১ লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার জায়গায় এবং ২৮টি বিশাল হল নিয়ে গত ৯ মার্চ সিবিট মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। এবারের সিবিট মেলার সহযোগী আয়োজক ছিল যুক্তরাজ্য। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের পাশে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি তার উদ্বোধনী বক্তব্যে ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে এই খাতের উন্নয়নে গবেষণার জন্য ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো বরাদ্দের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ইউরোপের সব দেশের জন্য একই ধরনের তথ্য সুরক্ষা নীতি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি মার্কিন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার নজরদারি বিষয়ক বিতর্ক নিয়ে সে দেশের সাথে জার্মানির আলোচনা চলছে বলেও জানান। পঞ্চম প্রজন্ম বা ৫জি নেটওয়ার্ক ও এর সম্ভাবনা, ইন্টারনেট অব থিংস ও এর বাস্তবায়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল পণ্যের বাজারকে শক্তিশালী করে তোলার বিষয়ে জোর দেন ক্যামেরন।
জার্মানির চ্যান্সেলর অবশ্য তার বক্তব্যে এবারের প্রদর্শনীর মূল থিম তথ্যের সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিপণ্যের ওপর মানুষের যে নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণের জন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহবান জানান।
সেরা প্রযুক্তি
চার্লি রোবট : দেশি-বিদেশি নানা ধরনের কল্পবিজ্ঞানের গল্প আর সিনেমায় বারবার উঠে এসেছে মানুষের মতো অনুভূতিসম্পন্ন রোবটের কথা, যা এতদিন আটকে ছিল শুধু কল্পনায়। কিন্তু এবার কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে বাস্তবে এসেছে সেই রোবট। যার নাম ‘চার্লি’। যন্ত্রমানব হলেও চার্লি যেমন হাঁটতে, কথা বলতে, গাইতে পারে। তেমনি অনায়াসে চিনে নিতে পারে মানুষের বিভিন্ন অনুভূতি। এছাড়া মসিত্মষ্কের আঘাত, ডিমেনসিয়া, অটিজমের মতো কঠিন অসুখে আক্রামত্মদের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে চার্লি। চার্লি হয়ে উঠতে পারে বুড়ো মানুষের অবলম্বনও। চার্লি যেমন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বয়স্কদের সাথে সমাজের ও তাদের আত্মীয়দের যোগসূত্র বজায় রাখতে পারবে, তেমনি পাঠাতে পারবে ই-মেইলও। নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজরে রাখতেও পারবে। এটি তৈরি করেছে জার্মানির রিসার্চ সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রেমেন। আইস্ট্রাকট (ইন্টেলিজেন্ট স্ট্রাকচারস ফর মোবাইল রোবটস) প্রকল্পের আওতায় এ রোবট তৈরি করা হয়েছে।
স্মার্টহোম ডিভাইস : মেলায় কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রদর্শন করেছে স্মার্টহোম ডিভাইস। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফ্রিজ থেকে শুরু করে ওভেন, লন্ড্রি মেশিন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। স্মার্টহোমে বিল্টইন ক্যামেরা রয়েছে। ফলে এর ব্যবহারকারীরা বাইরে থাকলেও দেখতে পারবেন তাদের বাসায় কী হচ্ছে। অন্যদিকে যন্ত্রে রয়েছে বিশেষ সফটওয়্যার। যার ফলে টেক্সটের মাধ্যমে ঘরের সামগ্রীগুলোকে নির্দেশ দেয়া যাবে এবং প্রশ্ন করে বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে। কোনো অতিথি আপনার অনুপস্থিতিতে বাসায় এলে আপনাকে মোবাইল ফোনে তা জানিয়ে দেবে। আপনার বাসায় অনাকাঙ্ক্ষিত কারও প্রবেশের সাথে সাথে আপনি জানতে পারবেন মোবাইল ফোনে।
পাসওয়ার্ড জেনারেটর : মেলায় প্লাস্টিকের তৈরি এক নতুন ধরনের পাসওয়ার্ড জেনারেটর প্রদর্শন করে লন্ডনভিত্তিক টেন্টো টেকনোলজি লিমিটেড। ভিজ্যুয়াল ক্রিপ্টোগ্রাফি প্রযুক্তিতে তৈরি এই প্লাস্টিক কার্ডটি ৩০ লাখেরও বেশি একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড জেনারেট করতে পারে। আকৃতিতে ছোট, সহজে বহনযোগ্য এবং প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বলে এই টেন্টো টোকেন তৈরিতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কর্মজীবীদের ব্যবহারের জন্য এই ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড জেনারেটর বেশ কাজ দেবে।
বিগ ডাটা : ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবাদে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তথ্য তৈরি হচ্ছে। তবে এ বিশাল তথ্যভান্ডারকে কাজে লাগানো হচ্ছে খুব কমই। আইবিএমের মতে, ‘বিগ ডাটা’ নামে পরিচিত এ তথ্যভান্ডারের কার্যকর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী সব মানুষের জীবনধারাকে বদলে দিতে পারে। বিগ ডাটা যে ভবিষ্যতে খুব বিরাট একটা ব্যাপার হতে চলেছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সিবিটে বিশ্বের অন্যতম বড় বিগ ডাটা প্রদর্শিত হয়েছে। পাঁচ হাজার বর্গমিটার হলজুড়ে লাইন বরাবর এরা গ্রাফ আকারে ডাটা প্রদর্শন করে। এ ডাটাগুলো তাদের ডাটাবেজ থেকে ডিজিটাল ডিভাইসে আসছে এবং বিভিন্ন ধরনের বৈশ্বিক বিষয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে তথ্য প্রদর্শন করছে। এ ছাড়া আইবিএম এক ধরনের গেস্নাবাল হেলথকেয়ার সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করছে, যেখানে সারা বিশ্বের যেকোনো ধরনের ডিভাইস থেকে এ বিষয়ের তথ্য গৃহীত হবে।
স্মার্টফোনের পিনগ্রিড : প্রচলিত পাসওয়ার্ড বা পাসকোডের বদলে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান উইনফ্রাসফট তৈরি করেছে ‘পিনগ্রিড’ নামে স্মার্টফোনের বিশেষ নিরাপত্তা প্রযুক্তি। স্মার্টফোনের পর্দায় নিজস্ব পরিচিতি নম্বর (পিন) ছকের আকারে থাকবে। এ ছকে নিজের তৈরি করা কোনো আকৃতি বা নকশায় আঙুল বুলিয়ে স্মার্টফোন খোলা যাবে।