লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
নতুন বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রবণতা
নতুন বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রবণতা
ইমদাদুল হক
মতপ্রকাশ থেকে শুরু করে জনমত তৈরিতে বিশ^জুড়েই মূলধারার মিডিয়াগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে বিকল্পধারার প্রকাশ মাধ্যমগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসি অবস্থানে রয়েছে অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া। শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কেই নয়; সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পছন্দ-অপছন্দে যেমনটায় শক্তিশালী প্রভাবক হয়ে উঠছে; তিমনি ব্যবসায়-অর্থনীতি এমনকি মূল্যবোধেও সমান্তরালভাবে ভাগ বসাচ্ছে। ফলে বিদায়ী বছর জুড়েই দেশে-বিদেশে আলোচনার টেবিলে ঘুরেফিরে থেকেছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আসছে বছরে এই মাধ্যমগুলোই রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবনেও চালকের আসনে চলে আসবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। সঙ্গত কারণেই বার্ষিক কৌশল পরিকল্পনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ, বিপণন উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব এবং পিআর পরামর্শদাতারা আগেভাগেই এর অন্দরে গভীর মনোনিবেশ করতে শুরু করেছেন। এই মাধ্যমের শক্তি, সম্ভাবনা ও সুযোগ, দুর্বলতা এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণ করেই ২০১৯ সালের প্রবণতাকে নিজেদের বশে এনে রূপরেখা তৈরি করছেন।
প্রবণতার ৩ ধরন
২০১৯ সালের সোশ্যাল মিডিয়া প্রবণতাকে তিনটি ভাগে বিন্যস্ত করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। এগুলো হলো তথ্যমুখিতা, প্রযুক্তি প্রকাশ প্রবণতা এবং স্ব-প্রণোদিত পরিবর্তন প্রবণতা। ফলে আসছে বছরের পরিকল্পনায় ডাটার স্বচ্ছতা, বিনিয়োগ প্রত্যাবর্তন মূল্যায়ন, বিপণন/পিআর অন্তর্ভুক্তি, ডাটা পরিপক্বতা প্রবৃদ্ধি, সার্বজনীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মাল্টিমিডিয়ার জয়জয়কার পরিস্থিতি, ভিআর/এআরের প্রভাব, সোশ্যাল স্ট্রিমিং ইত্যাদি বিষয়কে আমলে নিতেই হবে।
তথ্যমুখিতা : আগামী যুগ হবে ডাটা বা তথ্য-উপাত্তনির্ভর। তাই ডাটা মূল্যায়ন ছাড়া কোনো প্রবণতাই অনুমান করা যাবে না। এখানে যেকোনো বিষয়কে মূল্যায়ন করা হবে ডাটার ভিত্তিতে। মানুষের প্রবণতায় প্রচ্ছন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে ডাটার স্বচ্ছতা ও ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সামনের দিনে অনেকের কপালেই ভাঁজ ফেলে দিতে পারে। ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা এবং তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কার্যকর ডাটা প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে বাটে পড়তে হতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, দিন দিন কিন্তু সাধারণের মধ্যে ডাটাবিষয়ক সচেতনতা যেমন বাড়ছে, তেমনি ডাটা আগমনে পথও উন্মুক্ত হচ্ছে। ডাটা এখন আর নির্দিষ্ট ফানেলে বন্দি থাকছে না। তা প্রবাহিত হচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। আবার এর মাথার ওপর সাধারণ তথ্য নিরাপত্তা নীতি ও বিধিমালা জিডিপিআর তথা জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন তো আছেই। তাই তথ্যমুখী এই সময়ে ডাটা ব্যবস্থাপনা করতে হবে খুবই দক্ষতার সাথে। শুধু তাই নয়, কীভাবে ব্যবসায় তথ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তার ওপর ভিত্তি করে বিপণন কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা, ২০১৯ সালে কর্মদক্ষতার মুখ্য (কেপিআই) সূচক বদলে যাবে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ বুঝতে সক্ষম হবে ব্যবসায় এখন ক্রমেই তথ্যমুখী হয়ে পড়ছে। তাই ব্র্যান্ডগুলোকে সঠিক তথ্যের ব্যবহার ও এর স্বচ্ছতায় অভিনিবেশ করতে হবে।
বিগ ডাটা বিগ ইস্যু : বিগ ডাটা। ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এই ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে বিগ ডাটা বিগ ইস্যু হয়ে দেখা দেবে। এই সময়ে তথ্য একদিক দিয়ে যেমন সম্পদ, অন্যদিক দিয়ে আবার দায় হিসেবেও পরিগণিত হবে। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই একটি তথ্যব্যাংক প্রয়োজন হবে। নির্ভরযোগ্য ও বিশ^স্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে বিন্যস্ত করতে হবে এই তথ্যব্যাংকটি। কেননা, অবিশ^স্ত/ডার্টি ডাটার কারণে যেকোনো ব্যবসায় ধস নেমে আসতে পারে। এ বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করে ট্রাস্ট ইনসাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টোফার এস পেন বলেন, বিশে^র প্রায় প্রতিটি কোম্পানির প্রত্যেক স্তরেই কর্মরত ডাটা বিজ্ঞানী, মেশিন লার্নিং অনুশীলনকারীকে বিভিন্ন পক্ষপাত দুষ্ট তথ্য-উপাত্ত আবৃত করে রাখে। তাই কোনোভাবেই যেন পা পিছলে না যায়, সেজন্য স্থানীয় আইন-কানুন ও অনুশাসন এবং নৈতিক মান নির্ধারণের পদ্ধতি তাদের রপ্ত করতে হবে। তথ্যের ওপর কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ওপর নির্ভর করাও যথেষ্ট হবে না। আর কাজটা মোটেই সহজসাধ্য নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা অ্যামাজনকে এক অনাহূত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনায় আক্রান্ত হতে দেখেছি। নারীর বিপরীতে পদ্ধতিগত পক্ষপাত দুষ্টতার কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের এআই পাওয়ারড হায়ারিং অ্যালগরিদম (নিয়োগ সংক্রান্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর অ্যালগরিদম) বাতিল করতে হয়েছে। তাই ব্যবসায়ে টিকে থাকা এবং উন্নতি করতে হলে এআই প্রয়েগের আগেই সঠিক ও মানসম্মত ডাটার জোগান বিষয়ে সোচ্চার থাকতে হবে। তথ্যের পক্ষপাত দুষ্টতা মুক্ত হতে অগ্রসরমান অনুসন্ধান সক্ষমতা থাকতে হবে। তা না করলে বড় ঝুঁকির পাশপাশি বিপত্তির মুখে পড়ার শঙ্কা থেকেই যাবে। উদ্ভূত ও অপ্রত্যাশিত পরিণতি থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত ডাটা থাকার পাশাপাশি এর উচ্চ দৃশ্যমান ক্ষমতা এবং ঝুঁকি সামাল দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
সিরিয়াল মার্কেটার প্রিন্সিপাল ডেভিড বার্কুইজ বলেন, আমার মনে হয়, সামনের দিনগুলোতে ডাটা বা তথ্য থেকে আরো বেশি কিছু খুঁজে পাওয়ার ওপর বেশি আলোকপাত করা হবে। পরিমাণ বা পরিমাপের বাইরেও প্রকৃতপক্ষে তথ্য-উপাত্ত থেকে কী ঘটতে যাচ্ছে তাই বের করে নিতে হবে।
আরওআইয়ে (রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট) গুরুত্ব পাবে সোশ্যাল ও পিআর বাজেট : আসছে দিনগুলোতে ভ্যানিটি ম্যাট্রিক্সের দিন শেষ হয়ে আসছে। আগামীর সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে সবচেয়ে বেশি আলোকপাত ঘটাবে আরওআই মূল্যায়নে। সোশ্যাল ও পিআর কার্যক্রমের প্রতিফল হয়ে উঠবে ব্যবসায় সফলতার উপজীব্য। ২০১৯ সালে প্রচারের সফলতা আরো বাস্তবধর্মী ম্যাট্রিক্স দিয়ে পরিচালিত হবে। আর তা প্রকৃতপক্ষে বিক্রয় কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেবে। বিশে^র ডাকসাইটে মুখ্য বিপণন কর্মকর্তারা (সিএমও) মনে করেন, হালে মার্কেটিং (বিপণন কৌশল) খুব একটা কাজে আসছে না। মানুষ এখন আর বিজ্ঞাপন দেখে খুব একটা প্রভাবিত হয় না। জিডিপিআর তথা জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন ই-মেইল মার্কেটিংকে অনেকটাই বিদায় জানাতে