আয়কর বা রাজস্ব আদায় পৃথিবীর যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত দেশগুলোর জনসাধারণ আয়কর দেয়ার ব্যাপারে সচেতন। তাই এরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্রটি সত্যিই ভয়াবহ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম লোক আয়কর দেয়। তাই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আয়কর দেয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো এবং আয়কর পরিশোধে তাদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই গত বছর থেকে দেশে আয়োজন করা হচ্ছে আয়কর মেলা।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে শুরু হয় আয়কর মেলার দ্বিতীয় আসর, যা খুবই সফলতার সাথে শেষ হয়েছে গত ২২ সেপ্টেম্বর। ছয় দিনের এবারের মেলার সাফল্যের পেছনে ছিল প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সেবা। এসব সেবার মাধ্যমে করদাতাদের ভোগান্তি কমিয়ে আয়কর পরিশোধ সম্পর্কে প্রচলিত ভয়ভীতি কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১’ রূপকল্পের আলোকে এবারের মেলায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এক বিপুল সমাহার লক্ষ করা গেছে। এবারের মেলায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে।
আড়ম্বরপূর্ণ উদ্বোধন
ঢাকায় আয়োজিত আয়কর মেলা ২০১১ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও এনবিআর সদস্য এমএ কাদের সরকার।
এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলার সময় উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম ও বশির উদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাসিরউদ্দিন আহমেদ। উল্লেখ্য, প্রতিটি বিভাগীয় শহরেই একই দিনে আয়কর মেলা ২০১১ শুরু হয়।
‘সবাই মিলে দিব কর দেশ হবে স্বনির্ভর’- এই স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া ছয় দিনের এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম আয়কর বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘কর দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে করদাতাদের মধ্যে সচেতনতার অভাবে তাদেরকে হয়রানি করা হয়। আবার আয়কর আইনজীবীরাও এই সুযোগ নিয়ে তাদের নানা ধরনের জটিলতার মধ্যে ফেলে দেন।’
কর সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কর সম্পর্কে শিক্ষা কার্যক্রম থাকা উচিত।’ তিনি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, সাধারণ মানুষের আয়কর পরিশোধ সম্পর্কে ভয়ভীতি দূর করা খুবই জরুরি।
এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবারের মেলা সম্পর্কে বলেন, ‘গত বছর ৫২ হাজার করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন। এবার আমাদের লক্ষ্য ১ লাখ করদাতার কাছ থেকে রিটার্ন নেয়া।’ দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ লোক আয়কর দেন- এ তথ্যটি জানিয়ে তিনি আয়কর সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পাঠ্যপুস্তকে কর সম্পর্কে শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত বলেও তনি মত দেন।
মেলার আহবায়ক ও এনবিআর সদস্য এমএ কাদের সরকার মেলার ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিসের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘এবার করমেলায় সব সেবাই দেয়া হবে ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিসের মাধ্যমে। আশা করি, এবার ১ লাখ করদাতা তাদের রিটার্ন জমা দেবেন। গতবার ৫২ হাজার রিটার্ন জমা পড়েছিল।’
মঞ্চে উপস্থিত সবার বক্তব্য শেষ হলে এইচটি ইমাম ফিতা কেটে আয়কর মেলা ২০১১ উদ্বোধন করেন।
আয়কর মেলায় অর্থমন্ত্রী
এ আয়কর মেলার প্রথম দিনে মেলার ঢাকা ভেন্যু পরিদর্শনে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার পূর্বনির্ধারিত লন্ডন সফরের প্রাক্কালে অর্থমন্ত্রী স্বল্পসময়ের জন্য হলেও মেলায় আসেন এবং মেলার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবগত হন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং আয়কর মেলা ২০১১ উদযাপন কমিটির আহবায়ক এমএ কাদের সরকার।
অর্থমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং মেলার আয়োজন সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আরও বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। মেলায় প্রদত্ত প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নে এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি আশা প্রকাশ করেন, আয়কর মেলার মাধ্যমে জনগণ আয়কর দিতে উৎসাহিত হবে এবং তাদের মধ্যে আয়কর দেয়ার ব্যাপারে এক ধরনের দায়িত্ববোধ তৈরি হবে।
ডিজিটাল মেলা : বাঁচায় সময় বাড়ায় কর
এ আয়কর মেলার সফল সমাপ্তি ঘটে গত ২২ সেপ্টেম্বর। গত বছর প্রথমবারের মতো শুধু ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আয়কর মেলা। কিন্তু এবার আরো বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে দেশের সব বিভাগীয় শহরে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির আলোয় বর্ণিল এবারের আয়কর মেলায় আশাতীত সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আয়জক কমিটি। মেলার শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটির সভাপতি এমএ কাদের সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আয়কর মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ৪১৪ কোটি ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৭৫২ টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে। এ বছর সর্বমোট ৬২ হাজার ২৭২ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এ ছাড়া মেলায় নতুন টিআইএন অর্থাৎ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার নিয়েছেন ১০ হাজার ৪১ জন করদাতা।
এবারের আয়কর মেলার সফলতার কথা উল্লেখ করে এমএ কাদের আরও বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করা গেছে; কর দিতে উদ্বুদ্ধ করা গেছে। সর্বোপরি দেশে করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং কর দেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এ মেলা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলেই আমরা মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব আবু আলম মো: শহীদ খান, তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সচিব মিজানুর রহমান।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আয়কর রিটার্ন জমা দেন ১৭ হাজার ৮১ জন আয়করদাতা। এ বছর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে।
