ্যা আছে যেগুলোকে দুই বর্গের সমষ্টি আকারে প্রকাশ করা যায়। নিচে এমনি মৌলিক সংখ্যা ১৭, ৯৭, ৩৩৭ এবং ৮৮১-এর উদাহরণ দেয়া হলো :
১৭ = ৪২ + ১২
৯৭ = ৯২ + ৪২
৩৩৭ = ১৬২ + ৯২
৮৮১ = ২৫২ + ১৬২
কিছু মৌলিক সংখ্যা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন না, এসব সংখ্যাকে দুই বর্গের সমষ্টি আকারে প্রকাশ করতে পারেন কি না। আবার শুধু যে মৌলিক সংখ্যাকেই দুই বর্গের সমষ্টিরূপে প্রকাশ করা যায় তা নয়, কৃত্রিম সংখ্যাকেও দুই বর্গের অন্তররূপে প্রকাশ করা যায়। যেমন ১৯২১ একটি কৃত্রিম সংখ্যা, কারণ এ সংখ্যাটিকে ১৭ ও ১১৩ দিয়ে ভাগ করা যায়। আর এটিকে দুই বর্গের অন্তররূপে প্রকাশ আমরা করলে পাই ১৯২১ = ৩৬২ + ২৫২।
পাঁচ.
কতগুলো বর্গসংখ্যা আছে, যেগুলোকে কিউব বা ঘন এবং স্কয়ার বা বর্গের সমষ্টির আকারে প্রকাশ করা যায়।
০৩২ = ০০৯ = ২২ + ১২
০৬২ = ০৩৬ = ৩২ + ৩২
১০২ = ১০০ = ৪৩ + ৬২
১৫২ = ২২৫ = ৫৩ + ১০২
আবার কিছু কিছু বর্গসংখ্যা আছে যেগুলো বিশেষ নাম্বার প্যাটার্ন অনুসরণ করে ।
৪২ = ১৬
৩৪২ = ১১৫৬
৩৩৪২ = ১১১৫৫৬
৩৩৩৪২ =১১১১৫৫৫৬
৩৩৩৩৪২ = ১১১১১৫৫৫৫৬
৩৩৩৩৩৪২ =১১১১১১৫৫৫৫৫৬
......ইত্যাদি।
৭২ = ৪৯
৬৭২ = ৪৪৮৯
৬৬৭২ = ৪৪৪৮৮৯
৬৬৬৭২ = ৪৪৪৪৮৮৮৯
৬৬৬৬৭২ = ৪৪৪৪৪৮৮৮৮৮৯
৬৬৬৬৬৭২ = ৪৪৪৪৪৪৮৮৮৮৮৯
......ইত্যাদি।
৯২ = ৮১
৯৯২ = ৯৮০১
৯৯৯২ = ৯৯৮০০১
৯৯৯৯২ = ৯৯৯৮০০০১
৯৯৯৯৯২ = ৯৯৯৯৮০০০০১
৯৯৯৯৯৯২ = ৯৯৯৯৯৮০০০০০১
.......ইত্যাদি।
ছয়.
কিছু বর্গসংখ্যা আছে যেগুলোকে দুই বর্গের অন্তর বা বিয়োগফল আকারে প্রকাশ করা যায়। গণিতের ভাষায় বলা যায় যদি, ক২ একটি বর্গসংখ্যা হয় তবে ক২ কে আমরা এভাবে প্রকাশ করতে পারি:
ক২ = খ২ + গ২ । যেমন ৫২ = ৩২ + ২২ । এখানে ৫২ হচ্ছে এমন একটি সংখ্যা যা অন্য দুই সংখ্যা ৩ ও ২- এর বর্গের সমষ্টি। এখানে ৫, ৩ ও ২ একটি বিশেষ ত্রয়ীসংখ্যা,যা উপরে বর্ণিত শর্ত মেনে চলে । গণিত জগতে এই (৫, ৩, ২) ধরনের সংখ্যার নাম পিথাগোরাসের ট্রিপলেট বা ত্রয়ীসংখ্যা। কারণ, আমরা জানি পিথাগোরাস আমাদের জানিয়েছিলেন, একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘ্য ৫ একক হলে এর অপর দুই বাহুর দৈর্ঘ্য হবে ৩ একক ও ২ একক, কারণ ৫২ = ৩২ + ২২ । আসলে তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ২ = ভূমি২ + লম্ব২।
এই সংখ্যাত্রয় রের করার নানা সূত্র আছে। একটি নিয়ম হলো প্রথমে একটি বিজোড় সংখ্যা খ নিতে হবে। তখন গ ও ক পেয়ে যাবো নিজের সূত্র থেকে:
গ = (খ২ - ১) ২ এবং ক = (খ২ + ১) ২। এখন খ = ৫ ধরলে উপরের সূত্র থেকে সহজেই পেয়ে যাই গ = ১২ এবং ক = ১৩। অতএব এ ক্ষেত্রে ত্রয়ীসংখ্যা হচ্ছে (১৩, ১৩, ৫)। এ নিয়মটা ৬২৮ খৃষ্টাব্দে উদ্ভাবন করেন ভারতীয় গণিতাবদ ব্রহ্মগুপ্ত। পিথাগোরাসের কয়েকটি ট্রিপলেট উল্লিখিত হলো :
৫২ = ৩২ + ২২ (৫,৩,২)
১৩২ = ১২২ + ৫২ (১৩,১২, ৫)
২৫২ = ১৫২ + ২০২ (২৫, ১৫,২০)
২৯২ = ২০২ +২১২ (২৯,২০,২১)
৩৯২ = ১৫২ + ৩৬২ (৩৯, ৩৬, ১৫)
৫২২ = ২০২ + ৪৮২ (৫২,২০, ৪৮)
১০১২ = ২০২ + ৯৯২ (১০১. ২০, ৯৯)
১১৩২ = ১৫২ + ১১২২ (১১৩, ১৫, ১১২)
কজ ওয়েব