লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে ডিজিটাল বাংলাদেশ
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে ডিজিটাল বাংলাদেশ
ইমদাদুল হক
বৈশ্বিক আবহে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৬ থেকে ৯ ডিসেম্বর চার দিন ধরে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি সম্মেলন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭। আগামী বিশে^র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্ত্ততি হিসেবে সম্মেলনের পঞ্চম এ আসরে প্রচ্ছন্নভাবে উঠে এসেছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশের অভিযাত্রা। বাংলাদেশে তৈরি প্রযুক্তিপণ্য সেবার দুর্দান্ত কিছু আয়োজন উপস্থাপিত হয়েছে সম্মেলন প্রাঙ্গণে। এখানে ছিল সদ্য দেশের মাটিতে মোবাইল ও ল্যাপটপ উৎপাদন শুরম্ন করা ওয়ালটন। স্বদেশী অ্যান্টিভাইরাস নিয়ে স্বমহিমায় দ্যুতি ছড়িয়েছে রিভ সিস্টেমস। উৎপাদমুখিতার জানান দিয়ে মহিমা ছড়িয়েছে স্বদেশী ব্র্যান্ড উই টেকনোলজিস। প্রযুক্তিদৈত্য ফেসবুক, গুগল, হুয়াওয়ে, স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে সিনা টান করেই সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সম্ভাবনার কথা জানান দিয়েছে স্বদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো।
চার দিনের এই সম্মেলনে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি সেবাগুলোকেও তুলে ধরা হয় নতুন মাত্রায়। বিশ^মঞ্চে মেলে ধরা হয় তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও সাফল্যের উপাখ্যান। প্রযুক্তি খাতে বিগত ৯ বছরের অর্জন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব, বক্তা, বিশেস্নষক, প্রকৌশলীদের সাথে দুই দফা অস্কারজয়ী নাফিস বিন জাফরের উপস্থিতি সম্মেলনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের মেধা ও মননের স্ফুরণ ঘটিয়েছে। সোফিয়া ক্রেজের কাছে তরম্নণ উদ্ভাবকদের ‘বন্ধু’ রোবট জানিয়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমরাও আসছি আগামী দিনে। সব মিলিয়ে সম্মেলনটি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিম্বিত রূপ। আগামীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, সাইবার সিকিউরিটি এজেন্ট ও ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) মতো বিশ্ব মাতানো আয়োজন আর বিশ্বখ্যাত পণ্য নির্মাতা ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে তাদের হালনাগাদ পণ্য ও সেবা প্রদর্শনে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের এবারের আসরের দর্শনার্থীরা পেয়েছেন জার্মানি সিবিট, সিঙ্গাপুর কমিউনিক এশিয়া কিংবা দুবাই জাইটেঙের আবহ। এই আয়োজনের মাধ্যমে আগত দর্শনার্থী ছাড়াও অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বিশ^ দেখল ডিজিটাল বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গন্তব্য।
তরম্নণদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গর্ব
উদ্বোধনী দিনেই দর্শনার্থীদের সামনে চমক দেখিয়েছে বিশে^র প্রথম নাগরিক যন্ত্রমানব সোফিয়া। ৬ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চার দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট মানব সোফিয়ার সাথে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, পৃথিবীর সাথে এগিয়ে যেতে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। স্কুল শিক্ষা থেকে শুরম্ন করে এখন জনসেবার সব কিছুই চলে এসেছে তাদের দোরগোড়ায়।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঋণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘ইই ফান্ড’-এর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দেশের সক্ষমতা নিয়ে গর্ব করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের মতো উন্নত দেশের ১০ হাজার অ্যাপার্টমেন্টকে স্মার্ট করার কাজটা তারা আমাদের তরম্নণদের হাতে তুলে দিয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই খাতটিকে আরও যোগ্য করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে আমরা আজ আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা সরবরাহ করছি। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানকেও আমরা সহযোগিতা করছি। আমাদের কোম্পানিগুলো এখন আফ্রিকাতেও পদচারণা করতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ ও বেসরকারি খাতে ৬টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের সুবিধা দিয়েছি। যার ফলে দেশব্যাপী ১০ গুণেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানিও হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদে, বেসিস সভাপতি মোসত্মাফা জববার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের যত আয়োজন
