• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গণিতের অলিগলি পর্ব : ৫০
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গণিতদাদু
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
গণিতের অলিগলি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গণিতের অলিগলি পর্ব : ৫০



চটজলদি বিভাজ্যতা বিচার

আমাদেরকে প্রায়ই একটি সংখ্যাকে অপর একটি সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হয়। অনেক সময় অনেক বড় সংখ্যাকে ভাগ করতে হয়। জানতে হয় ওই সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য কি না? অর্থাৎ নিঃশেষে ভাগ করা যায় না। যেখানে ভাগশেষে কোনো অবশিষ্ট থাকবে না। আমরা যদি পুরো ভাগ প্রক্রিয়াটি করে দেখি, তবে জানতে পারব তা নিঃশেষে বিভাজ্য কি না। কিন্তু ভাগের কাজটি করার আগেই চটজলদি আমরা বলে দিতে পারি আসলে তা নিঃশেষে বিভাজ্য কি না। কিন্তু কী করে? তাই চটজলদি জানবার কিছু কৌশল নিয়েই এ লেখা।

২ দিয়ে বিভাজ্য

ধরা যাক, আমরা জানতে চাই ২৩৪৬৭২ কিংবা ১৩৪৫৬৮৭ সংখ্যা দুটি ২ দিয়ে বিভাজ্য কি না। এক্ষেত্রে চট করে বলতে পারি ২৩৪৫৭২ সংখ্যাটি ২ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য এবং ১৩৪৫৬৮৭ সংখ্যাটি ২ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়।

কারণ : ছোট কিংবা বড় যে কোনো সংখ্যা ২ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হওয়ার শর্ত হচ্ছে এর একদম ডান দিকের অঙ্কটি ০ কিংবা জোড় সংখ্যা হতে হবে। অর্থাৎ যেসব সংখ্যার একদম ডানের এককের ঘরের অঙ্ক ০, ২, ৪, ৬ বা ৮ হবে, সেগুলো অবশ্যই দুই দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হবে।

উদাহরণ : ৪৫৩২৭১৯৪৫৬ সংখ্যাটি ২ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য, কারণ এর সর্বশেষ অঙ্ক ৬ একটি জোড় সংখ্যা এবং ৮৯৭৫২১৩৪৮২০১ সংখ্যাটি ২ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়, কারণ এর শেষ অঙ্ক ১ বিজোড়।

৩ দিয়ে বিভাজ্য

কী করে পরীক্ষা করব কোনো একটি সংখ্যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য কি না, চটজলদি তা জেনে নেয়া খুবই সহজ। যে সংখ্যাটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে, সে সংখ্যার সব অঙ্ক একসাথে যোগ করতে হবে। যোগফল ৩ দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা গেলে প্রথমে নেয়া সংখ্যা ৩ দিয়ে অবশ্যই বিভাজ্য হবে, অন্যথায় তা হবে না।

উদাহরণ : ৬৪৬৬৫৪৫ সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য হবে, কারণ এর অঙ্কগুলোর সমষ্টি হচ্ছে

৬+৪+৬+৬+৫+৪+৫ = ৩৬, যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য।

কিন্তু ৫৪৪৭৩৩৩৬৯ সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য নয়, কারণ এ অঙ্কগুলোর সমষ্টি হচ্ছে

৫+৪+৪+৭+৩+৩+৩+৬+৯ = ৪৪, যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য নয়।

৪ দিয়ে বিভাজ্য

৪ দিয়ে কোনো সংখ্যা নিঃশেষে বিভাজ্য কি না, তা পরীক্ষা করা সহজ। এক্ষেত্রে দেখতে হবে দেয়া সংখ্যাটির শেষ দুটি অঙ্ক দিয়ে গঠিত সংখ্যাটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য কি না? ৪ দিয়ে তা বিভাজ্য হলে দেয়া সংখ্যাটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য হবে। অন্যথায় নয়।

উদাহরণ : ৩৮৭৩৩৮১২ সংখ্যাটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। কারণ এর শেষ দুই অঙ্ক দিয়ে গঠিত ১২ সংখ্যাটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য। অপরদিকে ৩৮৪৩৫৬১৭ সংখ্যাটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়, কারণ সংখ্যাটির শেষ দুই অঙ্ক দিয়ে গঠিত ১৭ সংখ্যাটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়।

৫ দিয়ে বিভাজ্য

চটজলদি জেনে নেয়া সম্ভব কোনো একটি সংখ্যা ৫ দিয়ে বিভাজ্য কি না। এক্ষেত্রে শুধু মনে রাখা চাই, যেসব সংখ্যার এককের ঘরের অঙ্ক অর্থাৎ সবচেয়ে ডানের অঙ্কটি ০ অথবা ৫, সেগুলো অবশ্যই ৫ দিয়ে বিভাজ্য।

উদাহরণ : ৪৭০৮৯৩৪২১ সংখ্যাটি ৫ দিয়ে বিভাজ্য নয়, কারণ এর এককের ঘরের অঙ্কটি ০ অথবা ৫ নয়। কিন্তু ২৩৪৭৮৯৪৫১৩০ সংখ্যাটি ৫ দিয়ে বিভাজ্য, কারণ এর একদম ডানের অঙ্কটি ০। একইভাবে ৮৯১৭৩২৬৫ সংখ্যাটি ৫ দিয়ে বিভাজ্য, কারণ এর একদম ডানের অঙ্কটি ৫।

৬ দিয়ে বিভাজ্য

কোনো সংখ্যা ৬ দিয়ে বিভাজ্য কি না, তা চটজলদি পরীক্ষা করে দেখতে হলে দেখতে হবে সংখ্যাটি ২ এবং ৩ দিয়ে বিভাজ্য কি না। মনে রাখতে হবে সংখ্যাটি ২ ও ৩ উভয়টি দিয়ে অবশ্যই বিভাজ্য হতে হবে। আর ২ ও ৩ দিয়ে বিভাজ্যতা যাচাই করার কৌশল একটু আগেই শিখেছি।

ধরা যাক, জানতে চাই ৩২৪৬৫৪৬ সংখ্যাটি ৬ দিয়ে বিভাজ্য কি না। প্রথমেই দেখবে এ সংখ্যাটি ২ দিয়ে বিভাজ্য কি না। এরপর দেখব সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য কি না।

সংখ্যাটি ২ দিয়ে বিভাজ্য, কারণ এর সর্বশেষ অঙ্ক ৬ একটি জোড় সংখ্যা। আবার দেয়া সংখ্যা ৩ দিয়েও বিভাজ্য, কারণ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর সমষ্টি ৩+২+৪+৬+৫+৪+৬ = ৩০, যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য। যেহেতু দেয়া সংখ্যা ২ ও ৩ উভয়টি দিয়েই বিভাজ্য, অতএব সংখ্যাটি ৬ দিয়ে অবশ্যই বিভাজ্য।

এবার দেখা যাক ১২৮৯৫৬ সংখ্যাটি ৬ দিয়ে বিভাজ্য কি না?

সংখ্যাটির এককের ঘরের অঙ্ক ৬, এটি একটি জোড় সংখ্যা, অতএব ১২৮৯৫৬ সংখ্যাটি ২ দিয়ে বিভাজ্য। এবার দেখা যাক সংখ্যাটি ৩ দিয়েও বিভাজ্য কি না। যেহেতু সংখ্যাটির অঙ্কসমূহের সমষ্টি হচ্ছে ১+২+৮+৯+৫+৬ = ৩১, যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য নয়। অতএব দেয়া ১২৮৯৫৬ সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য নয়। কারণ, সংখ্যাটি ২ ও ৩ উভয়টি দিয়ে বিভাজ্য না হলে, তা ৬ দিয়ে বিভাজ্য হবে না।

৮ দিয়ে বিভাজ্য

একটি সংখ্যা ৮ দিয়ে বিভাজ্য হবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য সংখ্যাটির শেষ তিনটি অঙ্ক দিয়ে গঠিত সংখ্যা ৮ দিয়ে বিভাজ্য কি না তা দেখতে হবে। শেষ তিন অঙ্ক দিয়ে গঠিত সংখ্যা ৮ দিয়ে বিভাজ্য হলে দেয়া পুরো সংখ্যাটি ৮ দিয়ে বিভাজ্য হবে।

