• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ৫জি নেটওয়ার্কে স্বাগতম
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
৫জি নেটওয়ার্কে স্বাগতম
৫জি নেটওয়ার্কে স্বাগতম
ইমদাদুল হক

বেতার রঙের রঙিন জীবনে একাকার আজ বিশ্ব। এই তরঙ্গের ফেনিল উচ্ছাসে এক বিনে সুতোতেই গ্রন্থিত হচ্ছে বিশ্ব-সমাজ। এই জালে মিলেমিশে একাকার হচ্ছে গাড়ি-বাড়ি, গেরস্থালি কাজ থেকে ব্যবসায়িক বৃত্তি; বাজার সদাই, চিকিৎসা; এমনকি ছুঁয়ে দিচ্ছে আমাদের আগামীর স্বপ্নগুলোও। এই বেতার তরঙ্গের প্রধানতম ভেলা হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। শুধু কি তাই? স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধাযুক্ত গাড়ি-বাড়ি, বৈদ্যুতিক কিংবা পানির মিটার, পর্দা, ফ্রিজ, ক্যামেরা, ঘড়ি স্বাচ্ছন্দ্যময় ব্যবহারে তারহীন বেতার তরঙ্গ সংযোগ (মোবাইল নেটওয়ার্ক) তথা ইন্টারনেটের কদর ক্রমেই বাড়ছে। একই সাথে আরো বেশি ব্যান্ডউইডথ খরচ করছে। বাড়ছে ইন্টারনেট খরচও। তারপরও প্রান্তিক মানুষের কাছে তারহীন প্রযুক্তির উচ্চগতির ইন্টারনেট এখন সবচেয়ে আরাধ্য। এমন পরিস্থিতিতে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ জয় করতে ইতোমধ্যেই চারটি ধাপ পেরিয়ে এবার বৈপ্লবিক সমৃদ্ধি আসছে ওয়্যারলেস ইন্টারনেটে। একসাথে আরো বেশি ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ৫জি কিছু অসাধারণ প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটদের পাশাপাশি শিল্পক্ষেত্রে (আইওটি), এন্টারপ্রাইজ নেটওয়র্কিং এবং জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক হিসেবে ৫জি প্রয়োগের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

চলতি মাসেই দেশে ৫জি পর্যবেক্ষণ

স্যামসাং, ইন্টেল, কোয়ালকম, নোকিয়া, হুয়াওয়ে, এরিকসন, জেডটিই এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ২০১৭ সাল থেকে ৫জি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০ সাল নাগাদ ৫জি-কে বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বব্যাপী উপলভ্য করার পরিকল্পনা নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য চলতি বছরের শীতকালীন অলিম্পিকে দর্শকদের ৫জি অভিজ্ঞতা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এপ্রিলে ৫জি উদ্ভাবন করার জন্য জেফ ব্রাউন ও মেশিন-টু-মেশিন ইন্টেলিজেন্স আউটপুট (এম২এমআইও) কর্পোরেশনের সাথে অংশীদার হয় নাসা। অপরদিকে এ বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের স্যাক্রামেন্টো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ইন্ডিয়ানাপলিস এবং হিউস্টনে পঞ্চম প্রজন্মের তারহীন ইন্টারনেট সেবা চালুর পরিকল্পনা নেয় মার্কিন টেলিসেবা প্রতিষ্ঠান ভেরিজোন। এসব ডামাডোলকে পেছনে ফেলে ৫জি দৌড়ে এগিয়ে যায় চীন। ২০১৫ সালে নিজ দেশে এই সেবা চালু করে। আর এক বছর পর ২০১৬ সালে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে এই সেবা চালু করা হয়। ভেরিজোন আর এটিঅ্যান্ডটির মাধ্যমে এখন ৫জি নেটওয়ার্কের অধীনে চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহর। মেক্সিকোতে সেবা দিচ্ছে অ্যামেরিকা মোভিল। চিলিকে ৫জি জালে নিচ্ছে এরিকসন। ব্রাজিলে এই সেবা দিচ্ছে কোয়ালকম। ২০১৬ সালে সবার আগে বাণিজ্যিকভাবে কাতারে ৫জি সেবা চালু করে ওরিদু।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এই সেবা চালু করেছে পাকিস্তান। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে ৫জি কার্যক্রম। জাপান এমনকি তুরস্কেও চালু হয়েছে ৫জি নেটওয়ার্ক সেবা। এশিয়ান গেমসে ৫জি’র স্বাদ দেয় ইন্দোনেশিয়া। সম্প্রতি বিশ^কাপ ফুটবল উপলক্ষে রাশিয়া উদ্বোধন করেছে ৫জি নেটওয়ার্ক। ধারণা করা হচ্ছে, ৫জি’র বাণিজ্যিক সেবা চালু করতে ২০২০ সালের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার সফলতা আসবে এ বছরই। আর এক্ষেত্রে চালকের আসনে থাকছে চীন, দক্ষিণ করিয়া। এর পরের অবস্থানে থাকছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। এদিকে নেতৃত্বস্থানে থাকা চীনের সাথে মিলিয়ে চলতি মাস থেকেই সেই ঈপ্সিত বন্দরে ছাপ রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৫জি তথা আগামী প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কের পরীক্ষামূলক যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণায়ণালয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। পর্যবেক্ষণ চালাতে ৫জি নেটওয়ার্ক গবেষণা, উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে অগ্রজ প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পরীক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনার অনুমতি দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছে বিটিআরসি। এ বিষয়ে বিটিআরসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক কমপিউটার জগৎকে বলেন, বাংলদেশে ৫জি’র সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিটিআরসির পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ মাসেই বাংলাদেশে ৫জি’র সম্ভাব্যতা যাচাই করবে চীনের টেলিকম নেটওয়ার্ক ও হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। এই যাচাইকরণে অবকাঠামোগত সুবিধা এবং কারিগরি দিকটি যাচাই করা হবে।
দেশে ৫জি সেবার বিষয় নিয়ে কথা হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সাথে। তিনি বলেন, জুলাইয়ে দেশে ৫জি সেবার পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালু হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। মূলত আমরা বাংলাদেশে ৫জি’র সম্ভাব্যতা যাচাই করতে যাচ্ছি। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই ৫জি নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষণ শুরু হবে। এটি মূলত নিজেদেরকে প্রস্তুত করার একটি মিশন। আর এই কাজটি করবে হুওয়ায়ে।
তিনি আরও বলেন, হুয়াওয়ে বড় মাপের একটি গ্লোবাল আইসিটি কোম্পানি। ওয়ার্ল্ড জিএসএমএ সম্মেলনে এই কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থাপনা দেখেছি। এরা ৫জি নিয়ে বড় মাপের কাজ করছে। বাংলাদেশে আমাদের টার্গেট হচ্ছে ২০২১ সালে ৫জি সেবা চালু করা। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে এই সর্বাধুনিক সেবা চালু করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পর্যবেক্ষণ শেষেই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশ্লেষক সময় টিভি’র সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, কম লিট্যান্সিতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধাই হচ্ছে ৫জি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে ধরা দেবে। অন্যদিকে প্রযুক্তি সুবিধার কারণে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে হুমকিতে ফেলতে পারে। অবশ্য সেটা মুখ্য বিষয় নয়। কেননা শিক্ষা, টেলিমেডিসিন, ভিডিও কনফারেন্সিং, টেলিভিশন ডিস্ট্রিবিউশন, ভার্চ্যুয়াল বাজার, ব্যাংকিং খাত, প্রাইভেট নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক সুবিধা নিয়ে আসবে ৫জি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তারহীন প্রযুক্তি ও উচ্চগতির কারণে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিক উভয় দিক দিয়েই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা আবেদন হারাবে। অন্যদিকে যেহেতু এখনও আইটিইউ ৫জি’র ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ফ্রিকোয়েন্সি ঘোষণা দেয়নি, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ৪.৫ থেকে ৫.৫ হয়, তবে খরচের কারণে তা ব্যবসায় সফল হবে না।

