লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
মোবাইল কমপিউটিং
শক্ত কাঠামোয় মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস
শক্ত কাঠামোয় মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস
ইমদাদুল হক
কেবল ওয়ালেট নয়; মুঠোফোন আজ হয়ে উঠেছে একেকটি ব্যাংক। অফিস ছাড়াই মোবাইল নেটওয়ার্ক হয়ে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হচ্ছে শতকোটি টাকা। যাত্রা শুরুর প্রথম পাঁচ বছরে এমএফএস খাত যেভাবে বিকশিত হয়েছে, তেমন সাফল্য মুঠোফোন অপারেটরেরাও প্রথম পাঁচ বছরে দেখাতে পারেনি। এমএফএস সেবার সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে এম-কমার্স ও ই-কমার্স দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ই-কমার্সে লেনদেন যে হারে বাড়ছে, ডিজিটাল মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা সেই হারে বাড়ছে না। এজন্য অনলাইনভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ডিজিটাল আর্থিক প্রতারণা ঠেকাতে সচেতনতা বাড়াতে যখন জোর দেয়া হচ্ছে, তখন এই খাতে মোবাইল অপারেটরদের দীর্ঘদিনের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে এই খাতটির চালকের অবস্থানে রাখা হয়েছে তালিকাভুক্ত ব্যাংককে। আর টেলিকম অপারেটরদের রাখা হয়েছে প্রযুক্তি সেবার বাহন হিসেবে।
নীতিমালাটি বাস্তবায়নে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও এএফএস সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট ও সিস্টেম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশীদ। গত ৩১ জুলাই প্রেরিত ওই চিঠিতে যথা শিগগিরই প্রতিপালনের তাগাদা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের সেকশন ৭-এর এ (ই) এবং সেকশন ৮২, একই সাথে ২০১৩ সালের সংশোধিত ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনে ২৬ (চ) ধারাটির অধীনে প্রণীত ‘গাইডলাইন অব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ফর দ্য ব্যাংক’ নীতিমালাটিকে হালনাগাদ করে ‘বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেশন ২০১৮’ হিসেবে রূপান্তরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন এই আইনে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল খাতকে প্রণোদিত করার পাশাপাশি এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ও ব্যয়বান্ধব ব্যবস্থাপনার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও ব্যাংক সেবার আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের এই খাতের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের এএমএল/সিএফটি (এন্টি মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্স অব টেররিজম) নিয়ম আইন ও নীতিমালা প্রতিপালনের বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, এটি একটি সুস্পষ্ট রেগুলেশন। এর মাধ্যমে প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্স সেবার বিস্তৃতি ঘটবে। একই সাথে আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে।
মোবাইল অপারেটরদের স্বপ্নভঙ্গ
আর্থিক ও প্রযুক্তি খাতকে স্বাতন্ত্র্য অবস্থানে রেখে সংশোধিত মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালায় মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগ সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা নীতিমালার তৃতীয় খসড়ায় এ বিধান করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে দুই মাস আগেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত অংশীদারিত্বের যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা থেকে একেবারে উল্টো অবস্থান নিয়ে নীতিমালাটি চ‚ড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী সভায় এই নীতিমালাটির চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিমালায় ব্যাংকের ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালার প্রস্তাবের মতোই সর্বনিম্নে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ১৮টি ব্যাংক এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা দিচ্ছে। এদের নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে সোয়া ৬ কোটির মতো। এর মধ্যে আড়াই কোটির মতো সক্রিয় গ্রাহক মাসে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংঘটিত এই আর্থিক লেনদেনে আয় ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘ বিরোধ রয়েছে মোবাইল অপারেটর ও এমএফএস সেবাদাতাদের মধ্যে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সুবিধা সেবায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করায় বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকা লেনদেনে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১ টাকা ৮৫ পয়সার মধ্যে ৭ শতাংশ হারে প্রায় ১৩ পয়সা দিতে হয় অপারেটরদের। বাকি আয়ের ৭৭ শতাংশ এজেন্টকে দিয়ে উদ্বৃত্তের ১৬ শতাংশ নিজেদের জন্য রাখে এমএফএস সেবাদাতারা। যদিও বেশিরভাগ এজেন্ট গ্রাহকের কাছে প্রতি ১০০ টাকায় ২ টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটা হয় শুধু যারা অন্যের হিসাব থেকে লেনদেন করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে। প্রান্তিক গ্রাহক পর্যায়ে তাই এই লেনদেনের বিরূপ কোনো প্রভাব পড়ে না।
সূূত্র মতে, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এই সেবায় আয় ভাগাভাগির কাঠামো পরিবর্তনের দাবি করে আসছিল তিন বছর ধরে। এ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে এই সেবার সাথে যুক্ত সব পক্ষ একটি বৈঠক করে। বৈঠকে অপারেটরদের কাছ থেকে সংযোগ নেয়ার জন্যে এমএফএস কোম্পানি যেমন বিকাশ বা রকেটের মতো কোম্পানিগুলোকে মোবাইল ফোন অপারেটরদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। বৈঠকে অর্থ আদায়ের এ প্রক্রিয়াটি দুইভাবে প্রতিপালনের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে একটি আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হলে এজন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে মোবাইল ফোন অপারেটরেরা ৮৫ পয়সা পাবে। আর্থিক লেনদেন বাদে অন্য কাজের জন্য প্রতিবার এমএফএস সেবা ব্যবহারে ৪০ পয়সা দিতে হবে। ওইদিনের বৈঠকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনসহ অন্যান্য সেবায় টেলকো বা মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
বস্তুত এর আগে কখনোই মোবাইল অপারেটরদের এমএফএস সেবায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে দেশে কয়েকটি ব্যাংক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস সেবা দিলেও ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ এবং ডাচ্-বাংলার রকেটই সবচেয়ে ভালো করছে। সব মিলে এ সেবা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েছে ১৮ ব্যাংক। ২০১৫ সালে রবির মূল কোম্পানি আজিয়াটা গ্রæপ ট্রাস্ট ব্যাংকের সাথে একটি সহযোগী কোম্পানি গঠন করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত সেটির অনুমোদন দেয়নি।
তখন খসড়া নীতিমালায় ব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মোবাইল অপারেটরদের এককভাবে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মালিকানায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। যৌথভাবে এই বিনিয়োগে তাদের মালিকানা অংশীদার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদন ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে সেটিও স্থগিত করে মাঝে একবার খসড়া বদলে মোবাইল অপারেটরদের অংশগ্রহণ একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আরেক সংশোধনীতে আবার তাদের অংশ বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশে পর্যন্ত উন্নীত করার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা। গত ৩০ মে এ সংক্রান্ত নীতিমালার তৃতীয় খসড়া তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রস্তাবিত ওই খসড়া নীতিমালায় মোবাইল ফোন অপারেটদের নাম উল্লেখ না করা হলেও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলকো অপারেটরেরা ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত অংশীদার হতে পারবে বলে আশা করেছিল। এদিকে মে মাসের অগ্রগতির পর কয়েকটি মোবাইল ফোন অপারেটর বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে নানা ধরনের আলোচনা শুরু করে। এর মধ্যে গ্রামীণফোন কয়েকটি ব্যাংক বিশেষ করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটে বিনিয়োগ করতে আলোচনা অনেকদূর এগিয়ে নেয়।
তবে নতুন অর্থ বছরের শুরুতেই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা নীতিমালার খসড়া চ‚ড়ান্ত করণ বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের অবস্থানে ফিরে গিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটগুলো মালিকানা অংশীদারিত্বের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংক ও মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে স্বার্থগত দ্ব›েদ্বর কথা বিবেচনায় এনে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির ও কর্মকর্তা জানান, অপারেটরদের এই সুবিধা দেয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসির মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দেবে। একই সাথে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেবে। এমনকি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শাখাহীন এই ব্যাংকিং খাতটিই মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে অপহূত হওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই শঙ্কা থেকেই সংশোধিত ও হালনাগাদ নীতিমালায় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি, বিনিয়োগ ফার্ম এবং ফিনটেক কোম্পানির ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্সে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে সেসব প্রতিষ্ঠানই এমএফএস প্রোভাইডার হতে পারবে। আর এই খাতটির নেতৃত্বে থাকবে তালিকাভুক্ত ব্যাংক। অন্যদিকে যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যেই এমএফএস সেবা দিচ্ছে তারা বিদ্যমান লাইসেন্সে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবে অথবা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সেবা দিতে পারবে। অবশ্য নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এমএফএস ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবে এবং কোম্পানিটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার্স হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে প্যারেন্ট ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কমপক্ষে ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকতে হবে। বাকি শেয়ারের মালিকানা পাবে ব্যাংক নয়, এমন ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিউিশন, এনজিও এবং অথরাইজড এনটিটি। সহযোগী প্রতিষ্ঠান মডেলের ভিত্তিতে এএফএস প্রোভাইডার হিসেবে এই কোম্পানিটির কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের নস্ট্রো হিসাবে বৈদেশিক আয় গ্রহণ করতে পারবে এমএফএস প্রোভাইডারেরা। গৃহীত অর্থ বাংলাদেশি টাকায় এএফএস হিসাবে জমা হবে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্য তথা ক্রস বাউন্ডারি লেনদেন কোনোভাবেই করতে পারবে না। অবশ্য এজেন্ট ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে কিংবা মাইক্রো-ক্রেডিট রেগুলেশন অথরিটির লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে। তবেই এমএফএস প্রতিষ্ঠানটি মূল প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে ঋণ বিতরণ এবং ঋণের অর্থ ফেরত এবং পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবে।
নীতিমালায় সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও আওতা
এমএফএস নীতিমালা ও আইনে এজেন্ট/রিটেইল এজেন্ট/অথরাইজড এজেন্ট সংজ্ঞা অনুসারে এমএফএস ব্যবসায় কোম্পানিটি এমন একটি সত্তা হবে যে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের পক্ষে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন ব্যবসায় সুবিধা পরিচালনা করতে পারবে। শুধু দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক এই এমএফএস সেবা দেয়ার অনুমতি পাবে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস প্রোভাইডারদের ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট রেগুলেশন মেনে চলতে হবে।
ব্যবসায় মডেল অনুযায়ী ব্যবসায়টি শুধু ব্যাংক একটি পণ্য হিসেবে একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবে। পরিচালনা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে সেখানে ব্যাংকে ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পিএসপি নীতিমালা অনুসারে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এমএফএস প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। ব্যাংকিং এবং অব্যাংকিং অংশীদারদের মাধ্যমে এই লাইসেন্স পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিক্রমে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের অধীনে এমএফএস প্রোভাইডারেরা পিএসপি হিসেবে এই ই-পেমেন্ট সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই সাথে ক্রস বর্ডার পেমেন্ট ট্রানজেকশনের অধীনে এই সেবার আওতায় থাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের বাইরে অর্থ লেনদেন করতে পারবে। এই ব্যবসায় পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের বিপরীতে মোবাইল ফোনের নম্বর ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বর হিসেবে গণ্য হবে। এবং এই হিসাব একটি ই-খতিয়ানের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। এই সেবার অধীনে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ফোন ব্যবহারকারীর নির্দেশনা অথবা বিকল্প ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্টের অবস্থান অনুযায়ী অনুমোদন দেবে। এই পদ্ধতিতেই ক্যাশ আউট ও ক্যাশইন করা যাবে। এজেন্ট লোকেশন, শাখা ব্যাংক, এটিএম, সংযুক্ত ব্যাংক হিসাব এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত মাধ্যমেই এই ই-লেনদেন সম্পন্ন হবে। ইউটিলিটি বিল পরিশোধের মতো ব্যক্তিগত হতে বাণিজ্যিক পর্যায়ের মূল্য পরিশোধ, মোবাইল টপআপ, ব্যাংকের সেভিং এবং স্কিম হিসাবে অর্থ জমা, ঋণের অর্থ পরিশোধ, কিংবা বেসরকারি অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ঋণদাতা এনজিও এমনকি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রিমিয়ামও এই এমএফএস মাধ্যমে আদান-প্রদান করা যাবে।
বেতন-ভাতা বিতরণ, ডিভিডেন্ড/রিফান্ড ওয়ারেন্ট/ডিসকাউন্ট পেমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিজনেস টু পারসন পেমেন্ট করা যাবে। পারসন টু পারসন পেমেন্টের ক্ষেত্রে একটি এমএফএস ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অপর একটি এমএফএস ব্যক্তিগত হিসাবে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট সেবা দেয়া যাবে। পাশাপাশি একই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান অন্য এমএফএস সেবাদানকারী থেকে ব্যাংক হিসেবেও লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে। আর অনলাইন ও ই-ব্যবসাযের ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই এমএফএস সেবা অব্যাহত থাকবে। মোবাইল ফাইন্যান্স সেবার মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পেনশন, বৃদ্ধভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কৃষকদের অনুদান ইত্যাদি ব্যক্তিগত হিসাবে প্রদান করা যাবে। একইভাবে নাগরিকেরা এই এমএফএস হিসাব থেকে আয়কর, ফিস, আরোপিত সেবা মূল্য, টোল চার্জ, জরিমানা ইত্যাদি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে পারবেন। এই মাধ্যমটিতে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত আয়ের টাকাও মুহূর্তে দেশের পরিজনের কাছে পাঠাতে পারবেন