লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
বর্ষপূর্তি সংখ্যা
তথ্যসূত্র:
বর্ষপূর্তি সংখ্যা
তেইশ পেরিয়ে চবিবশে পা
১৯৯১ সালের মে মাসটি হচ্ছে মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর জন্মমাস। আর জন্মদিনের কথা যদি বলি তবে বলতে হয়, ১৯৯১ সালের ১ মে হচ্ছে এর জন্মদিন। সে হিসেবে চলতি এপ্রিল সংখ্যাটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে কমপিউটার জগৎ পূর্ণ করল এর তেইশ বছরের অভিযাত্রা। আর এই তেইশ বছর পূর্তির পরপরই এটি পা রাখতে যাচ্ছে এর প্রকাশনার ২৪তম বর্ষে। আজ থেকে ২৩ বছর আগে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই কমপিউটার জগৎ-এর অভিযাত্রা সূচিত হয়েছিল। সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল, সে কথায় পরে আসছি। সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমরা কতটুকু সফল হয়েছি, সে বিচারের ভার রইল আমাদের সম্মানিত পাঠক-সাধারণের ওপর। তবে কমপিউটার জগৎ-এর ২৩ বছর পূর্তির এই সময়ে আমরা একটি বিষয় গর্বের সাথে দাবি করব- এই ২৩ বছর আমরা প্রতিমাসে কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি সংখ্যা যথাসময়ে পাঠকদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। এই গর্বের দাবিদার আমাদের লেখক, পাঠক, উপদেষ্টা, পৃষ্ঠপোষক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, শুভানুধ্যায়ী এবং কমপিউটার জগৎ পরিবারের প্রতিজন সদস্য। তাদের সহৃদয় ও আমত্মরিক সহযোগিতা না পেলে শুধু আমাদের একক প্রচেষ্টায় হয়তো এতটা দীর্ঘ সময় কমপিউটার জগৎ এর অসিত্মত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম নাও হতে পারত। যাই হোক, আজকের বর্ষপূতির এই দিনে শুকর গুজার করছি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছেও।
স্মরণ করছি অধ্যাপক কাদেরকে
আমরা যখন কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশের জন্য কাজ করি, তখন কোনো না কোনোভাবে আমরা এক ধরনের অভাব বোধ করি কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও আমাদের কর্মপ্ররণার উৎস মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদেরের। তাই মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের আমাদের স্মৃতিতে বরাবর সজীব। বিশেষ করে প্রতিটি বর্ষপূর্তির সময়টায় আমাদের স্মৃতিতে তিনি হানা দেন আরও প্রবলভাবে। তার ভিশন ও মিশন নিয়েই কার্যত শুরু হয়েছিল কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনা। তার জীবদ্দশায় এ পত্রিকাটির পাতায় পাতায় ছিল তার চিন্তা-চেতনা আর যত্নের ছাপ। তিনি প্রতিটি বাক্য ও শব্দ সাজাতেন অন্যরকম যত্ন নিয়ে। কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি লেখাকে অধিক থেকে অধিকতর তথ্যসমৃদ্ধ নির্ভুল করতে তিনি ছিলেন সমধিক প্রয়াসী। অহেতুক বাক্য কিংবা শব্দ ব্যবহারে ছিল তার প্রবল আপত্তি। পত্রিকার প্রতিটি পাতার প্রিন্ট এরিয়া তার কাছে ছিল যেনো সোনার চেয়েও দামি। তাই তার উপদেশ ছিল- অপ্রয়োজনীয় ও বাহুল্য বাক্য-শব্দের ব্যবহার এড়াতে হবে। ছবিকেও করা যাবে না অযৌক্তিকভাবে বড়। হেডিংয়ের টাইপ হবে না অস্বাভাবিক বড় আকারের। লেখার বিষয়বস্ত্ত স্পষ্ট করে তোলার স্বার্থে যেসব ছবি বা চিত্র একামত্ম প্রয়োজন, শুধু তাই ব্যবহার করতেন তিনি। সেই সাথে তিনি সচেষ্ট ছিলেন যথাসম্ভব বেশি তথ্য দিয়ে লেখাকে যাতে সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল করা যায়।
বিষয়বস্ত্ত নির্ধারণে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক। লেখাটি সমাজ, দেশ, জাতির জন্য কোনো উপকার বয়ে আনবে কি না, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি কমপিউটার জগৎ-এর বিষয়বস্ত্তর বিন্যাস করতেন। তার অভিমত ছিল, খবর পরিবেশন ও অন্যান্য লেখালেখি এমন হতে হবে, যা থেকে দেশ-জাতি উপকৃত হবে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সমৃদ্ধতর হওয়ার উপায় খুঁজে পাবে। এজন্য তিনি সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন পজিটিভিজম বা ইতিবাচকতাকে। তাই কমপিউটার জগৎ বরাবর নেতিবাচক সাংবাদিকতাকে এড়িয়ে চলেছে তারই দূরদর্শী ভূমিকার সূত্র ধরে। ইতিবাচকতাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি এমন সব বিষয়কে সামনে নিয়ে আসতেন, যার মাধ্যমে দেশের মানুষ জানার সুযোগ পেতেন আমাদের সামনে কী কী সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। তাই সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোকে তুলে ধরার বিষয়টি কমপিউটার জগৎ-এর লেখালেখিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত। যারা কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত পাঠক, তারা এ ব্যাপারটি নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারবেন।
মাসিক কমপিউটার জগৎ প্রকাশনা শুরু করে তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, এ দেশে আইটি সাংবাদিক ও লেখকের বড়ই অভাব। তাই তিনি অনেক তরুণকে এ ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলেছিলেন। যুগিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা। এদের অনেকেই আজ আইটি সাংবাদিকতা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। অনেকে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন আইটি পেশাজীবী হিসেবেও। আজকের দিনে আইটি সাংবাদিকের অভাব না থাকলেও কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার শুরুর সময়টায় এর অভাব ছিল প্রবল। সেটি উপলব্ধি করে তিনি অভাব পূরণে ছিলেন যথার্থ অর্থেই সক্রিয়। ফলে কমপিউটার জগৎ-কে ঘিরে আইটি সাংবাদিকতার একটা বলয় গড়ে উঠেছিল। যার মধ্যমণি ছিলেন অধ্যাপক আবদুল কাদের। এ ক্ষেত্রে তার একটি যথার্থ উপলব্ধি ছিল, লেখক-সাংবাদিকদের উপযুক্ত পরিমাণে সম্মানী দিতে হবে এবং লেখা প্রকাশের সাথে সাথে এই সম্মানীর অর্থ তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। কমপিউটার জগৎ বরাবর এ ব্যাপারে শতভাগ সতর্ক থেকেছে এবং আগামী দিনেও এ চর্চা অব্যাহত থাকবে, ইনশাল্লাহ। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমরা যখন নতুন সংখ্যার জন্য কোন বিষয়ে লিখব, সে বিষয় খুঁজে পেতে হিমশিম খেতাম, তখন ঠিকই একটি যুথসই বিষয় এনে তিনি আমাদের সামনে হাজির করতেন। শুধু বিষয় বলে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করতেন না। দেখা গেছে, লেখার জন্য বেশিরভাগ তথ্যই তিনি এনে হাজির করেছেন, নয়তো তথ্যসূত্র জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেখা গেছে, কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশিত বিষয়গুলো পাঠকদের চাহিদা মেটাতে পেরেছে সর্বাধিক মাত্রায়। তিনি আরেকটি বিষয়ের ওপর জোর দিতেন- বলতেন, দেশে বিদ্যমান সমস্যা বিশ্লেষিত হবে যথার্থ উপলব্ধি নিয়ে। তবে বিষয়বস্ত্ত বিশ্লেষণেই থেমে যাওয়া চলবে না। সে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার দুয়ারগুলো একই সাথে আলোচিত হতে হবে, যাতে করে মানুষ আইটি খাতকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারে। কারণ, দেশের মানুষকে আইটি সম্পর্কে যাবতীয় ভীতি কাটিয়ে তুলে আশাবাদী না করতে পারলে আইটি খাতের অগ্রগতি সম্ভব নয়- সে উপলব্ধি তার মধ্যে সচেতনভাবে কাজ করত। আসলে একটি নির্মোহ মন নিয়ে মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের কাজ করে গেছেন এ দেশের আইটি খাতের অগ্রগমনে। এর ফলে বিভিন্ন মহলে মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের যেমন অভিহিত হন ‘এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ’ হিসেবে, তেমনি তার সৃষ্টি মাসিক কমপিউটার জগৎ সমভাবে অভিহিত হয় একই অভিধায়। তাই অধ্যাপক কাদের আর কমপিউটার জগৎ যেনো আজ এক শঙ্কর নাম।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বরাবর সরল। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। আর এ উন্নয়নের হাতিয়ার হবে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে নিতে চাই গোটা জাতিকে। এজন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ এক মানবসম্পদ। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আক্ষরিক বর্ণনাই যথেষ্ট নয়। কারণ, সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এ জাতি সহসাই পরিণত হবে না তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ একটি জাতিতে। এজন্য প্রয়োজন রীতিমতো তৃণমূল পর্যায়ের এক আন্দোলেন। আমরা সেই আন্দোলনের অব্যর্থ হাতিয়ার করতে চেয়েছি মাসিক কমপিউটার জগৎ-কে। তাই আমাদের প্রথম সংখ্যা থেকেই মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর লোগের পাশাপাশি যে আপ্তবাক্যটি স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে আসছি, তা হলো- ‘বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ’।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য দেশকে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভর করে একটি সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা। এর জন্য প্রয়োজন একটি পজিটিভ মুভমেন্ট বা ইতিবাচক আন্দোলন। সূচনা সংখ্যা থেকে এই আন্দোলন সৃষ্টির সহায়ক বিষয়বস্ত্ত নির্ধারণ করে কার্যত আমরা এর সূচনা করি। আমাদের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এই আন্দোলনেরই প্রথম দাবি : ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে সেদিন আমরা বলতে চেয়েছিলাম আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এক অপার সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী। তাই জনগণের হাতে কমপিউটার চাই। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যাপকভিত্তিক করার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। অতএব অবিলম্বে দেশে ব্যাপকভিত্তিক কমপিউটার শিক্ষা ও কমপিউটারায়ন শুরু করা দরকার। এই উপলব্ধি নিয়ে আমাদের প্রথম সংখ্যার প্রথম প্রচ্ছদের শুরুতেই আমাদের দ্বর্থহীন উচ্চারণ ছিল এরূপ : ‘এ দেশে প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সুযোগ ও অধিকারের মতোই কমপিউটারের বিস্তার সীমিত হয়ে পড়েছে মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান ও শৌখিন মানুষের মধ্যে। মেধা, বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতায় অনন্য এ দেশের সাধারণ মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শানিত করে তোলা হলে তারাই সম্পদ-জীবন ও বিবেকবিনাশী বর্তমান জীবনধারা বদলে দিতে পারে। ইরি ধানের বিসত্মার, পোশাক শিল্প, হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে কৃষক, সাধারণ মেয়ে, কর্মজীবী বালকেরা সৃষ্টি করেছে বিস্ময়। একই বিস্ময় কমপিউটারের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে পারে। যদি স্কুল বয়স থেকে কমপিউটারের আশ্চর্য জগতে এ দেশের শিশু ও শিক্ষার্থীদের অবাধ প্রবেশ ও চর্চার একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায়।
একই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে যথার্থ উপলব্ধি নিয়ে আমরা বলেছিলাম : ‘জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছে দেয়া এবং বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে কমপিউটার জগতে শামিল করার জন্য দরকার একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন সফল হলে পোশাক কারখানার মতো ব্যাপক কর্মসংস্থানের সফটওয়্যার ও কমপিউটার সংযোজন শিল্প গড়ে উঠতে পারে এ দেশে, যাতে হাজার হাজার শিক্ষিত নিমণবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষ খুঁজে পেতে পারে সৃষ্টিশীল জীবন ও জীবিকা। এ শিল্পের সফটওয়্যার শাখায় বাংলাদেশের মতো জনশক্তির দেশের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। সফটওয়্যার তৈরি ও রফতানির মাধ্যমে এ দেশের মেধা, বুদ্ধি ও শ্রমকে বিশ্ব সভ্যতায় যুক্ত করতে পারি আমরা। সেই সাথে অভাবিত পরিমাণে বৈদেশিকে মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বিশ্বজয়ী প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে আমাদের দেশ। এমন একটি শিল্পের ভিত্তি স্থাপিত হতে পারে জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে। সেজন্যই স্কুলে, কলেজে, ক্লাবে কমপিউটার চাই আমরা।
আমাদের সেই আশাবাদ যে সেদিন শুধু নিছক কোনো স্বপ্নকল্প ছিল না, তার জায়মান প্রমাণ আমাদের আজকের বাংলাদেশ। আমরা দেখছি, আমাদের তরম্নণেরা আজ তথ্যপ্রযুক্তি জগতের নানাধর্মী উদ্ভাবনার সূচনা করছে। সফটওয়্যার রফতানিতে জন্ম দিয়েছে আশা-জাগানিয়া এক সম্ভাবনার। আজ বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় সফটওয়্যার রফতানিকারক ত্রিশ দেশের একটি। সফটওয়্যার রফতানি করে আমাদের দেশ আয় করছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মুদ্রা। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং খাতও এগিয়ে চলেছে বেশ গতি নিয়েই। মোট কথা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ এর ক্ষেত্রপরিধি ক্রমপ্রসারিত করে চলেছে। আমরা যে আন্দোলনের কথা বলেছিলাম, সে আন্দোলনের নীরব ফসলই হচ্ছে এসব। তবে আমরা বলব না, আমরা কাঙিক্ষত লক্ষ্য পৌঁছে গেছি। বরং বলব, আরও অনেক পথ আমাদের হাঁটতে হবে।
এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে যেখানে যে ধাক্কাটুকু দেয়ার দরকার ছিল আমরা তা দিতে কুণ্ঠিত হইনি। তাই প্রথম সংখ্যার উলিস্নখিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদনেই আমরা সাহস নিয়ে উচ্চারণ করতে পেরেছিলাম : ‘কমপিউটারায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব আজ সারা বিশ্বে। আমাদের দেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে এখানে-সেখানে সরকারি দফতরে বড় বড় পদ সৃষ্টি হয়েছে। কমপিউটারের নামে এসব পদের কর্মকর্তার পারস্পরিক গোপন যুদ্ধে এ দেশের উলুখড়ের প্রাণ ওষ্ঠাগত। আমাদের অনীহা, অজ্ঞতা ও লক্ষ্য হীনতায় সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, বরং সৃষ্টি করা হচ্ছে নানা সমস্যা। কমপিউটার কাউন্সিলের গুটিকয়েক কর্মচারীর মাইনেপত্র বন্ধ হয়ে থাকে এ বিরোধিতা ও বিপত্তিতে। কমপিউটার নিয়ে নীতি ও আইন পাস করার সময় সংসদে ও সংসদের বাইরেও বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দুই বছর আগে সরকার ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও স্কুল-কলেজে কমপিউটার শিক্ষার প্রচলন এখনও ঘটেনি। বিনামূল্যে কিংবা ছাড়দামে স্কুল-কলেজে কমপিউটার সরবরাহ করার সম্ভাবনা ও সুযোগ বিস্তার। শুধু এ পথেই একটা কমপিউটার প্রজন্ম গড়ে তোলার যায়, আমাদের মতো দেশেও। কিন্তু সে সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর কেউ নেই। কারণ, বাংলাদেশ আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি বিপস্নবসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আসলেই নেতৃত্বহীন।
শুরু থেকেই আমরা
শুরু থেকেই আমরা যথার্থ সচেতনতা নিয়েই উপলব্ধি করেছিলাম, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে কমপিউটার জগৎ-কে আন্দোলনের একটি মোক্ষম হাতিয়ার করতে চাই, তবে আমাদের আন্দোলনকে শুধু প্রতিমাসে একটি করে মুদ্রিত কমপিউটার জগৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সোজা কথায়, কমপিউটার জগৎ-কে প্রচলিত সাংবাদিকতার অর্গল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে নানামুখী তৎপরতায়। তাই আমরা দেখেছি, কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার পাশাপাশি অধ্যাপক আবদুল কাদের তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমী সাংবাদিক মরহুম নাজিম উদ্দিমসহ অনেককেই সাথে নিয়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে ডিঙি নৌকায় করে কমপিউটার নিয়ে গেছেন স্কুলের বাচ্চাদের কমপিউটার দেখাতে, কমপিউটার শেখাতে, কমপিউটার সম্পর্কে তাদের ভয় কাটাতে। একইভাবে বৈশাখী মেলার সাথে আমরা সম্পৃক্ত করেছি কমপিউটার মেলাকেও। উদ্যোগ নিয়েছি কমপিউটার সম্পর্কিত বিষয় ও নীতি-সিদ্ধামেত্মর ওপর সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজনের। আয়োজন করেছি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ নানাধর্মী ক্যুইজ প্রতিযোগিতার। জাতির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে উপস্থাপন করেছি প্রযুক্তি ব্যক্তিত্বদের এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুখোড় শিশুদেরও। নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের প্রয়োজনীয় তাগিদ দিয়েছি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগমনের মানসে। কেউ আমাদের কথা কানে নিয়েছেন, কেউ নেননি। তবুও আমাদের তাগিদ অব্যাহত রাখায় আমরা যেনো ছিলাম নাছোড়বান্দা। এর একটি সাক্ষাৎ উদাহরণ হচ্ছে ফাইবার অপটিক ক্যাবল নামের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের ব্যাপারে আমাদের অব্যাহত তাগিদ এবং কর্তৃপক্ষের তা না শোনার ধনুক ভাঙা পণ।
আমরা যখন নাছোড়বান্দা
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বরাবর আমাদেরকে নাছোড়বান্দার ভূমিকায় থাকতে হয়েছে। এসব ক্ষেত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- যথাসম্ভব দ্রুত বাংলাদেশকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সাথে যুক্ত করা, কমপিউটার ও কমপিউটার সামগ্রীর ওপর থেকে ট্যাক্সের খড়গ নামানো, কম দামে কমপিউটার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা, কমপিউটারে বাংলার প্রয়োগের প্রসার ঘটনো, একটি প্রযুক্তি প্রজন্ম সৃষ্টি করা এবং সর্বোপরি জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিকে প্রধানতম হাতিয়ার করে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে তাগিদের পর তাগিদ দেয়া। কমপিউটার ও কমপিউটার পণ্যের দাম সসত্মাতর করার জন্য এসব পণ্য ট্যাক্সমুক্ত করার জন্য কীভাবেই না আমাদের নাছোড়বান্দার মতো তাগিদের পর তাগিদ জারি রাখতে হয়েছে। আমাদের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যায়ই আমরা এ ব্যাপারে তাগিদের সূচনা করি- ‘ব্যর্থতা বা বর্ধিত ট্যাক্স নয়, জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন রচনা করে। এর কয়েক মাস পর আমরা দেখলাম ভ্যাট ও শুল্ক নিয়ে চলছে নানা অনিয়ম। তাই আগস্ট, ১৯৯১ সংখ্যায় আমাদের লিখতে হলো : ‘কমপিউটারায়ন সংক্রান্ত সরকারের ঘোষিত নীতি হচ্ছে শিক্ষা গবেষণার মান উন্নয়ন করা এবং একই সাথে সরকারি প্রশাসন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো ও শিল্প ইউনিটগুলোতে কমপিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনা। সরকারের আরেকটি অগ্রাধিকারভিত্তিক নীতি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রফতানির সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিকট অতীতের সরকার কমপিউটার ও পেরিফেরালের ওপর আমদানি শুল্ক শতকরা ১০ ভাগে পুনর্বিন্যাস করে এবং বিক্রয় কর থেকে কমপিউটার শিল্পকে পুরোপুরি রেহাই দেয়। কিন্তু যখন দেশে কমপিউটারায়ন প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চারিত হতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই অর্থ মন্ত্রণালয় কমপিউটারের ওপর আমদানি শুল্ক শতকরা ২০ ভাগে পুনর্নির্ধারণ করে এবং তদুপরি এর ওপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট ধার্য করা হয়। ফলে আগের হার থেকে মোট আরোপিত কর শতকরা ৮৭ ভাগ বেড়ে যায়, যা কমপিউটারায়ন সংক্রামত্ম জাতীয় নীতির পরিপন্থী এবং তা নীতি-নির্ধারকদের উদ্দেশ্যকেই ব্যর্থ করে দেবে।
এভাবেই আমাদের এই ২৩ বছরের প্রকাশনাকালে যখন যাকে যে তাগিদটুকু দেয়ার দরকার ছিল, তা আমরা দিয়েছি।
আমরা প্রযুক্তিধারার সাথে
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রগমন নিশ্চিত করতে হলে নিজেদেরকে প্রযুক্তিধারা তথা টেকনোলজি ট্রেন্ডের সাথে সমামত্মরালভাবে চলতে হয়। তাই সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখতে হয় প্রযুক্তিধারা কোন পথে চলছে। প্রযুক্তির জোয়ার-ভাটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আইটি খাতে পিছিয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। তাই আমরা সব সময় এই প্রযুক্তিধারা বা টেকনোলজি ট্রেন্ড তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি আমাদের ‘প্রযুক্তিধারা’ বিভাগে। যারা আমাদের নিয়মিত পাঠক, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য রেখেছেন আমরা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই ‘প্রযুক্তিধারা’ বিভাগটি প্রকাশের মাধ্যমে পাঠক-সাধারণকে চলমান প্রযুক্তিধারা সম্পর্কে অবহিত রাখার চেষ্টা করেছি।
কমপিউটার জগৎ প্রকাশ করতে গিয়ে এরই পরিপূরক হিসেবে আরেকটি বিষয়ের প্রতি আমরা অধিকতর গুরুত্ব দিই। বিষয়টিকে আমরা এভাবে বলতে পারি : Others reports events, but we report ideas অন্যেরা ঘটনার বিবরণ ছাপে, কিন্তু আমরা ছাপি নানা ধারণা। কারণ, সঠিক ধারণা নিয়ে এগিয়ে যেতে না পারলে সমৃদ্ধি অর্জন কখনই সম্ভব নয়। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নতুন নতুন ধারণা সম্পর্কে সমগ্র জাতিকে অবহিত করে আমাদেরকে প্রযুক্তির সামনের কাতারে রাখার চেষ্টা করেছি। যখন সে খাতে আমাদের জোর দেয়া প্রয়োজন, সে প্রয়োজনের কথা জানাতে আমরা সচেষ্ট ছিলাম বরাবর। কয়েকটি উদাহারণ দেয়া যাক।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছাতে হবে, এ ধারণাটি আমরাই এ দেশে সবার আগে জানাই আমাদের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে। আমরাই প্রথম ধারণা প্রকাশ করি- তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ সর্বব্যাপী করতে কমপিউটার ও কমপিউটার পণ্যকে শুল্ক ও করমুক্ত করতে হবে (জুন, ১৯৯১ সংখ্যা)। আমরাই প্রথম এ দেশের মানুষকে ধারণা দিই- ‘একটি পত্রিকাই হতে পারে একটি আন্দোলনের হাতিয়ার’। আর একটি পত্রিকা সফল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠতে পারে আন্দোলনের পথিকৃৎ। আমরাই এ দেশে কমপিউটার জগৎ-এর নানাধর্মী কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে সাধারণ্যে এ ধারণার জন্ম দিই যে, একটি পত্রিকাকে প্রচলিত সাংবাদিকতার অর্গল ভেঙে হতে হবে সার্বিক আন্দোলনমুখী, আর সে আন্দোলন হতে হবে একামত্মভাবেই ইতিবাচক। সেখানে নেতিবাচকতার কোনো স্থান নেই।
আমাদের আন্দোলনের বড় দিক
আমাদের আন্দোলনের বড় একটি দিক ছিল কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগকে সর্বাধিক মাত্রায় নিয়ে পৌঁছানো। আর এজন্য প্রয়োজন ছিল জনসচেতনতা সৃষ্টি। কারণ, দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে স্থির ধারণা ছিল কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগ একটি কল্পনাবিলাস। এ ধারাকে ভ্রামত্ম প্রমাণের জন্য আমাদেরকে বারবার কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আনতে হয়েছে। আর এজন্য আমরা বলতে গেলে এই তেইশ বছরের পথ পরিক্রমায় দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিবছর ভাষার মাস ‘ফেব্রুয়ারি’কে বেছে নিয়েছিলাম কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগ সম্ভাবনাকে তুলে এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় করণীয়ের ওপর আলোকপাত করতে।
কমপিউটার জগৎ ১৯৯১ সালের মে মাসে প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশের পর আমাদের সামনে প্রথম ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আসে ১৯৯২ সালে। ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ সংখ্যায় আমরা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন রচনা করি কমপিউটারে বাংলাভাষা প্রয়োগকে অনুষঙ্গ করে। এর শিরোনাম দেয়া হয় : ‘কমপিউটারে বাংলা ব্যবহার, সব স্তরে আদর্শ মান চাই’। এই প্রতিবেদনে আমরা লিখি : ‘ বাংলা ব্যবহার করে কমপিউটারকে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব। সব স্তরে বাংলা ব্যবহারের অনেক দিনের প্রচেষ্টাতে এর অবদান হবে যুগান্তকারী। ইংরেজিতে নির্ভুল সহজ এবং তাড়াতাড়ি লেখার যান্ত্রিক যেসব সুবিধা বিদ্যমান, বাংলাভাষাকে সব স্তরে ব্যবহার ও সবার কাছে গ্রহণীয় করার জন্য বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সেসব সুবিধা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারকে শুধু বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের গটিতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। কমপিউটারে বাংলা ব্যবহার বলতে আমাদের কমপিউটারে রিয়েল টাইম ব্যবহার, কমপিউটারের সাহায্যে যোগাযোগ, বাংলা অক্ষর শনাক্তকরণ, কমপিউটার নেটওয়ার্ক প্রভৃতিতেও কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারের প্রয়োজনগুলো বুঝতে হবে এবং সে ব্যাপারে সচেষ্ট থেকে আমাদের এগুতে হবে। এসব ব্যবহারের চিন্তা যদি আমাদের বিবেচনা থেকে বাদ রাখি, তাহলে কমপিউটারের সত্যিকারের প্রয়োগ থেকে আমরা বঞ্চিত হব এবং পরবর্তী সময়ে অনেক সমস্যার বেড়াজালে আমাদের আবদ্ধ হতে হবে। ভাষা আমাদের ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তি আমাদের করায়ত্ত। প্রযুক্তিবিদ্যার এই আশীর্বাদকে কাজে লাগিয়ে কমিপউটারের সাথে বাংলা হয়ে উঠবে আমাদের ভাব বিনিময়ের মাধ্যম। এটাই আমাদের আকাঙক্ষা, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
একই সংখ্যায় কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারের প্রতি আমরা জোরালোভাবে সম্পাদকীয় বক্তব্য রাখি : ‘৫২-র অঙ্গীকার ছিল মাতৃভাষার ও স্বাধীনতার। কমপিউটার শুধু মাতৃভাষাকেই ধারণ করেনি। আভিজাত্যের ও গজদ- মিনার ছেড়ে কমপিউটার গণমানুষের দ্বারপ্রান্তে হাজির হয়েছে। দুর্জয় স্বাধীন অস্তিত্বে জাতীয় ভবিষ্যৎ নির্মাণে কমপিউটার বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের হাতিয়ার হতে চলেছে। স্বাধীনতার স্বপ্নকে সবচেয়ে সৃষ্টিশীলভাবে ধারণ করেছে কমপিউটার। কিন্তু এ সরকারের কিছু সংস্থা এবং স্বার্থান্ধ কিছু ব্যক্তির কারণে এ রাষ্ট্রভাষা জ্ঞান ও মুক্তির বাহন হিসেবে কমপিউটারকে ধারণ করতে পারছে না। সব আকাঙক্ষা ও সৃষ্টিশীলতা নস্যাৎ করে রাষ্ট্রকে বন্ধ করে তোলার চক্রান্তের সামনে গুমরে উঠেছে বুয়েটের তরুণ, ভবিষ্যতে ওপর বিশ্বাসে ঋদ্ধ তরুণ, প্রবাসী বিজ্ঞানীসহ অনেক মানুষ।
এভাবে দুয়েকটি ফেব্রুয়ারি সংখ্যা ছাড়া এই তেইশ বছরের প্রায় সবগুলো ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় রয়েছে কমপিউটারে বাংলাভাষা প্রয়োগ বিষয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় বক্তব্য। এরপর কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগ নিয়ে অবহেলার শেষ নেই। তবে যদ্দিন চলবে এই অবহেলা ও তদ্দিন আমাদের তাগিদও জারি থাকবে।
বর্ষপূর্তির প্রতিশ্রুতি
কমপিউটার জগৎ-এর ২৩ বছরের নিয়মিত প্রকাশনার বর্ষপূর্তির এ শুভক্ষণে আমাদের সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি রইল সংশ্লিষ্ট সবার কাছে- আমরা আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আগের মতোই অবিচল। সেই সাথে আমাদের স্থির বিশ্বাসের প্রতি আমরা থাকব সুদৃঢ়। আর আমাদের সেই স্থির বিশ্বাস হচ্ছে- বাংলাদেশ একদিন সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে পৌঁছবে প্রযুক্তি প্রয়োগকে হাতিয়ার করেই। খুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আসবে এ পথেই। আর সে বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে কমপিউটার জগৎ হবে এক অনন্য হাতিয়ার।