খাত-সংশ্লিষ্টদের মতে, পর্যবেক্ষণ কিংবা পরীক্ষামূলক যাচাই যাই বলি না কেন, সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে এতটুকু স্পষ্ট হয়েছে, অচিরেই পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কেননা, ইতোমধ্যেই দেশের নাগরিকদের হাতে পৌঁছতে শুরু করেছে ৪জি সেবা। এই নেটওয়ার্কে সীমিত পরিসরে হলেও ইতোমধ্যে শতাধিক মোবাইল ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোনি, গেমিং সেবা, এইচডিটিভি, হাই-ডেফিনিশন মোবাইল টিভি, ভিডিও কনফারেন্স, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন এবং ক্লাউড কমপিউটিং উপভোগ করতে শুরু করেছেন অনেকেই।

হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন ও ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রাহকেরা। এই প্রযুক্তিতে গ্রাহক সব সময়ই মোবাইল অনলাইন ব্রডব্যান্ডের আওতায় থাকতে পারছেন। ফোরজির কল্যাণে মোবাইলে কথোপকথন ও তথ্য বিনিময়ের বাড়তি নিরাপত্তা লাভ করছেন। এ ছাড়া ভয়েস মেসেজ, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ, ফ্যাক্স, অডিও-ভিডিও রেকর্ডিংসহ নানা ধরনের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন ফোরজি মোবাইল গ্রাহকেরা। অবশ্য এই সেবাগুলো মিলছে একেবারেই সীমিত পরিসরে। দেশজুড়ে এখনও থ্রিজি সেবার সুফল পাচ্ছেন না প্রান্তিক ব্যবহারকারীরা। ২জি-৩জি আর ৪জি’র লুকোচুরি খেলার মধ্য দিয়েই দিন যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতে ৫জি শুধুই মোবাইল অপারেটরদের কাছে আরেকটি মার্কেটিং টার্ম কি না এমন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। না, বিষয়টি মোটেই তা নয়। তাহলে আসুন ৫জি বিষয়ে একটু ভালোভাবে জেনে নেয়া যাক।

৫জি কী?

৪জি, এলটিই, ভিওএলটিই এই সবগুলোই হলো ৪জি সেলুলার নেটওয়ার্কের বিভিন্ন নাম। আর এর মাধ্যমে আমরা অনেকেই উচ্চগতির ডাটা অ্যাক্সেস সুবিধা ভোগ করছি। ৫জি বিদ্যমান ৪জি নেটওয়ার্ক থেকে একটি আপগ্রেড ভার্সনের মতো শোনালেও এটি আমাদের ভাবনার থেকেও আরো বেশি কিছু। এটি হতে যাচ্ছে সেলুলার নেটওয়ার্কের বিপ্লব এবং যোগাযোগের জন্য একটি সীমান্তহীন মাধ্যম।

৫জিতে ‘জি’ অর্থে অবশ্যই ‘জেনারেশন’কে বোঝানো হয়। আর ওয়্যারলেস কোম্পানিগুলো সেই হিসেবে ১জি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর আসে ২জি, যেখানে প্রথমবারের মতো দুটি মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে টেক্সট ম্যাসেজ পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। তারপর এসেছিল ৩জি, যা টেক্সট ম্যাসেজ, কল, ইন্টারনেট ইত্যাদি আগের তুলনায় একটু ভিন্নভাবে ব্রাউজ করার সুবিধা করে দিয়েছিল। ৪জিতে ৩জির সব সুবিধাই বিদ্যমান রয়েছে, শুধু আরো স্পিড বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সহজেই যেকোনো বড় সাইজের ফাইল শেয়ার এবং একসাথে অনেকগুলো ডিভাইস কানেক্ট করা সম্ভব হয়। এরপর ৪জিকে আরো দ্রুত করার জন্য এলটিই প্রযুক্তি সামনে চলে আসে, যেটা ৪জি প্রযুক্তিকে করেছিল আরো সমৃদ্ধ। বর্তমান ৪জি প্রযুক্তি থেকে ৫জিতে ব্যান্ডউইডথ গতি কয়েকগুণে বেশি। সাধারণভাবে এই প্রযুক্তিতে ১-১০+ গিগাবিট/সেকেন্ড গতি পাওয়া সম্ভব।

প্রাথমিকভাবে ৫জি-তে অন্তর্গত প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে মিলিমিটার তরঙ্গ ব্যান্ডের প্রণয়ন (২৬, ২৪, ৩৮ এবং ৬০ গিগাহার্টজ), যা প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবিট (গিগাবাইট/সেকেন্ড) গতি প্রদানে সক্ষম; বৃহৎ পরিসরের এমআইএমও (মাল্টিপল ইনপুট মাল্টিপল আউটপুট ৬৪-২৫৬ অ্যান্টেনা), যা ৪জি’র ন্যূনতম ১০ গুণ বেশি কর্মক্ষমতা প্রদানে সক্ষম; লো-ব্যান্ড ৫জি এবং মিড-ব্যান্ড ৫জি, ৬০০ মেগাহার্টজ থেকে ৬ গিগাহার্টজ, বিশেষ করে ৩.৫-৪.২ গিগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। উইকি বিশ^কোষ মতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থার্ড জেনারেশন পার্টনারশিপের মাধ্যমে (৩জিপিপি) ৫জি’র সাধারণ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকে আইটিইউর আইএমটি-২০২০ সংজ্ঞা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, যা উচ্চতর গতির জন্য উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলো ব্যবহারে নির্দেশ করে।

মিলিমিটার তরঙ্গ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে ডাউনলোডের গতি সর্বোচ্চ ২০ গিগাবাইট/সেকেন্ড অর্জনের জন্য। এগুলোর আনুমানিক গড় গতিসীমা ৩.৫ গিগাবাইট/সেকেন্ড। অতিরিক্ত বৃহৎ এমআইএমও এন্টেনা সহকারে, ৩.৫-৪.২ গিগাহার্টজ তরঙ্গের ব্যান্ডটির আনুমানিক মিডিয়ান ব্যান্ডউইডথ প্রতি সেকেন্ডে ৪৯০ মেগাবাইট। মিড-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রণীত ৫জি’র গতি এলটিএ গতির অনুরূপ, যখন একই ব্যান্ডউইডথ এবং অ্যান্টেনা কনফিগারেশন ব্যবহার হয়। অবশ্য বেশিরভাগ বড় মোবাইল নেটওয়ার্ক মূলত তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করছে। ভেরিজোন এবং এটিঅ্যান্ডটি ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে মিলিমিটার তরঙ্গ ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৬ সালে শুরু থেকে বৃহৎ পরিসরের এমআইএমও ব্যবহার করে আসছে সফটব্যাংক। এছাড়া ২০১৮ সালে ২.৫ গিগাহার্টজ (মিড-ব্যান্ড) ৫জি নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে স্প্রিন্ট। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি শহরে লো-ব্যান্ডের ৫জি প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে টি-মোবাইল। মিড-ব্যান্ড হবে চায়না টেলিকমের প্রাথমিক ধাপের ৫জি।

কেন ৫জি?

সময়ের ভেলায় চেপে আজ একই সাথে সব ডিভাইসকে একত্রে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিকাশ ঘটছে পরিধেয় প্রযুক্তির। ইন্টারনেটে সংযুক্ত হচ্ছে ঘর-অফিস-মাঠ-ময়দান। ফলে যেখানে আরো বেশি ডিভাইসকে একত্রে কানেক্ট করানোর প্রশ্ন আসছে এবং যেখানে প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে আরো বেশি ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের, সেখানে অবশ্যই এমন কোনো প্রযুক্তি প্রয়োজন, যা আরো বেশি ব্যান্ডউইডথ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। আর বলতে পারেন মূলত এই বিষয়ের ওপর লক্ষ করেই ৫জি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছে।

কীভাবে কাজ করে?

যখন আপনি সেলফোন ব্যবহার করে কাউকে কল করেন কিংবা কাউকে কোনো ম্যাসেজ করেন, তখন আপনার সেলফোন থেকে একটি ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গ বের হয়ে আপনার নিকটস্থ সেলফোন টাওয়ারে আঘাত হানে। সেলফোন টাওয়ার সেই সিগন্যালকে আপনার বন্ধুর ফোন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। শুধু কল করা বা টেক্সট ম্যাসেজ নয়, আপনি যখন অন্যান্য যেকোনো ডাটা (যেমনÑ ফটো, ভিডিও) সেন্ড বা রিসিভ করেন তখনও ঠিক একই পদ্ধতিতে কাজ হয়। সাধারণত নতুন কোনো ওয়্যারলেস প্রযুক্তি আসার পরে সেই প্রযুক্তিকে ঠিকঠাক হ্যান্ডেল করার জন্য হাইয়ার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ৪জি প্রযুক্তি অপারেট করতে ২০ মেগাহার্টজ পর্যন্ত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ৫জিতে ৬ গিগাহার্টজ পর্যন্ত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে কাজ করানো যাবে। নতুন ওয়্যারলেস প্রযুক্তি সব সময় বেশি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের কারণ হলো, এতে এটি আরো বেশি ব্যান্ডউইডথ ট্র্যান্সফার করার ক্ষমতা প্রদান করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ালে ব্যান্ডউইডথ গতি তো বাড়ে, কিন্তু সাথে সাথে রেডিও সিগন্যালের রেঞ্জ কমে যায়। এজন্য অনেকগুলো ইনপুট এবং আউটপুট অ্যান্টেনা ব্যবহার করে সিগন্যালকে বুস্ট করিয়ে কাজ করা হয়।

শুধু হাই ব্যান্ডউইডথ নয়, এই প্রযুক্তিতে একত্রে অনেকগুলো ডিভাইস কানেক্ট করে রাখার জন্যও বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। চিন্তা করে দেখুন, ইন্টারনেট অব থিংসের কথা, যেখানে আপনার বাড়ির প্রত্যেকটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস বা ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস একসাথে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকবে। ৩জি বা ৪জির মতো ৫জি প্রযুক্তি শুধু সেলফোন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। আপনার ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটেও ৫জি চিপ লাগানো যেতে পারে এবং আপনার কমপিউটারেও একটি চিপ লাগানো থাকবে। ফলে ডিভাইস দুটি সহজেই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। ৫জি প্রযুক্তি শুধু ফোন আর সেলফোন নেটওয়ার্কে নয় বরং ওয়াইফাইয়ের মতো উভয় ডিভাইসকে সংযুক্ত করতে যেকোনো ডিভাইসে থাকতে পারে। এই ক্ষিপ্রগতির নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি আপনার জীবনকে আরো বেশি সহজ করে তুলবে। শুধু ৫জি মডেম কমপিউটার বা রাউটারের সাথে সংযুক্ত করতেই সেকেন্ডে গিগাবিট গতির ইন্টারনেট উপভোগ করা যাবে একসাথে অনেক ডিভাইসে।

৫জি’র নন্দনতত্ত¡
মূলত Massive MIMO standard ব্যবহার করে থাকে ৫জি। এর বদৌলতেই ৫জি’র গতি এতোটা ক্ষিপ্র এবং নির্ভরযোগ্য। যদিও গওগঙ বা একাধিক-ইনপুট একাধিক-আউটপুট (Multiple-input multiple-output) মান নতুন কিছু নয়। সিস্টেমটি ইতোমধ্যেই কিছু বর্তমান প্রজন্মের নেটওয়ার্কে ব্যবহার হচ্ছে। যাই হোক, ৫জি’র মাধ্যমে Massive MIMO নামের একটি উন্নত মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে একটি সাধারণ মানসম্মত MIMO নেটওয়ার্ক দুই থেকে চারটি অ্যান্টেনা ব্যবহার করে থাকে, সেখানে ৫জি নেটওয়ার্ক Massive MIMO ৯৬ থেকে ১২৮টি পর্যন্ত অ্যান্টেনা প্রদর্শিত করে থাকে। বহুবিধ অ্যান্টেনাগুলো আরো ভালো এবং দ্রুত তথ্য বিনিময় ঘটায়, যা একে সবদিক দিয়ে একটি উত্তম বিকল্প হিসেবে প্রমাণ করে। দিতে পারে কিছু বাড়তি সুবিধা।

উদ্দীপ্ত দ্রুত ইন্টারনেট : একটি দৃশ্য কল্পনা করুন, যেখানে আপনি ৪ জিবি সাইজের একটি সিনেমা ডাউনলোড করবেন। যেখানে ৩জি-তে এই মুভি ডাউনলোড করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে, ৪জি নেটওয়র্কে এটি ডাউনলোড হতে কয়েক ঘণ্টা সময় নেবে এবং ৫জি-তে এটি ডাউনলোড হবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে। অর্থাৎ ৫জি নেটওয়ার্কের সুস্পষ্ট সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম ১০০ গুণ বেশি গতি বাড়া। ৪জি নেটওয়ার্ক যেখানে সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৫ এমবি পর্যন্ত গতি প্রদান করতে সক্ষম হয়, সেখানে ৫জি-তে প্রাপ্ত ইন্টারনেট গতির গড়-মান সেকেন্ডে প্রায় ১০ গিাগাবাইট। সবচেতে মজার ব্যাপার, ৫জি-তে লিট্যান্সি মাত্র ১ মিলি সেকেন্ডের হয়ে থাকে। বুঝতেই তো পারছেন, ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে অনেকটা নাটকীয়রূপে ইন্টারনেট গতি বেড়ে যাবে। কীভাবে বাড়বে? যখন একটি ডিভাইস আরেকটির সাথে সংযুক্ত থাকবে, এমন কিছু সময়ে ল্যাটেন্সি অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যেমনÑ সেলফ ড্রাইভিং কারের কথাই ভাবুন। যেখানে একটি সেলফ ড্রাইভিং কারের সাথে আরেকটির কানেক্টেড থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেখানে কয়েক মিলি সেকেন্ডের বেশি ল্যাটেন্সি প্রাণঘাতি প্রমাণিত হতে পারে। ৫জি প্রযুক্তি প্রত্যেকটি ডিভাইসের নিজেদের মধ্যে আরো পারফেক্ট সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করতে পারে।

তারহীন ইন্টারনেট বিপ্লব : বলুন তো কোন স্থানে নেটওয়ার্কে স্বাভাবিক গতিপ্রাপ্তি হওয়ার পরও আপনাকে কতটা ধীরগতির মুখোমুখি হতে হয়? এই যে ধীরগতি, তা কিন্তু ইন্টারনেটজনিত ত্রুটি বা ডাটা ব্যান্ডউইডথের জন্য নয়, এটি ঘটে থাকে এর জটিল হস্তান্তর পদ্ধতির কারণে। তাই যেখানে ইন্টারনেট গতি নিশ্চিতভাবেই চমৎকার, সেখানে ৫জি নেটওয়ার্ক তার সাথে আরো অনেকগুলো সুবিধা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। এই নেটওয়ার্কে ১০০ গুণ বেশি ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকবে। অন্য ব্যবহারকারীদের কার্য সম্পাদনের গতিতে কোনো বাধা তৈরি না করেই আরো বেশি লোক বা ডিভাইস এই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে সক্ষম হবে। সাথে মিলবে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের ক্ষমতা।

খরচ কম : ৫জি প্রযুক্তিতে আরেকটি বিরাট ফিচার হচ্ছে এটি ৯০ শতাংশ কম এনার্জি ব্যয় করে কাজ করবে। যারা ৩জি বা ৪জি-তে সেলুলার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তারা নিশ্চয় জানেন যে, ইন্টারনেট কানেক্ট হওয়ার পড়ে কত দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায়। কিন্তু ৫জি-তে এমনটা হবে না। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকটা ওয়াইফাই ব্যবহার করার মতো চার্জ ব্যয় হতে পারে। অপরদিকে ইন্টারনেট ব্যবহার মূল্যও কমে আসবে এই ৫জি-তে। আশা করা যায়, মোবাইল ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো আর ২০০-৩০০ টাকায় ১ জিবি বিক্রির কথা চিন্তা করবে না, তাদের ব্যান্ডউইডথের দাম কমাতেই হবে, তাছাড়া পাবলিক এত ব্যান্ডউইডথ খরচ করবে কীভাবে? আর যদি আমরা সত্যিই অনেক ভাগ্যবান হয়ে থাকি, তবে ৫জি আসার পর ফায়ার ইউজ পলিসি বাদ দিয়ে মোবাইল ইন্টারনেটে সত্যিকারের আনলিমিটেড প্ল্যান দেখতে পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া এই একটি নেটওয়ার্ক দিয়ে কথা বলার পাশাপাশি ভিডিও বৈঠক, টিভি দেখা, গেম খেলা, ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজন হবে না আলাদা আলাদা সংযোগ ব্যয়।

৫জি : প্রযুক্তির চেয়েও বড় কিছু

৫জি শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি আসলে একের মধ্যে কয়েকটি প্রযুক্তির সমন্বয়। এ এমন এক পর্যায়, যা স্মার্ট এবং সর্বাধিক দক্ষতা প্রাপ্তির জন্য কখন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এ ব্যাপারে অবগত। এর ফলে এই অবিরত নজরদারি নেটওয়ার্ককে ডিভাইসগুলোতে সর্বোত্তম সংযোগ সরবরাহ করার অনুমতি দেয়। এর ফলে ভালো নেটওয়ার্ক খোঁজার জন্য অতি লোড বন্ধ হয়, যা ফোনের মতো ডিভাইসগুলোর ব্যাটারি জীবন বাড়ায়। এই নেটওয়ার্কে বহুবিধ পরিসেবা সমান্তরালভাবে চালানো যায়।
অন্যদিকে ৫জি প্রযুক্তি শুধু ফোন এবং সেল টাওয়ার নয় বরং যেকোনো ডিভাইসের সাথে থাকতে পারে, এতে আপনার কমপিউটারে থাকা ৫জি চিপ থেকে ডাটা ট্র্যান্সমিট করে আপনার ফোনে, ট্যাবলেটে, টিভিতে ডাটা সিঙ্ক করা সম্ভব হবে। আবার একটি গেমিং কন্সোল দিয়ে একসাথে একাধিক টিভি চালাতে পারবেন জলবৎ তরলং। টিভি দেখতে প্রয়োজন হবে না ক্যাবল নেটওয়ার্কের। মুঠোফোন হয়ে উঠবে লাইভ ক্লাসরুম। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়েও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ ঘটবে। ই-বাণিজ্য রূপান্তর ঘটবে ভি-বাণিজ্যে। খুব কম ল্যাটেন্সির কারণেই এই সুবিধাগুলো মিলবে ৫জি-তে।

আরেকটু খোলাসা করে বলা যায়, ইন্টারনেটের প্রগাঢ় কাজগুলো সাধারণত স্মার্ট যন্ত্রগুলোর সাহায্যে হয়ে থাকে। যখন ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মতো কোনো কিছুর কথা চলে আসে তখন নির্ভরযোগ্য এবং খুব কম ল্যাটেন্সিভিত্তিক নেটওয়ার্কের প্রয়োজন পড়ে। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান ৪জি নেটওয়ার্ক সর্বনিম্ন ৫০সং স্থিরতা দিতে পারে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মতো জটিল অ্যাপ্লিকেশনের জন্য অনুপোযোগী। অপরপক্ষে ৫জি ১সং-এর মতো অতি-সামান্য ল্যাটেন্সি প্রদান করে, যার অর্থ নেটওয়ার্ক এবং নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা ডিভাইসগুলোর থেকে ততক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া প্রাপ্তি। এভাবেই এই নেটওয়ার্ক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এবং অনলাইন গেমিং মতো খুব দ্রæত এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্কের চাহিদার বিপরীতে ভূমিকা পালন করে।
অপরদিকে বর্তমান নেটওয়ার্কে সব সমস্যার সমাধান একটি নির্দিষ্ট উপায়ে করা সম্ভব হয়। কিন্তু অ্যাপ্লিকেশনের ভিন্নতার ওপর এর বিভিন্ন প্রয়োজন থাকে। এই যেমন আপনি যদি শুধু গেমিং করতে চান, তবে আপনার খুব কম ল্যাটেন্সি, অতি-দ্রুতগতির ডাটা নেটওয়ার্কের অ্যাক্সেসের প্রয়োজন হবে। যেন এই সিগন্যালগুলো ক্ষিপ্রতার সাথে বহন করতে পারে এবং কাল বিলম্ব না করে সেগুলোকে ফেরত পাঠাতে পারে। কিন্তু যদি আপনি শুধু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করার জন্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকেন, তবে এই ধরনের হাই-স্পিড নেটওয়ার্ক ব্যবহার শুধু সম্পদের অপচয় হবে। ৫জি নেটওয়ার্ক বিষয়টি উপলব্ধি করে ব্যবহারকারীদের কাস্টম নেটওয়ার্ক স্লাইস বা কাস্টম নেটওয়ার্ক বিকল্পগুলো অফার করে। এখন পর্যন্ত নেটওয়ার্ক অপারেটরেরা শুধু এক ফর্মের মধ্যে সেলুলার নেটওয়ার্ক দিতে পারে। তবে এটি নতুন নেটওয়ার্কের সাথে পরিবর্তন হবে, যা সর্বাধিক দক্ষতা এবং কার্যকারিতার জন্য অপ্টিমাইজ করা হয়। আপনার ফোন অন্য কার্যকলাপের উপর আলোকপাত করার ফলে মাঝে মাঝেই দেখা যায় আপনার ডিভাইসের চলমান কাজটি ধীর হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু আপনার ডিভাইসের কারণে হয় না। এটি ঘটে থাকে নেটওয়ার্কের কারণে। বর্তমান নেটওয়ার্কে একই সময়ে একাধিক অ্যাপ্লিকেশনে অনুরূপ সমর্থন দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইডথ নেই। এই বাধাটাই দূর করে দিচ্ছে ৫জি। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ভিডিও স্ট্রিমিং করতে চান এবং একই সময়ে লাইভ গেমিং করতে চান, তাহলে আপনাকে দুটির মধ্যে কোনো একটি নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু, ৫জি আগমনে এইসব পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। ব্যাপক ইন্টারনেট গতি এবং অতিমাত্রায় উচ্চ ডিভাইস হ্যান্ডলিং ক্ষমতার মাধ্যমে এটি একই সময়ে একাধিক অ্যাপ্লিকেশন চলাকালে সেরা কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।

এবার আসি ডিভাইসের শক্তি সংরক্ষণের বিষয়ে। স্মার্টফোনে দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার অভিযোগটি এখন আর নতুন কিছু নয়। মূলত উচ্চগতির নেটওয়ার্কের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলোর মধ্যে একটি হলো এটি ডিভাইসগুলোর উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে এবং এর ফলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। কিন্তু ৫জি-তে সেই অসুবিধাটা অনেকাংশেই থাকবে না। কারিগরি পরিবর্তনের কারণে এই নেটওয়ার্কে আরও ভালো ব্যাটারির জীবন মিলবে। তার মানে ইন্টারনেটে সংযুক্ত থেকে বারবার ব্যাটারির দিকে তাকিয়ে পেরেশান হতে হবে না। সব মিলিয়ে এই ৫জি প্রযুক্তিটি মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। হাই-ব্যান্ডউইডথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা থাকার কারণে এই প্রযুক্তি শুধু মোবাইল ইন্টারনেট নয় বরং হোম ইন্টারনেটেও নিজের জায়গা দখল করে নিতে পারে। কেননা, তখন আপনাকে একগাদা তারের সাথে পেঁচিয়ে আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে না। টিভি দেখতে ক্যাবল নেটওয়ার্কের জঞ্জাল সইতে হবে না। যেকোনো হাই-এন্ড কাজকর্ম মোবাইল ইন্টারনেট থেকেই সম্ভব হয়ে উঠবে। প্রত্যন্ত গ্রামে এখন যারা ক্ষিপ্রগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন তারাও তখন মুঠোফোনের মাধ্যমে সেকেন্ডে গিগাবিট গতির ইন্টারনেট সুবিধা পেতে পারবেন। হতে পারে কয়েক বছরের মাথায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় বসবাস করেও আপনি ইন্টারনেটভিত্তিক সরঞ্জাম এই যেমন ফ্রিজ ব্যবহার করতে পারবেন, অফিসে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ঘরের বাতি, অতিথিকে আপ্যায়ন করতে কফি বানিয়ে দিতে পারবেন
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - জুলাই সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস