বিকাশমান প্রযুক্তি এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবহার হচ্ছে আজকের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে। আমাদের এশিয়া অঞ্চলও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সিঙ্গাপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন পর্যন্ত প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে এই মহামারী দমনে। আমাদের এই বাংলাদেশকেও এই মহামারী দমনে হাতিয়ার করতে হচ্ছে এই প্রযুক্তিকে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতেÑ সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত করায় একটি ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করবে এবং তা করতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাজে লাগিয়ে বিগ ডাটা অ্যানালাইটিকস প্রয়োগ করা হবে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের চিহ্নিত করতে এই ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হবে দেশের কোন কোন এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। আর তা করা হবে মোবাইল ব্যবহারকারীদের সহায়তা নিয়ে। এই পদক্ষেপ সহায়ক হতে পারে এই ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের একটি বাস্তব চিত্র পাওয়ায়। অপারেটরেরা ডাটা শেয়ার করবে জাতীয় মনিটরিং সেন্টার ও আইসিটি ডিভিশনের এটুআই (অ্যাক্সেস টু ইনফরশেন) প্রকল্পের সাথে, প্রতি ৬ ঘণ্টা পরপর। আর এই মনিটরিং সেন্টার ও এটুআই মিলে এই মানচিত্র তৈরি করবে।
বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস, এআই-পাওয়ার্ড অ্যাডভান্স ওয়ার্নিং সিস্টেম এবং ব্যাপকভিত্তিক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম ও চীনের মতো বেশ কিছু দেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজ নিজ দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছে।
সিঙ্গাপুর সরকার ঞৎধপব ঞড়মবঃযবৎ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে। এই অ্যাপটি স্মার্টফোনের মধ্যে বøুটুথ সিগন্যাল ব্যবহার করে দেখে কোনো সম্ভাব্য করোনাভাইরাস সংক্রমণকারী অন্যদের সংস্পর্শে এসেছিল কি-না। দেশটিতে কর্মরত কন্ট্র্যাক্ট ট্রাচিং টিমের সম্ভাব্য সংক্রমণকারী খুঁজে বের করার প্রয়াসের বাইরে অতিরিক্ত টুল হিসেবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করছে সে দেশের সরকার। এই অ্যাপের ব্যবহারের পাশাপাশি বর্ধিত মাত্রার নজরদারির ফলে সিঙ্গাপুরে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় কম সংক্রমণ ঘটতে দেখা গেছে।
একই ধরনের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় হংকংয়ে। সেখানকার কিছু নাগরিককে বলা হয় হাতের কব্জিতে একটি ব্যান্ড বা বন্ধনী পরিধান করতে। আর এই বন্ধনী সংযুক্ত রয়েছে স্মার্টফোন অ্যাপের সাথে। এই অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেয় কোনো ব্যক্তি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে কিংবা সংক্রমণের সন্দেহ দেখা দিলে। তখন তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
এই করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়া আতঙ্কিত ছিল সে দেশে এর প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে ঘটে কি না। গত ১ মার্চের রিপোর্ট মতে, দেশটিতে এই ভাইরাস সংক্রমণের শিকার লোকের সংখ্যা ছিল ৩৭৩৬। একই সময়ে ইতালিতে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ছিল ১৫৭৭। দক্ষিণ কোরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন রেকর্ড। ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন, স্মাার্টফোন লোকেশন ডাটা, সিসিটিভি ভিডিও এবং একই সাথে অন্য লোকের সাথে সাক্ষাতের রেকর্ড ব্যবহার করে একটি সিস্টেম গড়ে তোলে। এই ব্যবস্থায় নিশ্চিত সংক্রমিতদের চিহ্নিত করা যায়। এর ফলাফল ব্যবহার করা হয় একটি ডিজিটাল ম্যাপ তৈরিতে। আর এই ম্যাপ প্রকাশ করা হয় জনসমক্ষে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানতে পারে, এরা কখনো কোনো করোনাভাইরাস বাহকের সংস্পর্শে এসেছিল কি-না। এমনটি জানার পর একজন তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করে নিতে পারে, সে সংক্রমিত হয়েছে কি-না। সন্দেহ নেই, এই মহামারী দমনে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি সফল উদাহরণ। এর ফলে যে সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ১০০৬২ ও ১৭৮, তখন ইতালিতে এই সংখ্যা যথাক্রমে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৪২ ও ১৩ হাজার ৯১৫। দক্ষিণ কোরিয়া ২৭ জানুয়ারিতে মাত্র ৪ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার সাথে সাথেই জরুরি তৎপরতা শুরু করে। তাছাড়া গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া চালু করেছে আরেকটি জোরালো টুল। দেশব্যাপী চালু করে জোরালো টেস্ট প্রোগ্রাম। মধ্য মার্চে দেশটি পরীক্ষা করে ২ লাখ ৯০ হাজার লোকের। এর মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ হাজারের।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে যে দেশ প্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পেরেছে, সে দেশ করোনা দমনে তত বেশি সফলতা পেয়েছে। আমাদের সরকারকে করোনা দমনে সেসব দেশের উদাহরণ মাথায় রাখতে হবে।