প্রতীক্ষার প্রহর পেরিয়ে যখন বেলা ৩টা ছুঁই ছুঁই, ঠিক তখনই সম্মেলন প্রাঙ্গণের হল অব ফেমের মঞ্চে হাজির করা হয় সোফিয়াকে। চার চাকার ট্রলিসদৃশ একটি বস্ত্ততে ভর করে এক গাল হেসে উপস্থিত বিমুগ্ধ দর্শকদের সম্ভাষণ জানান তিনি। এ সময় সাথে ছিলেন সোফিয়ার উদ্ভাবক ডেভিড হ্যানসন। মঞ্চে রিকশার হুড দিয়ে অলঙ্কৃত চেয়ারে বসে তার সাথে কথোপকথন শুরম্ন করেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাউছুল আলম শাওন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার শুরম্নতেই তিনি সোফিয়াকে বাংলাদেশে আসার জন্য অভিনন্দন জানান। জবাবে সোফিয়া বাংলাদেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘হ্যালো বাংলাদেশ। আই অ্যাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইন্টিগ্রেটেড রোবট সোফিয়া।’
প্রদর্শনী
প্রযুক্তিসেবা ও উদ্ভাবনার নানা আয়োজন নিয়ে সম্মেলন প্রাঙ্গণে নিজস্ব ঢঙে সেজেছিল ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের ৫০১টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য প্রদর্শনীতে সফটওয়্যার শোকেসিং, ই-গভর্ন্যান্স এঙপো, স্টার্টআপ জোন, কিডস জোন, মেড ইন বাংলাদেশ জোন এবং ইন্টারন্যাশনাল জোন ছিল। এ ছাড়া আইসিটিসংশিস্নষ্ট বেশ কিছু প্রদর্শনী স্টল তাদের প্রযুক্তিপণ্য ও সেবা সম্পর্কে ধারণা উপস্থাপন করে। অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে ধরে তাদের হালনাগাদ প্রযুক্তিপণ্য ও সেবার পসরা।
সম্মেলন কেন্দ্রে নাগরিকদের প্রদত্ত বহুমাত্রিক ডিজিটাল সেবা নিয়ে হাজির হয় ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ১১২টি স্টলে তারা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের রূপরেখা উপস্থাপন করা হয় নান্দনিক আবহে। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে সড়ক ও জনপথের উদ্যোগ, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের তালিকাকরণ নিয়ে সম্মেলন প্রাঙ্গণে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
‘ডিজিটাল মেলা’য় নিজেদের স্টলে বাংলাদেশ পুলিশ প্রচার করেছে নিজেদের বিভিন্ন ডিজিটাল কার্যক্রম। মেলা প্রাঙ্গণে আগতদের সামনে তারা তুলে ধরে জরম্নরি সেবার নম্বর ৯৯৯। প্রয়োজনে এই নম্বরে কল করে খুব সহজে ও দ্রম্নততার সাথে মিলেছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা। এখন পজ ডিভাইসের মাধ্যমে মুহূর্তেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন যাচাই, ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাইসহ মামলা দেয়া হচ্ছে।
নাগরিকের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চালু হয়েছে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা। খুব সহজে ঘরে বসেই অনলাইনে এই সাইটে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা যাবে। গুগল পেস্ন স্টোর থেকে বিডি পুলিশ হেলপ লাইন ডাউনলোড করা যাবে। এ ছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক কন্ট্রোল রম্নমের সহায়তায় রেডিও স্পাইস ৯৬.৪ এফএম সেবাও অবহিত করা হয়।
মেলা প্রাঙ্গণে ভার্চু্যয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপভোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা। তরম্নণদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের অনেককেই দেখা গেছে ভিআর বঙ চোখে লাগিয়ে মুগ্ধতার সাথে সেই ভাষণ শুনতে। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব প্রবীণেরা অবাক বিস্ময়ে সিনেমার মতো উপভোগ করেছেন।
সম্মেলনে অনলাইন কেনাকাটায় ‘ভয়েস সার্চ’ সুবিধাসহ নতুন নতুন বেশ কয়েকটি ফিচার যুক্ত করে ই-কমার্স জোন-১-এ অংশ নেয় আজকের ডিল। নতুন এই ফিচারের মাধ্যমে যেকোনো ক্রেতা তার মোবাইল মুখের কাছে নিয়ে পণ্যের নাম (বাংলা বা ইংরেজি ভাষা) বললেই পেয়ে যান তার পছন্দের পণ্য তালিকা। ‘খেলুন-জিতুন’ শপিং গেমের মাধ্যমে প্রতিদিন একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ তিনবার এই অ্যাপের মাধ্যমে ‘স্পিন দ্য হুইল’ গেম খেলে পছন্দের পণ্যের ওপর বিভিন্ন ছাড় (৭০ শতাংশ পর্যন্ত), ক্যাশব্যাক (৫০ শতাংশ পর্যন্ত) ছাড়াও ফ্রি রাইড উপভোগ করেন। মেলায় মোবাইলভিত্তিক রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ইজিয়ার নিয়েও তরম্নণদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
সভা ও সেশন
চার দিনব্যাপী এই আয়োজনে গুগল-নুয়ান্স, অ্যাংরিবার্ডসহ খ্যাতিমান তথ্যপ্রযুক্তিসংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক বক্তা মোট ৪৭টির বেশি সেমিনারে অংশ নেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ারবিষয়ক সম্মেলনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে ছিল ডেভেলপার সম্মেলন। হালনাগাদ প্রযুক্তিপণ্য ও সেবা প্রদর্শনীর পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে ছিল মিনিস্ট্রিয়েল কনফারেন্স, ডেভেলপার কনফারেন্স ও আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প। সম্মেলনের এসব সভা ও সেমিনারে যোগ দিতে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, জার্মানি ও ডেনমার্ক থেকে যোগ দিয়েছেন অর্ধশতাধিক প্রযুক্তিবোদ্ধা। দেশীসহ শতাধিক বক্তা আলোচনা করেছেন ২৯টি সেশনে। এর মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় তিনটি সেশন।
ব্যবসায় বাড়ায়, ব্র্যান্ড গড়তে ফেসবুক
সম্মেলনের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত ‘গ্রো ইয়োর বিজনেস ইউজিং ফেসবুক’ শীর্ষক সেমিনারে এমনটাই জানালেন বক্তারা। এ সময় ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসায় গঠনের নানা কৌশলের ওপর আলোকপাত করা হয়। ফেসবুক ব্যবহার করে কীভাবে ব্যবসায়ের প্রসার করা যায়, তা তুলে ধরেন বক্তারা। একই সাথে বর্তমানে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসায় করছেন, তারা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন সম্মেলনে তাও গুরম্নত্ব পায়। এই আয়োজনে স্পিকার হিসেবে ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ড্রিম৭১ বাংলাদেশের পরিচালক রাশেদ কবির, ই-ক্যাবের পরিচালক নাসিমা আক্তার নিশো ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল এবং আইসিটি বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারম্ননুর রশিদ।
পরিধি বাড়ছে গেমিং পেশার
বিশ্বজুড়ে ডেস্কটপ ও স্মার্টফোনকেন্দ্রিক গেমিং শিল্প বিকশিত হচ্ছে দ্রম্নতগতিতে। অবশ্য তা এখনও সম্মিলিত রূপ নেয়নি। তাই এই জায়গাটা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কাজ করাটা এখন সময়ের দাবি। ‘ক্যারিয়ার ইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রি : প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ বিষয়ক সেমিনারে এমনটাই জানালেন খাত-সংশিস্নষ্টরা। সম্মেলনের প্রথম দিন সেলিব্রেটি হলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভায় মূল আলোচক ছিলেন অ্যাংরি বার্ডসের গেম উন্নয়ন কর্মকর্তা লরি লুকা। বর্তমান বাজারে কোন ধরনের গেমের চাহিদা বেশি এবং কেমন গেম বানালে তা ভালো হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। গেমিং শিল্পে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার এবং মোবাইল অ্যাপ ও গেম মনিটাইজেশনের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয় এতে। আলোচকদের মধ্যে রাইজ অ্যাপ ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এরশাদুল হক, স্পিনওফ স্টুডিওর প্রধান নির্বাহী আসাদুজ্জামান আসাদ, ড্রিম৭১ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রাশেদ কবির বাংলাদেশে গেমশিল্পের অপার সম্ভাবনা ও ডেভেলপারদের করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
ই-বাণিজ্যে ক্লাউড সেবার তাগিদ
সম্মেলনের প্রথম দিন ‘ক্লাউড সার্ভিস ফর ই-কমার্স এন্টারপ্রেনারশিপ’ শীর্ষক সেমিনারে ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার সময় রেজাল্ট পেতে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটগুলোতে ভিজিটর অনেক বেড়ে যায়। তখন একত্রে অনেক ভিজিটর প্রবেশ করায় সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে ফলাফল পান না। এই সমস্যার সমাধান হতো যদি ক্লাউডভিত্তিক সেবা ব্যবহার করা হতো। ঠিক তেমনিভাবেই ই-কমার্স খাতেও ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করা উচিত।
এসএসএল ওয়্যারলেসের প্রধান কারিগরি নির্বাহী শাহাদাত রিদওয়ান বলেন, অনেক সময় সাইটে অনেক হিট বেড়ে যায়। তখন ক্লাউডভিত্তিক সার্ভার থাকলে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যাবে। বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরম্নর বলেন, ই-কমার্স ব্যবসায় করতে গেলে নতুন প্রযুক্তিসেবার পাশাপাশি ব্যবসায়ের উন্নয়নে উদ্ভাবনী ধারণার প্রয়োগ করতে হবে। সেমিনারে ই-কমার্স খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ব্যবসায়ের সফলতার বেশ কিছু কৌশল নবীন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তুলে ধরেন আজকের ডিল ই-মার্কেট পেস্নসের এই কর্ণধার।
এ ছাড়া একই দিন সম্মেলন কেন্দ্রর গ্রিনভিউ হলে ‘চ্যাটবট ও ই-গভর্ন্যান্স লিভারেজিং’ শীর্ষক সমিনারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বর্তমান-ভবিষ্যৎ ও কারিগরি উন্নয়ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হয়। গুরম্নত্ব দেয়া হয় এআই ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের প্রতিও। সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন রিভ সিস্টেমের হেড অব সেলস তৌহিদুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা নূর নবী সিদ্দিক ও প্রধান নির্বাহী রেজাউল হাসানসহ অনেকে।
কৃষকদের প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ‘স্মার্ট ফার্মিং, স্মার্ট ফিউচার’ সেমিনারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্টের ডেপুটি ম্যানেজার জুবায়ের রহমান তার উপস্থাপনায় জানান, সরকার ই-কৃষক নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। এখান থেকে কৃষকেরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তা পাবেন, যা কৃষি সম্পসারণে কাজ করবে। পাশাপাশি এই পস্নাটফর্মের মাধ্যমে একজন কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
সেমিনারে ডিরেক্টরিয়েট অব ই-এগ্রিকালচার ই-এমপাওয়ারমেন্টের প্রতিনিধি হাসিব আহসান জানান, কৃষকেরা এখন থেকে এই প্রকল্পের আওতায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওয়েদার আপডেট জানতে পারবেন।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এখন বেশ কিছু অ্যাপ ডেভেলপ করা হয়েছে। এসব অ্যাপ থেকে কৃষি তথ্য মিলবে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কৃষির উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক আলাদা আলাদাভাবে বিনামূল্যে কৃষকদের তথ্য সরবরাহ করছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. সিকান্দার আলী, বারির ডিজি ড. আবুল কালাম আজাদসহ দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নাফিসের হয়ে দেশে
কাজ শুরম্ন করল সি-গ্রাফ
‘বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করতে চাই। তবে এ জন্য একটি চমকপ্রদ গল্প চাই।’ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত ‘মিট উইথ নাফিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানান দুইবার অস্কারজয়ী সফটওয়্যার প্রকৌশলী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নাফিস বিন জাফর।
অ্যানিমেশন ফিল্মের কাজের ধরন উলেস্নখ করে নাফিস বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্মে বিজ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার হয়। এখানে যেমন গ্রাফিক্স লাগে; তেমনি লাগে গণিত, জ্যামিতি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস।
নাফিস জানান, তার ছবিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন তিনি ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরম্ন করেন। এরপর নানা ধরনের ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস শিখেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার পরিচালিত একটি সংগঠন ‘সি গ্রাফ’। এটি আজ থেকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরম্ন করবে। এই সংগঠনটি তরম্নণদের অ্যানিমেশনের ওপর ধারণা দেবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেবে। এর সাথে যু্ক্ত থাকলে নাফিস বিন জাফরের সহচার্যও মিলবে।
প্রাথমিক শ্রেণীতেও বাধ্যতামূলক হবে তথ্যপ্রযুক্তি
প্রাথমিক শ্রেণীতে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে প্রাথমিকসহ প্রতিটি সত্মরেই বাধ্যতামূলক করা হবে।
৭ ডিসেম্বর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের দ্বিতীয় দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে মোবাইল সুপারকমপিউটিং, চালকহীন গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট, নিউরো প্রযুক্তির ব্রেন, জেনেটিক এডিটিং দেখতে পাবেন। প্রযুক্তির এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে হবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা ডায়োডোনি কালোম্বো কোলি বাডিবাং, কম্বোডিয়ার ডাক ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কান চানমেটা, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী দিনা নাথ ডঙ্গায়েল, মালদ্বীপের সশস্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপমন্ত্রী থরিক আলী লুথুফি, ফিলিপাইনের আইসিটি অধিদফতরের পরিচালক নেস্টর এস বোঙ্গাটা, সৌদি আরবের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ও মন্ত্রীর উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাহাদ আলী আরালস্নাহ প্রমুখ অংশ নেন।
ই-গভর্নমেন্ট চালু হচ্ছে ১০ পৌরসভায়
‘দেশব্যাপী ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ১০টি পৌরসভায় ই-গভর্নমেন্ট চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের তৃতীয় দিন উইন্ডি টাউন হলে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার পস্ন্যান প্রণয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি আরও বলেন, ‘এ লক্ষ্যে ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম নামে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত পৌরসভায় অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাঙ, পানির বিল, কাউন্সিলরের প্রশংসাপত্র, স্বয়ংক্রিয় সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা থাকবে, যা আগামীতে সারাদেশের সব পৌরসভায় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্মেলনে জানানো হয়, ভিশন ২০২১ বাসত্মবায়নে সহযোগিতা দেয়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার পস্ন্যান প্রণয়ন এবং ই-গভর্নমেন্ট বাসত্মবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত অন সিওং ডু।
জাল সনদ রোধে চাই বস্নকচেইন
ডিজিটাল আইডেনটিটির জন্য বস্নকচেইন নিয়ে সম্মেলনের তৃতীয় দিন অনুষ্ঠিত সেমিনারে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এর ফলে সনদ কিংবা পরিচয়পত্র নকল রোধ করা যেমন সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি ব্যক্তির পরিচয় সুরক্ষা ও নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে থাকছে। এই ঝুঁকি থেকে নিরাপদের জন্য প্রয়োজন বস্নকচেইন পদ্ধতিতে পরিচয় ও সনদ সুরক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সভায় তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বস্নকচেইনের বিপণন ব্যবস্থাপনা তুলে ধরেন অমিত পাল সিং। লিডস কর্মকর্তা শামসুল হক ও বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকার আলোচনায় অংশ নেন।
সচেতনতায় রম্নখতে হবে অনলাইন গুজব
সম্মেলনে ‘কম্ব্যাটিং সাইবার ক্রাইম ও প্রোপাগা-া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ বিষয়ে সচেতনতা ও কারিগরি দক্ষতা অর্জন ছাড়াও নীতি ও আইন হালনাগাদের প্রসত্মাব করা হয়। সিটিও ফোরাম প্রেসিডেন্ট তপন কামিত্ম সরকারের সঞ্চালনায় সভায় মূল বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রথমে সাইবার সিকিউরিটি কী সে বিষয়ে জানতে হবে। কারণ, অনেক সময় আমরা অনিরাপদ নেটওয়ার্কে নিরাপদ সফটওয়্যার আপলোড করে থাকি। এর ফলে দুটোর কোনোটিই নিরাপদ থাকে না। সাইবার প্রোপাগা-া রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ উলেস্নখ করে মূল বক্তব্যের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সাইবার ক্রাইম সিইও লুৎফর রহমান, সিটিও ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. ইজাজুল ইসলাম, এটুআইয়ের আরিফ এলাহি, ব্র্যাক ব্যাংক সিটিও শ্যামল বরম্নণ দাস ও প্রণব সাহা।
বাংলাদেশের কাঁচামাল মানবসম্পদ
‘বাংলাদেশের কাঁচামাল মানবসম্পদ। এর বেশিরভাগই তরম্নণ। এই সম্পদ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।’ সম্মেলনের তৃতীয় দিন বেসিসের সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় ‘৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট’ সভায় এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোসত্মাফা জববার ছাড়াও এ সভায় ছিলেন মালদ্বীপের ডেপুটি মিনিস্টার তৌহিদ আলি লুৎফি।
মেধাস্বত্ব সুরক্ষা
সম্মেলনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য মেধাস্বত্ব অধিকার’ শীর্ষক সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশ আইপিআর ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবিএম হামিদুল মেসবাহ আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত আইনি কাঠামোতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্টটি ২০০০ ও ২০০৯ সালের। আর নন-ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্টটি ২০১১ ও ২০১৩ সালের। এগুলো শুধু পুরোনোই নয়; অনেক ক্ষেত্রেই অব্যবহারযোগ্য। মেধাস্বত্বের গুরম্নত্ব না বোঝার কারণে আমরা এখনও আইপিআর বলতে শুধু স্বত্ব নিবন্ধনই বুঝি। অথচ এই নিবন্ধন এই প্রক্রিয়ার মাত্র ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশই হচ্ছে আইপিআর ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগ। এ সময় তিনি দেশে ই-কাস্টোম, জুডিশিয়ারি আইন এবং সংশিস্নষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার আহবান জানান।
৪ বছরে খোলা হয়েছে ৭০ লাখ মোবাইল হিসাব
‘দ্য প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেজ অব ডিজিটাল কারেন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে শিউর ক্যাশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাত খান বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি সেবার পরিধি দ্রম্নত বিসত্মারের ফলে দেশে অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিকাশ, ইউক্যাশ, শিউরক্যাশ, রকেট, মাইক্যাশ এসব মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে প্রতিদিন দেশে এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন করা হচ্ছে।’
সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি তপন কামিত্ম সরকারের সঞ্চালনায় সেমিনারে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারত গত সাত বছরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা লেনদেন সেবা চালু করে যা করেছে, বাংলাদেশে অল্পদিনের মধ্যেই তার চেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে। উন্নত বিশ্বের মধ্যে আমেরিকার চেয়ে চীন ও হংকং মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এগিয়ে আছে।’ সভায় ইসলামী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাহের আহমেদ চৌধুরী বিটকয়েন এবং দেশে এর ট্রানজেকশন নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিবিসির নিউজ এডিটর প্রণব শাহা, ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান টেকনোলজি অফিসার শ্যামল বি দাশ, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক এসএম মাইনউদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাসেম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) ব্যবস্থাপক মো: আরিফ এলাহী, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী দেব দুলাল রায়, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং পূবালী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলী।
ঘরে বসেই ৮ মাসে ১৬০০ ডলার আয়
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ই-কমার্স সাইটে পণ্যের প্রচার করে ঘরে বসেই নিশ সাইটের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১৬০০ ডলার আয় করছেন জাহিদ হাসান। তার মতোই অ্যামাজান অ্যাফিলিয়েট বাংলাদেশের সদস্য কেএম রফিকুল ইসলাম আয় করছেন বছরে কোটি টাকা। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দারম্নণ করছেন ডেভসটিমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিন শামীম। অর্থনৈতিক সফলতা পেয়েছেন বিজস্কোপ প্রতিষ্ঠাতা নাহিদ হাসান জীবন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ মার্কেট এভারের প্রতিষ্ঠাতা আল-আমিন কবিরের সঞ্চালনায় ‘ডিজিটাল মার্কেটিং ফর ফিউচার’ শীর্ষক এক সেমিনারে নিজেদের এমন সফলতার কথাগুলোই তুলে ধরেন তারা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল ইসলাম।
আর্থিক সঙ্কটে বিকশিত হচ্ছে না ভিআর খাত
সম্মেলনের শেষ দিন ‘এআর-ভিআর প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ সেমিনারে উঠে আসে গেমিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপসের এআর-ভিআর প্রযুক্তির উৎকর্ষের নানা দিক। রাইজ আপ ল্যাবসের সিইও অ্যান্ড ফাউন্ডার এরশাদুল হকের সঞ্চালনায় আইসিটি ডিভিশনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপিস্নকেশন প্রকল্প পরিচালক কে এম আবদুল ওয়াদুদ, ব্যাটারি ল ইন্টারঅ্যাকটিভের ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান মিনহাজ উজ সালেকীন ফাহমি, ইন্টারঅ্যাকটিভ আর্টিফ্যাক্টের সিইও নুসরাত জাহান, ড্রিমার্জ ল্যাবের সিইও তানভির হোসেন খান এই সেমিনারে অংশ নেন।
চালকের আসনে বসে বিদায়
৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দেশের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব পরিবহন রিকশার হুডের তৈরি সোফায় বসে চালকের আসন থেকে বিদায় জানানো হয় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আগামী বাজেটে ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন বলে অনুষ্ঠানে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বেসিস সভাপতি মোসত্মাফা জববার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আইসিটি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী জানান, এবারের আয়োজনে পাঁচ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী আমাদের আয়োজন স্বশরীরে উপভোগ করেছেন। অনলাইনে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত থেকেছেন। সমাপনী বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরে অসংখ্য গাড়ি। এ জন্য জ্যাম হয়। এটাকে বলে ডেভেলপমেন্ট পেইন। তবে বিদেশীরা যখন আসেন তখন এর মধ্যেই সম্ভাবনা খুঁজেন। বিদ্যমান অবস্থা থেকে উন্নয়নের নতুন ধারায় প্রবেশের ফল এটা। এসব পরিবর্তনই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ইঙ্গিত দেয়, যা আমাদের দেশকে বদলে দেবে। বাড়বে দেশের অর্থনীতির পরিধি।’
প্রশংসিত ওয়ালটন
উদ্বোধনের পরপরই একে একে নিজেদের প্রদর্শনী তুলে ধরে দেশী-বিদেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। বরাবরের মতো মেলায় সফটওয়্যার, ই-সরকার, ই-বাণিজ্য, গেমিং, নবীন উদ্যোক্তা, মুঠোফোনের উদ্ভাবনী অ্যাপ ছাড়াও এবারের প্রদর্শনীতে ভিন্নতা যুক্ত করেছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ জোন’। এই জোনে বাংলাদেশে তৈরি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কিবোর্ড, মাউস, টিভি, ফ্রিজের মতো প্রযুক্তি পণ্যগুলো সংযোজনের প্রকৌশলী দিক তুলে ধরে ওয়ালটন। ১৬ বাই ২৪ ফুটের জায়গায় বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিপ্লবের সূচনাকে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ওয়ালটন কমপিউটার প্রজেক্ট ইনচার্জ মো: লিয়াকত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ওয়ালটনের কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনা প্রথমে ওয়ালটনের কার্যক্রম নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র উপভোগ করেন। এরপর গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত ওয়ালটন হাই-টেক এবং ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উৎপাদন কার্যক্রম ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি ওয়ালটনের মাদারবোর্ড, কমপিউটার, মোবাইল ফোন, কম্প্রেসর ইত্যাদির উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে মুগ্ধ হন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ওয়ালটনের তৈরি একটি পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। ওয়ালটনের একটি ল্যাপটপও তিনি হাতে নিয়ে দেখেন। এ সময় বাংলাদেশে তৈরি প্রথম স্মার্টফোন দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও অগ্রগতিতে সমেত্মাষ প্রকাশ করেন। মেলায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওয়ালটনের পণ্য দেখে মুগ্ধ হন।
স্টলে উপস্থিত ওয়ালটনের কর্মকর্তারা জানান, সে সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন তিনি নিজে ওয়ালটনের পণ্য ব্যবহার করেন এবং দেশীয় পণ্য ব্যবহারে অন্যদের উৎসাহিত করেন। পরিদর্শনকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি ও বিজয় সফটওয়্যারের উদ্ভাবক মোসত্মাফা জববার।
ওয়ালটনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম শামসুল আলম, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম রেজাউল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মঞ্জুরম্নল আলম।