লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গেল বছরের প্রযুক্তিজগতের আলোচিত এক ডজন
খেলনা ট্যাবলেট ওসমো
অনেক শিশুর মতো হয়তো আপনার শিশুও পছন্দ করে আইপ্যাড। কিন্তু এর দৃষ্টি যখন চোখ থেকে ৬ ইঞ্চি দূরের একটি স্ক্রিনে সারাদিন আটকে থাকে, তখন নিশ্চয় ভালো লাগবে না। কারণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, দীর্ঘ স্ক্রিনটাইম (কমপিউটার যন্ত্রের পর্দার সামনে বসে কাজ করার সময়) মনোযোগ ও মোটা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কারণে গুগলের সাবেক এক প্রকৌশলী ও তার সাবেক সহকর্মী জেরোমি স্কুলার রিয়েল ওয়ার্ল্ডে ভার্চু্যয়াল প্লে-ব্যাক নিয়ে আসার একটি উপায় উদ্ভাবন করেছেন। এটি একটি খেলনা ট্যাবলেট। এর নাম ওসমো (OSMO)। এটি টাইম সাময়িকীর ২০১৪ সালের সেরা উদ্ভাবন।
ওসমোর ‘রিফ্লেকটিভ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ অ্যাটাচমেন্ট আইপ্যাডের ক্যামেরাকে সক্ষম করে তুলবে ভৌতবস্ত্ত ইন্টারপ্রিট করতে। ট্যাবলেটের বোতাম টিপে স্ক্রিনে নানা ধরনের প্যাটার্ন আনা যায়। শিশুদের হাতে তখন কিছু রঙিন টাইল বা ব্লক দিয়ে বলা হবে স্ক্রিনের সামনে টেবিলের ওপর এসব ব্লক দিয়ে ওই প্যাটার্নের অনুরূপ একটি প্যাটার্ন তৈরি করতে। যেসব ব্লক বা টাইল ঠিকভাবে সাজানো হবে স্ক্রিনে তা আলোর ঝলকানি দিয়ে জ্বলে উঠে জানিয়ে দেবে, ওইটুকু সঠিকভাবে সাজানো হয়েছে। যেসব ব্লক ঠিকভাবে সাজানো হবে না, সেগুলো জ্বলবে না। সবগুলো ব্লক ঠিকভাবে সাজিয়ে পুরো প্যাটার্নটি সঠিকভাবে সাজানো হলে সবগুলো ব্লকই আইপ্যাডের স্ক্রিনে জ্বলে উঠবে।
স্কাইপ ট্র্যান্সলেটর
এটি নতুন একটি চমৎকার প্রায় রিয়েল টাইম স্পিচ ট্র্যান্সলেটর। ধরুন, কোনো বিদেশী ভাষা আপনার জানা-শেখা নেই। ওই ভাষাভাষী বিদেশীও আপনার ভাষা জানেন না। কিন্তু আপনারা দু’জন নিজ নিজ ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলে রিয়েল টাইমে চ্যাট করতে পারবেন। ‘স্কাইপ ট্র্যান্সলেটর’ মাঝখানে আপনাদের ভিডিও বা ভয়েস কথোপকথন তাৎক্ষণিকভাবে যার যার ভাষায় অনুবাদ করে দেবে। আপনি যা বলবেন তা ভাষান্তরিত হয়ে চলে যাবে স্কাইপের অপর প্রামেত্ম থাকা ভিনদেশীর কাছে, তার নিজের ভাষায়। আর তিনি যা বলবেন, তা আপনার ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে ফিরে আসবে আপনার কাছে।
স্কাইপ ট্র্যান্সলেটর স্কাইপির একটি ব্র্যান্ড নিউ ফিচার। স্কাইপ ট্র্যান্সলেট টুলটি একটি সিস্টেম ট্রে’র ওপর বসানো থাকে। সেটিং বক্স ওপেন করতে রাইট ক্লিক করতে হয়। সেখানে দু’জন ব্যবহারকারীর জন্য ভাষা বেছে নিতে পারেন স্কাইপে চ্যাট করার জন্য। ভাষা বেছে নেয়ার পর আপনার নিজের ভাষায় আপনার কথা টাইপ করতে পারেন। এই টাইপ করা ভাষা অপর প্রামেত্মর গ্রাহক পেয়ে যাবেন তার পছন্দের ভাষায়। প্রোফাইল সেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে স্কাইপ ট্র্যান্সলেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বন্ধুর ভাষা সিলেক্ট করে নিতে পারবে।
ক্লাউনফিশ ট্র্যান্সলেটর
স্কাইপিতে অনলাইনে আপনার সব মেসেজ ভাষান্তর করার জন্য ক্লাউনফিশ (Clownfish) নামে একটি অনলাইন ট্র্যান্সলেটর রয়েছে। এর মাধ্যমে মেসেজ লিখতে পারবেন আপনার নিজের দেশের ভাষায়, যা গ্রাহক পাবেন তার নিজের ভাষায় ভাষান্তরিত রূপে। বিভিন্ন ট্র্যান্সলেটর সার্ভিস থেকে আপনি পছন্দেরটি বেছে নিতে পারবেন। এতে রয়েছে ওপেনঅফিস কমপ্যাটিবল বিল্ট-ইন স্পেলচেক সাপোর্ট। সব ইনকামিং মেসেজের জন্য আছে টেক্সট-টু-স্পিচ সাপোর্ট। এটি পূর্ব-সংজ্ঞায়িত এএসসিআইআই ও ইমোটিকন ড্রয়িং পাঠাতেও সক্ষম। এতে আছে বিল্ট-ইন গ্রিটিং উইশের দীর্ঘ তালিকা। আপনার বদলে তা ব্যবহার করতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট। ক্লাউনফিশ হোস্ট হতে পারে যেকোনো ভার্চু্যয়াল স্টুডিও টেকনোলজি (ভিএসটি) ইফেক্ট প্লাগইনের জন্য। এর ‘এনক্রিপ্ট মেসেজগুলো’ এখন আপনার গোপন ডাটাকে করে তুলবে নিরাপদ। এর সাউন্ড প্লেয়ার আপনার ভয়েস কলে সাউন্ড ইমোশন সংযোজন করে। ভয়েস কলের সময় হেল্পার টুল টেক্সটকে স্পিসে রূপান্তর করে।
এটি ৫০টি ভাষা সাপোর্ট করে এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। এর ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ সহজ। স্কাইপি চ্যাট উইন্ডোতে এর সরাসরি আউটপুট পাওয়া যায়। এটি কনফিগারযোগ্য। এতে বেছে নিতে পারেন নানা ট্র্যান্সলেশন সার্ভিস প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আছে প্রেফারড আউটপুট ল্যাঙ্গুয়েজ বেছে নেয়ার সুযোগ। প্রায় সব ভাষায় আছে রিয়েলটাইম স্পেলচেকের সুযোগ।
সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্র্যান্সলেটর
আমাদের বিশ্বে ৩৭ কোটির মতো মানুষ কানে শুনতে পায় না। কানে শুনে না বলে কথাও বলতে পারে না। এদের অন্যের সাথে কার্যকর যোগাযোগ করতে প্রয়োজন হয় ব্যয়বহুল মানব অনুবাদক, যা অনেকের পক্ষেই জোগাড় করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ব্যয়বহুল সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার জন্য পড়াশোনা করার সুযোগ সহজলভ্য নয়। যদিও এরা সাধারণত খুবই বুদ্ধিমান। এরপরও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে এরা পঙ্গু। ফলে এরা জীবনের পরিপূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না। সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক ‘মোশনসেভি’ কোম্পানির সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা রায়ান হ্যায়িট ক্যাম্পবেল তাদেরই মধ্যকার এক মেধাবীমানব। তিনি ও তার একদল বধির সহকর্মী এদের মতো বধিরদের জন্যই উদ্ভাবন করেছেন এক উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি। এরা মোশন সেন্সিং ও মোবাইল কমপিউটিংয়ের সম্মিলন ঘটিয়ে তৈরি করেছেন ‘ইউএনআই’ নামে একটি ট্যাবলেট ও অ্যাটাচমেন্ট। এতে মোশন সেন্সিং ক্যামেরা ও ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় আমেরিকান সাইন লাঙ্গুয়েজ অনুবাদ করার কাজে ব্যবহারের জন্য।
ইউএনআইয়ের রয়েছে তিনটি অংশ : একটি ট্যাবলেট কমপিউটার, বিশেষভাবে ডিজাইন করা একটি স্মার্ট কেইস এবং একটি মোবাইল অ্যাপ। স্মার্ট কেইসে আছে ‘লিপ মোশন’ থেকে নেয়া একটি হার্ডওয়্যার। আছে বেশ কয়েকটি ক্যামেরা, যা অনুসরণ করে ব্যবহারকারীর হাত ও আঙুলের অবস্থান। মোবাইল অ্যাপটি চলে ট্যাবলেটের মাধ্যমে। এই অ্যাপ হাত ও আঙুলের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শ্রবণযোগ্য বা পর্দায় দৃশ্যমান পাঠযোগ্য ভাষায় ট্র্যান্সলেট করে। অপরদিকে এই অ্যাপ মুখে বলা শব্দ লিখিত শব্দেও অনুবাদ করতে পারে। বধিরজনেরা তা পড়তে পারে। ইউএনআই শুধু দোভাষীর কাজটাই করে না, এটি এরচেয়েও বেশি কিছু করে। এটি শেখার কাজও করে। ঠিক স্পোকেন ইংলিশের মতো সাইন ল্যাঙ্গুয়েজেও আছে বিভিন্ন ডায়ালেক্ট (উপভাষা বা ভাষার আঞ্চলিক রূপ) ও অ্যাসেন্ট (স্বরভঙ্গি)। ইউএনআই শিখে আপনার সাইনিংয়ের ধরন। কারণ, আপনি একে প্রশিক্ষিত করেন এর ভাষান্তর যথার্থ হওয়ার ব্যাপারে। এটি আরও স্মার্ট হয়ে ওঠে এর ব্যবহারকারীর ক্রাউডসাইনের মাধ্যমে।
রায়ান হ্যায়িট ক্যাম্পবেল আশা করছেন, ইউএনআইয়ের টেকনোলজি খুব শিগগিরই স্থান পাবে ট্যাবলেটে ও মোবাইল ফোনে। কারণ ফ্রন্ট-ফেন্সিং ক্যামেরা টেকনোলজি অব্যাহতভাবে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন ইউএনআইকে কমপিউটারের বাইরে নিয়ে আসার ছবিও আঁকছে। তখন এটি ব্যবহার হবে টেলিভিশন ও হোম অটোমেশনেও।
কোপেনহ্যাগেন হুইল
আমরা জানি সাইকেল চালানো আমাদের জন্য উপকারী। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যান। অনেক দেশেই নাগরিক সাধারণকে সাইকেল চালানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু পা ব্যবহার করে সাইকেল চালাতে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় বলে সাইকেল চালাতে সবাই চান না। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় চড়াই-উতরাই পথে সাইকেল চালানোও বেশ কষ্টকর। সাইকেল চালানোর এই কায়িক শ্রম কমানোর জন্য সুপারপেডেস্ট্রেইন নামের একটি কোম্পানি সাইকেলে ব্যবহারের জন্য উদ্ভাবন করেছে কোপেনহ্যাগেন হুইল। এতে লাগানো আছে একটি ব্যাটারিচালিত মোটর। সাইকেল চালকের অগ্রাধিকার অনুযায়ী একটি স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে এই মোটর বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দিতে পারে সাইকেল চলার পুরো সময়টায় অথবা শুধু পাহাড়ে চালানোর সময়টায়। এর সেন্সর সাইকেল চলার পথের অবস্থা, বায়ুর তাপমাত্রা ও রাস্তার খানাখন্দের ওপর নজর রাখতে পারে। অতএব সাইকেল চালক সর্বোত্তম রাস্তা সম্পর্কে রিয়েলটাইম তথ্য পেতে পারেন। সুপারপেডেস্ট্রেইন গঠন করেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি তথা এমআইটির কিছু ছাত্র ও ফ্যাকাল্টি। এরা কাজ করছিলেন সাইকেলের টেকসইসংক্রান্ত কিছু সমস্যা নিয়ে। ২০০৯ সালে কোপেনহ্যাগেন হুইল নামের এই
সুপারড্রাইভ সিস্টেমের পূর্ববর্তী সিস্টেমটি এরা উপস্থাপন করেছিলেন কোপেনহ্যাগেনে অনুষ্ঠিত কিয়োটো প্রটোকল জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে। তখন এর স্পন্সর ছিলেন লর্ড মেয়র রিট জেরেগার্ড। তখন এটি ১০ কোটি ডলার মঞ্জুরি পায় এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। এই মঞ্জুরির বাইরে সুপারপেডেস্ট্রেইন স্পার্ক ক্যাপিটাল থেকেও তহবিল পায়। কোপেনহ্যাগেনে তখন বেশ কিছুসংখ্যক হুইল প্রকল্প তাদের উদ্ভাবন প্রদর্শন করে। কিন্তু কোপেনহ্যাগেন হুইল নামের এই অল-ইন-ওয়ান ইলেকট্রিক বাইক হুইল কনভারশন কিট ছিল বিশেষত্বের অধিকারী। কারণ, এটি এ শিল্প খাতে নতুন প্রত্যাশা ও সৃজনশীলতার জন্ম দিতে পেরেছে। এটি একটি রুচিসম্মত, কার্যকর ও শক্তিশালী মোটর, ব্যাটারি ও হুইল সিস্টেম, যা একসাথে কাজ করে এবং আপনার স্মার্টফোন অ্যাপের নির্দেশমতো সাড়া দেয় বিভিন্ন মোড অপারেট করতে। পুরো ব্যবস্থাটি একটু জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে ব্যবস্থাটি খুবই সহজলভ্য ও সহজে ব্যবহারযোগ্য। সাইকেলের ফ্রেমে এর জন্য কোনো তার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোনো অতিরিক্ত কন্ট্রোল বক্স ও ব্যাটারির তাক ব্যবহারের। সবকিছুই লাগানো আছে ওই কোপেনহ্যাগেন হুইলেই। এটি চার্জ করে অন করে দিয়ে অ্যাপে মোড সিলেক্ট করে (টার্বো, নরমাল, ফ্ল্যাটসিটি, ইকো বা ওয়ার্কআউট) এরপর নরমাল সাইকেলের মতো প্যাডেল চালাতে হবে। এই চাকাটি ব্যবহার করে স্পিড ও টর্ক রিডিং আপনাকে পারফরম্যান্স রেকর্ড করায় সাহায্য করবে। যখন গতি কমানোর প্রয়োজন, তখন আপনি ব্যবহার করতে পারবেন স্ট্যান্ডার্ড রিমব্রেক (কোপেনহ্যাগেন হুইলের বর্তমান সংস্করণ ডিস্ক ব্রেক কম্প্যাটিবল নয়) করে ব্যাক পেডেলের মাধ্যমে সক্রিয় করতে পারবেন পাওয়ার জেনারেশন মোড, যা মোটরকে পরিণত করে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর তা ব্যাটারিতে বিদ্যুৎশক্তি বাড়িয়ে দেয়। এই নিট ব্যবস্থা কাজ করে একটি সিঙ্গল ও মাল্টিস্পিড রিয়ার ক্যাসেটের সাহায্যে। অতএব আপনি আপনার মেকানিক্যাল সুবিধাদি ব্যাহত না করেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন ক্রুজার, রোড বাইক ও ক্রসকান্ট্রি মাউন্টেইন বাইকের সাথে।
সাউন্ডহক লিসেনিং সিস্টেম
বিশ্বের লাখো-কোটি মানুষ ঠিকমতো কানে শুনতে পায় না। কিন্তু এদের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র ব্যবহার করে হেয়ারিং অ্যাইড। হেয়ারিং সায়েন্স তথা শ্রবণবিদ্যার ছাত্রেরা বলে আসছে এজন্য প্রযুক্তির পশ্চাৎপদতা কিছুটা দায়ী। হেয়ারিং অ্যাইড বা শ্রবণযন্ত্রগুলোর দাম খুবই বেশি। প্রতিটি কানের শ্রবণযন্ত্রের জন্য এমনকি কখনও কখনও কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। কোনো কোনো দেশের স্বাস্থ্য বীমায় এ স্বাস্থ্য সমস্যা কভার করা হয় না। এ ছাড়া চশমার মতো শ্রবণযন্ত্রগুলো ফ্যাশনের বস্ত্তও নয়। তাই অনেকে শ্রবণসমস্যা নিয়েই চলতে রাজি, তবুও শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করতে চান না। কোনো কোনো প্রস্ত্ততকারক চেষ্টা করছেন, যাতে শ্রবণযন্ত্রকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। টেকনোলজি স্টার্টআপ সাউন্ডহক (Soundhawk)-এর প্রতিষ্ঠাতারা এ অবস্থার পরিবর্তনের মিশন নিয়ে কাজ করছেন। গত নভেম্বরে এই কোম্পানি শিপিং শুরু করেছে এর প্রথম পণ্য ‘স্মার্ট লিসেনিং সিস্টেম’। এটি গোলমেলে পরিবেশে শব্দের মানোন্নয়নে একটি চমৎকার ডিভাইস ও অ্যাপ। এর প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ ডলারে। দেখতে একটি ব্লুটুথ হেডসেটের মতো। কিন্তু শুধু ফোনকল পাওয়ার বদলে এতে লাগানো আছে মাইক্রোফোন ও অডিও ডিকোডিং চিপ, যা আপনার চারপাশের শব্দকে অ্যামিস্নফাই বা বিবর্ধন করবে অর্থাৎ আরও জোরে শোনাবে।
স্মার্ট লিসেনিং সিস্টেমে আছে একটি ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন। এটি ব্যবহারকারীর কয়েক ফুট দূরে রাখা যাবে। কোনো গোলমেলে আওয়াজের রেস্তরাঁয় গেলে আপনার সাথের ব্যক্তির দেহে এটি ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। এর মাইকে পিকআপ করা সব শব্দ আপনি ভালোভাবে শুনতে পাবেন। এর উৎপাদক কোম্পানি দুঃখের সাথে জানিয়েছে, স্মার্ট লিসেনিং সিস্টেম কোনো হিয়ারিং অ্যাইড বা শ্রবণযন্ত্র নয়। এটি কানে শোনেন না এমন ব্যক্তিদের জন্য নয়। এর বদলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘খাদ্য-ওষুধ প্রশাসন’ এই ডিভাইসকে ‘পার্সোনাল সাউন্ড অ্যামপ্লিফিকেশন প্রডাক্ট’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এ ধরনের অনেক স্মার্ট লিসেনিং সিস্টেমই এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগ ডিভাইসই এখন পর্যন্ত তেমন মানসম্পন্ন পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু এর বিপরীতে বিশ্বের সেরা সেরা হেয়ারিং অ্যাইড কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শব্দবিজ্ঞানীরা ডিজাইন করেছেন এই ‘সাউন্ডহক স্মার্ট লিসেনিং সিস্টেম’। একদিন সাউন্ডহক স্মার্ট লিসেনিং সিস্টেম মানুষ পড়বে রিডিং গস্নাসের মতো তাদের কানে। এটি একটি উঁচুমানের ইলেকট্রনিক পণ্য হলেও এ কারণে এটি কম খরচে ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে আমাদের।
লো-পাওয়ার ওয়াই-ফাই
ইন্টারনেট অব থিংসের তথা আইওটি’র দ্রুত প্রবৃদ্ধির পথ ধরে লো-পাওয়ার (কম বিদ্যুৎ খরচের) এমবেডেড ওয়াই-ফাই এসওসি (সিস্টেম অন চিপ) সিঙ্গল চিপ এসেছে ইন্টারনেট অব থিংস পণ্যের অ্যাপ্লিকেশনের মূলধারায়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ‘কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো’তে ‘উইনার মাইক্রো’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রদর্শন করে এর নিজস্ব ডিজাইনের ওয়াই-ফাই এসওসি, রেফারেন্সড মডিউলস, সিওসি (ক্লাউড অন চিপ), র্যা পিড প্রটোটাইপিং ডেভেলপ সিস্টেম এবং এর পার্টনারের আইওটি সলিউশন। উল্লেখ্য, এসওসি হচ্ছে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, যা একটি কমপিউটারের বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক সিস্টেমের সব কম্পোনেন্টকে সমন্বিত করে একটি একক চিপে। এতে থাকতে পারে ডিজিটাল, অ্যানালগ ও মিক্সড সিগন্যাল এবং এমনকি রেডিও-ফ্রিকুয়েন্সি ফাংশনও। এটি কম বিদ্যুৎ খরচ করে বলে মোবাইল ইলেকট্রনিক মার্কেটে এসওসি খুবই সুপরিচিত। বিশেষত এটি ব্যবহার হয় এমবেডেড সিস্টেমে।
৬ থেকে ৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে অনুষ্ঠিত হয় ৪৬তম ইন্টারন্যাশনাল কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো। এটি বিশ্বের সেরা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো। বিশ্বের সেরা সব কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদক ও আইটি প্রতিষ্ঠানের সমাবেশ ঘটে এ প্রদর্শনীতে। এরা সেখানে প্রদর্শন করে অগ্রসর মানের প্রাযুক্তিক ধারণা ও পণ্য। চীনের ‘বেইজিং উইনার মাইক্রো ইলেকট্রনিকস কোম্পানি’ প্রদর্শন করে এর লো পাওয়ার এমবেডেড ওয়াই-ফাই এসওসি। উইনার মাইক্রো হচ্ছে একটি প্রফেশনাল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) ডিজাইন কোম্পানি। এটি আইওটি ক্ষেত্রের সুনির্দিষ্ট কিছু ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন চিপ ও সলিউশন ডেভেলপও বিক্রি করে। এর পণ্যগুলো প্রধানত ব্যবহার হয় স্মার্ট হোম, হেলথ কেয়ার, ওয়্যারলেস ভিডিও ও অডিও, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে।
আমরা জানি, একটি ট্র্যাডিশনাল আইসি’র প্রয়োজন হয় লিনআক্স, অ্যান্ড্রয়িড ও উইন্ডোজের মতো লার্জ অপারেশন সিস্টেমের সাপোর্ট। কিন্তু এমবেডেড ওয়াই-ফাই এসওসি সরাসরি ভালোভাবে কাজ করতে পারে ৮ বিটের সিঙ্গল চিপ দিয়ে অথবা সিঙ্গল চিপের ওপর ভিত্তি করে সম্পন্ন করতে পারে পুরো একটি প্রডাক্ট সলিউশন। এমবেডেড ওয়াই-ফাই এসওসি উদ্ভাবনের ফলে একটি নেটওয়ার্কিং প্রডাক্ট ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার স্ট্রাকচার ও ডেভেলপিং খরচটা সহজ করে আনা গেছে। আইওটি অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে প্রয়োজন হয় প্রডাক্ট, ক্লাউড ও স্মার্টফোন একসাথে লিঙ্ক করার। একটি অগ্রসরমান কোম্পানি হিসেবে উইনার মাইক্রো এরই মধ্যে ক্লাউড সার্ভার কোম্পানির সাথে ঘনিষ্ট সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। সিওসি হচ্ছে চিপের এসডিকে প্লাটফর্মে ইন্টিগ্রেট করা থার্ড পার্টির ক্লাউড এজেন্ট। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যায়, ক্লাউড ফাংশন তখন সম্পন্ন হবে, যখন ডেভেলপারের প্রয়োজন হবে শুধু এলএসডি৮১৬০-এর এসডিকে তথা সফটওয়্যার ডেভেলপিং কিটের ওপর কাজ করার। ডেভেলপিংয়ের বেলায় সিওসি জনশক্তির খরচ ও ডেভেলপিং সাইকেল কমাবে। সেই সাথে স্থায়িত্ব বাড়াবে সংশ্লিষ্ট পণ্যের। কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস শোতে উইনার মাইক্রো লো-পাওয়ার ওয়াই-ফাইসহ প্রদর্শন করবে থার্ড পার্টির আইওটি প্রডাক্টও। যেমন- স্মার্ট প্লাগ, এলইডি লাইটিং, আইপি ক্যামেরা, ওয়্যারলেস প্রিন্টার সার্ভার, টেম্পারেচার হিউমিডিটি সেন্সর এবং আরও অনেক কিছু।
স্মার্টফোনে সবার আগে প্রাইভেসি
একটি সূত্রমতে, আমেরিকার প্রায় অর্ধেক মানুষ সেলফোনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য দেয়াকে মোটেও নিরাপদ মনে করে না। অথচ প্রাইভেসি তথা পোপনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। এটাও ঠিক, ডাটা সংরক্ষণ করা ও এর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা একটি জটিল কাজ। অতএব প্রশ্ন হলো একজন ফোন মালিক কী করে স্মার্টফোনে তার তথ্য গোপনে লুকিয়ে লাখবেন। সে চিমত্মা মাথায় রেখেই প্রাইভেসিকে সবার আগে স্থান দিয়ে ‘বস্ন্যাকফোন’ নামের একটি স্মার্টফোন ডিজাইন করা হয়েছে।
বস্ন্যাকফোন নামের এই স্মার্টফোনটি উদ্ভাবন করেছে এসপিজি টেকনোলজিস। এ ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে ক্রিপটোলজি, সিকিউরিটি ও মোবাইল টেকনোলজি। এটি ফোনকল, ই-মেইল, টেক্সট ইন্টারনেট ব্রাউজিং এনক্রিপশন করার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ডাটা এবং ব্যক্তিগত ও কর্মতথ্য নিরাপদ রাখতে পারবেন ব্যাপকভাবে। নরমাল স্মার্টফোনে এ সুযোগ নেই। বস্ন্যাকফোন ইন্টারনেটে প্রবেশের সুযোগ দেয় ভিপিএনের মাধ্যমে। প্রতিটি বস্ন্যাকফোনে রয়েছে প্রাইভেট অপারেটিং সিস্টেম (PrivatOS)। এটি একটি অ্যান্ড্রয়িড সিস্টেম। এতে নেই কোনো ব্লটওয়্যার, ক্যারিয়ারে নেই কোনো হুক এবং নেই কোনো বাইডিফল্ট লিকি ডাটা। এটি প্রাইভেসি তুলে দেয় আপনার হাতে। এতে প্রোডাকটিভিটির কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।
স্পেসগুলো হচ্ছে সেলফ-কনটেইন্ড এরিয়া, যার ফলে আপনি আপনার ডিভাইসে বিভিন্ন সিকিউর কন্টেইনার ক্রিয়েট ও ম্যানেজ করার সুযোগ পাবেন। এগুলোকে আপনি ভাবতে পারেন আপনার ডাটা সুরক্ষার অপ্রবেশযোগ্য দেয়াল
স্মার্ট মেশিন
২০১৪ সালে প্রযুক্তিজগতে স্মার্ট মেশিন ছিল বেশ আলোচিত একটি বিষয়। টাইম সাময়িকীর মতে, ২০১৫ সালে তথ্যপ্রযুক্তির জগতের সেরা দশ প্রযুক্তিপ্রবণতার মধে শীর্ষে অবস্থান করছে এই স্মার্ট মেশিন। স্মার্ট মেশিন এখন আরও উন্নীত অ্যালগরিদমসম্পন্ন। ফলে স্মার্ট মেশিন এখন এর চারপাশের পরিবেশকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে, কাজ করতে পারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং নিজে নিজে শেখার কাজটিও সম্পন্ন করতে পারে। রোবট, অটোনোমাস ভেহিকল, ভার্চু্যয়াল পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আকারের অনেক স্মার্ট মেশিন এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।
গার্টনারের গবেষণা মতে, ৬০ শতাংশ সিইও (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার) মনে করেন, স্মার্ট মেশিনের আবির্ভাব হওয়ার ফলে ১৫ বছরের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ মাঝারি ধরনের পদে কর্মসংস্থান হারাবে। এ তথ্য জানা গেছে ২০১৩ সালে গার্টনার পরিচালিত এক সিইও জরিপে। গার্টনারের রিসার্চ ডিরেক্টর কেনেথ ব্রান্ট বলেন, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নেতা স্মার্ট মেশিনের সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখছেন এবং বলছেন- আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই স্মার্ট মেশিন লাখ লাখ কর্মসংস্থান দখলে নিয়ে যাবে। এভাবে মানুষের চাকরির সুযোগ দ্রুতগতিতে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। গার্টনার মনে করে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে স্মার্ট মেশিনের সক্ষমতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাবে। এর ফলে বড় ধরনের একটি প্রভাব পড়বে ব্যবসায়ে ও আইটি ফাংশনে।
ল্যাপটপের স্থানে ট্যাবলেট
মাইক্রোসফটের সারফেস প্রো ৩ ট্যাবলেট দখল করবে আপনার ল্যাপটপের স্থান। মাইক্রোসফট চায় এটি হবে আপনার পরবর্তী পিসি। মাইক্রোসফট ২০১৪ সালের ২০ মে প্রথমবারের মতো সারফেস প্রো ৩ ল্যাপটপের পরিচয় তুলে ধরে। মাইক্রোসফটের সারফেস ডিভিশনের প্রধান প্যানোস প্যানে বলেছেন, ‘এটি এমন একটি ট্যাবলেট, যা আপনার ল্যাপটপের স্থান দখল করবে। আজ আমরা দ্বন্দ্বকে দূরে ঠেলে দিয়েছি- আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।’
সারফেস প্রো ৩-এর রয়েছে ১২ ইঞ্চি পর্দা। এর পূর্ববর্তী সারফেস প্রো ২-এর তুলনায় এর পর্দা প্রায় দেড় ইঞ্চি বড়। আর এর ওজন অ্যাপল ম্যাকবুক এয়ারের চেয়েও কম। এটি ৯.১ মিলিমিটার পুরো। সারফেস প্রো ৩-এর চেয়ে ১৪ শতাংশ কম পুরো। বাজারে পাওয়া ইন্টেল কোর চিপসমৃদ্ধ ট্যাবলেটের মধ্যে এটি সবচেয়ে কম পুরো। সারফেস প্রো ৩-এর পুরুত্ব মোটামুটি আইপ্যাড ২-এর সমান, যদিও এটি আইপ্যাড এয়ারের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি পুরো। এই ট্যাবলেট পিসি দামও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রাথমিক দাম শুরু হবে ৭৯৯ ডলার থেকে, যেখানে সারফেস প্রো ২-এর দাম ৯৯৯ ডলার।
এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, সারফেস প্রো ৩ একটি ভালো পিসি, কিন্তু এটি আইপ্যাডের প্রতিস্থাপন নয়। মাইক্রোসফটের রয়েছে নতুন সারফেসের জন্য বেশ কিছুসংখ্যক সম্ভাবনাময় প্রোগ্রাম। এর মধ্যে আছে অ্যাডোবি ফটোশপ ও ফাইনাল ড্রাফট স্ক্রিনরাইটিং সফটওয়্যার। পূর্ববর্তী সারফেসের মতোই এই ডিভাইসটিতে আছে সুপার-থিন বা অতি-পাতলা কিবোর্ড ও টাচপ্যাড মাউস। আর সরাসরি হাতে লিখে নোট নেয়ার জন্য এতে ব্যবহার করা যায় একটি স্টাইলাস পেন।
মাইক্রোসফট ট্যাবলেট গেমেও এসেছে একটু দেরিতে। ২০১২ সালের শেষ পাদে মাইক্রোসফট সারফেসের প্রথম আবির্ভাব হয়। এর প্রায় তিন বছর আগে অ্যাপলের আইপ্যাড উন্মুক্ত করা হয়। সারফেস সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সম্ভবত এর সবচেয়ে কট্টর সমালোচক হচ্ছেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক। ২০১২ সালে কুক কৌতুক করে বলেছিলেন, ‘আপনি একটি টোস্টার ও একটি রেফ্রিজারেটরকে একীভূত করতে পারেন। কিন্তু আপনি জানেন, এসব জিনিস ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারবে না।’ মাইক্রোসফট সিইও সত্য নাদেলা এর জবাবে তখন অর্থাৎ ২০১৪ সালের মে মাসে বলেছিলেন, ‘আমরা টোস্টার ও রেফ্রিজারেটর তৈরিতে আগ্রহী নই। আমরা সৃষ্টি করতে চাই সর্বোত্তম ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ।’
বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস
বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস (BDaaS) পদবাচ্যটি নমুনা হিসেবে ব্যবহার হয় সেসব সার্ভিস বুঝাতে, যেগুলো সাধারণত ব্যবহার হয় ইন্টারনেটে ক্লাউড সার্ভিস হোস্ট হিসেবে, যা বড় বা জটিল ডাটাসেট অ্যানালাইসিসের সুযোগ দেয়। একই ধরনের সার্ভিসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে সফটওয়্যার অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস (SaaS) অথবা ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস (IaaS), যেখানে সুনির্দিষ্ট বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস অপশন ব্যবহার হয় বিজনেস মোকাবেলায় সহায়তা করতে, যাকে আইটি দুনিয়া অভিহিত করে ‘বিগ ডাটা’ বা ‘সফিস্টিকেটেড অ্যাগ্রিগেট ডাটা সেট’ নামে, যা আজকের কোম্পানিগুলোর জন্য প্রচুর মূল্য সংযোজন করে।
সাধারণত বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস সুযোগ দেয় নানা ধরনের ডাটা অ্যানালাইটিকের। যেমন- একটি কোম্পানি ক্লাউড এটি ব্যবহার করে লার্জ এসইও অথবা ওয়েব কনটেন্ট ক্যাম্পেইন মনিটর করতে, যা ব্যাপক শ্রোতার কাছে পৌঁছে। একটি বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিস মডেলে এসব সার্ভিস সাধারণত দেয়া হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিভেন্ডর ও ক্লাউডে থাকা ফাংশনালিটি টুল সহযোগে। এসব সেটআপ অ্যাজাইল সার্ভিস দিতে সহায়তা করে, যা ভালোভাবে পারফর্ম করে। যদিও ডাটা প্রবাহিত হওয়ার অনেক স্পেস তথা পথের ওপর বিজনেসগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেই।
বিশেষজ্ঞেরা চিহ্নিত করেছেন বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিসের অন্যান্য বিপণন কৌশল। এসব কৌশলের একটি হচ্ছে অ্যানালাইটিকের সাথে একীভূত করে ক্লাউড ডাটা স্টোরেজ রিসোর্সের লোকেশন, যাতে করে হট কিংবা কোল্ড ডাটা কাছেই স্টোর হয়, যেখানে তা নিপুণভাবে ব্যবহার করা হবে অ্যানালাইসিসের জন্য। একটি অ্যানালাইটিক প্রোগ্রাম বা প্লাটফর্মের মাধ্যমে ডাটা মুভ করতে প্রয়াস কমাতে এটি সাহায্য করবে। বিগ ডাটা অ্যাজ-অ্যা-সার্ভিসের অন্যান্য সেলিং পয়েন্টের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে একটি কহেসিভ ও অর্থপূর্ণ উপায়ে এসব টুল ব্যবহার করে কী করে একজন ব্যস্ত ম্যানেজার ডাটা উপস্থাপনে সহায়তা পেতে পারে, তার সুনির্দিষ্ট বর্ণনা। এ ক্ষেত্রে প্রিডিকটিভ কোম্পানিগুলো সৃষ্টি করছে বিভিন্ন ধরনের টুল, যাতে বিজনেসগুলো সহায়তা পায় ডাটা থেকে কার্যকর ফল পেতে।
থ্রিডি প্রিন্টিং
থ্রিডি প্রিন্টার নামের ডিভাইস সাধারণত প্লাস্টিক বা অন্য পদার্থ লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্লুপ্রিন্ট থেকে বস্ত্ত তৈরি করতে পারে। দ্রুত এটি বাস্তবে রূপ লাভ করছে। এটি এখন ভোক্তা ও শিল্পপতিদের উভয়ের জন্য সমভাবে এক আশীর্বাদ।
থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের আরেক নাম অ্যাডিটিভ ম্যানুফেকচারিং (এএম)। এতে থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক বস্ত্ত তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার একটি ব্যবহার করা হয়। থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে প্রাথমিকভাবে অ্যাডিটিভ প্রসেসগুলো ব্যবহার হয়, যাতে বস্ত্তর ধারাবাহিক স্তরগুলো কমপিউটার নিয়ন্ত্রিতভাবে স্থাপন করা হয়। এসব বস্ত্তর জ্যামিতিক আকার যেকোনো ধরনের হতে পারে। আর এসব বস্ত্ত তৈরি করা হয় একটি থ্রিডি মডেল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডাটা সোর্স থেকে। একটি থ্রিডি প্রিন্টার এক ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট।
২০১২ স্ট্র্যাটাসিস অ্যাডিটিভ ম্যানুফেকচারিং সিস্টেম বিক্রি করে ২ হাজার থেকে ৫ লাখ ডলার দামে। আর এগুলো ব্যবহার হয় বিভিন্ন শিল্পকারখানা, এয়ারোস্পেস, আর্কিটেকচার, অটোমেটিভ, ডিফেন্স ও ডেন্টালসহ নানা ক্ষেত্রে। যেমন- আর্টমেকার নামের থ্রিডি প্রিন্টারটিকে পুরস্কৃত করা হয় সবচেয়ে বেশি গতির ও যথার্থ সঠিক প্রিন্টার হিসেবে। টারবাইনের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য জেনারেল ইলেকট্রিক ব্যবহার করে উঁচুমানের মডেল। বেশকিছু প্রকল্প ও কোম্পানি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কম দামের হোম ডেস্কটপে ব্যবহারের উপযোগী থ্রিডি প্রিন্টার তৈরির জন্য। RepRap হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে চলা ডেস্কটপ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর একটি। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ফ্রি ও ওপেনসোর্স হার্ডওয়্যার উৎপাদনের থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করা। এটি এরই মধ্যে প্রিন্ট সার্কিট বোর্ড ও ধাতব যন্ত্রাংশ প্রিন্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
থ্রিডি প্রিন্টারের দাম নাটকীয়ভাবে কমে আসছে ২০১০ সালের পর থেকে। আগে যে থ্রিডি প্রিন্টার মেশিনের দাম ছিল ২০ হাজার ডলার, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ডলারে। থ্রিডি প্রিন্টারের দাম এভাবে কমে আসতে থাকায় ব্যক্তিগত পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তা ছাড়া বাড়িতে থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যবহার বাড়লে শিল্পকারখানায় পণ্য উৎপাদনে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমে আসবে। থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি পা দিয়ে হাঁটাচলা করা একটি কুকুর।