চলেছে। ইভেন্টগুলোও এখন বিক্রয়কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কোম্পানিগুলো যে কতটা আগ্রাসী তা প্রতিভাত হচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রমাণিত হয়েছে, বিজ্ঞাপনের চেয়ে কর্পোরেট কনটেন্ট অধিক শক্তিশালী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রেতা-ভোক্তা আকর্ষণ ব্যয়সাশ্রয়ী। আবার এই ফানেল থেকে প্রলুব্ধ হয়ে অনুগামীরা সহজেই ক্রেতায় পরিণত হয়। ২০১৯ সালে সোশ্যাল মিডিয়ামুখিতা প্রবল হবে। সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সোশ্যাল সেলিং (বিক্রয়) কৌশল ধারণ করবে। বেশিরভাগ কোম্পানি ও ব্র্যান্ড সোশ্যাল মার্কেটিং ও সেলসকেন্দ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
স্যাপ গ্লোবাল মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ডাটা ড্রাইভেন মার্কেটিং বিভাগের প্রধান জেরি নিকোলাস বলেন, প্রতিটি ব্র্যান্ডের ‘সার্বক্ষণিক’ খ্যাতি মূল্যায়ন ফ্রেমওয়ার্ক থাকে। মার্কেটিং এবং পিআর টিমকে তাই ‘সি’ স্যুটকে স্পষ্ট, পরিমাণযোগ্য এবং প্রাসঙ্গিক উপায়ে কীভাবে অবদান রাখছে তা-ই প্রাধান্য পাবে। দীর্ঘমেয়াদি (সামগ্রিক ব্র্যান্ড খ্যাতি) ও স্বল্পমেয়াদি (সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অর্জিত ব্র্যান্ড খ্যাতি, সংবেদনশীলতা) কেপিআই বিবেচনায় নিয়েই এগোতে হবে। কেপিআই হতে হবে সুসঙ্গায়িত, দৃশ্যমান ও ফ্যাক্টভিত্তিক। আর সবটাই আসতে হবে একক একটি উৎস থেকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিস্টিনা গার্নেট মনে করেন, ভ্যানিটি ম্যাট্রিক্স ও প্রকৃত আরওআইয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। ইউনিলিভার ও উচ্চপর্যায়ের এমন আরো কিছু ব্র্যান্ড বেশ কিছু প্রভাব বিস্তারকারী অনুষঙ্গ ব্যবহার তামাদি করে ফেলেছে। এরা ভবিষ্যতে আর কোনো ইনফ্লুয়েন্সিয়াল (প্রভাবকসমূহ) ব্যবহার করবে না। টুইটারের সাথে এখন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও বট অথবা টুলস ব্যবহার করে যে, মিথ্যা প্রবৃদ্ধি তৈরি করা হয়েছিল তা মুছে ফেলা হচ্ছে।
আসল বনাম নকল সংখ্যার দিন শেষ হয়ে এসেছে। একই সময়ে ভিডিও ভিউ ম্যানিপুলেট করার দায়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকছে বিজ্ঞাপনদাতারা। তাই আমরা এখন আর সংখ্যাকে বিশ্বাস করি না। তথ্য বিশ্লেষণ ও এর গুণাবলি নির্ণয়ে বিজ্ঞাপনদাতা বা ব্র্যান্ডগুলো ভুয়া ফলোয়ার যাচাই করতে স্পার্কট্রোর মতো তৃতীয় পক্ষের টুলকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। যে উপাদনগুলো সত্যিকার অর্থে আরওআই সরবরাহ করতে পারে, এই সময়ে সে দিকটাতেই অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
বিপণনে পিআর : আগামীতে মার্কেটিং বা বিপণন কৌশলে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে হাজির হবে পিআর বা গণযোগাযোগ কৌশল। কেপিআই এবং মেট্রিক্সের মধ্যে সমান্তরাল সংযোগের ক্ষেত্রে বিপণন এবং গণযোগাযোগ আগামীতে আরো সংঘবদ্ধ হবে। অর্থাৎ সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্র্যান্ড ও কৌশল হবে আরো ঘনিষ্ঠ। আর এ দুটি নিয়ামকই পরিচালিত হবে একক উৎসের প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। পিআর ভ্যালু মূল্যায়ন করতে চাইলে অবশ্যই বিপণন প্রচেষ্টার সমান্তরালেই কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে স্পিন ডাকের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক গিনি ডিয়েরিচ বলেন, ডাটার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়াকেই আমি বেশি যৌক্তিক মনে করি। আমি এর বড় সমর্থকও বলতে পারেন। আমি মনে করি, আরও ১০ বছর আগেই পিআর শিল্পটি দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল। মার্কেটিংয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কথা ছিল। ডাটা দিয়ে কী করতে হয়, কিংবা কীভাবে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়. আমাদের বিপণন বন্ধুরা তা নিশ্চয় জানেন। তাদেরকে তাই পিআর মার্কেটিংয়ের সাথে আরো বেশি সংহত হতে হবে। যদি না একটি কোম্পানির বুদ্ধিদীপ্ত ও চৌকস মার্কেটিং পিআর টিম না থাকে, তাহলে বড় মাশুল দিতে হতে পারে।
ডাটার পরিপক্বতা : আসছে বছর এন্টারপ্রাইজ ব্যবসায়গুলো ডাটার পরিপক্বতার (ম্যাচিউরিটি) বিষয়ে বেশি ফোকাস করবে। কৌশল নির্ধারণ এবং ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে এক সেট ডাটাই পরিশেষে ব্র্র্যান্ডকে ধারণ করবে। তাই যতটা দক্ষতার সাথে ডাটা ব্যবস্থাপনা করাটা এখানে মুখ্য হয়ে উঠবে।
টকওয়াকারের কো-ফাউন্ডার ক্রিস্টোফার ফসেট বলেন, ২০১৯ সালে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাটার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। বিশ্ব খুব দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো দক্ষতার সাথে ডাটার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্র্যান্ডের দিক থেকেই বেঞ্চমার্ক এবং ভোক্তামুখী ডাটাকে পরিষ্কারভাবে সঙ্গায়িত করতে হবে। ব্র্যান্ডের সব দিকে কেপিআইগুলো সারিবদ্ধ করে স্পষ্টভাবে সঙ্গায়িত বেঞ্চমার্ক ও গ্রাহকভিত্তিক ডেট সেটগুলো আগামী বছরে ব্যবসায় স্কেলিংয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। আমরা এখন ক্রমবর্ধমান সামাজিক ডাটার পরিপক্বতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেই ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির ধারণা নিতে পারছি। তাই ব্র্যান্ডগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কিপিআই ও মেট্রিকগুলোর ঝুঁকি অনুধাবন করতে পারবে শুধু তখনই সারা বিপণন ও পিআর প্রচেষ্টা সত্যিকারভাবে আরওআই সঙ্গায়িত করতে পারবে।
ডিজিটাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জায়গার সুইনি বার্ক দীর্ঘদিন ধরেই মার্কেটার ও ব্র্যান্ডের জন্য ডাটা কাঁটা হয়ে দেখা দিচ্ছে। ২০১৯ সালে এই ডাটাই ম্যাট্রিক্সকে আলিঙ্গনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। চ্যানেল এবং ডিভাইস থেকে যথাযথ ট্রাকিংসহ সিঙ্গেল ভিউ ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে ফলাফলগুলো আরো ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবে। ম্যাট্রিক্সের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবনে তথ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও নির্ভরতা আরো বাড়বে। ক্রস চ্যানেল ও ক্রস ডিভাইস বাজারকারীদের ভালো অভিজ্ঞতা তৈরির আচরণ ব্যাখ্যা করার জন্য অনুমতি দেবে। আসছে ডিজিটাল যুগ ভোক্তাদের একটি অবিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতায় সিক্ত করবে।
প্রযুক্তির আবাহন : প্রতিদিনই এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি। ২০১৮ সাল জুড়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং লাইভ স্ট্রিমিং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটপ্লেসকে শাসন করেছে। আসছে বছরে বিপণনকর্মী ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেট নেটওয়ার্কে তাদের অগ্রগতিগুলোকে ব্র্যান্ডের সাথে সংহত করবে।
সবার জন্য এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আসছে বছরে বাজারজাতকারীদের জন্য শাপেবর হবে। বড় পরিসরের ডাটা ব্যবস্থাপনায় বাস্তবভিত্তিক সমাধানে সহায়তা করবে। এটা এআই মার্কেটিংয়ের জন্য দ্রুততর ব্র্যান্ড ইনসাইট ক্ষমতায়নের পথ খুলে দেবে। আসছে বছরে মার্কেটিং ও গণযোগাযোগে এআই বড় ধরনের অবদান রাখবে বলে মনে করছেন গ্যারেট পাবলিক রিলেশনের মাইকেল গ্যারেট।
মাল্টিমিডিয়া অনুসন্ধান : আসছে বছরে বাজারকে নাড়া দেবে মাল্টিমিডিয়া অনুসন্ধান। সেই ধারায় ইতোমধ্যেই নিজ নিজ অক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অ্যালেক্সা ও গুগল অ্যাসিসট্যান্স। ক্ষণস্থায়ী কনটেন্টের প্রবৃদ্ধি এবং অনুসন্ধানের পথও পরিবর্তীতে হতে চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা ইমেজ রিকগনিশনের প্রতি অনুরক্ত হয়েছি। ইন্টারনেটে লোগোর মাধ্যমে ব্র্যান্ড ও পণ্য অনুসন্ধান বিষয়টি এখনো নতুন বলা চলে। অবশ্য অতি সম্প্রতি অ্যামাজানের সাথে ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান প্রযুক্তির ঘোষণা দিয়েছে
স্ন্যাপচ্যাট।স্ন্যাপচ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে আসছে বছরে খুব সহজেই সরাসরি কেনাকাটা করা যাবে। এই প্রযুক্তিতে বন্ধুর পায়ের ছবিটি তুলে তা স্ন্যাপচ্যাটে দিতেই অ্যামাজনে ওই ব্র্যান্ড ও মডেলের জুতা জোড়া হাজির হবে এর প্রোডাক্ট পেজে।
ভার্চুয়াল ভিন্নতা : নতুন বাস্তবতা নিয়েই ডিজিটাল জীবনশৈলীকে স্বাগত জানাবে ২০১৯ সাল। এ বছরটি হবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর)/ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর)। ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্স বাড়বে। আর আগামী বছরে ভিআর বিদায় নেবে। অর্থাৎ বছরটি হবে অগমেন্টেড রিয়েলিটির। সোশ্যাল মিডিয়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে রূপান্তরিত হবে। এটি একটি কিলার অ্যাপ হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারে।
স্ট্রিমিংয়ে পরিবর্তনের হাওয়া : আগামী বছর অ্যামাজন এবং নেটফ্লিস্কের মতো স্ট্রিমিং সেবা সংস্থাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ফেসবুক ও স্ন্যাপচ্যাট অরিজিনাল কনটেন্টে নিয়ে তাদের লাইভ ভিডিও কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। যুক্তরষ্ট্রের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষই এখন স্ট্রিমিং সেবা ব্যবহার করে। ২০১৯ সালে যদি সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলো নিজস্ব কনটেন্ট নিয়ে স্ট্রিমিং অপশন চালু করে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। টকওয়াকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেনা মেলনিকোভা বলেন, এই প্রজন্মের শীতল মুহূর্তে উষ্ণ করছে স্ট্রিমিং। এবং এই নতুন চ্যানেলে স্পন্সরশিপের মাধ্যমে পণ্য প্লেসমেন্ট এবং সামাজিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি অনুরক্ত করে তুলবে। আবেগ অনুভূতিকে নাড়া দেবে। এই সুযোগটা আগেভাগে গ্রহণ করতে পারাটা ঝক্কির বিষয়ও বটে।
স্ব-পুজ্য সমাজ : পাল্টে যাচ্ছে সমাজ। নতুন প্রজন্মের চোখে নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা। আছে নতুন মার্কেটিং চ্যানেল ও চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ সালে মার্কেটিংয়ে ক্ষুদ্র প্রভাব বিস্তারকারী এবং উদ্যোক্তারা বড় ভূমিকা রাখবে। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরা অডিয়েন্সের সাথে আরো নিবিড় হবে।
প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তি প্রবণতা : ডাটা যে আগামী যুগকে শাসন করবে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই আজ। তাই ডাটানির্ভর প্রযুক্তির মাধ্যমে তা প্রকাশের প্রবণতায় কিছু পরিবর্তন আসবে।
স্ব-প্রণোদিত পরিবর্তন : ডাটা ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে স্ব-প্রণোদিতভাবেই সামাজিক কিছু পরিবর্তন ঘটবে। সন্তর্পণে ঘটমান এই পরিবর্তন বিপণন ক্ষেত্রে দারুণ প্রভাব ফেলবে। তাই ২০১৯ সালের পরিকল্পনাকে সাজাতে হলে আগেভাগেই ওই সময়ের মানুষের আচরণ ও কর্ম-প্রবণতাকে আবিষ্কার করতে হবে