এবারের আয়কর মেলা সফলতার পেছনে মেলায় ব্যবহৃত ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। স্মার্ট কিউ, স্ট্যাটাস ডিসপ্লে, অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর, জুরিসডিকশন ফাইন্ডার, অনলাইন লাইন স্ট্রিমিংয়ের মতো প্রযুক্তির সমারোহ দেখা গেছে এবারের মেলায়। এসব প্রযুক্তি একদিকে যেমন আয়কর দেয়ার প্রক্রিয়াকে সহজতর করে সরকারের রাজস্ব বাড়িয়েছে, অন্যদিকে কমিয়েছে করদাতাদের দুর্ভোগ। বাঁচিয়েছে তাদের মূল্যবান সময়।
মেলায় আসা অনেক করদাতাই কম সময়ে কর দিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, এ প্রক্রিয়ায় কর দিতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়, যা আগে কয়েক দিন লেগে যেত। মেলার ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর সেবা সম্পর্কে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ কেউ এমনটাও বলেছেন, এবারের মেলায় এরা কিছুটা হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছেন।
জুরিসডিকশন ফাইন্ডার : প্রযুক্তির অনন্য সংযোজন
এবারের মেলায় প্রযুক্তির উৎকর্ষতার আরেকটি অনন্য উদাহরণ ছিল ‘জুরিসডিকশন (অধিক্ষেত্র) ফাইন্ডার’ নামের সফটওয়্যারটি। এই ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে একজন করদাতা খুব সহজেই জানতে পারেন কোন কর অঞ্চলের অধীনে বা কোন কর অফিসে তার আয়কর রিটার্ন দাখিল করাসহ আয়কর পরিশোধ সম্পর্কিত অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
মেলায় আসা আয়করদাতাদের অধিক্ষেত্র খুঁজে বের করতে সাহায্য করার লক্ষ্যে গত বছর মেলার প্রথম আসরেই অধিক্ষেত্র নামে বিশেষ স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আরও বড় পরিসরে এবং আরও বেশি সংখ্যক করদাতাকে স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে এ বছর মেলায় জুরিসডিকশন ফাইন্ডার নামের এই সফটওয়্যারটির ব্যবস্থা করা হয়। এর পাশাপাশি এবারের মেলায় অধিক্ষেত্র স্টলের পরিমাণ এবং এ সেবায় নিয়োজিত লোকবলের পরিমাণও বাড়ানো হয়। সফটওয়্যারটি আয়কর মেলায় ব্যবহার হলেও এটি এখনও এনবিআর ওয়েবসাইটে সন্নিবেশিত হয়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে অচিরেই তা এনবিআর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। তখন যেকেউ ঘরে বসেই তার অধিক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে পারবেন।
‘জুরিসডিকশন ফাইন্ডার’ সফটওয়্যারটিসহ আয়কর মেলায় অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহারের নেপথ্যে ছিলেন কর পরিদর্শন পরিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ই-গভর্নেন্স ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও ডিজিটাল এনবিআর কোর কমিটির সদস্য কানন কুমার রায় এবং কর প্রশিক্ষণ পরিদফতরের মহাপরিচালক ও ডিজিটাল এনবিআর কোর কমিটির সদস্য মো: মেফতাহ উদ্দিন খান। জুরিসডিকশন ফাইন্ডার সফটওয়্যার তৈরিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে টেকনোভিসতা লিমিটেড।
ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ও ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন সফটওয়্যার
ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ও আয়কর দাখিল প্রিপারেশন সফটওয়্যার দু’টি মেলায় অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আয়কর মেলা ২০১১ শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ দু’টি সফটওয়্যার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে সন্নিবেশিত ছিল। কিন্তু অনেক আয়করদাতাই এবারের মেলায় প্রথমবারের মতো এ সফটওয়্যার দু’টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন তথা এটুআই প্রজেক্টের নির্দেশক্রমে এনবিআর ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর বা অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর তৈরির কাজ হাতে নেয়। এ সফটওয়্যারটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল আয়করদাতারা যেনো সহজে তাদের প্রদেয় আয়কর হিসেব করতে পারেন। কারণ, আগে অনেক করদাতাই অভিযোগ করতেন, তারা আয়কর সম্পর্কিত আইনগুলো ভালো করে জানেন না। তাই এরা নিজেদের আয়কর হিসাব করে বের করতে পারতেন না। ফলে অনেকেই অন্যের সহায়তা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতেন।
কিন্তু এখন এই অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর তৈরি হওয়ার ফলে আয়কর আইন সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা না থাকলেও সাধারণ করদাতারা কিছু নির্দিষ্ট তথ্য দেয়ার মাধ্যমে তাদের প্রদেয় আয়কর নির্ধারণ করতে পারেন। মেলায় যেসব করদাতা এই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তাদেরকে এনবিআর কর্মকর্তারা এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে সহায়তা করেছেন।
ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের পাশাপাশি যে আরেকটি সফটওয়্যার এনবিআর ওয়েবসাইটে দেয়া আছে সেটি হচ্ছে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন সফটওয়্যার। একে ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের বর্ধিত সংস্করণ বলা যায়। কারণ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে করদাতারা বিভিন্ন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য দিয়ে তাদের আয়কর রিটার্ন তৈরি করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, অনলাইন ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের জন্য এনবিআর-কে এ বছর জাতীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
যেভাবে অধিক্ষেত্র খুঁজবেন
অধিক্ষেত্র খুঁজে পেতে একজন করদাতাকে প্রথমে সফটওয়্যারটি রান করাতে হবে। এরপর যে উইন্ডোটি কমপিউটারের পর্দায় আসবে, সেখানে প্রথমে নাম-ঠিকানা এবং এরপর আয়ের ধরন উল্লেখ করতে হবে। আপনি যদি আপনার আয়ের ধরন হিসেবে ‘সার্ভিস’ সিলেক্ট করে থাকেন তবে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটি আপনাকে আপনার এমপ্লয়ার (চাকরিদাতা) ধরন (বা টাইপ অব এমপ্লয়ার) সিলেক্ট করতে বলবে। এরপর আপনার নির্দেশিত এমপ্লয়ার ধরনের ওপর ভিত্তি করে সফটওয়্যারটি নিম্নোক্ত সম্ভাব্য তিনটি উপায়ের যেকোনো একটি উপায়ে রেসপন্ড করবে।
০১.
ফাইন্ড জুরিসডিকশন বাটনটির মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশনটি অধিক্ষেত্র প্রকাশের জন্য প্রস্ত্তত হবে। দৃশটি নিচের চিত্রের মতো দেখাবে :
চিত্র-১ : আয়করদাতার তথ্য প্রদান (অপশন-১)
০২.
সফটওয়্যারটি পর্দায় প্রদর্শিত ফর্মটিকে নিচের দিকে বাড়বে এবং ‘আয়করদাতার নামের প্রথম বর্ণ’ একটি ড্রপডাউন লিস্ট থেকে সিলেক্ট করতে বলবে। এ ক্ষেত্রে চিত্রটি দেখাবে এরূপ :
চিত্র-২ : আয়করদাতার তথ্য প্রদান (অপশন-২)
০৩.
সফটওয়্যারটি পর্দায় দৃশ্যমান ফর্মটিকে নিচের দিকে বাড়াবে এবং আয়করদাতার ‘ব্যাংক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নাম’ সিলেক্ট করতে বলবে। এবার দৃশ্যটি নিচের চিত্রের মতো দেখাবে :
চিত্র-৩ : আয়করদাতার তথ্য প্রদান (অপশন-৩)
০৪.
এবার ‘ফাইন্ড জুরিসডিকশন (অধিক্ষেত্র)’ বাটনটিতে ক্লিক করলে সফটওয়্যারটির জুরিসডিকশন (অধিক্ষেত্র) নিচের চিত্রের মতো প্রকাশ করবে :
চিত্র-৪ : আয়করদাতার অধিক্ষেত্র সম্পর্কিত তথ্য
উপরোল্লিখিত রিপোর্টটি যদি প্রিন্ট করতে চান, তবে দয়া করে প্রিন্ট বাটন চাপুন। ফর্মটি বা ফর্মে উল্লিখিত সব তথ্য মুছে ফেলতে ‘ক্লিয়ার অল’ বাটনে ক্লিক করুন।
যদি আপনার আয়ের উৎস ‘পেশা’ বা ‘ব্যবসায়’ হয়, সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার ‘পেশার ধরন’ বা ‘ব্যবসায়ের ধরন’ উল্লেখ করার পরই আপনার অধিক্ষেত্র প্রকাশ করবে। অথবা সফটওয়্যারটি পর্দায় প্রদর্শিত ফর্মটিকে বর্ধিত করে সেখানে ‘আয়করদাতার নামের প্রথম বর্ণ’ বা ‘প্রতিষ্ঠানের নাম’ বা ‘অবস্থান’ সিলেক্ট করতে বলবে। এভাবে আপনার পেশা বা আয়ের উৎস যাই হোক না কেনো, আপনি এ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে অতিসহজেই আপনার অধিক্ষেত্র জানতে পারবেন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আরো কিছু নিদর্শন
আয়কর মেলা ২০১১ সামগ্রিকভাবে একটি ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর মেলা। এর কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে মেলায় ব্যবহৃত স্মার্ট কিউ, স্ট্যাটাস ডিসপ্লে ও পেয়ার্ড স্টিকারের মতো প্রযুক্তিগুলোতে। এখানে সংক্ষেপে এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
স্মার্ট কিউ
মেলায় আসা আয়করদাতারা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে সেবা পেতে পারেন, সে জন্য মেলায় ছিল স্মার্ট কিউ ম্যানেজমেন্ট। এই প্রযুক্তির মূল বিশেষত্ব হচ্ছে এর মাধ্যমে আয়কর দিতে বা টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করতে পারেন।
স্মার্ট কিউয়ের মাধ্যমে মেলায় আসা এক আয়করদাতাকে বা টিআইএন সংগ্রহে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে প্রথমেই নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে তার কাজের ধরন অনুযায়ী একটি টোকেন দেয়া হতো। যারা টিআইএন সংগ্রহ করতে এসেছিলেন তাদেরকে দেয়া হয়েছে এক ধরনের টোকেন। যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে এসেছিলেন তাদেরকে দেয়া হয়েছে অন্য ধরনের টোকেন। আবার যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে এসেছিলেন তাদের মধ্যেও বিভিন্ন ক্যাটাগরি ছিল। যেমন- যিনি একাই দুই থেকে পাঁচটি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে এসেছিলেন, তাকে অন্য ধরনের টোকেন দেয়া হয়েছে। আবার যিনি পাঁচ থেকে দশটি পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করতে এসেছিলেন তাকে দেয়া হয়েছে আরেক ধরনের টোকেন। এই টোকেনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি জানতে পেরেছেন আর কতজনের পর তার টার্ন আসবে অর্থাৎ আর কতজন ব্যক্তির পর তিনি নির্দিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।
স্ট্যাটাস ডিসপ্লে
গত বছরের আয়কর মেলার মতো এবারের মেলাতেও স্ট্যাটাস ডিসপ্লে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মেলার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মনিটরে কিছুক্ষণ পরপর কত টাকা আয়কর সংগ্রহ হয়েছে তার সর্বশেষ হালনাগাদ দেয়া হতো। সাংবাদিকসহ মেলায় আসা যেকেউ তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারতেন, তখন পর্যন্ত কত টাকা আয়কর জমা দেয়া হয়েছে।
পেয়ার্ড স্টিকার
পেয়ার্ড স্টিকার প্রযুক্তিটিরও দেখা মিলেছিল গতবারের মেলায়। পেয়ার্ড স্টিকারের মাধ্যমে আয়কর কর্মকর্তারা খুব সহজেই তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে একজন আয়করদাতাকে যখন প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেয়া হয়, তখন তাতে একটি স্টিকার লাগানো থাকে। ঠিক একই নাম্বারের স্টিকার কর্মকর্তারা এ ব্যক্তির রিটার্ন দাখিলের ফর্মেও লাগিয়ে দেন। ফলে মেলা শেষ হলে মিল খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং
অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং ছিল মেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ। এই প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে এখনও ততটা পরিচিত নয়। অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং বা অনলাইনে ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার- এই প্রযুক্তিটি মেলায় আসা আয়করদাতাসহ সাধারণ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করেছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিদিন মেলার সামগ্রিক কার্যক্রম ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকেউ চাইলেই মেলার কার্যক্রম ইন্টারনেটে সরাসরি উপভোগ করতে পেরেছেন। অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং প্রযুক্তিটির ব্যবহার গত বছরের মেলাতেও দেখা গেছে।
মেলায় অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং সেবার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল কমজগৎ টেকনোলজিস। মেলা চলার সময় মেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৪টি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করা ভিডিও সর্বক্ষণিক একজন অপারেটর দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মূল সুবিধা হচ্ছে, যারা বিভিন্ন কারণে মেলায় আসতে পারেননি তারাও মেলার সব কার্যক্রম উপভোগ করতে পেরেছেন। পাশাপাশি মেলায় ধারণ করা ভিডিও মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর জনপ্রিয় ভিডিও কনটেন্ট ওয়েবসাইট ইউটিউবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফলে এবারের আয়কর মেলার ধারণ করা ভিডিওগুলো আর্কাইভ আকারে ইন্টারনেটে রয়ে গেছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটের ভিডিও গ্যালারিতেও পাওয়া যাবে এই ভিডিওগুলো।
উল্লেখ্য, আয়কর মেলার অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং এনবিআরের ওয়েবসাইটের (http://www.nbr-bd.org/) হোমপেজে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি মেলার লাইভ স্ট্রিমিং কমজগৎ টেকনোলজিসের ওয়েবসাইটেও দেখানো হয়েছে।
ডাটা এন্ট্রি
আয়কর মেলার প্রতিটি ভেন্যুতেই একটি করে ডাটা এন্ট্রি সেকশন ছিল- যেখানে এনবিআরের বিপুল সংখ্যক কর্মীকে মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখা গেছে। মেলার ঢাকা ভেন্যুর ডাটা এন্ট্রি সেকশনে প্রায় ৪০ জন কর্মী কাজ করেছেন।
ডাটা এন্ট্রি সেকশনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজ ছিল যারা মেলায় নতুন টিআইএন নিয়েছে, তাদের তথ্য এনবিআরের টিআইএন ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মেলায় দাখিল করা আয়কর রিটার্নগুলোর তথ্য সন্নিবেশিত করে ডাটাবেজ আপডেট করা। এ জন্য ‘আয়কর রিটার্ন গ্রহণ’ স্টলগুলোতে দাখিল করা আয়কর রিটার্ন ফর্মগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর একজন ব্যক্তি শপিং কার্টের মতো একটি ঝুড়িতে সংগ্রহ করে ডাটা এন্ট্রি সেকশনে নিয়ে যেত এবং এরপর সেগুলো কমপিউটারে এন্ট্রি করা হতো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট পরিচিতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি ইন্টারেক্টিভ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। তবে এনবিআর ওয়েবসাইটের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর এবং ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন সম্পর্কিত দুটি ইন্টারেক্টিভ ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার। এনবিআরের দাফতরিক ওয়েবসাইটটির ঠিকানা : www.nbr-bd.org। এখানে ওয়েবসাইটটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
হোমপেজ :
ওয়েবসাইটটির হোমপেজে প্রথমেই চোখে পড়বে এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদের শুভেচ্ছা বক্তব্য। তার বক্তব্যের পাশাপাশি হোমপেজে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক। এনবিআর যে তিনটি খাতে রাজস্ব আদায় করে থাকে, সেগুলো হলো : আয়কর (Income Tax), মূসক (VAT) ও কাস্টমস (Customs)। হোমপেজে এই তিনটি বিষয়ের ওপরই রয়েছে আলাদা আলাদা লিঙ্ক, যেখানে এ তিনটি খাতে রাজস্ব পরিশোধ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হোমপেজে জুরিসডিকশন, অনলাইন ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর, বাজেট ২০১০-১১ আর্কাইভ ইত্যাদি লিঙ্ক রয়েছে।
আয়কর :
আয়কর সম্পর্কিত সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি এই পেজে আয়কর রিটার্ন সম্পর্কিত গাইডলাইন, আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন সার্কুলার, বর্তমান বাজেটে প্রদত্ত আয়কর সম্পর্কিত তথ্য এবং বিভিন্ন সময় এনবিআর থেকে প্রকাশিত এসআরওগুলোর উল্লেখ রয়েছে। আয়কর পেজের ঠিকানা : http://www.nbr-bd.org/incometax.html
মূসক :
মূসক পেজটিতে রাজস্ব প্রদানকারীরা মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর প্রযোজ্য মূসকের হার এবং কোন কোন পণ্য মূসকের আওতায় পড়বে না, সেসব বিষয়েও তথ্য রয়েছে। এ পেজের ঠিকানা : http://www.nbr-bd.org/valueaddedtax.html
কাস্টমস :
আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক দেয়া এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে কাস্টমস পেজে। এ ছাড়া কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য হবে না, সে সম্পর্কেও তথ্য রয়েছে এ পেজে। পেজটির ঠিকানা : http://www.nbr-bd.org/customs.html
অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর এবং ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন
অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের লিঙ্কটি ওয়েবসাইটের হোমপেজেই দেয়া আছে। লিঙ্কটি হলো : http://www.nbrtaxcalculatorbd.org/। এতে ক্লিক করলে দু’টি সফটওয়্যারের লিঙ্ক আসবে, যার একটি ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর এবং অন্যটি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন।
ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে একজন করদাতা তার নিজের বা তার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অর্থবছরের জন্য প্রযোজ্য আয়কর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের করতে পারবেন। অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন সফটওয়্যারটির মাধ্যমে একজন করদাতা খুব সহজেই তার আয়কর রিটার্ন প্রস্ত্তত করতে পারবেন। এজন্য ইনকাম ট্যাক্স আইন সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা না থাকলেও চলবে। রিটার্ন প্রিপারেশন সফটওয়্যারটি একাধিক সেশনে ব্যবহার করতে হলে খুবই সামান্য কিছু তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। তবে এক সেশনে ব্যবহার করলে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই।
অ্যাবাউট আস :
ওয়েবসাইটটির অ্যাবাউট আস সেকশনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্পর্কে সাধারণ তথ্য রয়েছে। এনবিআর কী, এর কার্যক্রম, দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়েও জানা যাবে এখানে। পেজটি পাওয়া যাবে এই ঠিকানায় : http://www.nbr-bd.org/about.html
যোগাযোগ :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মরত সব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কমিশনার এবং ডিজিদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটটির ‘কন্টাক্ট আস’ সেকশনে। এই পেজের ঠিকানা : http://www.nbr-bd.org/contact.html
মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক বলেন :
মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও এনবিআর সদস্য এমএ কাদের সরকার মেলা সফলভাবে উদযাপিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এনবিআর আগামী দিনগুলোতে কর সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় আরও বেশি করে নিয়ে যেতে পারবে।
এনবিআর-কে ডিজিটালাইজেশন বা আধুনিকায়নের ব্যাপারে এমএ কাদের সরকার বলেন, ‘অনলাইনে সার্ভিস দেয়ার জন্য ডাটাবেজ তৈরিসহ অন্যান্য কিছু কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া কর বিভাগের অটোমেশনের জন্য নতুন টিআইএন জেনারেশনসহ অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার মতো বহুল কাঙ্ক্ষিত কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আধুনিকায়নের জন্য আমরা কিছু কাজ করছি। এ ব্যাপারে আমরা দাতাগোষ্ঠীর সাহায্য নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই আমরা ঢাকায় ও চট্টগ্রামে সার্ভিস সেন্টার চালু করেছি। এ ছাড়া অফিসগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য আমাদের সম্প্রসারণ কর্মসূচিগুলো আগামী অক্টোবর থেকেই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি অফিস নেয়া, ফার্নিচার ও ইকুইপমেন্ট জোগাড়, অফিসার ও স্টাফ নিয়োগ দেয়া ইত্যাদি ধরনের কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি।’
............................................................................................................................................................................
একান্ত সাক্ষাৎকারে কানন কুমার রায়
ডিজিটাল এনবিআর আমাদের একটি রূপকল্প
কানন কুমার রায়
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতটুকু?
বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির অন্যতম কেন্দ্র হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্পের সাথে সঙ্গতি রেখে আমরা নাম দিয়েছি ‘ডিজিটাল এনবিআর’। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা এই ‘ডিজিটাল এনবিআর’কেও একটি রূপকল্প হিসেবে ধরে নিয়েছি। আমরা এনবিআরের পক্ষ থেকে চাই যত দ্রুত সম্ভব ডিজিটাল এনবিআর রূপকল্পটিও বাস্তবায়িত হোক।
ডিজিটাল এনবিআর রূপকল্পের অধীনে আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি তার অনেকগুলোই এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে ইলেকট্রনিক ফাইলিং অব ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আইসিটি-কে টুল হিসেবে ব্যবহার করাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম উদ্দেশ্য। ঠিক একইভাবে আমরাও এনবিআরের পক্ষ থেকে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য আইসিটি-কে অন্যতম টুল হিসেবে নিয়েছি। ফলে জনগণ যেসব সেবা পেতে চান সেগুলোর কথা মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব সেবার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ফাইলিং অব ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট অব ট্যাক্সেস। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ঘরে বসেই আয়করদাতারা যেনো আয়কর দাখিল ও পরিশোধ করতে পারেন। এগুলোই হচ্ছে জনগণের অন্যতম চাহিদা। ঠিক এই মুহূর্তে প্রকৃতপক্ষেই অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে গেলে এনবিআরের কিছু প্রস্ত্ততির ব্যাপার আছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আরো অনেক সেবা যোগ করতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আমরা আরো কিছু প্রযুক্তিনির্ভর সেবা যোগানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অনলাইনে টিআইএন দেয়া।
করদাতারা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন, তারা ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বা করদাতা শনাক্তকরণ নাম্বার নেয়ার সময় বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন। প্রায়ই তা সময়মতো পাওয়া যায় না। টিআইএন পাওয়ার প্রক্রিয়াটাও খুব সংক্ষিপ্ত নয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা ভেবে দেখেছি টিআইএন দেয়ার প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন দরকার। বর্তমানে আমরা যেভাবে টিআইএন ইস্যু করে থাকি, সেটিও ঠিক আধুনিক নয়। কারণ, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে এতটা পুরনো টিআইএন ডাটাবেজ থাকার কথা ছিল না। তাই এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ রেখে আমরা জনগণকে অনলাইনে টিআইএন দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি, যা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছি। এটি বাস্তবায়িত হলে যারা আয়কর দিতে ইচ্ছুক তারা কোনো ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে টিআইএন সংগ্রহ করতে পারবেন। আমরা একটি যুগোপযোগী মডেল হাতে নিয়েছি, যার মাধ্যমে করদাতারা টিআইএনের পাশাপাশি খুব সুন্দর, মনোগ্রাহী একটি কার্ডও পাবেন, যেটিকে আমরা বলছি ট্যাক্স পেয়ার্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার কার্ড বা টিআইএন কার্ড। এটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্মার্টকার্ড হবে। এ কার্ডটিও তারা ইচ্ছে করলে ঘরে বসে পেয়ে যাবেন। এই প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আছে এবং দুয়েক মাসের মধ্যেই এর কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে এবং নতুন পদ্ধতিতে টিআইএন ইস্যু এবং কার্ড সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এটি হয়ে গেলে বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ফাইলিং অব ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের একটি ভিত্তি স্থাপিত হবে এবং টিআইএন প্রকল্পটিকে কেন্দ্র করে আরো সেবা আমরা খুব সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারব।
‘ইলেকট্রনিক পেমেন্ট’ বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অন্যতম বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প। আমরাও এ লক্ষ্যে কাজ করছি। টিআইএন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করতে পারব। এছাড়া অন্য যেসব সেবা রয়েছে, যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে যে করদাতারা হয়তো চাইবেন কর সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে এবং এ লক্ষ্যে আমরা ওয়েবভিত্তিক কিছু ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে দেব, যেগুলোর মাধ্যমে এরা কর সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি আমরা ট্যাক্স পেয়ার্স সার্ভিস সেন্টার বা তথ্যকেন্দ্র খুলব, যেখান থেকে এরা সরাসরি বিভিন্ন সেবা নিতে পারবেন। এছাড়া করদাতাদের সেবা দেয়ার জন্য যত ধরনের সুযোগসুবিধা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, আমরা একে একে সে কাজগুলোতে হাত দেবো।
এবারের আয়কর মেলায় আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বেশ কিছু উদাহরণ লক্ষ করেছি। এ ধারা অব্যাহত রেখে আগামী বছর আয়কর মেলায় আপনারা প্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষ কোনো সেবা দেবেন কি?
