• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > চতুর্দশ বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের বৈঠক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৯ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
চতুর্দশ বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের বৈঠক
চতুর্দশ বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের বৈঠকে
চাই বৈষম্যহীন, জবাবদিহি ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা
ইমদাদুল হক

‘এক বিশ্ব, এক নেট, এক লক্ষ্য’ স্লোগানে গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্দশ বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের (বিআইজিএফ) বৈঠক। বার্লিন সম্মেলনকে সামনে রেখে দিনব্যাপী এই আলোচনা সভায় ডাটা গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, স্থিতি এবং সহনশীলতা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ইন্টারনেটে তরুণদের ক্ষমতায়ন, ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, রাজনীতিতে ইন্টারনেটের প্রভাব, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অংশীজনদের জীবন-মান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। জবাবদিহি, স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণ আরোপে কীভাবে ইন্টারনেট কাজে লাগতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। সবকিছু ছাপিয়ে উঠে আসে ডিজিটাল বাণিজ্য আইন, ক্রসবর্ডার ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন, তথ্য সুরক্ষা আইন, সম্প্রচার আইন এবং গ্লোবাল ট্রিটি গঠন ও কনটেন্ট ব্যাংক তৈরির প্রস্তাব।

ইয়ুথ আইজিএফ গঠনের প্রস্তাব

উদ্বোধনী ও সমাপনীসহ ছয়টি সেশনে অনুষ্ঠিত সভার প্রথম অধিবেশনে আলোচনা করা হয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় তরুণদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে। ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডিওয়াইডিএফ) নির্বাহী পরিচালক ও সাধারণ সম্পাদক অমিয় প্রাপন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ আইজিএফ’ বিষয়ে এই সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (অ্যাপনিক) পলিসি অ্যান্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভাইজার শ্রীনিভাস গৌদ সিন্ধি, ফ্রেডরিক নোমান ফাউন্ডেশন ফর ফ্রিডম (এফএনএফ বাংলাদেশ) প্র্রতিনিধি তানভীর আহসান, নভোকম লিমিটেড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ফারহা দিবা, ইয়ুথ ইন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশ ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক সানজিদা জামান এবং জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসাইন।

ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত এই সভার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (অ্যাপনিক) ডিরেক্টর জেনারেল পল বায়রন উইলসন, আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম, ফ্রেডরিক নোমান ফাউন্ডেশন ফর ফ্রিডমের (এফএনএফ) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. নাজমুল হোসাইন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ এসএম মোর্শেদ। এই অধিবেশনের মূল উপজীব্য ছিল ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা : ডিজিটার যুগে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত।

অধিবেশনে সূচনা বক্তব্য দেন বিআইজিএফ পলিসি রিসার্চ ফেলো এএইচএম বজলুর রহমান। দিনব্যাপী আলোচনা সভা সমন্বয় করেন বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু।

ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা : ডিজিটার যুগে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত

অধিবেশনের সূচনা পর্বে এএইচএম বজলুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধানদের নিয়ে ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি যখন দুই ধাপে সম্মেলন করেও ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনার রূপরেখা তৈরি করতে ২০০৩ সালে জেনেভায় ও ২০০৫ সালে তিউনিশিয়ায় সম্মেলন করে। কিন্তু তখন ইন্টারনেট পরিচালনা বিষয়ের নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৬ সাল গঠিত হয় এই ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম। তখন সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিবছর প্রতিটি দেশে সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই বিষয়টি নির্ধারণ করা হবে। এতে সরকারসহ বেসরকারি সব পক্ষ বিশেষ করে কারিগরি বোদ্ধা, শিক্ষক সমাজ নীতিনির্ধারনী মহল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধির অংশীজনদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার জার্মানির বার্লিনে ১৪তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তাবনা তৈরি করতেই এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম। এই ফোরামের উদ্যোগেই আজকের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে শার্ম আল শেখে টপ লেভেল ডোমেইন ২০০৯ সালে ডট বাংলা নিয়ে আমরা কাজ করি। আজকে মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্বে রুট জোন লেভেল জেনারেশন রুলস (এলজিআর বাংলা) নিউ ব্রহ্মণলিপি জেনারেশনে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স স্কুল থেকে ৩টি স্কুলে বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে ১১৫ জন অংশগ্রহণ করেছেন। এবারের সম্মেলনে আমরা ডাটা গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল ইনক্লুশন এবং সিকিউরিটি সেফটি অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড রেজিলিয়ন্স তথা সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে।

এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পল বায়রন উইলসন। তিনি বলেন, এর আগে বেশ কয়েকবার আমি বাংলাদেশে এসেছি। তবে প্রথমবারের মতো এবার এদেশের আইজিএফে অংশ নিচ্ছি। তবে সম্প্রতি রাশিয়ায় আমি আমার বন্ধু ইনু ও অনুর সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছি। এই অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে আমি কলকাতায় একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছি। সেখানে সম্প্রতি আইকানের একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। ওই আলোচনায় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা পরিচালনা নিয়ে কিছু মৌলিক প্রশ্নের অবতারণা হয়। যেটি আমাকে ইন্টারনেট ব্যবহারের মৌলিক বিষয়টি নিয়ে ভাবিয়েছে। সে কারণেই আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। প্রশ্নটি বরাবরই উঠছে, ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা কী? মূলত ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডবিøউএসআইএস) গত চার বছরে দুই ধাপে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সরকারগুলোর সাথে আলোচনায় উঠে এসেছে কীভাবে সমাজ ও সংঘগুলোকে তথ্যযুগের সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায়। বৈশি^কভাবে একটি তথ্যসমাজ গড়ে তোলা যায়। আরো ভালো অবস্থানে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবশ্যই আমি স্বীকার করছি, ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এখন এতদিন পর্যন্ত আইসিটি বা তথ্য- যোগাযোগ প্রযুক্তিকে আমলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই এজেন্ডায় ইন্টারনেট অনুপস্থিত থেকেছে। এবারের বৈঠকেই প্রথমবারের মতো স্পষ্ট হয়েছে, এতদিন পর্যন্ত ইন্টারনেট তথ্য সমাজের জন্য কেবল আইসিটি, কমপিউটার বা যোগাযোগ হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। সরকারও এটিকে খুব একটা গুরুত্ব দিত না। এমনটি তারা জানতেও চাইত না, বিশেষত এ বিষয়ে সচেতন করার বিষয়েও আগ্রহী ছিল না। আমার মনে হয়, গত কয়েক বছর ধরে সরকার বুঝতে পেরেছে ইন্টারনেট একইভাবে কতটা জটিল। এটি পরিচালনা বা এর প্রশাসন ব্যবস্থা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এখন বোঝা যাচ্ছে। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। তবে অংশীজনের মাধ্যমেই এই প্রশাসনটি যেন পরিচালিত হয় সে বিষয়টি নিয়েই ইন্টারনেটের অধিকার এবং এটি ব্যবহারে দায়বদ্ধতার প্রিন্সিপালগুলোর মধ্যে মেলবন্ধন রচনা করাটাই এই প্রশাসনের কাজ। এটি কোনো শাসন নয়; এটি একটি কৌশলগত ব্যবস্থাপনা। সরকার, প্রাইভেট সেক্টর এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণমূলক ভূমিকার মাধ্যমেই এটি নির্ধারিত হবে। উন্নয়নের স¦ার্থেই এই তিনটি পক্ষ ইন্টারনেট পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। বিশ^জুড়ে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার ও সহজলভ্যতার স্বার্থে অন্তর্চালিত ও আন্তঃযোগাযোগে ইন্টারনেটের পরিচালনা ও প্রশাসনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বøকচেইন স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। নিরাপত্তার স্বার্থে স্বতন্ত্র আইপি নিবন্ধন প্রক্রিয়া কারিগরিভাবে খুবই জরুরি। আমাদের সব কিছুর মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রেখেই ইন্টারনেটকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আমিনুল হাকিম বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ইন্টারনেটে সংযুক্ত করছে সরকার। এমন পরিস্থিতে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আরো কাজ করার অবকাশ রয়েছে।

নাজমুল হোসেন বলেন, মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষায় এফএনএফ কাজ করে। এ কারণে ইন্টারনেট প্রশাসনের এই কার্যক্রম আমাদের সাথে সমান্তরাল। আমি মনে করি এখানে সরকারের ভূমিকা থাকা দরকার ফুটবলের মাঠের রেফারির মতো।

এসএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় এই অধিবেশনে বিগত সময় তিনটি শিল্পবিপ্লবে ব্যর্থ দেশগুলোর জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময় বড় ‘বিপদ’ হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘ব্যবহারকারীদের সচেতনতা ও সতর্কতা গড়ে তোলা না হলে এই সুযোগ সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা হয়ে উঠবে।’
মন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটেছে। এখন পর্যন্ত দেশের ৮০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার হয় মোবাইলে। যদিও এটি হওয়া উচিত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৫জি, কোয়ান্টাম চিপের মতো প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ সভ্যতা একটি পৃথিবীকে ভিন্ন গ্রহে রূপান্তর করবে। এটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দেখে এতদিন খুশি হলেও এখন আমরা যে বিপদ পেতে শুরু করেছি তা মোকাবেলা করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে তা মোকাবেলার যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম তাও এখন যথেষ্ট নয়। কেননা যাদের দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই তাদের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের তরুণরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবসায় বাণিজ্য করে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। আসলে ইন্টারনেট আজকের পৃথিবীর জন্য আশীর্বাদ হলেও আবার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য সবার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা ও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। গুজব, অপপ্রচার থেকে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ করতে হবে।
ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি বাংলা ভাষাকে এর স্বাতন্ত্র্য নষ্ট করেছে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডট বাংলা ব্যবহার করতে গিয়ে দেখেছি ইতিমধ্যেই আমাদের বাংলা ভাষাকে খন্ডিত করা হয়েছে। আমি যেভাবে বাংলা ভাষা চাই, সেভাবে নেই। আমার টাকার নাম রুপি। আমার ভাষার নাম বেঙ্গলি। আমার ড়, ঢ়, য় অক্ষরগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের দেবনাগরীর সাথে মিলিয়ে বাংলা ভাষাকে তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বজলু ভাই, অনুসহ সবাই মিলে যুদ্ধ করছি আইকান ও ইউনিকোডকে বিষয়গুলো বোঝাতে। ভাষাভিত্তিক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলা ভাষা নিয়ে বাংলাদেশের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় আমার ভাষায় যা আছে তা যেন হুবহু সেই অবস্থাতেই রাখা হয়।
উদ্বোধনী সভায় তথ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও স¤প্রচার আইন এবং বৈশি^ক বাণিজ্য চুক্তি গঠন ও কনটেন্ট ব্যাংক তৈরির দাবি জানান বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু।
ইন্টারনেটকে সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশের অর্থনীতির যে উন্নয়ন ঘটছে তা তিনটি স্তম্ভের ওপর এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন গ্রামের চাষি সমাজÑ যারা খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করেছে, পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ নারী কর্মী, প্রবাসী কর্মী। ১৬ কোটি মানুষের দেশে মানবসম্পদ হচ্ছে প্রধান পুঁজি। বাংলাদেশকে যদি সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় এই তিন স্তম্ভ যথেষ্ট নয়। ৪ নম্বর স্তম্ভ হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত সম্পদ। আইসিটি কর্মী। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করার দক্ষতা যে সমাজের আছে সে সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের অর্থনীতির চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে গেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট নতুন একটি পৃথিবী গড়ে দিয়েছে। নতুন একটি ব্যবস্থাপনা রচনা করছে। সারা পৃথিবীকে সমতল পৃথিবী করে দিচ্ছে। এটা এমন একটি পৃথিবী যেখানে তিনটি ‘সি’ কানেক্ট, কম্পিট ও কলাবরেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বৈশি^ক সংযুক্তি, প্রতিযোগিতা ও একে অপরকে সহযোগিতা করতে না পারলে হবে না।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট অর্থনীতির মানচিত্র পরিবর্তন করে দিচ্ছে। মানচিত্র পরিবর্তন হলে কেউ দরিদ্র থাকবে না। মেধার অপচয় বন্ধ হবে। আমার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বসেই আমি বিশে^র সাথে কথাবার্তা ও ব্যবসা করতে পারব। এর জন্য নিউইয়র্কে যাওয়া লাগবে না। সেজন্য মেধাবীরা এখন বাংলাদেশেই থাকতে পারবে। এদিক-ওদিক ছুটতে হবে না।
হাসানুল হক ইনু বলেন, নতুন প্রযুক্তি হচ্ছে সাইবার জগৎ। সাইবার জগতে যুদ্ধ করার একটা প্রস্তুতি চলছে। সুতরাং সাইবার জগৎ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখানে আমরা কীভাবে বসবাস করব সেটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে ৩টি অজ্ঞতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের সুফল ভোগ করতে হলে আমাদের ভাষা, তথ্য ও যোগাযাগ প্রযুক্তি, তথ্য অজ্ঞতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলেই ইন্টারনেট আমাদের জীবন বদলে দেবে। কিন্তু এখনো আমরা দেখছি দারিদ্র্য, নারী-পুরুষের বৈষম্য, ডিজিটাল বৈষম্য। এর পাশাপাশি পৃথিবীতে উত্তর-দক্ষিণের বৈষম্য, গ্রাম-শহরের বৈষম্য, অন্তর্ভুক্তির রাজনীতি ও অর্থনীতির বদলে বাদ দিয়ে পরিকল্পনা তৈরির প্রবণতা। সবুজ উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নের সাথে ডিজিটাল উন্নয়নের সম্পৃক্ততারও দুর্বলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

ইনু বলেন, বিস্ময়কর বিষয় হলো আমরা এখন তৃতীয় থেকে চতুর্থ শিল্পে প্রবেশ করেছি। তৃতীয় শিল্পের অনেক কাজ সমাপ্ত করতে পারিনি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন নতুন কাজ আমাদের মাথার ওপর এসে পড়েছে। এখনো ইন্টারনেট সহজলভ্যতা, প্রাপ্তি সমস্যা রয়েই গেছে। এখনো অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। গ্রামের মানুষদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বেশি দামে কিনতে হয়।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল সমাজে অনেক আইনকানুন নেই। ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ইন্টারনেট হাতে থাকলে আপনে রাজা, না থাকলে আপনে ফকির। ইন্টারনেট একটি মৌলিক অধিকার। সাথে সাথে সাইবার নিরাপত্তা দরকার। না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবাই মিলে আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেট গড়ে তুলতে হবে।

ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে ব্যবসা গড়ে উঠছে। তার নাম ই-বাণিজ্য, অনেকেই এই ব্যবসা করছে। কিন্তু এর জন্য কোনো আইন নেই। ই-বাণিজ্যের যে প্রসার ঘটেছে, কিন্ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ই-বাণিজ্য নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এইটা না হলে সরকার, প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে নীতি ও আইনসহ যথাযথ ডিজিটাল অবকাঠামো নেই। কিন্তু ডিজিটাল অর্থনীতি এতটাই দ্রæত প্রসারিত হচ্ছে যে আমরা এর সাথে তাল মেলাতে পারছি না। এ কারণেই আমাদের বিজ্ঞাপনী সংস্থা গুগলকে ৮ হাজার কোটি টাকা দিলেও আমরা এক পয়সাও রাজস¦ পাই না।

বিআইজিএফ চেয়ারপারসন বলেন, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে আমাদের ডাটা সংরক্ষিত আছে। সেই ব্যক্তিগত তথ্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো তাদের বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছে। কিন্তু কেউই তা থেকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো টাকা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ক্রসবর্ডার ই-কমার্স নীতিমালা না থাকায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এ সময় ইন্টারনেটের বিশ^াসযোগ্য প্রযুক্তি মানদÐ স্থাপনে গুরুত্ব দিয়ে তিনি আরো বলেন, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের বিশ^াসযোগ্যতা, নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে অচিরেই প্রযুক্তিগত মানদÐ তৈরি করতে হবে। একই সাথে ইন্টারনেট নিরপেক্ষতা, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিরাপত্তাজনিত আইন-কানুন তৈরি করতে হবে। তথ্য নিরাপত্তা-সুরক্ষা আইন করতে হবে। সম্প্রচার আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে তৃণমূলের ব্যবহার উপযোগী একটি ডিজিটাল ‘কনটেন্ট ব্যাংক’ গড়ে তুলতে হবে।

সভার ৮ সুপারিশ :
* তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন
* চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কমিশন গঠন
* অবিলম্বে সম্প্রচার আইন পাশ করা
* ডিজিটাল বাংলা কনটেন্ট ব্যাংক গঠন
* জাতীয় পর্যায়ে ৫জি পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রকাশ
* ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি
* ই-কমার্স আইন এবং ক্রস বর্ডার ই- কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
* ইন্টারনেট অব থিংস ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে বিস্তারিত জাতীয় পরকিল্পনা প্রকাশ।


চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশের প্রস্তুতি
সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে অগ্রসরমান প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বিগ-ডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বøকচেইন, মেশিন লার্নিং এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে সাইবার অপরাধ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের (ফোরআইআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তামজিদ উর রহমানের সঞ্চলনায় আলোচনায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী হাসান রবিন, ইন্টারনেট সোসাইটি (আইসক) বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টারের বোর্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসাইন, ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স (আইটিএফ) ফেলো শায়লা শারমিন, এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স (টেকনিক্যাল কমিউনিটি) ফেলো শাহ জাহিদুর রাহমান, আইকান ফেলো এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন (ফোরআইআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফেলো আফিফা আব্বাস।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সামাজিক চ্যালেঞ্জ বিষয়ে কাজী হাসান রবিন বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পসহ বেশ কিছু খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, ব্লকচেইন ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। ফলে অদক্ষ কর্মীরা চাকরি হারালেও নতুন কিছু কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। এজন্য শ্রমিকদের এখনই এসব বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে। উদ্ভাবনী সল্যুশন নিয়ে কাজ করতে হবে। ফটোশপ, গ্রাফিক্স ডিজাইনার তৈরির মতো ফ্রিল্যান্সার তৈরি থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। এটা হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রযুক্তি সল্যুশন তৈরিতে সক্ষমতা অর্জন হবে।

নতুন প্রযুক্তি সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টারের বোর্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা মোবাইল ব্যাংকিং, ৯৯৯ ও এনআইডি ব্যবহার করতে পারছি। ইতিমধ্যেই আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। দেশীয় হোটেলগুলোতেও আইওটি ব্যবহার হচ্ছে। শিল্প ও মেডিকেল পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স (আইটিএফ) ফেলো শায়লা শারমিন বলেন, নতুন প্রযুক্তির জন্য মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে কোনো বাধা থাকছে না। এখন প্রতিটি কোম্পানিই টেকনোলজি কোম্পানি হয়ে উঠেছে। ব্যাংক, ট্রাভেলিং কোম্পানি সব কিছুতেই টেকনোলজির অন্তর্ভুক্তিটাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব।

এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স (টেকনিক্যাল কমিউনিটি) ফেলো শাহ জাহিদুর রাহমান বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের একটি শক্ত নীতিমালা তৈরি করা দরকার। এক্ষেত্রে কারিকুলম আপডেট করতে হবে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন (ফোরআইআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফেলো আফিফা আব্বাস বলেন, পিৎজা আসতে দুই ঘণ্টা দেরি হওয়ায় ১৪ বছরের বালক যখন পিৎজা হাটের ওয়েবসাইট হ্যাক করে, তখন বোঝা যায় প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেও সাইবার অপরাধ হয়। আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে এই অপরাধ করে।

বৈঠকে টাইটানিক মুভির অবতারণা নিয়ে মেশিন লার্নিং ও ডিপ লার্নিংয়ের ওপর আলোকপাত করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, কমপিউটার সংখ্যা ছাড়া কিছু বুঝে না। তাহলে বাংলা শব্দ কীভাবে চিনবে? আবার বাংলা চিনতে মেশিনকে অনেকগুলো ভেক্টরাইজ করতে প্রচুর ডাটা প্রসেস করতে হয়।
পলিসি লিটারেসি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্ববান

বিষয়ভিত্তিক আলোচনার তৃতীয় অধিবেশনে আলোচনা হয় ডিজিটাল রূপান্তরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে, সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর সোচ্চার করতে এবং অধিকার সংরক্ষণে সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়ে।
একুশে টেলিভিশন সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে সাউথ এশিয়া আর্টিকেল ১৯-এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সালের সঞ্চালনায় এই অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এশিয়ান মিডিয়া ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এএমআইসি) বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের এসএম শামীম রেজা, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট জাইন আল মাহমুদ, বজলুর রহমান, ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের সদস্য আফরোজা হক রিনা।
আফরোজা হক রিনা বলেন, বিশ^ জগৎ যখন বিভক্ত, কারো হাতে নেট আছে, কারো হাতে নেই। আবার লক্ষ্যও এখন এক নয়। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল বিভাজন, সাধারণ ম­­ানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলছি।

ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট জাইন আল মাহমুদ বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকার নাগরিকের মধ্যে তথ্য প্রচার করছে। সরকার পরিচালনায় নাগরিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে। পাশাপাশি মুক্ত সরকার ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, উদ্ভাবন সবই সমানতালে চলছে ডিজিটাল সমাজে। এতে করে মনে হচ্ছে, ইন্টারনেটের সমতায়ন ঘটছে। বাস্তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের এসএম শামীম রেজা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বৈশি^ক মাত্রাটা বিবেচনা করেই আমাদের এগোতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আইসিটিতে এগোলেও ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার, সহজলভ্যতা ও নীতিটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটাই ডিজিটাল আইনে প্রভাব ফেলে। ফলে অনুশীলনটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নাগরিক সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জ। কেননা আমরা পলিসি লিটারেসিটা দিতে চাই না। সরকার নাখোশ হবে ভেবে ডিজিটাল পলিসি ট্রান্সফরমেশন লিটারিসিতে সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে মৌলিক জায়গাটায় ছাড় দেয়া যাবে না। এজন্য বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনে বসতে হবে।

গোলাম রহমান বলেন, ডিজিটাল সমাজকে মেনে জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে জনগণকে ইন্টারনেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য আমরা কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এসব ক্ষেত্রে প্রণীত আইনগুলো জনবান্ধব নয়। আমাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ না থাকা এবং পরমতকে শ্রদ্ধা করার মানসিকতা থাকায় আমরা সবচেয়ে বেশি বাধার মুখোমুখি হই। এটা আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল রূপান্তর, সাধারণ নাগরিক ও সুশীল সমাজ, কণ্ঠস্বর এবং অধিকার সংরক্ষণ এই ৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা এত ছোট্ট পরিসরে অসম্ভব। মূলত আমরা যতটা এগুচ্ছি, আমাদের সময়টা তারচেয়ে বেশি গতিতে এগুচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে আমরা এখনো ততটা যোগ্যতা অর্জন করিনি। ফলেই একটি আইন করতেই আরেকটি নতুন সমস্যা হাজির হয়।
রাজনীতি বদলে দিচ্ছে ইন্টারনেট

দিনের শেষ সভায় ইন্টারনেট কি রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) সভাপতি অধ্যাপক মাসুদ এ খান এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির।
ইন্টারনেট সোসাইটি (আইসক) ঢাকা চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ড. হাফিস মো: হাসান বাবুর সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন নির্বাচন হচ্ছে। ট্রাম্প ও মোদির টুইট নতুন করে ভাবাচ্ছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা এর ইতিবাচক ব্যবহার করবেন।

অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, রাজার নীতি থেকে যখন প্রজাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেই মূলত তা রাজনীতি বলা হয়। আর কোনো কিছুতে প্রযুক্তি এলেই যে বড় একটা কিছু হয়ে গেছে তা বলা যাবে না। সেই হিসেবে ইন্টারনেট দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন এনেছে তা বলা যায় না। বরং এই পরিবর্তনটা খারাপ দিকেই হয়েছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে নেতৃত্ব দেবে কে?

সভার সমাপনী অধিবেশনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ইন্টারনেট প্রশাসন বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডান্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন (ফোরআইআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তামজিদুর রহমান। বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপারসন ও তথ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন এফএনএফ প্রতিনিধি ড. নাজমুল হোসেন, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, আর্টিকেল ১৯-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুক ফয়সাল ও বিসিএস সভাপতি শাহিদ উল মুনির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিভি, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো: শফিউল আলম ভূঁইয়া।
আলোচনায় উঠে আছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে সরকার না বাজার এটি নিয়ন্ত্রণ করবে? চীন না মার্কিন মডেলে আমরা চলব। শ্রমভিত্তিক অর্থনীতিতে আমরা রোবটিককে কীভাবে ব্যবহার করব? ডিজটাল রূপান্তরে ঝুঁকি মোকাবেলায় নীতি ও আইন প্রণয়নের দাবি উত্থাপনের পাশাপাশি উঠে আসে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে মানুষকে কোন মডেলে আখ্যায়িত করা হবে ভোক্তা না নাগরিক হিসেবে?

আলোচনায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দমকা হাওয়ায় নতুন নতুন ধরনের পণ্য ও প্রযুক্তির সাথে মেলবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা নেই বলে জানান সৈয়দ তামজিদুর রহমান। তার ভাষায়, এখন আমাদের এই প্রযুক্তিকে সেবাদাতাদের নীতিজ্ঞানের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। এজন্য সরকারকে একটি নীতিমালা তৈরির পরামর্শ দেন তিনি। তবে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের কৌশলটায় স্বচ্ছতা থাকা দরকার। এটা যেনো আমাদের হাতেই থাকে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এই বিশেষজ্ঞ। নীতিমালা গঠনে ব্যবসায়ী ও শিক্ষাবিদদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আলোচনায় আইওটিসংশ্লিষ্ট একটি নীতিমালা প্রণয়নের আহ্ববান জানান বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।

নাগরিক, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতির নিরাপত্তায় আইনি সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করেন সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, দেশের সীমার মধ্যে ও সীমার বাইরে থেকে অপরাধের শাস্তি ও শিকার ব্যক্তি ও ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনি কাঠামোর মাধ্যমেই এই ব্যবস্থাপনা করতে হবে। পাশাপাশি মাতৃভাষার বিষয়বস্তু বাড়াতে হবে। ডিজিটাল অজ্ঞতা দূর করতে শিক্ষা কারিকুলামকে হালনাগাদ করার পরামর্শ দেন তিনি
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৯ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস