• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দেশী হ্যান্ডসেটের কদর বাড়ছে কমছে আমদানি প্রবৃদ্ধি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
বাজার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দেশী হ্যান্ডসেটের কদর বাড়ছে কমছে আমদানি প্রবৃদ্ধি
গত বছর থেকে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু হয়। ইতোমধ্যেই এই উৎপাদনের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। সুলভ মূল্যে হ্যান্ডসেট প্রাপ্তির পাশাপাশি কমতে শুরু করেছেহ্যান্ডসেটের আমদানিনির্ভরতা। চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক চালুর পর এবার ফিচার ফোনের সাথে কদর বাড়ছে স্মার্টফোনের। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ধাক্কা সামলে বাড়ছে সিম গ্রাহকের সংখ্যা। একজন গ্রাহকের নামে ১৫টির বেশি সিম ব্যবহারের নিয়ম প্রতিপালনে সামনের সময়ে সক্রিয় সিমের সংখ্যায় মৃদু চাপ এলেও নাগরিক সেবার ডিজিটাল রূপান্তরের নানামাত্রিক আয়োজনে মুঠোফোনের গ্রাহক ও ব্যবহার কিন্তু বাড়ছেই। তারপরও হ্যান্ডসেটের ধারাবাহিক আমদানি কিন্তু সেই হারে বাড়ছে না। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক। আমদানিনির্ভরতা কমা মানে দেশে উৎপাদনের সফলতা। দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রতি নাগরিক আস্থা বেড়ে চলা। আমদানিতে শুল্ক ও কর চাপ বাড়িয়ে উৎপাদনমুখী যে বাজেট প্রণীত হয়েছে, এটা তারই সুবাতাস বলা যেতে পারে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি নাগাদ দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৭০ লাখে। এই সিম ব্যবহারে ফিচার ও স্মার্টফোন মিলিয়ে ২০১৭ সালে বৈধ পথে আমদানি হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার হ্যান্ডসেট।এর মধ্যে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার পিস ছিল বার ফোন বা বেসিক ফোন। এক বছর আগে ২০১৬ সালে এই বার ফোন আমদানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার পিস। আর একই সময়ে সব মিলিয়ে আমদানি হয়েছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ২২ হাজার হ্যান্ডসেট।

অপরদিকে ২০১৬ সালে বৈধ পথে দেশে স্মার্টফোন আমদানি হয়েছিল ৮০ লাখ ৪৪ হাজার। এই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সক্রিয় সিম সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ। ২০১৭ সালে হ্যান্ডসেট আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ লাখ ৯৯ হাজার। তখন পর্যন্ত সচল সিমের সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৫১ লাখ।এক বছরের ব্যবধানে ব্যবহৃত সিমের সংখ্যা ২ কোটির মতো বাড়লেও দেশে আমদানি করা স্মার্টফোনের ব্যবহার মাত্র ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। অথচ ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে স্মার্টফোন আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৭ শতাংশের বেশি। ওই বছর ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার স্মার্টফোন আমদানি হয়েছিল। তখন সক্রিয় সিমের সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৩৭ লাখ।ব্যবহৃত সিমের পরিবর্তে হ্যান্ডসেট আমদানি বা ব্যবহার প্রবৃদ্ধির এই হার তুলনামূলক বাড়েনি। এর মধ্যে গত বছর থেকে দেশেই হ্যান্ডসেট তৈরি শুরু হওয়ায় ব্যবহার বাড়লেও আমদানি বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।স্মার্টফোন মার্কেটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে এই মুহূর্তে দেশী অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার দিকে ঝুঁকেছেন অনেক আইফোন ব্যবহারকারী। সুলভ মূল্য ও নকশায় তারা নিজেদের দ্বিতীয় ফোন হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের দেশী হ্যান্ডসেটকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। অনেকেই এখন হ্যান্ডসেট কেনায় প্রতিস্থাপন সুবিধাকে অনেক বড় পাওয়া হিসেবে মনে করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, একটু সুবিধা পেলেই তরুণ ক্রেতারা আর ডাকসাইটে বিদেশী ব্র্যান্ডের ওপর থেকে অন্ধ-ভক্তিতে বুঁদ হয়ে থাকছেন না। তারা দেশের পতাকা বহনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে গত বছর দেশে স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করা প্রথম প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিমের সাথেআলাপ করলে তিনিও একই ধরনের ধারণা দেন। তিনি জানান, দেশে তৈরি স্মার্টফোন ব্যবহারে ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। সুলভ মূল্যে হাতের নাগালেই হালনাগাদ প্রযুক্তির স্মার্টফোন পাওয়ায় তারা আর বিক্রয়োত্তর সেবা নেই এমন ফোন কিনতে চাইছেন না। প্রযুক্তিঝুঁকির কারণে চোরাই পথে আসা হ্যান্ডসেটের বাজারও আস্তে আস্তে সঙ্কুচিত হতে শুরু করেছে।
মুখোমুখি: উদয় হাকিম

প্রশ্ন: দেশে উৎপাদন শুরুর পর থেকে হ্যান্ডসেটের আমদানিনির্ভরতা কমতে শুরু করেছে। সিম ব্যবহারকারী বাড়ার পরও হ্যান্ডসেটের ধারাবাহিক আমদানি সেই হারে বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: ব্যাপারটা ইতিবাচক। কারণ, এতে প্রমাণ হয় দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বাড়ছে। যার ফলে আমদানিনির্ভরতা কমে আসছে। এতে সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। আবার ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে দেশে তৈরি স্মার্টফোন কিনতে পারছেন। আমরা সেইদিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন এ খাতে আমদানিনির্ভরতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।

প্রশ্ন : ওয়ালটনের স্মার্টফোন আমদানিকি কমেছে? কমলে কতটা?
উত্তর : এ খাতে আমদানিনির্ভরতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্যই দেশে উৎপাদনে গেছে ওয়ালটন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনের আমদানি কমেছে। এ বছরের মধ্যেই যাতে হ্যান্ডসেটের আমদানি পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে ওয়ালটন।

প্রশ্ন: স্মার্টফোন উৎপাদন শুরুর পর থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
উত্তর: দেশে তৈরি স্মার্টফোনের প্রতি ক্রেতাদের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। দেশে উৎপাদিত স্মার্টফোনে ক্রেতাদের বিশেষ রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা দেয়া হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে স্মার্টফোনের যেকোনো ফোনটি পাল্টে আরেকটি নতুন হ্যান্ডসেট দেয়ার ঘোষণা দেয় ওয়ালটন। এছাড়া ১০১ দিনের মধ্যে প্রায়োরিটি বেসিসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ত্রুটিতেক্রেতাকে সার্ভিস দেয়া হচ্ছে। কোনো কারণে সেটা সম্ভব না হলে ফোনটি পাল্টে তাকে আরেকটি নতুন ফোন দেয়া হচ্ছে। আমরা খুব খুশি যে, নামমাত্র সংখ্যক হ্যান্ডসেট রিপ্লেসমেন্টের জন্য এসেছে। এর অর্থ দেশে তৈরি স্মার্টফোনে কাক্সিক্ষত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশে তৈরি স্মার্টফোনে ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে।

প্রশ্ন: বাজার শেয়ার কেমন বাড়ছে?
উত্তর: দেশে উৎপাদনে যাওয়ার পর ওয়ালটনের বাজার শেয়ার আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছরের শেষ দুই মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম দুই মাসে আমাদের হ্যান্ডসেটের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
প্রশ্ন : ফোরজি চাহিদা মেটাতে কতগুলো হ্যান্ডসেট নিয়ে কাজ করছেন? প্রান্তিক মানুষের চাহিদা মেটাতে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
উত্তর: ওয়ালটন সব সময়ই সাশ্রয়ী মূল্যের হ্যান্ডসেট তৈরির ওপর গুরুত্ব দেয়, যাতে প্রান্তিক মানুষও তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পেতে পারে। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ওয়ালটনের ১১ মডেলের ফোরজি সমর্থিত স্মার্টফোন। এতদিন ফোরজি সমর্থিত হ্যান্ডসেটগুলো ফিনিসড প্রোডাক্টস হিসেবে আমদানি হতো। তবে সুখবর হলো, দেশেই ফোরজি স্মার্টফোন উৎপাদনে গেছে ওয়ালটন। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে সাশ্রয়ী মূল্যের ফোরজি হ্যান্ডসেট তৈরি হচ্ছে। আমরা আশা করছি, মে মাসের দিকে দেশে তৈরি ফোরজি স্মার্টফোন বাজারে ছাড়তে পারব। পর্যায়ক্রমে দেশে তৈরি ওয়ালটনের সব স্মার্টফোনই হবে ফোরজি সমর্থিত। দেশে তৈরি ফোরজি স্মার্টফোনের দামটা যাতে সবার নাগালের মধ্যেই থাকে, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখছে ওয়ালটন।

বন্ধ হতে পারে অর্ধকোটি সিম
বন্ধ হয়ে যেতে পারে অর্ধকোটি নিবন্ধিত সিম। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি নিবন্ধিত হওয়ায় ওই সিমগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সূত্র মতে, কয়েক লাখ জাতীয় পরিচয়পত্রের অধীনে ১৫টির বেশি সিম নিবন্ধন হওয়া এই সিমগুলো সহসাই বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে কবে থেকে সিম বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল গ্রাহকের নামে থাকা অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার শেষ দিন। কিন্তু ওইদিন পর্যন্ত অতিরিক্ত সিম প্রত্যাহারে তেমন সাড়া পায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বরং সংস্থাটি প্রায় ৫০ লাখ সিমের সন্ধান পেয়েছে, যেটি অতিরিক্তের খাতায় চলে যাবে।এর আগে প্রিপেইড, পোস্টপেইড মিলে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করার সিদ্ধান্ত অপারেটরদেরকে জানানোর পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহকদেরও বিষয়টি অবহিত করেছিল বিটিআরসি। বিজ্ঞপ্তিতে তখন বলা হয়, ‘১৫টির বেশি নিবন্ধন করা সিম অবৈধ বলে ধরা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় না করা হলে অপারেটরের মাধ্যমে বিটিআরসি নিজেই তা বন্ধ করে দেবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের যেকোনো সিম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কয়টি সিমের নিবন্ধন হয়েছে সেটি জানতে *১৬০০১# ডায়াল করলে ফিরতি এসএমএসের এনআইডির নম্বরের শেষ চার ডিজিট লিখে দিলেই জানতে পেয়ে যাবেন যে তার নামে কয়টি সিমের নিবন্ধন আছে।
ক্রমেই বাড়ছে মোবাইল গ্রাহক

গত মাসেই ফোরজি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এই যুগে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তেও ক্রমিক হারে বেড়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক। এক মাসের ব্যবধানে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে চার লাখ এবং মোবাইল গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ২৭ ফেব্রæয়ারি প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চারটি মোবাইল ফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার, রবির ৪ কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার (কিছুটা কমেছে) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার। জানুয়ারি মাসে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ৮ লাখ ২৯ হাজারে এসেছে। এরমধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার, ওয়াইম্যাক্স ৮৮ হাজার এবং আইএসপি ও পিএসটিএন ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার হয়েছে। এসব পরিসংখ্যান বলছে, এখন ভয়েসের থেকে ডাটার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই হ্যান্ডসেটের বাজারও প্রসার হচ্ছে। আর এই প্রসারে দেশে তৈরি ফোনের কদরও বাড়ছে গুণে-মানে।

বাড়ছে নতুন ফোনের কদর
নতুন স্মার্টফোনের তুলনায় রিফারবিশড বা ঘষেমেজে চকচকে করে বাজারে আনা স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়েছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের গবেষণা বলছে, ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী ১৩ শতাংশ রিফারবিশড স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়েছে। গত ৭ মার্চ প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরে ১৪ কোটি রিফারবিশড ফোন বাজারে এসেছে। সে তুলনায় গত বছর নতুন স্মার্টফোন বিক্রির হার বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। প্রতিবেদন মতে, বাজারে আসা পুরোনো স্মার্টফোনের ২৫ শতাংশই আবার ফেরত যায়। এর মধ্যে কিছু স্মার্টফোন রিফারবিশড করা হয়। রিফারবিশড ফোনের বাজারে অ্যাপল ও স্যামসাং সবচেয়ে এগিয়ে আছে। এই দুটি স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে রিফারবিশড বাজারে ৭৫ শতাংশ দখল করে আছে। তা ছাড়া এ বাজারের মোট আয়ের ৮০ শতাংশ যায় স্যামসাংয়ের পকেটে।

অপরদিকে নতুন ধারা প্রসঙ্গে গবেষণা পরিচালক টম ক্যাং বলেছেন, পুরোনো ফোনের ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলে বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ১০ শতাংশই রিফারবিশড ফোন। এ কারণে নতুন স্মার্টফোনের বাজারের প্রবৃদ্ধি কম। দুই বছর আগের মাঝারি মানের স্মার্টফোনগুলোর সাথে নতুন স্মার্টফোনের নকশা ও ফিচারে উদ্ভাবনী পার্থক্য কম। এ ছাড়া কম দামের নতুন স্মার্টফোনের বাজার দখল করছে রিফারবিশড হাই-এন্ডের স্মার্টফোনগুলো। এ ক্ষেত্রে আইফোন ও স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি স্মার্টফোনগুলোর চাহিদা বেশি। গবেষণা কাজে জড়িত অপর পরিচালক পিটার রিচার্ডসন বলেছেন, অনেকের কাছে আশ্চর্য লাগবে ভারতের মতো দেশে নতুন স্মার্টফোনের বদলে পুরোনো রিফারবিশড ফোনের বাজার দ্রæত বাড়ছে। ২০১৮ সালে এ কারণে এসব ব্র্যান্ডের নতুন ফোনের বিক্রি আরও কমবে।

এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ওপর স্বতন্ত্র কোনো জরিপ নয় বরং এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের করা অপর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে দেশের স্মার্টফোন বাজার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া স্মার্টফোন কেনায় স্মার্ট বাংলাদেশের ক্রেতারা এখন রিফারবিশড অ্যাপল, স্যামস্যাং ফোনের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির করা নজরদারির কারণে এসব ফোনের আমদানিও কমতে শুরু করেছে। চোরাই পথে ফোন আমদানি কমতে শুরু করা এবং সুলভে আন্তর্জাতিক মানের ফোন দেশেই তৈরি হওয়ায় ঝামেলা এড়াতে খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশী ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট বিক্রিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। গ্রাহক পর্যায়ে কদর বাড়ছে আবাসিক ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের। এই বাজারে সিম্ফোনি ব্র্যান্ডের অংশ রয়েছে ৪১ শতাংশ। উইনম্যাক্স ও স্যামসাংয়ের সমহার ৭ শতাংশ। এরপরই ৬ শতাংশ বাজার অংশ নিয়ে আছে ওয়ালটন। ২০১৬ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনা ব্র্যান্ড কিংস্টারের বাংলাদেশ বাজারে অবস্থান ছিল ৪ শতাংশ। আর অন্যান্য ব্র্যান্ড মিলে ছিল বাকি ৩৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে চীনা বাজার প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমে যায়। চতুর্থ প্রান্তিকেও বিদেশী নতুন ফোনের বাজার প্রবৃদ্ধি হয়নি। উপরন্তু আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে দেশে মোবাইল সংযোজনে এসে ওয়ালটনের বাজার অংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০১৭ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, সিম্ফনির বাজার ছিল ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে ফিচার ফোনে ২৬ শতাংশ এবং বাকিটা এসেছে স্মার্টফোন থেকে। অপরদিকে ওয়ালটনের বাজার অংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশে। এর মধ্যে ওয়ালটন ফিচার ফোন দখল করে ১০ শতাংশ বাজার। এ ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের মতো পুরোনো ব্র্যান্ডের ফিচার ফোনের বাজার অংশ ছিল ৬ শতাংশ। অবশ্য স্মার্টফোনের বাজারের ১৪ শতাংশ ছিল তাদের দখলে। কিন্তু বাংলাদেশী মোড়ক ও নতুন টাইজেন ওএস নিয়ে এসেও ততটা সুবিধা করতে না পেরে সামনে তারাও বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। একইসাথে জনমতি সুবিধা নিতে এবার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও বাংলাদেশে উৎপাদনে আসতে শুরু করায় নতুন অধ্যায় সূচনা হতে যাচ্ছে স্মার্টফোন বাজারে। অপরদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মোবাইল কারখানার অবকাঠামো তৈরি শুরু করেছে সিম্ফোনি। এজন্য অপর একটি দেশী কোম্পানি সামিট টেকনোপলিশের সাথে চুক্তিও করেছে। দুই একর জমির ওপর তৈরি এই কারখানা থেকে বছরে এক কোটি হ্যান্ডসেট উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সিম্ফোনি ব্র্যান্ড তথা এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ। বাজার সূচকের উত্থান-পতন এবং মোবাইল ফোন উৎপাদকদের বিনিয়োগ সার্বিক বিচারে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই ডাকসাইটে ব্র্যান্ডের চেয়ে ঘরোয়া ব্র্যান্ডগুলোই বাজারে গ্রাহকের কাছে আদরনীয় হয়ে উঠছে। প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত জ্যামিতিক ধারণা বলেছে, নামি ব্র্যান্ডের জায়গায় নতুন ব্র্যান্ড বিকাশের জন্য একটি উর্বর সময় হতে পারে ২০১৮ সাল।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস