লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
করোনার মহামারী কমিয়ে দিয়েছে ভ‚-কম্পনের হার সেরে উঠছে ওজনস্তরের সবচেয়ে বড় ক্ষতস্থান
করোনার মহামারী কমিয়ে দিয়েছে ভ‚-কম্পনের হার
সেরে উঠছে ওজনস্তরের সবচেয়ে বড় ক্ষতস্থান
ইমদাদুল হক
করোনাপরবর্তী সময়ে বিশ^জুড়েই জনশূন্য হয়ে পড়েছে পৃথিবীর ব্যস্ততম রাজপথ। যাত্রীশূন্য বিমানবন্দর। ক্রেতাশূন্য শপিং মল। সুস্থ থাকতে সবাই আজ স্বেচ্ছাবন্দি নিজ গৃহে। পৃথিবী আজ যেন কোলাহলমুক্ত এক শান্তিপুরী। এমনই প্রেক্ষাপটে পৃথিবীব্যাপী ভ‚-কম্পনবিদরা লক্ষ করছেন নাটকীয়ভাবে কমে গেছে ভ‚-কম্পনের হার। গাড়ি-ঘোড়া আর মানুষের নিত্য চলাচলের পদভারে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় যে কম্পন, তা কমে গেছে অনেকটাই।
ভ‚-ত্বকের উপরিভাগ, যেটিকে বলা হয় আপার ক্রাস্ট, সেটির নড়াচড়া কমে গেছে অনেকখানি। বেলজিয়ামের রাজকীয় মানমন্দিরের ভ‚-তত্ত¡বিদ ও ভ‚কম্পনবিদ থমাস লেকক রাজধানী ব্রাসেলসে প্রথম লক্ষ করেন বিষয়টি। মধ্য মার্চ থেকে আরোপ করা লকডাউনের পর থেকে ব্রাসেলসে পারিপার্শ্বিক সিসমিক নয়েজ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে আসে বলে ধরা পড়ে তার পর্যবেক্ষণে। যার ফলে লেকক আর তার মতো অপরাপর ভ‚-তত্ত¡বিদ সমর্থ হচ্ছেন অত্যন্ত ছোট ছোট ভ‚মিকম্পের মতো অন্যান্য অনুষঙ্গ চিহ্নিত করতে, যা সম্ভব ছিল না কোলাহলমুখর সাধারণ দিনগুলোতে।
২০ মার্চ এক টুইট বার্তায় বেলজিয়ামের রাজকীয় মানমন্দিরের টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়, ‘আমাদের স্টাফেরা টেলিওয়ার্কিং ভিত্তিতে কাজ করছেন। পৃথিবীর কম্পন চলছে। ১ থেকে ২০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে ভ‚-কম্পন রেকর্ড করা হয়েছে। মূলত মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি ও কলকারখানায় মানুষের তৎপরতা না থাকার কারণেই এ কম্পনের মাত্রা এতটা কম। # স্টে হোম।’
পৃথিবীর অন্যান্য শহরেও ভ‚-কম্পনবিদরা একই রকম প্রভাব লক্ষ করেছেন। পলা কোলেমিয়েব তার ৩১ মার্চের টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছেন, লকডাউন ঘোষণার পর পশ্চিম লন্ডনের ভ‚-ত্বকের কম্পনের ওপর এর প্রভাবের ব্যাপারটি। পুরো মার্চ মাসের ভ‚-কম্পনের একটি গ্রাফে তিনি দেখিয়েছেন, কম বাস, ট্রেন ও কার চলাচলের কারণে ভ‚-ত্বকের গড় কম্পন কমে গেছে অনেকটাই।
অনুরূপ একটি গ্রাফে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পিএইচডি গবেষক সেলেসটি লেবেজ লস এঞ্জেলেসের ভ‚-ত্বকের কম্পন হার অনেকখানি কমে গেছে বলে দেখিয়েছেন। ‘দেখা, শুধু তোমরাই ঘরে নও, সবাই-ই; এমনকি ভ‚-ত্বকও’ বলেন লেকক।
এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারী চলাকালীন পৃথিবীর উত্তর মেরুর আকাশে ওজনস্তরে ১০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছিল, বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরের সেই ক্ষতও সেরে গেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কপারনিকাস অ্যাটমোসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (সিএএমএস) এই ক্ষতটি ট্র্যাকিং করছিল। এক টুইট বার্তায় সুখবরটি দিয়েছে সিএএমএস। জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের চলাফেরা বন্ধ হওয়ার কারণেই এই ক্ষতস্থান সেরেছে এমনটি নয়, মূলত উত্তর মেরুর শক্তিশালী পোলার ভরটেক্সের ফলে এমনটি হয়েছে।
পোলার ভরটেক্স সবসময়ই থাকে, তবে গ্রীষ্মের সময় এটি দুর্বল এবং শীতের সময় এটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পোলার ভরটেক্স হলো মেরু এলাকায় এমন একটি বিশাল এলাকা যেখানে কম চাপ এবং ঠান্ডা বাতাস থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও অঞ্চলটির বায়ুমÐলে ক্লোরিন ও ব্রোমাইনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে ওজনস্তরে বিশাল গর্ত তৈরি হয়। গ্রুপটি জানায়, কভিড-১৯ এবং এর সম্পর্কিত লকডাউন সম্ভবত এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না। বাতাসের মান পরিবর্তন বা বায়ুদূষণ কম হওয়ার কারণে নয়, এটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী পোলার ভারটেক্সের জন্য হয়েছে।
তবে এখনও ওজনস্তরের ক্ষতের পরিমাণ বিশালাকার রয়েছে। প্রায় এক দশক আগে এমন শক্তিশালী কেমিক্যাল ওজন গ্রাস হতে দেখা গিয়েছিল। পাশাপাশি আরো একটি সুখবর দিয়েছে সিএএমএস। তারা জানিয়েছে, ওজন হোল আবিষ্কারের পর থেকে গত বছর অ্যান্টার্কটিক ওজন হোল সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ছিল।