• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রযুক্তি খাতে যেমন বাজেট চাই
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
আগামীর প্রত্যাশা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রযুক্তি খাতে যেমন বাজেট চাই
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে গত ৯ বছরের মধ্যে বরাদ্দ বেড়েছিল প্রায় ৫ গুণ (৪.৯৪)। এই বরাদ্দ ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ০.৬০ শতাংশ। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে এই খাতে সার্বিক বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সার্বিক বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।

আসছে বাজেটে এই বরাদ্দ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাজেটকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই তারা নিজেদের প্লাটফর্ম থেকে সুনির্দিষ্ট দাবিও পেশ করেছেন। আর এসব দাবি পূরণে এবার তারা একটু বেশি ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছেন। এই আশাবাদের পেছনের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছেন খোদ অর্থমন্ত্রী এবং এই খাতের দাবি-দাওয়া নিয়ে সবসময় সোচ্চার থাকা বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। প্রযুক্তিপ্রাণ জব্বার মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগেই যখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আগামী জুনে শেষ বারের মতো বাজেট দেবেন, তাতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রণোদনার বিষয়ে বিবেচনা করবেন তিনি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’র ওই সমাপনী অনুষ্ঠানে ইন্টারনেটের দাম কমানো, প্রযুক্তিপণ্য আমদানি ও প্রশিক্ষণের জন্য পরবর্তী বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত আরও অর্থ বরাদ্দের দাবির জবাবে এই আশার কথা শুনিয়েছিলিন মন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, “আসছে বছর আমি শেষ বারের মতো বাজেট পেশ করব। দেখা যাক, এই আইসিটি খাতের জন্য কী করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের তরুণেরা যেভাবে কাজ করছে, তাতে আমরা আশাবাদী।”
তিনি আরও বলেছিলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার লেখার সময় শেখ হাসিনা আইসিটি খাত নিয়ে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৎকালীন বেসিস সভাপতি ও বর্তমান মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, “আইটি গুরু জব্বার সাহেব সেদিন আমাকে নির্বাচনী ইশতেহার লিখতে সহযোগিতা করেছিলেন।” এবার সেই ‘আইটি গুরু’র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বাজেট পেতে যাচ্ছে খাত। সঙ্গত কারণেই এবারে এই খাত সংশ্লিষ্টদের আশা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক ঊর্দ্ধে। খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে রাজস্ববোর্ডে জমা দেয়া প্রস্তাবনা থেকে প্রত্যাশার এই পারদ সহজেই অনুমেয়। প্রস্তাবনার মধ্যে মূসক ও কর ছাড়াও অর্থ আইন সংশোধন ও মেধা নির্ভর প্রযুক্তি শিল্পায়ন বান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে কমপিউটার সমিতি ও ই-ক্যাব আলাদা আলাদা প্রস্তাবনা দিলেও বেসিস, বাক্য এবং আইএসপিএবি সম্মিলিতভাবে প্রস্তাবনা দিয়েছে।

প্রস্তাবনায় প্রতিনিধিত্বশীলতার বাইরে থেকেও সামগ্রিকভাবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে ‘তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা’ অংশটি। সবার প্রস্তাবনাতেই ‘সেবা’ অংশটি অন্তর্র্ভূক্তকরণের বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত সরকারের একটি অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচিত। এ খাতে উদ্যোক্তারা খুব কম পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন। এখনো দেশের আইটি কোম্পানীসমূহ এসএমই কোম্পানি হিসেবে পরিগণিত। তাই পোশাক শিল্পকে সরকার যেভাবে আগলে রেখে প্রতিষ্ঠিত করেছে, একইভাবে আইসিটি খাতকে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত নিবিঢ় পরিচর্যা করবে বলেই আশা প্রকাশ করছেন তারা।
বাংলাদেশে কমপিউটার সমিতি
তথ্য প্রযুক্তি সেবায় হার্ডওয়্যার খাতের অন্তর্ভূক্তি করণ
তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা-আইটিইএস [Information Technology Enabled Services] এর সংজ্ঞায় হার্ডওয়্যারকেও অন্তর্ভুক্তিকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবায় ট্যাক্স রহিতকরণ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার দাবি জানিয়েছে এই খাতের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবার [Information Technology Enabled Services] এর সংজ্ঞায় সফটওয়্যার এন্ড তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কিছু সেবা অন্তর্ভুক্ত আছে। কিন্তু হার্ডওয়্যার অন্তর্ভুক্ত নেই। হার্ডওয়্যার ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির কোন কার্যক্রম ও প্রবাহ কোনভাবেই সম্ভব নয়। দেশে বিকাশমান হার্ডওয়্যার শিল্প স্থাপনে উৎসাহ প্রদান এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর খাতের অন্যতম প্রণোদনা হিসেবে আয়কর অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানোর যুক্তি টেনে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, এতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।


প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন ও সংযোজনে ভ্যাট প্রত্যাহার
দেশে কমপিউটার শিল্প গড়ে তোলার অভিপ্রায় নিয়ে পূর্ণ কমপিউটার ও কমপিউটারের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য এসকেডি (পণ্যের কিছু পার্টস সংযোজিত অবস্থায় আমদানি করে সেগুলো স্থানীয় কারখানায় পুরোপুরি সংযোজন করাকে সেমি নক ডাউন বা এসকেডি বলে।) এবং সিকেডি (পণ্যের সব পার্টসই অসংযোজিত বা আলাদা আলাদা অবস্থায় আমদানি করে স্থানীয়ভাবে পুরো পণ্যটিই সংযোজন করাকে কমপ্লিট নক ডাউন বা সিকেডি বলে।) পণ্যের সব পর্যায়ে সমুদয় ভ্যাট প্রত্যাহার করা দাবি জানিয়েছে বিসিএস। সংগঠনটি বলছে, এটি করা গেলে অচিরেই দেশে কমপিউটার শিল্পকারখানা গড়ে উঠে তা দ্রæত বিকাশলাভ করবে। এর প্রভাবে এখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ৩০% হারে বাড়বে, অন্যদিকে কমপিউটার পণ্য আমদানী একই হারে (৩০%) কমবে। ফলে অর্থমন্ত্রী ঘোষিত জিডিপি ৭% অতিক্রম করা ত্বরান্বিত হবে।

ভ্যাট পদ্ধতির জটিলতা নিরসন
বাজেট প্রস্তাবনায় ভ্যাট সংশ্লিষ্ট জটিলতায় বেসিস জানিয়েছে কোনো পণ্য আমদানীকালে আমদানী মূল্যের সাথে ৩০% মূল্য সংযোজন করে বাধ্যতামূলকভাবে ৪.৫% আগ্রিম ভ্যাট (ATV) আদায় করে নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ২০১৭- ২০১৮ অর্থবছরে যেসব কমপিউটার পণ্যের অঞঠ ৪.৫% নির্ধারণ করা হয়েছে তা ৩% করার দাবি করা হয়েছে। দাবিতে বলা হয়েছে, খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতাগণ এলাকার ধরণ (মহানগর, জেলা শহর ও অন্যান্য) নির্বিশেষে দোকান প্রতি ১১ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাট দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে প্যাকেজ ভ্যাট ৪৫% কমানোর করেছে কমপিউটার ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন। একই সঙ্গে কমপিউটার পণ্যসামগ্রীর খুচরা ও সরবরাহ ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করার সুবিধাটি ২০২১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে সংগঠনের বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রচলিত বাড়িভাড়া দিয়ে ব্যবসা করতে অনেক আইটি উদ্যোক্তাই হিমশিম খাচ্ছেন। তদুপরি বাড়িভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ১৫% মূল্য সংযোজন কর দিতে হলে তাদের অনেকের পক্ষেই দু:সাধ্য হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্র বিবেচনায় তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বাড়িভাড়ার ওপর থেকে বর্ণিত ১৫% মূসক প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপরেখা বাস্তবায়নে এ আইটি খাতেও ১৫% মূসক মওকুফসহ উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা থাকা আবশ্যক।

ভ্যাট ইস্যুতে বিসিএস-এর প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী খুবই প্রতিযোগিতামূলক আইসিটি খাতের ব্যবসার ক্ষেত্রে ১০% - ১৫% এর অধিক মূল্য সংযোজন হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু পদ্ধতিগত জটিলতায় দেশে আইসিটি পণ্যের উপর ১০০%-এর মত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব সংগৃহীত হচ্ছে। অর্থাৎ আইসিটি খাত থেকে প্রকৃত পক্ষে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা, তার থেকে দ্বিগুণাতিরিক্ত রাজস্ব সরকারী কোষাগারে জমা হচ্ছে। এর ফলশ্রæতিতে ইতিমধ্যেই এই খাতের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ
এইচ এস কোডের জটিলতার করণে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার শুল্কাদি এবং রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে আইটি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসছেন। বাজেট প্রস্তাবনায় এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছে বিসিএস। সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩টি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের সঠিক এইচএস কোড নির্ধারণ; আমদানি ও রপ্তানিকালে পণ্যের শুল্কাদি এবং রাজস্বের হার নির্ধারণ এবং আইসিটি পণ্যের প্রকৃতি নিরূপণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ। এক্ষেত্রে ক্ষেত্রে প্রচলিত বুয়েট টে এর পরিবর্তে বিসিএস অফিসকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।

বেসিস, আইএসপিএবি, বাক্য
আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে সম্মিলিত ভাবে ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে দেশের সফটওয়্যার খাতের নেতৃস্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন- বেসিস, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং - বাক্য এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন- আইএসপিএবি। এসব প্রস্তাবানার মধ্যে বাক্য ২টি, আইসপিএবি ৩টি এবং বেসিস ২টি একক প্রস্তাব দিয়েছে। বাকি প্রস্তাবগুলোর কোনটি যৌথ এবং কোনটি সম্মিলিত ভাবে করা হয়েছে। একক প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-

বাক্য: একক প্রস্তাবনায় আয়কর ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে বাক্য। সংগঠনটি ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এসআরও-এর ৩০০-এআইএন এ সংশোধন ও নতুন একটি ধারা সন্নিবেশের দাবি জানিয়েছে। হাইটেকপার্ক অথরিটি আইন ২০১০ এর অধীনে বিদেশী কর্মীদের আয়করের ক্ষেত্রে ৩ বছরের জন্য যে ৫০% সুবিধা পেয়ে আসছে তা ৫ বছর পর্যন্ত উন্নীত করা এবং ১০ বছর পর তা বাণিজ্যিক আয় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইএসপিএবি: একক প্রস্তাবনায় করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শাতাংশ করার দাবি করেছে আইএসপিএবি। প্রযুক্তি খাতের শিল্পায়নে এই করকে ব্যবসায় প্রসারে বড় বাধা হিসেবে দেখেছে সংগঠনটি। এছাড়াও ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) সংযোগের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার ও ট্রান্সমিশন মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নেটওয়ার্কে সংযোগের ক্ষেত্রে কোন মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে ট্রান্সমিশন খরচ উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে সার্ভিস নির্ধারণ করে সেবা দিচ্ছে। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এনটিটিএনের পক্ষ থেকে আরোপিত ট্রান্সমিশন খরচের উচ্চ মূল্য ও ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া কঠীন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটি জানিয়েছে, আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌছে দেয়ার মাধ্যম দুইটি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমেই গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌছাতে হয়। এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নেটওয়ার্কে সংযোগের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণের কোন নীতিমালা না থাকায় আইএসপিদের উপর তাদের মনগড়া উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে ব্যবসা করা এবং এবং ১৫% ভ্যাট আরোপ করায় গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌছানোর ক্ষেত্রে তা একটি বড় বাধা। সংগঠনটির একক তৃতীয় প্রস্তাবনাটি স্থান ও স্থাপনার ওপর বিদ্যমান ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার। এজন্য সংগঠনটি এসআরও’র ২১০-আইন ২০১৬ সংশোধন চেয়ে বলেছে- আইটি/আইটিএস ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ কোম্পানিসমূহ ছোট আকারে এবং স্বল্প মূলধনে ব্যবসা করে থাকে। ফলে তাদের অধিকাংশের পক্ষে বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নেয় সম্ভব হয় না। তাছাড়া তাদের সেবাটিকে আইটি/আইটিএস ইন্ডাস্ট্রির মূল যোগাযোগ মাধ্যম উল্লেখ করে তাদের স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণকারী হিসেবে ভ্যাট মওকুফের দাবি জানিয়েছে। এর বাইওে ইন্টারনেট সেবা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ তথা অপটিক্যাল ক্যবাল, মডেম, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্য, কমúিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার ও সার্ভার ব্যাটারির ওপর আরোপিত ১০% সিডি প্রত্যাহার এবং এইচএসকোড ৮৫১৭.৬২.৪০ এর সিডি ২৯% থেকে শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে সিডি, এসডি, আরডি, ভ্যাট ও এটিভি বিবেচনার কথাও বলা হয়েছে।

বেসিস: আসছে বাজেটে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশীয় সফট্ওয়্যার এবং আইটিইএস প্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকার চাওয়া হয়েছে। এ জন্য একক প্রস্তাবনায় ন্যূনতম খরচের বাধ্যবাধকতা রাখা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি সেবা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে সার্ভিস চার্জ গ্রহণের এখতিয়ার স্পষ্টীকরণের দাবি জানিয়েছে বেসিস। প্রস্তাবনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়েছে- এবারের বাজেটের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা- “ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রাঃ হালচিত্র ২০১৭” এ দেখা যায় যে, সরকারের সকল মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আইসিটি খাতে গৃহীত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ৯,২৬২,৭২,০০,০০০ (নয় হাজার দুইশ বাষট্টি কোটি বাহাত্তর লাখ) টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৫,৭৬৫,৩০,৫৫,০০০ (পাঁচ হাজার সাতশ পয়ষট্টি কোটি ত্রিশ লাখ পঞ্চান্ন হাজার) টাকা। অর্থাৎ এই বরাদ্দের পরিমান চলতি অর্থবছরে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এর অধিকাংশই অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় হবে। ফলে সরাসরিভাবে দেশীয় সফট্ওয়্যার/আইটিএস শিল্পের ব্যবসায় সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই বরাদ্দ খুব স্বল্প ভূমিকা রাখবে। এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক মোট বাজেটের ন্যূনতম ৫ শতাংশ অর্থ সফট্ওয়্যার এবং আইটিইএস খাতে (হার্ডওয়্যার ছাড়া) খরচ করার বাধ্যবাধকতার বিধান চেয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটি বলছে, এতে করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাইজেশন ত্বরান্বিত হবে এবং অনেক বড় দেশীয় বাজারের সৃষ্টি হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ/প্রকল্পে বাংলাদেশি আইটি/আইটিএস প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একই সাথে সরকারি প্রকিউরমেন্ট আইন-বিধিমালা এবং টেন্ডারে অংশগ্রহণ পদ্ধতি সহজ করারও দাবি জানিয়েছে বেসিস। এক্ষেত্রে যে প্রকল্পে ৪০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন স্থানীয়ভাবে হবে, শুধুমাত্র তারাই যেন এর আওতাধীন অর্থ পায় সে বিষয়ে বিধান রাখার অনুরোধ করেছে।

এর বাইরে আইএসপিএবি’র সঙ্গে যৌথ দাবিনামায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন সাধারণ আদেশ জারি করবার মাধ্যমে সেবা কোড ঝ০৯৯.১০ এর আওতায় তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সেবা (ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঞবপযহড়ষড়মু ঊহধনষবফ ঝবৎারপবং) কে আগামী অর্থবছর (২০১৮-১৯) এ সাধারণ আদেশ নং- ১৩/মুসক/২০১৭ এবং সাধারণ আদেশ নং-১৪/মুসক/২০১৭ আওতামুক্ত করে উৎসে করের থেকে ছাড় চেয়েছে বেসিস। পাশাপাশি আয়করমুক্ত সনদ প্রদানের নিয়মাবলী সহজীকরণের প্রস্তাব দিয়ে সংগঠনটি বলেছে, ট্যাক্স এক্সেমশন সার্টিফিকেট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে প্রদান প্রক্রিয়া এবং আইট/আইটিএস ফার্ম কর্তৃক গ্রহণের ব্যবস্থা অত্যন্ত সময়ক্ষেপণকারী হিসেবে আবেদনকারী সফট্ওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেক সময়, মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও “ট্যাক্স এক্সেম্পশন” সার্টিফিকেট পাওয়া যায় না। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে
ওহপড়সব-ঃধী ঙৎফরহধহপব, ১৯৮৪ (ঙৎফরহধহপব ঘড়. ঢঢঢঠও ড়ভ ১৯৮৪)- এর ষষ্ঠ অধ্যায় (ধারা ৪৪), ২০১৭ সনের ১৪ নং আইনের উল্লেখিত অনুচ্ছেদ-৩৩, ৬ঃয ঝপযবফঁষব, চধৎঃ অ, অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত সফট্ওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি অর্থবছরে আবেদন না করে একবার আবেদন করে আবেদনের ১ মাসের মধ্যে আবেদনকারীকে হস্তান্তরের আবেদন করা হয়েছে। সনদ প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং তা ইস্যু করবার ক্ষমতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিটি ট্যাক্স সার্কেলে অবস্থিত জোনাল অফিসের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। যৌথ প্রস্তবানায় আরও বলা হয়েছে, আয়কর সংক্রান্ত নীতিমালার ষষ্ঠ শেডিউলের ৩৩ প্যারা অনুযায়ী সফটওয়্যার ও আইটিএস আয়করমুক্ত হলেও বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার বা আইটি এনাবেল্ড সার্ভিসেস এর আয়কে ংঁঢ়ঢ়ষরবৎ/ পড়হঃৎধপঃড়ৎ/ ঢ়ৎড়ভবংংরড়হধষ ংবৎারপব হিসেবে বিবেচনা করে অগ্রিম আয়কর (অওঞ) হিসেবে কর্তন করে থাকে, যা কখনো ফেরত পাওয়া যায় না। এর ফলে সরকার ঘোষিত আয়কর অব্যাহতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও ওঝচ ঝবৎারপব এর রেভিনিউ এর বিপরীতে বর্তমান ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ করের হার ১২% হারে যে কর কর্তন করা হয় তা উক্ত ওহফঁংঃৎু এর বার্ষিক ঘচ (ঘবঃ চৎড়ভরঃ) এর তুলনায় বেশি হয়। তাই উৎসে কর কর্তন না করার জন্য আবেদন করেছে বেসিস ও আইএসপিএবি।

অন্যদিকে ষষ্ঠ শেডিউলের অনুচ্ছেদ ৩৩ এর পরবর্তী কয়েকটি সংশোধনী চেয়েছে বেসিস, বাক্য ও আইএসপিএবি। এই শেডিউলে আইটি কনসালটেন্সি, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, আইএসপি সার্ভিস ফি ও ই-কমার্স -কে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়াও আইটি/আইটিএস রপ্তানি বাণিজ্যে ২০ শতাংশ প্রণোদনা চেয়েছে বাক্য ও বেসিস। প্রস্তাবনায় তারা বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অগাস্ট ১৭, ২০১৭ এ জারিকৃত এফই সার্কুলার নং-৩১ অনুযায়ী বাংলাদেশ হতে সফট্ওয়্যার, আইটিএস (ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঞবপযহড়ষড়মু ঝবৎারপবং) ও হার্ডওয়্যার রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ফেব্রæয়ারী ০৮, ২০১৮ এ জারিকৃত এফই সার্কুলার নং-০৩ অনুযায়ী সফট্ওয়্যার, আইটিএস (ওঞ/ওঞঊঝ) খাতের জন্য সেক্টর-স্পেসিফিক নগদ সহায়তা প্রদানের পূর্ণাঙ্গ নিয়মাবলী সংক্রান্ত সার্কুলার দেয়া হয়। তবে এখানে নিয়মাবলীতে যেসব শর্তাবলী দেয়া হয়েছে তা অনেকাংশেই এই খাতের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক হতে সফট্ওয়্যার, আইটিএস খাতের জন্য সেক্টর-স্পেসিফিক যুক্তিসংগত নিয়মাবলী সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করতে তাগাদা দিয়েছে সংগঠন দুটি। প্রস্তাব দিয়েছে, সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ১০% নগদ সহায়তার পরিবর্তে উল্লেখযোগ্য হারে (২০%) নগদ অর্থ প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ও ই-কমার্স এর মান উন্নয়নেও বাজেটে প্রান্তিক ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা নিশ্চিত করার তাগাদা দেয়া হয়েছে।

ই-ক্যাব: দেশের ইন্টারনেট সেবা নির্ভর বাজারকে সমৃদ্ধ করতে ২৫ দফা সুপারিশ করেছে ই-ক্যাব। সংগঠনটি বর্তমান অর্থ-আইন সংশোধনের পাশাপাশি খাত সংশ্লিষ্টদের জন্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ প্রণোদনা চেয়েছে। সঙ্কুচিত অনলাইন লেনদেন প্রক্রিয়া প্রসারিত করে এক হাজার ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অফিস ও গোডান ভাড়ার ক্ষেত্রে মূসক অব্যহতি চেয়েছে।

‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’ হতে উদ্ভুত আয়কে করমুক্ত করতে জোর দাবি জানিয়েছে ই-ক্যাব। সংগঠনটি বলছে ‘অনলাইন বিক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতি ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ও এই সকল ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীরা মূসক নিবন্ধনের আওতায় পরে না। তাছাড়া সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অন্তরায়। ক্যাশ লেস সোসাইটি বাস্তবায়নের অন্তরায়। তাই ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’ কে ওঞঊঝ এর থেকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’ হতে উদ্ভুত আয় করযোগ্য আইনের বহির্ভুত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর যেসকল কোম্পানি শুধুমাত্র ই-কমার্স কোম্পানি হিসাবে ব্যবসা পরিচলনা করছে এবং লোকসান' পর্যায়ে আছে তাদের ক্ষেত্রে নূন্যতম কর হার ধার্য করা এৎড়ংং জবপবরঢ়ঃং এর ০.১% ও যারা পরিচালনাগত মুনাফা করছে, তাদের ক্ষেত্রে নূন্যতম কর হার এৎড়ংং জবপবরঢ়ঃং এর ০.৩% ধার্যের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

মূসক সম্পর্কিত প্রস্তবনায় ‘অনলাইন পণ্য বিক্রয়’ এর বিদ্যমান ব্যাখ্যা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে “অনলাইন পণ্য বিক্রয়” অর্থ “ইলেক্ট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সেই সকল পণ্য ও সেবার ক্রয় বিক্রয়কে বোঝাবে যা ইতিপূর্বে কোনো উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর নিকট হইতে মূসক পরিশোধ পূর্বক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে; উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারী যাহারা মূসক নিবন্ধনের আওতায় নাই, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য না) গৃহীত হয়েছে কোনো নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র নাই” হিসেবে পরিমার্জনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নি¤েœ ই-ক্যাব এর পক্ষ থেকে দেয়া উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হলো-

অনলাইন লেনদেনের সীমা বৃদ্ধি:
বেসিস সদস্যদের মতো ই-ক্যাব সদস্যদেও জন্য অনলাইন লেনদেনের সুবিধা চালুর দাবি জানিয়ে বাৎসরিক অনলাইন লেনদেনের সীমা ৭০০০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ২০০০০ মার্কিন ডলাওে উন্নীত করারা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ অনলাইনে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব হোস্টিং, র্সাভার হোস্টিং সহ ইত্যাদি কাজে অবৈধ লেনদেন বন্ধ হবে বলে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।


কর ও ভ্যাট মৌকুফ:
প্রস্তবনায় আইসিটি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন ট্রান্সেকশন ব্যবসার সাথে জড়িত কোম্পানিসম‚হ এবং ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও নীতিগত সমর্থন দেয়ার লক্ষে তাদের ব্যবসার উপর থেকে কর ও ভ্যাট মৌকুফ করা এবং এজন্য বাজেট বরাদ্দ রাখার দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে বার্ষিক বা অর্ধ-বার্ষিক রিবেট প্রোগ্রাম সাজিয়ে সবচেয়ে সফল ট্রেনিং প্রদানকারী আইটি কোম্পানি / সংস্থাসম‚হের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের খরচ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমান বা পুরোপুরি ভ্যাট মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কার্যকরী এবং মানসম্মত ট্রেনিং প্রদানকারী দেরকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে এই সুবিধা প্রদান করা হবে বলে মত দিয়েছে সংগঠনটি।


ক্লাস্টর বরাদ্দ রেখে ঋণ:
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লাস্টার বরাদ্দ দিয়ে তাদেরকে সহজ ঋণ সুবিধা প্রদানের দাবি তুলে ই-ক্যাব বলেছে- বৈশ্বিক ই-বাণিজ্য বাজারের আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং এইরকম বড় বাজারে বাংলাদেশ মাত্র একটি স্টার্টার। সুতরাং, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারকে অবশ্যই সেক্টরটি লালন-পালন করতে হবে। বর্তমানে প্রায় সব ব্যবসাই কোনোনাকোনোভাবে ই-কমার্স-এর সাথে যুক্ত। তাই ই-কমার্সের বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হবে।


পাসপোর্ট কোটায় বরাদ্দ বৃদ্ধি:
বিদেশী মুদ্রায় অনলাইনে লেনদেন বৃদ্ধির জন্য পাসপোর্ট কোটার ভিত্তিতে বিদ্যমান বরাদ্দকৃত কোটা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সামাজিক মিডিয়া মার্কেটিংয়ের বেশিরভাগ লেনদেনগুলি অবৈধ চ্যানেলগুলির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, যার জন্য সরকার বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। যদি সরকার এই লেনদেনগুলি আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করে, এটি ই-কমার্স শিল্পকে প্রসার করতে সাহায্য করবে এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে।

ক্লাউড ভিত্তিক তথ্য কেন্দ্র স্থাপন:
ক্লাউড মেকানিজমের মাধ্যমে নিজস্ব ডেটা সেন্টার চালু করার জন্য এখনই সঠিক সময়। বিশ্ব এখন ক্লাউড প্রযুক্তির দিকে এগুচ্ছে। আমাদের এখনো এব্যাপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। যদিও কিছু সরকারি সংস্থা স¤প্রতি ক্লাউড-ভিত্তিক ডেটা কেন্দ্র স্থাপন করেছে, তবে এটি বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাদ্ধমে অ্যাক্সেসযোগ্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে পাবলিক ডেটা সেন্টার স্থাপন করা করার প্রস্তাব দিয়েছে ই-ক্যাব। এই উদ্যোগটি সকল প্রাইভেট সেক্টর সংস্থার জন্য তথ্য সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ডেটা লসের প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।

এছাড়াও প্রস্তাবনায় বিশেষ শর্তে বাংলাদেশ থেকে চাকরির আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখা বিদেশী সংস্থাগুলির জন্য ট্যাক্স রিবেট দেওয়ার জন্য বাজেট বরাদ্দ চেয়েছে ই-ক্যাব। ভি.সি. তহবিলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি এবং ভি.সি. প্রদর্শনীর জন্য বছরে ৩ থেকে ৫ টি বৃহৎ মেলা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। দাবি তুলেছে, আইসিটি শিল্পের জন্য বিশেষজ্ঞ ও উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরির বিষয়ে। এজন্য রেন্টাল বেসিসে প্রদানের জন্য হাই-টেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে। সাইবার নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্টদের দক্ষমা উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যোগ্য আইসিটি ও ই-কমার্স কোম্পানীগুলিকে সনাক্তকরণের ও চিহ্নিতকরণের লক্ষে সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।


বিসিএস মহাসচিব সুব্রত সরকার বলেন, আমরা অবশ্যই আইটি বান্ধব বাজেট চাই। আসছে বাহেটে ট্যাক্স ও ভ্যাটে নতুন করে কোনো কর ভার চাই না। হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডে চাই। এইচএস কোড সংশোধন করে যেসব পণ্য কমúিউটার ও প্রযুক্তি সেবার সঙ্গে জড়িত তাতে শুল্ক-সুবিধার অধীনে নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি। একারণেই এবার আমার ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটরকে কমúিউটার পণ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করণেই প্রস্তাব দিয়েছি।

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বাজেটে আমরা কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। এর মধ্যে দেশে উন্নয়ন করা সফটওয়্যারের সুরক্ষায় ক্যাটাগরি ভিত্তিক সফটওয়্যারের ওপর ডিউটি প্রতিবন্ধকতা আরোপের প্রস্তাব করেছি। তবে বিদেশী সফটওয়্যার আমদানিতে বিশেষ করে অপারেটিং সিস্টেম, এন্টিভাইরাস, সিকিউরিটি সফটওয়্যার ইত্যাদিও ওপর যে শুল্ক আছে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরাবরের মতো এবারও আমরা ইন্টারনেট এর ওপর থেকে ভ্যাট মুক্তি সুবিধা চেয়েছি। একইসঙ্গে আশা করছি এবারের বাজেটে এই খাতের শিল্পায়ন রূপান্তরে
থোক বরাদ্দ দেয়া হবে। সেখান থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে।

বাক্য সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে আমরা সরকারের কাছে আগামী ৫ বছরের জন্য ভ্যাট মুক্তি সুবিধা চাইছি। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ওপর যে ভ্যাট রয়েছে সেটা এবং অফিস ইক্যুইপমেন্ট আমদানীতে আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনার বিষয়ে আবেদন করছি। একইসঙ্গে হাইটেক পর্কের কোম্পানি ও কর্মীদের ট্যাক্স সুবিধা দিলে দেশের আউটসোর্সিং খাতটি মেধাভিত্তিক শিল্পায়নের পথে গতি সঞ্চারিত হবে।

আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, সম্মিলিত দাবি পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক বছর ধরেই বাজেট এলেই আমরা ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট মুক্তির কথা শুনে আসছি। এবার এই আশ^াসের বাস্তবায়ন চাই। পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে ভ্যালু চেইনটাতে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রযুক্তি বিকাশ বান্ধব প্রণোদনা সুবিধা চাইছি। ইন্টারনেটের যন্ত্রাংশের ওপর অনেক ক্ষেত্রেই যেমনটা ৪০-৪৫ শতাংশ চড়া আমদানি শুল্ক রয়েছে তার থেকে মুক্তি চাই। এটা না হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া অলীক স্বপ্ন হয়ে থাকবে।

ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন,
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - এপ্রিল সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস