লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
লেখার ধরণ:
কমপিউটার->বাংলা ভাষা
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
বাংলাভাষায় কমপিউটার প্রযুক্তি
ভাষা ছাড়া কি এক মুহূর্ত চলে? ভাষা কি শুধু জীবকেই স্পন্দিত করে? মোটেই নয়। ভাষা জীব ও জড় প্রতিটি বস্ত্তকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আর এই বিকল্পহীন বাহনে চেপেই সজীব হয় বিশ্ব চরাচর। পাখির কলতানে ভোর হয়। একটু ভাবলেই দেখি, শুধু প্রাণী বা জীবজগৎ নয়, বস্ত্ত জগতেরও রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এর রূপভেদ রয়েছে ঠিকই। অনেক ক্ষেত্রে মানবভাষার সাথে যন্ত্রের ভাষার কিন্তু রয়েছে দারুণ মিল। গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে আরও নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে দেশী প্রযুক্তি অঙ্গনের বাতিঘর ‘কমপিউটার জগৎ’ পত্রিকা ভাষার এই সম্মিলনকে নানা মাত্রিকতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। আর সেই সূত্র ধরে চেষ্টা করেছে গত এক বছরে কমপিউটার প্রযুক্তি মাধ্যমে কতটা সমাদৃত হচ্ছে আমাদের ‘বাংলা’ ভাষা। বাংলাভাষাবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে কী করছেন আমাদের প্রযুক্তিবন্ধুরা।
বলতেই হয়, কমপিউটার কোডিং যন্ত্রের ভাষাকে করেছে আরও স্পষ্ট। ফলে এক সময়ের এই ‘জাদুর বাক্স’ এখন হাতঘড়ি, চশমা ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে স্কার্ফেও। প্রযুক্তির এই ভাষার প্রকাশকে নিজেদের ভাষার সাথে একাকার করতে বিশ্বজুড়েই প্রচেষ্টার অন্ত নেই। সেই যাত্রায় পিছিয়ে নেই ‘মাতৃভাষা’র মর্যাদাকে বুকে অাঁকড়ে জয় করে আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্ব দেয়া বাংলা বর্ণমালা। ইতোমধ্যেই আমাদের নবীন-প্রবীণ প্রযুক্তিবন্ধুরা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। তাদের নিরলস গবেষণার যতটুকু গোচরে এসেছে, এর মধ্যে গত এক বছরে বেশ কিছু বাংলা অ্যাপ্লিকেশনের দেখা পেয়েছি আমরা। ব্যতিক্রমী ও মাইলফলক হিসেবে এই তালিকায় রয়েছে বাংলা অক্ষরের ছবিকে কমপিউটারের ভাষায় রূপান্তরের সফটওয়্যার ‘পুঁথি’, বাংলাভাষায় কোডিং শেখার আয়োজন ‘চা স্ক্রিপ্ট’, বাঙালিয়ানায় ঠাসা অনলাইন বৈঠকখানা ‘ফ্রেন্ডসার্কেল’, ঐতিহ্যবাহী ‘লুডু’ খেলার অ্যাপ, অনলাইনে বাংলাকে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ-জিবিজি এবং বাংলা আইএসবিএনের মতো বেশ কিছু উদ্যোগ। এর বাইরেও আছে বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষামূলক গবেষণার ফসল ‘বাংলাভাষী রোবট’। অপসৃত হয়েছে আইওএস প্লাটফর্মে বাংলা লেখার প্রতিবন্ধকতা। পিল পিল করে চলছে প্রথম দেশী বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’।
মুঠোফোনে বিজয় বাংলা
কমপিউটারে বাংলা লেখার একমাত্র লাইসেন্স সফটওয়্যার বিজয় বাংলা। অ্যান্ড্রয়িড প্লাটফর্মের জন্য এবার আসছে এর মুঠোফোন সংস্করণ। রীতি অনুযায়ী উইন্ডোজ ৮ ও ১০-এর জন্য ফেব্রুয়ারিতে বাজারে আসছে বহুল ব্যবহৃত এই সফটওয়্যারটির নতুন সংস্করণ। প্রকাশ পেতে যাচ্ছে বিজয় লিনআক্স, বিজয় অ্যান্ড্রয়িড ও বিজয় প্রাথমিক শিক্ষা ২, বাংলা-ইংরেজি-অঙ্ক, বিজয় ছড়া ও গল্প-১, বিজয় ছড়া ও গল্প-২ সফটওয়্যার। একই সময়ে আসছে বিজয় বায়ান্নো ১৫, বিজয় একুশে ১৫, বিজয় একাত্তর ১৫। মুঠোফোনে বাংলা লেখা সহজ করে দিতে প্রকাশ করা হচ্ছে বিজয় অ্যান্ড্রয়িড ২.০। ইতোমধ্যেই এসব সফটওয়্যারের পরীক্ষণও সম্পন্ন হয়েছে। বিজয় রূপকার মোস্তাফা জববার বললেন, একসাথে এত সফটওয়্যার আর কখনও প্রকাশ করিনি। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ। উইন্ডোজ, লিনআক্স, ম্যাক ও অ্যান্ড্রয়িড সবগুলোরই নতুন সংস্করণ প্রকাশ করতে যাচ্ছি।
তবে স্বাধীনতাউত্তর সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এই প্রযুক্তিবিদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ভাষাকে যন্ত্রের সাথে সামঞ্জস্য করতে এবং এর ব্যবহার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে সরকারের উন্নাসিকতা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কাজ হলেও সরকার সেটাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না। পয়সা খরচ করে বিদেশী সফটওয়্যার কিনলেও ১০০ টাকা দিয়ে বাংলা সফটওয়্যার কিনতে ফ্রি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর কারণে বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোগগুলোও সফল হতে পারছে না। ৭৪টি ইউনিকোড ফন্ট থাকার পরও নির্বাচন কমিশন ও এটুআই ফন্ট তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করে। রোমান হরফ নিয়ে মেতে উঠছে অথচ ওসিআর, স্পেল চেকার, ব্যবহরণ, টেক্সট টু স্পিচ, স্পিচ টু টেক্সট সফটওয়্যার তৈরির গবেষণা কাজে আগ্রহী নয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই কাজগুলোকে আলোর মুখ দেখাতে বাংলা একাডেমি ও আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউটকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল এবার এ দিকটায় নজর দেবে বলে প্রত্যাশা করেন।
বিশ্বজুড়ে বাংলা বই : আইএসবিএন
বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সব ধরনের বই সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি/রেজিস্ট্রেশন International Standard Book Number (ISBN) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই ইন্টারনেটে ওঝইঘ নম্বর দিয়ে ইনপুট/সার্চ করলে কিছুই পাওয়া যায় না। এছাড়া বাংলা বইয়ের কোনো মেটাডাটা স্প্রেডশিট তালিকায় এন্ট্রি ছাড়াই ভুয়া বারকোডে সব বই প্রকাশিত হয়। ফলে আমাদের বইয়ের কোনো তথ্যই পাওয়ার সুযোগ নেই আন্তর্জাতিক ক্লাউড তথ্যভান্ডারে। কেননা, কমপিউটারে বই প্রকাশ করা হলেও এই বইয়ের তথ্য গোছালোভাবে সংরক্ষণ করেন না প্রকাশকেরা। সব বই, টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিও ও প্রকাশনাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত প্রভৃতির কপিরাইট সংরক্ষণ, লাইসেন্সিং ও পুনর্প্রকাশের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হলে ১৩ সংখ্যার যে আইএসবিএন নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে তারও ভিত্তি নেই। ফলে চাহিদা থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে বাংলা বই। তবে দেরিতে হলেও এবার সেই ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুঁকছেন বাংলা বই প্রকাশকেরা। প্রয়োজনীয় মেটাতথ্য সংরক্ষণের জন্য বাংলাবাজারে প্রকাশক সমিতির অফিসে স্থাপন করা হয়েছে টায়ার থ্রি মানের সার্ভার। বরুণ চক্রবর্তীর ইউডু সফটওয়্যারের মাধ্যমে মেটাডাটা সংরক্ষণের কাজ চলছে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবারের বই মেলায় বাংলা বইয়ে প্রকৃত আইএসবিএন নম্বর সংযুক্ত করা না হলেও ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে প্রকাশিত বইয়ে সম্ভব হবে। এজন্য কাজ শুরু করেছে প্রকাশক সমিতির ১২ সদস্যের একটি দল।
এ বিষয়ে এই উদ্যোগের সমন্বয়ক কুতুব উদ্দিন আহমদ জানান, ISBN [EDItEUR-ONIX] সিস্টেমে স্প্রেডশিট মেটাডাটা ইনপুটের ১৭টি হেডিং স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের বই সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি/রেজিস্ট্রেশন International Standard Book Number (ISBN) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই আন্তর্জাতিকভাবে ইন্টারনেটে ওঝইঘ নম্বর দিয়ে ইনপুট/সার্চ করলে কিছুই পাওয়া যায় না। এছাড়া বাংলা বইয়ের কোনো মেটাডাটা তালিকায় এন্ট্রি ছাড়া ভুয়া বারকোডেই সব বই প্রকাশিত হয়। ফলে বাংলা বইয়ের কোনো তথ্যই আন্তর্জাতিকভাবে পাওয়ার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বইয়ের পরিচিতি ও বর্ণনা না পাওয়ার এটাই সুনির্দিষ্ট প্রথম কারণ।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে হালনাগাদ সব প্রকাশিত বইয়ের মেটাডাটা ইনপুট দেয়ার জন্য বাংলাদেশের উভয় প্রকাশক অ্যাসোসিয়েশনই সর্বসম্মতভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্ত্তত। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের জন্য কার্যকর ISBN [EDItEUR-ONIX] সিস্টেমে স্প্রেডশিট মেটাডাটা ফর্মা প্রণয়ন হয়েছে। নিচের মেটাডাটা উপাত্তগুলো (১৭টি) তথ্য ইনপুট দিতে হবে। প্রায় সবগুলো প্রকাশক বা বইয়ের সংগ্রহ বাংলাবাজার পাওয়া যাবে। তাই কমপিউটারের ইনপুটের স্থান বাংলাদেশ প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সমিতির প্রধান কার্যালয়ে (৩ লিয়াকত অ্যাভিনিউ, ৩য় তলা, ঢাকা) স্থান নির্ধারণ করেছি। সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা Academic and Creative Publishers Association [ACPAB] এবং Bangladesh Publishers & Booksellers Association [BPBA] বাংলাদেশে বই প্রকাশকদের দুটি সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনা এবং উভয় সমিতির সব সদস্যেরই সমষ্টিগত সহযোগিতায় এ কার্যক্রম ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এর মাধ্যমেই বাংলায় প্রকাশিত মেধাস্বত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কপিরাইটধারকদের সম্মানী/মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাভাষায় কিউআর কোড সিঙ্ক বই
সম্প্রতি দেশে বিজ্ঞাপনে কিউআর কোড ব্যবহারের চল শুরু হয়েছে। তবে এবার তা পৌঁছে গেল বইয়ের ভুবনে। ২০১৫ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাভাষার প্রথম কিউআর (ক্যুইক রেসপন্স) কোড সিঙ্ক বই ‘খেলায় সেরা বিশ্বসেরা’। এর ফলে অনলাইন আর অফলাইন দুই মাধ্যমেই বইটি পড়ার স্বাদ পাবেন তরুণেরা। বইটিতে খেলার ভুবনের ৩৫ জন আলোচিত ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের সাফল্যের স্বপ্নগাথার ভাষান্তর করেছেন অনলাইনের মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর জাহিদ হোসাইন খান। তিনি জানান, বইয়ের লেখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যটিকে ছোট জায়গায় ধারণ করতেই এই উদ্যোগ। এর ফলে বইয়ের লেখা স্মার্টফোনের মাধ্যমে নেট থেকেও পড়তে পারবেন পাঠক। দেখতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ভিডিও। আবার প্রচ্ছদের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো বইটিও অনায়াসে পড়ার সুযোগ পাবেন দেশের দুই কোটির ওপর স্মার্টফোন ব্যবহারকারী।
বইটিতে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশ ভাষা থেকে খেলার দুনিয়ার আলোচিত তারকাদের সাক্ষাৎকার ভাষান্তর করা হয়েছে। লেখক জানান, এর আগে পূর্ণাঙ্গ কিউআর কোড সিঙ্ক করা কোথাও প্রকাশের নজির দেখা যায়নি। এটি বিশ্বের প্রথম বই, যেখানে ব্যাপক মাত্রায় কিউআর কোডের মাধ্যমে বইয়ের বাইরে বইসংশ্লিষ্ট তথ্য, ভিডিওচিত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সংবাদপত্র ও বিজ্ঞাপন জগতেই কিউআর কোডের মাধ্যমে বহিঃতথ্য গ্রহণের সুযোগ আছে। অনলাইনে কিছু পড়লে যেমন লিঙ্কের পর লিঙ্কে ক্লিক করে যাওয়া যায়, তেমনি ‘খেলায় সেরা বিশ্বসেরা বই’ পড়ার সময় পাঠকেরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে এই সুযোগ পাবেন। ব্যাপক আকারে তথ্য ও ভিডিও লিঙ্ক বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত করতেই কিউআর কোড যোগ করা হয়েছে বইটিতে। বইপড়াকে ভিন্ন মাত্রায় আনতেই এমন কোডযুক্ত বই প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে।
চা স্ক্রিপ্ট
কমপিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা জাভা স্ক্রিপ্টের নাম আমরা সবাই কম-বেশি জানি। এই জানার পরিসর আরেকটু বিস্তৃত করতে, বলতে গেলে নবিসদেরকে কমপিউটার ভাষার প্রতি আকৃষ্ট করতে তৈরি হয়েছে বাংলাভাষায় কমপিউটারের অ-আ-ক-খ ‘চা স্ক্রিপ্ট’। বাংলায় এ ভাষাটি তৈরি করেছেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। দলের সদস্যরা হলেন সৈয়দ তানভীর জিসান, আরমান কামাল, মো: নুরুউদ্দিন মনসুর ও মুরসালিন কবির। প্রোগ্রামিং শেখার ক্ষেত্রে ভাষা যাতে কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে চিন্তা থেকেই সম্পূর্ণ বাংলায় তৈরি হয়েছে ‘চা স্ক্রিপ্ট’। এই স্ক্রিপ্টিং ভাষায় একটি কোড সম্পাদনার সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে নানা ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা থাকলেও বাংলায় নতুন প্রোগ্রামিং ভাষার বিষয়ে নির্মাতারা জানান, এটি প্রোগ্রামিংকে বাংলাভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীদের নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। বিশ্বে অন্যান্য ভাষায় প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে (http://goo.gl/2dt6k2) ঠিকানায়। নির্মাতাদের দাবি, চা স্ক্রিপ্ট বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য খুলে দিতে শুরু করেছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরেকটি ধাপ। চা স্ক্রিপ্টের বিস্তারিত জানা যাবে (www.chascript.com) ঠিকানায়। চা স্ক্রিপ্ট প্রকল্পের প্রধান সৈয়দ তানভীর জিসান জানান, একেবারে যারা প্রোগ্রামিংয়ে নতুন তাদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বাংলায় টিউটোরিয়াল। এ ছাড়া যারা ব্যবহারিক কাজ শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। এই ভাষাটি যেন অনায়াসে ব্যবহার করা যায়, আগ্রহীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চর্চা করতে পারে, সে জন্য ‘ইনস্টল’ করার ঝামেলা ছাড়াই ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে চা স্ক্রিপ্টে। ফলে এখানে অনলাইনেই কোড করা সম্ভব। এ ছাড়া যারা অফলাইনে কোড করতে আগ্রহীদের জন্য নামানো যায়, সেই সংস্করণের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ উদ্যোগ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও চা স্ক্রিপ্ট প্রোগ্রামিং ভাষার সুপারভাইজার নোভা আহমেদ জানান, শিক্ষার্থীদের প্রকল্প হিসেবে চালু হয়েছে ‘চা স্ক্রিপ্ট’। এটি প্রোগ্রামিংকে ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে বাংলায় প্রোগ্রামিং করার সুবিধা দিচ্ছে। এছাড়া চা স্ক্রিপ্টের সিনটেক্সকে আরও সহজবোধ্য করে তুলে ধরার জন্য কিছু ছোট ভিডিও নির্দেশিকা রয়েছে জানিয়ে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কন্যা নোভা জানালেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি অচিরেই সবার কাছে তা পৌঁছে দিতে পারব।
ডিজিটাল পুঁথি
ডিজিটাল ‘পুঁথি’। বাংলাভাষায় লিখিত সব ধরনের কনটেন্ট ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে, খুঁজে পেতে এবং সম্পাদন করার সুবিধা নিয়ে বাংলাভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ অপটিক্যাল ক্যারেকটার রিকগনাইজার (ওসিআর) সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে টিম ইঞ্জিন। এই দলের ঐকান্তি শ্রম আর ঘামে গত বছর মধ্য-আগস্টে বেসরকারি উদ্যোগেই ৩৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব ভাষার ছাপা অক্ষর মেশিনে পাঠযোগ্য করার এই সফটওয়্যার তৈরির গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। অনলাইনে puthiocr.com ঠিকানায় ২ এমবি আকারের বাংলা অক্ষর লেখা ছবি অথবা ৬০টি শব্দচিত্র বিনামূল্যে তা কমপিউটারের ভাষায় রূপান্তরের মাধ্যমে সম্পাদনার যোগ্য ফরম্যাটে হাজির করে। এ ক্ষেত্রে শব্দগুলো ২৫ পিক্সেলের ওপর হলে ভালো হয়। গত বছর ১৫ আগস্ট উন্মুক্ত হয় এই সফটওয়্যারটি। সফটওয়্যারের মাধ্যমে আগের সব ফাইল ডিজিটাল ফরম্যাটে হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করা যায়। সফটওয়্যারটির বাণিজ্যিক সংস্করণে ১৮৭৪ সাল থেকে ছাপা হওয়া বিভিন্ন নকশার বাংলা অক্ষর সমন্বিত বইয়ের একটি পাতাকে ডিজিটালাইজড এবং এডিটেবল করতে পারে এবং মূল টেক্সটের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি শব্দ মাত্র চার সেকেন্ডে নির্ভুলভাবে প্রদর্শন করতে সক্ষম। নিজস্ব ইঞ্জিন ‘বাংলা ইঞ্জিন’-এ তৈরি এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে হাতে লেখা, স্ক্যান করা, টাইপ করা লেখাকে মেশিনে পড়া ও সম্পাদনা করার মতো করে রূপান্তর করা যায়। তবে শুধু বাংলা ছাপা অক্ষর নয়, আগামীতে যেন হিন্দি, উর্দু, অসমি ও তামিলসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বর্ণমালার জন্য পুঁথি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে টিম ইঞ্জিনের প্রধান নির্বাহী সামিরা জুবেরী হিমিকা।
তিনি জানান, দেশের অফিস-আদালতের নথিকে ডিজিটালাইজড করতে সরকারকে পুঁথির একটা লাইসেন্স ভার্সন দিতে যাচ্ছে টিম ইঞ্জিন। এ বিষয়ে হিমিকা বললেন, ফেব্রুয়ারিতে এটি হস্তান্তর করার কথা। শুধু সোর্স কোড নয়, চাইলে ওই সংস্করণের স্বত্বও দিয়ে দেয়া হবে। এই সংস্করণে সরকারি কাজে ব্যবহারে জন্য ১৫টির মতো ফন্ট থাকবে। তিনি বলেন, দেশের বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠানের ওসিআর কোর টেকনোলজি হিসেবে লাগবে তাদেরকে লাইসেন্স কপি দিতে চাই। ওসিআর হলো লোকাল প্রোডাক্ট। দেশের মেধাবী তরুণেরা এটি তৈরি করেছেন। এটি অনেক বড় উদ্ভাবন। আর এ উদ্ভাবনকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে আমি লাইসেন্স হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে পুঁথি বিক্রি করতে চাই। অবশ্য দেশের মানুষও যাতে সুলভে এটি কিনতে পারে, সেদিকেও নজর রাখা হবে। হিমিকার মতে, খরচের ভয়ে আমরা অনেকে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করি। এজন্য সুলভ মূল্যে ওসিআর কেনার ব্যবস্থা থাকবে। ওসিআরকে অ্যাপ ভার্সনে আনতে চাই এবং চলতি বছরেই এটি বাজারে আসবে। সিঙ্গেল ইউজার বা মাল্টিইউজার দুই ধরনের ভার্সন থাকবে। সিঙ্গেল ইউজারের ক্ষেত্রে দাম এক হাজার টাকার মধ্যেই থাকবে। যাদের খুব কম দরকার, তাদের জন্য ওয়েবের মাধ্যমে বিশেষ সলিউশন থাকবে। পুঁথির পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইল ভার্সন প্রকাশ করা। অর্থ সংস্থান হলেই তা বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।
অনলাইনে ‘লুডু ফেন্ডস’
বিদায়ী বছরে প্রথমবারের মতো বাংলাভাষায় মোবাইল গেম তৈরি করেছে দেশী গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ট্যাপস্টার ইন্টারেকটিভ সফটওয়্যার। ‘লুডু ফ্রেন্ডস’ নামের এ গেমটির সব স্তরেই বাংলাভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। গুগল অ্যাপস্টোর ছাড়া (play.google.com/store/ apps/details?id=com.tapstar.ludo) অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক apps.facebook.com/ludo_friend ঠিকানা থেকে গেমটি ইনস্টল করা যায়। যেকোনো প্রান্ত থেকে অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইস থেকে একসাথে সর্বোচ্চ চারজন অনলাইনে গেমটি খেলতে পারেন। এ জন্য গেমটি চালু করে ফেসবুক বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। বন্ধুরা এতে রাজি হলে বিভিন্ন স্থান থেকেই এতে অংশ নেয়া যাবে। খেলার মাঠকে সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে। এখানে রয়েছে প্রতিটি বিভাগের নাম। অনলাইনে এই বিভাগে কোনো বন্ধু থাকলে অথবা অন্য কোনো বিভাগের বন্ধুদের খেলায় আমন্ত্রণ জানানো যায়। খেলোয়াড় গ্রুপ পূর্ণতা পেলে ক্লিক করে ডিজিটাল ছক্কা মেরে শুরু হয় লুডু খেলা।
গেমটির বিষয়ে ট্যাপস্টার ইন্টারেকটিভ সফটওয়্যারের প্রধান নির্বাহী একেএম মাসুদুজ্জামান জানান, বাংলাদেশের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী গেম রয়েছে, যার মধ্যে ‘লুডু’ অন্যতম। জনপ্রিয় এ গেম নিজ ভাষায় খেলার সুযোগ করে দিতেই এ উদ্যোগ।
আইপ্যাডে ‘বাংলা’ লিখি
টেক জায়ান্ট অ্যাপলের আইফোন, আইপ্যাড বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় একটি ডিভাইস। এগুলোতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয় আইওএস। তবে বাংলা লিখতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয় আইওএস ডিভাইস ব্যবহারকারীদের। সেই সমস্যা দূর করে দিল লিঙ্ক রিদমিক কীবোর্ড। অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করার পর সেটিংস থেকে ‘general’-এ গিয়ে ‘keyboards’ অপশনে যেতে হবে। সেখান থেকে ‘add new keyboard’-এ ক্লিক করতে হবে। এ সময় এ অপশনে অনেকগুলো কীবোর্ড দেখা যাবে। এখান থেকে ‘ৎরফসরশ শবুনড়ধৎফ’ নির্বাচন করে দিতে হবে। এরপর ডিভাইসটি দিয়ে কিছু লিখতে হলে স্পেসবারের পাশে ভয়েস কী’র বাম পাশে থাকা গোল আইকনের মতো কী ট্যাপ করে ধরে রাখতে হবে। তখন কীবোর্ড লেআউটের নাম আসবে। সেখান থেকে ‘ridmik keyboard’ নির্ধারণ করে দিতে হবে।
বাংলাভাষী রোবট
আবেগ-অনুভূতি ও মনের কোমলতা না থাকলে মানুষ অন্যকে রোবট বলে গালি দেয়। তবে সেই দিন আর থাকছে না। ‘পিপার’ রোবটের উদ্ভাবনের খবর যারা জেনেছেন তারা ভালোই জানেন- অন্যের মনের ভাব, আবেগ, অনুভূতি বুঝতে সক্ষম জাপানের ‘সফটব্যাংক’। নতুন এই রোবটে সংযুক্ত রয়েছে বিশেষ ‘ইমোশনাল ইঞ্জিন’ এবং ক্লাউডভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যার। ফলে এই রোবটটি মানুষের মতোই আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, মানুষের মনের ভাব বুঝতে পারে, কণ্ঠস্বরও মানুষের মতোই। এবার যদি এই ‘পিপার’ রোবটটি বাংলাভাষা বোঝে তখন? হ্যাঁ, সেটাও খুব একটা ভড়কে যাওয়ার মতো বিষয়ের খবর হবে না একসময়। কেননা, ইতোমধ্যেই এর আঞ্জাম শুরু করে দিয়েছেন আমাদের তরুণ প্রযুক্তিবন্ধুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজের মধ্য দিয়ে বেশ কিছুদিন আগেই বাংলাভাষাকে রোবটের বোধগম্য করার প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) তৃতীয় বর্ষের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ছাত্র সাদলী সালাহউদ্দিন ও সৌমিন ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরোয়া পরীক্ষণে দেখা যায়, রোবটটি বাংলা শব্দ ডানে যান, বামে যান, থামুন, এবার চলুন- শুধু এসব আদেশই বুঝতে পারে তা নয়, হুকুম তামিল করতেও খুব একটা সময় নেয় না।
উদ্ভাবক দলের প্রধান সাদলী সালাহউদ্দিন জানান, রোবটটিকে বাংলায় যে কোনো আদেশ করলে সে অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম। আবার যারা বাকপ্রতিবন্ধী বা কথা বলতে অক্ষম, তাদের জন্যও রোবটটিতে যোগ করা হয়েছে বিশেষ সংবেদনশীল ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে রোবটটিকে ইশারা করলেই সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। তিনি আর জানান, রোবটটির আরেকটু আপডেট করা গেলে রোবটটিকে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ইন্টারনেটে প্রবেশ করে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রথমে একটি নিরাপত্তা কোড দিয়ে রোবটটির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এরপর রোবটটি একটি নিশ্চয়তামূলক বার্তা পাঠালেই একে নির্দেশ দেয়া যাবে। মূলত দূরে অবস্থানকারী ব্যক্তির কাছে রোবটটির আশপাশের পরিবেশের জীবন্ত ভিডিও প্রতি মুহূর্তে পাঠাতে থাকবে নিয়ন্ত্রণকারী। আর ভিডিওগুলো দেখে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেবেন কখন কী করতে হবে। সাথে সাথে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ব্যবহার করে রোবটটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। ফলে মানচিত্রের মাধ্যমেও রোবটটির অবস্থান নিশ্চিত করা যাবে।
বাংলাভাষী বৈঠকখানা
ইন্টারনেটে শুধু বাঙালিদের জন্য তৈরি হয়েছে একটি আড্ডার জায়গা। ঠিকানা www.friendcircle.com.bd। এই বৈঠকখানায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রামেত্মর বাঙালিরা বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারেন। বন্ধু খুঁজতে পারেন, নতুন বন্ধুও বানাতে পারেন। আবার একটি বাজার কেন্দ্রের মতো পণ্যের বিজ্ঞাপনও দেয়া যায় এই সামাজিক নেটওয়ার্কে। সামাজিক যোগাযোগের এই ওয়েবসাইট তৈরি করছেন মোতালিব রাজা। মোতালিব বেশ কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এখন থাকেন মৌলভীবাজারে। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করা ফ্রেন্ড সার্কেলে ছবি দেয়া থেকে গান শেয়ার ও ব্লগ লেখার সুবিধাও আছে। সামাজিক নেটওয়ার্কে নির্মাতা মোতালিব রাজা জানান, বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাঙালিরা একটি জায়গায় আপন মাটির গন্ধ যাতে পায়, সে জন্যই সাইটটি তৈরি করা হচ্ছে। শুরুটা ছিল মূলত বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো ও মতবিনিময়ের লক্ষ্যে। এর একটা বীজ পোঁতা আছে অতীতে। নববই দশকের প্রথম দিকে মোতালিব রাজা ছিলেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র। বন্ধুরা মিলে গড়ে তুললেন ‘অাঁতেল গোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠন। একসময় বন্ধুরা সময়ের প্রয়োজনে দেশ-বিদেশের নানা প্রামেত্ম ছড়িয়ে পড়লেন। তাতে হয়তো সরাসরি দেখা হওয়া, কথা বলায় ছেদ পড়ল। কিন্তু সম্পর্ক তো ঘুচিয়ে যায়নি। সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক সেই হারানো বন্ধুদের জাগিয়ে তুলল, একত্রিত করল- বললেন মোতালিব রাজা। তার ভাষায়, প্রবাসে থাকার সময়ই তিনি কমপিউটার প্রেগ্রামিং শেখেন। মোতালিব জানান, ছোট ছোট ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। নিজেদের ফ্রেন্ড সার্কেলে এটিকে আটকে না রেখে সবাইকে নিয়ে একটা বড় সার্কেল তৈরি করতেই এই উদ্যোগ। তার স্বপ্ন একসময় ফ্রেন্ড সার্কেলের ‘d’ আইকনটি একদিন সারা পৃথিবীর বাঙালির সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আইকন লোগো হবে।
বাংলা ওসিআর
বেসরকারি উদ্যোগে পুঁথি নামের বাংলা ওসিআর প্রকাশের এক বছরের মাথায় সরকারি উদ্যোগে উন্মোচিত হলো ’বাংলা ওসিআর’। ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধনীর পর এই ওসিআরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি অনুদানের এই কাজটি করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসান সারোয়ার ও তার দল। অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন এর উদ্ভাবনী কাজে সহায়তা বিষয়ক প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে এই প্রকল্পে ২৩ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। এই সহায়তার ফলে গত আট বছর ধরে নিরন্তর পরিশ্রমের এই ফসল দ্রুত ঘরে তোলা সম্ভব হলো বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. হাসান সারোয়ার। তিনি জানান, এই বাংলা ওসিআরটি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। এরপর এই সফটওয়্যারটি এটুআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তার তৈরি এই বাংলা ওসিআরটির ব্যবহার করে সুতন্বি ও নিকষ ফন্টের ছবি সহজেই ডিজিটাল ফন্টে রূপান্তর করে কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ১৭টি মন্ত্রণালয়ের ১টি অফিস ও ১টি অধিদফতর। মার্চ নাগাদ ৭টি বিভাগের প্রতিটি সরকারি অফিস এবং জেলার ই-ফাইলিং কাজে এর ব্যবহার পূর্ণোদ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে। বছরের শেষ নাগাদ এটি সবার জন্য বিনামূলে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানালেন এটুআইয়ের ইনোভেশন অ্যাসোসিয়েট মোহাম্মদ নাহিদ আলম। তিনি বলেন, আশা করছি এ বছরের মধ্যেই ওসিআরটি যেকেউ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এখন সরকারি ব্যবহারের সময়ে ওসিআরটিকে আরও উন্নত করতে ফাইন টিউনিং করা হচ্ছে। জনসাধারণের উন্মুক্ত হওয়ার সময়ে এটি একটি বিশ্বমানের ওসিআর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নাহিদ বলেন, আমরা আশা করছি এই ‘অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন’ বা ‘বাংলা ওসিআর’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে হাতে লেখা, টাইপ করা ও ছাপার হরফের লেখাকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য লেখায় রূপান্তর করা যাবে। ওসিআর ছবিতে সংরক্ষিত অক্ষরও চিনতে পারে। এতে ছবির অক্ষরকে স্ক্যান করে অথবা ছবি তুলে টেক্সট ফাইলে পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল ডিভাইসে বাংলার ব্যবহার নতুন গতি পাবে। ই-সরকার ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত রচিত হবে।
দেখা নেই ডটগভ
সরকারের প্রতিটি দফতরই এখন ওয়েবে সংযুক্ত। তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি নিজস্ব ওয়েব মেইলও। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও বহিঃযোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারীই ব্যবহার করেন ফ্রি মেইল সার্ভিস জি-মেইল কিংবা ইয়াহু। অথচ সরকারের কার্যক্রম ডিজিটাল করার নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও অপূর্ণতায় ষোলকলা পূর্ণতায় ছেদ টেনেছে ডটগভ ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা। নিজস্ব মেইল সেবার পরিবর্তে দাফতরিক কাজেও ব্যক্তিগত মেইল থেকে যোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রি মেইল থেকে একই নামে অনেকেই মেইল করতে পারেন। এটা নকল করা খুবই সহজ। ফলে সরকারি কাজে নিজস্ব মেইল থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। নইলে সামনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলা ই-বই
এবার বেশ কিছু বাংলা বইয়ের ই-সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে অমর একুশে বই মেলায়। মেলা প্রাঙ্গণের ই-তথ্যকেন্দ্রের ‘সেই বই’ স্টলে মিলছে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ই-বুক। এখান থেকে ই-বুক পড়ার পাশাপাশি র্যা ফল ড্রয়ের মাধ্যমে স্যামসাং ট্যাবসহ আরও নানা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সাইটটিতে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বই কেনা ও ই-বুকে বই পড়ার পাশাপাশি পাওয়া যাবে নানা ধরনের ফ্রি অ্যাপস। মেলায় বাংলা বইয়ের ই-বুক রিডার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এসেছে ‘বইপোকা’ ডটকম। এটিতে যেমন প্রকাশ হচ্ছে দেশের সেরা লেখকদের বই, তেমনই রয়েছে নবীন লেখকদেরও বই। এখানে পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য রয়েছে দারুণ সব ফিচার। অনলাইনে বই কেনাবেচার আরেকটি সাইট হচ্ছে পড়ুয়া ডটকম। এসব সাইটে রয়েছে প্রকাশিক বাংলা বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ। চাচা কাহিনী থেকে শুরু করে ময়ূরাক্ষী, মাসুদ রানার মতো জনপ্রিয় সব বই
ঝুলন্ত ডটবাংলা
কেটে গেল আবেদনের পাঁচ বছর। তারপরও ইন্টারনেট দুনিয়ায় আত্মপরিচয় থেকে আলোর মুখ দেখেনি রক্তের দামে কেনা বাংলা ভাষার ওয়েব ডোমেইন ডটবাংলা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পথিকৃৎ হয়েও টপ লেভেল ডোমেইন থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ; বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি বাংলা ভাষাভাষী। ইন্টারনেটে পৃথিবীর অনেক শহরে নিজস্ব ঠিকানা থাকলেও বাংলাদেশের পরিচয়ে এখনও আমরা পরনির্ভরশীল। সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন হিসেবে আমাদের পরিচয় দিতে হচ্ছে .com.bd, .net.bd, .org.bd, .gov.bd, .ac.bd, .mil.bd ইত্যাদির মাধ্যমে। ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও এখনও ডটবাংলা ডোমেইন ব্যবহার শুরু করতে পারিনি আমরা।
অথচ পাঁচ বছর আগে ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে টপ লেভেল কান্ট্রি ডোমেইন (টিএলসিডি) চালু করার জন্য আইকানের কাছে আবেদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে আইসিএএনএন বাংলা ভাষার জন্য স্ট্রিং ইভ্যালুয়েশন (বাংলা অক্ষরগুলো চেনার জন্য নির্দিষ্ট কোড (আইডিএন সিসিটিএলডি) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইন্টারনেট অ্যাসাইন্ড নাম্বারস অথরিটি (আইএএনএ) বাংলার জন্য কোডটি (আইডিএন সিসিটিএলডি) অনুমোদনও (ডিএনস রুট জোনে ডেলিগেট) করে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ডটবাংলার অনুমোদনও পাওয়া যায়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক ঠিক না হওয়ায় চূড়ান্তভাবে এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
জানা গেছে- ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় না বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) তত্ত্বাবাবধান করবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সরকার। ফলে চলতি বছরের ভাষার মাসেও এই ডোমেইন চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডটবাংলার তত্ত্বাবধানকারী ঠিক না হওয়া, টিএলসিডি দেশগুলোর ক্লাবে সদস্যপদ না পাওয়া এবং ডটবাংলার রুট ডেলিগেশন না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ প্রকল্প দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে কোন পদ্ধতিতে ডটবাংলা ডোমেইন চালু করা হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইকান (ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস) ইন্টারনেটে ডোমেইন নাম তালিকাভুক্তির প্রতিষ্ঠান। আইকানের কাছে ডটবাংলা নিবন্ধিত হওয়ার পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে বাংলায় ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। তখন ইংরেজি, চায়নিজ, ফ্রেঞ্চ, কোরীয়, আরবি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ভাষার পাশাপাশি বাংলায়ও ইন্টারনেটের কার্যক্রম চলতে পারবে অনায়াসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিশ্বের ১৫০টি দেশ টিএলসিডি সদস্য হলেও বাংলাদেশ এখনও এ ক্লাবের সদস্য নয়। গত বছর ২৪ মে ঢাকা সফরকালে এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপনিক), সাধারণ পরিচালক পল উইলসন ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা শ্রীনিবাস চেন্দি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিউ ইয়ু-চাং বাংলাদেশে এক মতবিনিময় সভায় জানান, টপ লেভেল কান্ট্রি ডোমেইন পেতে হলে বাংলাদেশকে আগে এ ক্লাবের সদস্য হতে হবে। কিন্তু এখনও এই ক্লাবের সদস্য হয়নি বাংলাদেশ। ওই ক্লাবের সদস্য না হলে যেখানে অন্য কোনো কাজের মূল্য নেই, সেখানে ডটবাংলা ডোমেইনের অগ্রগতি কী তা সহজেই অনুমেয়। ফলে সর্বশেষ ২০১৩ সালে আইকান ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি চায়নিজ ও আরবিসহ নতুন ২৭টি ভাষায় ইন্টারনেট ঠিকানার (ডোমেইন) নামের প্রাথমিক অনুমোদন দিলেও বাদ পড়েছে বাংলা। অভিযোগ রয়েছে, গত পাঁচ বছরে এ বিষয়ে গঠিত কমিটির উন্নাসিকতার কারণেই পিছিয়ে আছি আমরা।