গতবারের মেলা প্রথমবার হলেও মেলাটি যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল। তবে এবারের আয়কর মেলাটি আরও বেশি প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এবারের আয়কর মেলা আসলে অনেকটা ডিজিটাল মেলার মতো হয়েছে। করদাতাদের সেবা দিতে গিয়ে আমরা উপলব্ধি করেছি আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিলে এ সেবাগুলো দেয়া খুব সহজ ও খুব সুশৃঙ্খলভাবে এ কাজগুলো করা যায়। গতবারের তুলনায় এবার আপনারা প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বেশি দেখেছেন এবং সামনের বছরও আমাদের চেষ্টা থাকবে আরো নতুন ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পৃক্ত করার। প্রকৃত অর্থেই এই মেলাকে আমরা শুধু আয়কর মেলা নয়, বরং আয়কর ডিজিটাল মেলায় পরিণত করার চেষ্টা করব।
‘জুরিসডিকশন ফাইন্ডার’ ছিল আয়কর মেলা ২০১১-র অনন্য সংযোজন। এই সফটওয়্যারটির পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা আগামী বছরের আয়কর মেলায় দেখতে পাব কি?
হ্যাঁ, সেটি অবশ্যই দেখতে পাবেন। এবারের মেলায় যারা এসেছেন তারা অনেকেই বলেছেন, এ সফটওয়্যারটি ব্যবহারের ফলে তারা খুব দ্রুত তাদের অধিক্ষেত্র অর্থাৎ কোন কর অঞ্চল এবং কর সার্কেলের অধীনে তাদেরকে কর দিতে হবে, সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সফটওয়্যারটির কার্যকারিতা দেখে তারা অভিভূত হয়েছেন। উল্লেখ্য, মেলায় যারা নতুন করদাতা আসেন তাদের অনেকেই অধিক্ষেত্র সম্পর্কে অবগত থাকেন না এবং গতবারের মেলায় আমরা দেখেছি অনেক করদাতা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় অপেক্ষা করেছেন তাদের অধিক্ষেত্র জানার জন্য। আমাদের অনেক অফিসারকে হিমশিম খেতে হয়েছে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো করদাতাদের এ সেবা দিতে। কারণ তখন এটি ছিল পেপারভিত্তিক। এটি অনেকটা বইয়ের মতো এবং এই বইয়ে একজন করদাতার বিভিন্ন ধরনের তথ্য পর্যালোচনা করে তিনি কোন কর অঞ্চলের অধীনে তাকে আয়কর দিতে হবে তা জানতে হয়, যেটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
আমার সহকর্মী মো: মেফতাহ উদ্দিন খান। আসলে এই ডিজিটাইজেশনের কাজে আমরা দু’জন সেই ১৯৯৪ সাল থেকেই সম্পৃক্ত। নেশাগ্রসেত্মর মতো এ কাজগুলো করে যাচ্ছি। গতবারের মেলার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, মেলায় আসা করদাতারা অনেক কষ্ট করছেন শুধু অধিক্ষেত্র জানার জন্য। তখন আমরা চিন্তা করলাম করদাতাদের কষ্ট কিভাবে লাঘব করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই এবারের মেলা শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে আমি একদিন রাত ১০টার সময় আমার বন্ধুকে ফোন করে বললাম, আমরা যদি গতবারের মতো সেবা দিতে যাই তবে সেটা আমাদের জন্যও কষ্টসাধ্য হবে এবং করদাতাদের সন্তুষ্টি অর্জনও সম্ভবপর হবে না। প্রথমে আমরা চিন্তা করেছিলাম আরো অফিসারকে নিয়োজিত করে এবং ডেস্কের পরিমাণ বাড়িয়ে অধিক সংখ্যক করদাতাকে সেবা দেয়া যায় কি না। কিন্তু পরে আমরা একটি ডেমো করে দেখলাম, অনেক অফিসারকে বসিয়ে দিয়েও খুব বেশি সেবা দেয়া যায় না।
এ চিন্তা থেকে আমরা একটি সফটওয়্যার প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করলাম। এরা আমদের আরো অনেক প্রকল্পে কাজ করেছে। এরা সানন্দেই সফটওয়্যার তৈরির দায়িত্বটি হাতে নেয়। পরদিন তাদের সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও প্রোগ্রামারেরা আসলেন এবং তাদেরকে পুরো ডিজাইনটি বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, খুবই সীমিত সময়ের মধ্যে এবং মেলার আগেই সফটওয়্যারটি তৈরি করে দিতে হবে। তারা তিন দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কোডিং করেছেন, আমাদের দেখিয়েছেন, আমরা সংশোধন করেছি। এরপর আমরা যখন প্রথমবারের মতো সফটওয়্যারটি প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করলাম, তখন দেখলাম এটি খুব ভালোভাবেই কাজ করছে। এখানে আমি টেকনোভিসতা লিমিটেডকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
বর্তমানে আমাদের কর বিভাগে সম্প্রসারণ বা পরিবর্ধনসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলছে। ফলে অচিরেই আমাদের বর্তমান জুরিসডিকশন থাকবে না। জোনগুলো ও সার্কেলগুলো নতুনভাবে বিন্যস্ত হবে। আমাদের ইচ্ছে আছে পরের মেলার আগেই আমরা ‘জুরিসডিকশন ফাইন্ডার’ সফটওয়্যারটির একটি নতুন ভার্সন নতুন জুরিসডিকশন অনুসারে তৈরি করে তা এনবিআরের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো, যাতে করে করদাতারা মেলায় আসার আগেই জানতে পারেন তাদেরকে কোন কর অঞ্চলের কোন সার্কেলে দিতে হবে। পাশাপাশি মেলাতেও এই সফটওয়্যারটি দেখা যাবে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সফটওয়্যারটিকে আরো বেশি ইন্টারেক্টিভ করার মাধ্যমে এটিকে করদাতাদের জন্য আরো বেশি সহায়ক করে তোলা।
এনবিআরের ওয়েবসাইটে ‘ট্যাক্স ক্যালকুলেটর’ সফটওয়্যারটি সন্নিবেশিত হয়েছে। এ সফটওয়্যারটি তৈরির জন্য এনবিআরের পক্ষ থেকে আপনি ডিজিটাল উদ্ভাবনী পুরস্কার নিয়েছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি প্রোগ্রাম আছে। এর নাম অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম বা এটুআই। ডিজিটাল বাংলাদেশের যত উদ্যোগ, তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই প্রোগ্রাম। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে কম সময়ের মধ্যে এই খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার বেশিরভাগ কৃতিত্বের দাবিদার এই অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম। যারা এ প্রকল্পে কাজ করছেন তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও এ প্রোগ্রামের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলাম খানের অক্লান্ত পরিশ্রমে এটুআই প্রজেক্টটি অনেক সাফল্যের মুখ দেখেছে। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় কিছু কুইক উইন ঠিক করে দেয়া আছে। অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটরটি আমরা একটি কুইক উইন হিসেবে তৈরি করেছি। আমরা খুবই খুশি যে এ সফটওয়্যারটির জন্য আমরা জাতীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী পুরস্কার পেয়েছি।
অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের পাশাপাশি আরেকটি সফটওয়্যার ছিল। সেটি হচ্ছে অনলাইন রিটার্ন প্রিপারেশন সফটওয়্যার। আয়করদাতারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট www.nbr-bd.org-এ ভিজিট করলে দেখতে পাবেন, সেখানে ট্যাক্স ক্যালকুলেটর দেয়া আছে। সেখানে ক্লিক করলে করদাতারা ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর এবং অনলাইন রিটার্ন প্রিপারেশন এই দু’টি সফটওয়্যারই পাবেন। এর যেকোনো একটি তারা ব্যবহার করতে পারেন। সংক্ষিপ্ত ভার্সনটি হচ্ছে ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর, যেখানে শুধু ট্যাক্স ক্যালকুলেট করা যায় বিভিন্ন উপাত্ত দিয়ে। অনলাইন রিটার্ন প্রিপারেশন সফটওয়্যারটি আরো চমৎকার। কোনো করদাতার ইনকাম ট্যাক্স আইন সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান না থাকলেও তিনি কিন্তু অনেকটা নির্ভুলভাবেই তার রিটার্ন প্রস্ত্তত করতে পারেন। আসলে সফটওয়্যারটিই এর ব্যবহারকারীকে সুন্দরভাবে গাইড করে নির্ভুলভাবে রিটার্নটি তৈরি করতে সাহায্য করে। এ দু’টি সফটওয়্যার সম্পর্কে করদাতাদের কাছ থেকে আমরা খুব উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য পেয়েছি।
স্মার্ট কিউ, ট্যাক্স ক্যালকুলেটর, লাইভ ওয়েবকাস্টের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার আমরা আয়কর মেলায় দেখতে পেয়েছি। এবার এনবিআরের অভ্যন্তরীণ ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলুন।
মনে হয় প্রথমেই আমি অনেকটা বলে ফেলেছি। যেমন আমরা বর্তমানে টিআইএন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট নিয়ে কাজ করছি, অনলাইনে রিটার্ন সাবমিশন নিয়েও আমরা কাজ করছি। আমি যেহেতু একজন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার, তাই আমি শুধু ইনকাম ট্যাক্সের অংশটুকুর কথা বলছি। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ই-গভ. ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে বোর্ডের অন্য বিভাগগুলোর বিষয়েও বলা প্রয়োজন। ইনকাম ট্যাক্সের পাশাপাশি এনবিআরের আরেকটি উইং আছে। কাস্টমস এবং ভিএটি। কাস্টমস এবং ভিএটি নিয়েও আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন- আমরা চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার কাস্টমস হাউসগুলোতে অটোমেশন কর্মসূচি চালু করছি, আমরা এলসি স্টেশনগুলোকে অটোমেটেড করার চেষ্টা করছি এবং ভিএটিতেও আমরা অনলাইন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ও অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন সাবমিশন নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া অন্য যেসব ছোট সার্ভিস রয়েছে সেগুলোকেও আমরা অনলাইনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি, যাতে করে জনগণ কোনো হিউমেন ইন্টারফেস ছাড়াই তাদের কাজগুলো করতে পারেন।
ডিজিটাইজেশন বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ব্যাপক পরিকল্পনা আছে। তবে আর্থিক সেক্টরে বিভিন্ন ধরনের আইনি বিষয় জড়িত থাকে। ফলে যেকোনো একটি প্রজেক্ট হাতে নিলে এর সঙ্গে আইনি বিষয়গুলোও জড়িত থাকে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো করার।
অনলাইনে টিআইএন দেয়া প্রসঙ্গে এবারের মেলায় আমরা শুনতে পেয়েছি। আমরা কবে নাগাদ দেখতে পাবো যে দেশের সব কর অঞ্চলে অনলাইনে টিআইএন দেয়া হচ্ছে?
এখানে কর অঞ্চলের কোনো বিষয় নেই। কোনো ব্যক্তি যদি প্রথমবার কর দিতে চান বা প্রথমবারের মতো করদাতা হতে চান, তবে তাকে অবশ্যই টিআইএন সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইনে টিআইএন দেয়ার বর্তমান প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একজন করদাতা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে খুব দ্রুত টিআইএন পেয়ে যাবেন। কোন কর অঞ্চলের অধীনে তিনি করদাতা হবেন, সেটি তিনি ওখানেই জানতে পারবেন। পাশাপাশি তিনি জুরিসডিকশন ফাইন্ডার সফটওয়্যারটিরও সহায়তা নিতে পারেন অধিক্ষেত্র বা তার কর অঞ্চল সম্পর্কে জানার জন্য। টিআইএন আবেদনটি অনলাইনে জমা দিলে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার টিআইএন স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেট হয়ে যাবে। বর্তমানে আমাদের বাস্তবায়নাধীন যে প্রকল্প আছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে করদাতা তার টিআইএন কার্ডটি ঘরে বসে ডাকযোগে পাবেন। দেশের প্রতিটি জেলায় আমাদের একটি করে এবং ঢাকায় কয়েকটি ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার থাকবে। কেউ চাইলে এই ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারগুলো থেকেও তার টিআইএন কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইনে টিআইএন অ্যাপ্লিকেশন জমা দেয়ার সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, তিনি কিভাবে টিআইএন পেতে চান। যদি ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার থেকে পেতে চান, তবে কোন সেন্টার থেকে পেতে চান সেটারও অপশন থাকবে। অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করার সময় একটি নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা থাকবে এবং তিনি সে সময়ের মধ্যেই টিআইএন কার্ড পেয়ে যাবেন। আশা করছি এই প্রকল্পটি আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। কারণ, এখানে অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। বর্তমানে আমাদের যে টিআইএন ডাটাবেজ রয়েছে সেখানে বিভিন্ন কারণে কিছু ভুল তথ্য রয়েছে যেগুলোকে সংশোধনের মাধ্যমে আমরা নতুনভাবে একটি ক্লিন ডাটাবেজ তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ফলে যিনি নতুন করদাতা হবেন তার সঠিক পরিচয়টাও আমরা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যাচাই করে নেবো এবং সেটা রিয়েল টাইম ভ্যারিফিকেশন হবে বলে আমরা আশা করছি।
............................................................................................................................................................................
মো: মেফতাহ উদ্দিন খান বলেন, এনআরবি ডিজিটাল বাংলাদেশের মডেলে রূপ নিয়েছে
মো: মেফতাহ উদ্দিন খান
ডিরেক্টর জেনারেল ট্যাক্সেস ট্রেনিং ডিরেক্টরেট ও
প্রিন্সিপাল, বিসিএস ট্যাক্স অ্যাকাডেমি
এনবিআর ডিজিটাল বাংলাদেশের মডেলে রূপ নিয়েছে
এনবিআর বর্তমানে অনলাইনে আয়কর দেয়া প্রসঙ্গে এডিবি’র সাথে একটি প্রকল্পে কাজ করছে। এ প্রকল্পটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
আসলে প্রকল্পটা হচ্ছে অনলাইনে রিটার্ন সাবমিশন সম্পর্কিত। অনলাইন রিটার্ন সাবমিশনের সাথে যেহেতু ট্যাক্স পেমেন্টের একটি সম্পর্ক আছে, সেহেতু সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংক ই-পেমেন্ট গেটওয়ে ওপেন করবে এবং একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সে কাজটিও একই সাথে এগুচ্ছে।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যাপারে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে, অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করলেই বোধহয় প্রক্রিয়াটা শেষ হয়ে যায়। আসলে কিন্তু তা নয়। এ রিটার্নটা সংরক্ষণের ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপার রয়েছে। যেসব দেশে অনলাইন রিটার্ন সাবমিশন চালু আছে, সেখানে একই সাথে যারা অফলাইনে রিটার্ন দেন অর্থাৎ পেপারে রিটার্ন দেন তাদের রিটার্নগুলোও ডিজিটালাইজড করার একটি প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়। কারণ, তা না হলে দুই ধরনের রিটার্ন একই প্ল্যাটফর্মে আসবে না। আমরা এডিবি’র প্রকল্পটিতে সে ব্যবস্থা করেছি। যারা সরাসরি অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন, তাদের রিটার্ন সাথে সাথেই প্রসেসিং সেন্টারে চলে যাবে। যারা অফলাইনে বা পেপার মোডে দেবেন, তাদের রিটার্নটা ডিজিটালাইজড করা হবে। এ লক্ষ্যে আমরা এডিবি’র সহায়তায় আগামী এক বছরের মধ্যে মোটামুটি একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পারব বলে আশা করছি। ২০১৩-১৪ করবছরের মধ্যে আমরা এটি বাস্তবায়ন করার আশা করছি।
জনসাধারণকে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দেয়ার জন্য আপনারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে এনবিআর ভবিষ্যতে ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি মডেল হয়ে উঠবে বলে আপনি মনে করেন কি?
আসলে এনবিআর ইতোমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সব মন্ত্রণালয় ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অধীনে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজটি করছে। কিন্তু আমার জানা মতে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেই একটি কমিটি করা হয়েছে, যার নাম ডিজিটাল এনবিআর কোর কমিটি। এ ধরনের একটি কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সক্রিয়ভাবে দ্রুত অটোমেশন কার্যক্রমকে বাস্তবে রূপ দেয়া। অন্য কোনো সরকারি ডিপার্টমেন্ট এ ধরনের কমিটি করেছে বলে আমার জানা নেই। এনবিআরের অধীনে দু’টি উইং রয়েছে। একটি হচ্ছে ইনকাম ট্যাক্স ও আরেকটি হচ্ছে কাস্টমস ও ভিএটি। কার্যক্রমের দিক থেকে এ দু’টি উইংই একটি অন্যটির ওপর নির্ভরশীল। টোটাল অটোমেশন বলতে যা বোঝায়, তা এ দুই উইংয়ে সমন্বিতভাবেই করতে হবে। আয়করের সাথে যেহেতু বেশিরভাগ জনগণের সংশ্লিষ্টতা আছে এবং আয়কর দফতরে এসে অনেক করদাতা যথাযথ সেবা পান না বলে অভিযোগ করেন। সে জন্য আমরা এমনভাবে চেষ্টা করছি যাতে একজন আয়কর অফিসে না এসেই তার কাজটি করতে পারেন। এতে করে তার সময় বাঁচবে, অর্থের সাশ্রয় হবে এবং সর্বোপরি আয়কর বিভাগ সম্পর্কে প্রচলিত যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে সেটিও কেটে যাবে। আসলে প্রযুক্তি এখানে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, যেটি এই নেতিবাচক ভাবমূর্তি দূর করতে সহায়তা করবে।
এনবিআরের ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট ইংরেজি ভাষায়। ভবিষ্যতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় কনটেন্ট প্রকাশ করার কোনো পরিকল্পনা আপনাদের রয়েছি কি?
আমার বিবেচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটটির মান আশানুরূপ নয়। এর মূল কারণ এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ব্যবস্থাপনা করার মতো লোকবল এবং পেশাগত দক্ষতা আমাদের নেই। আয়কর বিভাগের অধীনে একটি নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে, যার নাম আইসিটি উইং। তবে এই বিভাগ খোলার আগেই আমরা আয়করের চলমান একটি প্রকল্প TACTS প্রজেক্টের অধীনে নতুন করে ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশ মোতাবেক এই ওয়েবসাইটটি যেটি আমরা এখন তৈরি করছি সেটি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়ই হবে। আশা করছি, এই ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়ে গেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট দেখে অনেকেই চমৎকৃত হবেন।
শেষ কথা
পরপর দু’বছর সফলভাবে আয়কর মেলা আয়োজনের পর আগামী বছর আয়কর মেলায় আরো কিছু নতুন প্রযুক্তির সমাহার দেখা যাবে এটাই সবার প্রত্যাশা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে সরকারের অন্যান্য ডিপার্টমেন্টও যদি একইভাবে প্রযুক্তিনির্ভর সেবাদানে সচেষ্ট হয়, তবে তা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করবে এবং একই সাথে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে।
কজ ওয়েব