উদাহরণ : ৭৩৭৭৪৭৩৪৯৬ সংখ্যাটি ৮ দিয়ে বিভাজ্য। কারণ, এর শেষ তিনটি অঙ্ক দিয়ে গঠিত ৪৯৬ সংখ্যাটি ৮ দিয়ে বিভাজ্য।

৫৪৬৬৩২৩১৮ সংখ্যাটি ৮ দিয়ে বিভাজ্য নয়। কারণ, এর শেষ তিনটি অঙ্ক দিয়ে গঠিত ৩১৮ সংখ্যাটি ৮ দিয়ে বিভাজ্য নয়।

৯ দিয়ে বিভাজ্য

একটি সংখ্যা ৯ দিয়ে বিভাজ্য কি না, তা চটজলদি পরীক্ষা করা খুবই সহজ। দেখতে হবে দেয়া সংখ্যাটির সব অঙ্কের সমষ্টি ৯ দিয়ে বিভাজ্য কি না। যদি ৯ দিয়ে ওই সমষ্টি বিভাজ্য হয় তবে দেখা সংখ্যাটিও ৯ দিয়ে বিভাজ্য হবে। অন্যথায় নয়। নিয়মটা অনেকটা ৩ দিয়ে বিভাজ্য হওয়ার নিয়মের মতো।

উদাহরণ : ৫৭২২৫৮৩৪ সংখ্যাটি ৯ দিয়ে বিভাজ্য।
কারণ, ৫+৭+২+২+৫+৮+৩+৪+ = ৩৬, যা ৯ দিয়ে বিভাজ্য।
কিন্তু ৩২১৬৭৬৩১৩২ সংখ্যাটি ৯ দিয়ে বিভাজ্য নয়।
কারণ, ৩+২+১+৬+৭+৬+৩+১+৩+২ = ৩৪, যা ৯ দিয়ে বিভাজ্য নয়। উল্লেখ্য, এ সংখ্যাটি

৩ দিয়েও বিভাজ্য নয়, কারণ ৩৪ সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য নয়।

১০ দিয়ে বিভাজ্য

একটি সংখ্যা ১০ দিয়ে বিভাজ্য কি না তা যাচাই করে দেখা খুবই সহজ। কারণ, একটি সংখ্যা ১০ দিয়ে বিভাজ্য হওয়ার শর্ত হচ্ছে এর সবচেয়ে ডানের অর্থাৎ এককের ঘরের অঙ্কটি অবশ্যই ০ হতে হবে।

সে মতে, ৮৯২৫৪৩০২০ সংখ্যাটি অবশ্যই ১০ দিয়ে বিভাজ্য হবে। কারণ এর সবচেয়ে ডানের অঙ্কটি ০।

১১ দিয়ে বিভাজ্য

কোনো সংখ্যা ১১ দিয়ে বিভাজ্য কি না তা পরীক্ষা করা খুব কঠিন কাজ নয়। এক্ষেত্রে দেয়া সংখ্যাটির ডানদিক থেকে জোড়সংখ্যক স্থানের অঙ্কগুলোর সমষ্টি এবং বিজোড়সংখ্যক স্থানের অঙ্কগুলোর সমষ্টি আলাদা আলাদা বের করতে হবে। এবং এর পর পাওয়া সংখ্যা দুটির পার্থক্য বের করতে হবে। পার্থক্য সংখ্যাটি যদি ০ হয়, কিংবা ১১ দিয়ে বিভাজ্য হয়, তবে দেয়া সংখ্যাটি ১১ দিয়ে বিভাজ্য হবে।

উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক। প্রথমে ধরা যাক জানতে চাই ২৫৪৭০৩৯ সংখ্যাটি ১১ দিয়ে বিভাজ্য কি না?

এখানে বিজোড় স্থানীয় অঙ্কগুলোর সমষ্টি = ৯+০+৪+২ = ১৫
এবং জোড় স্থানীয় অঙ্কগুলোর সমষ্টি = ৩+৭+৫ = ১৫
পাওয়া সমষ্টি সংখ্যা দুটির পার্থক্য ১৫-১৫ = ০
যেহেতু এই পার্থক্য সংখ্যা ০, অতএব ২৫৪৭০৩৯ সংখ্যাটি ১১ দিয়ে বিভাজ্য।
এবার জানব ১৩১৬৫৬৪৮ সংখ্যাটি ১১ দিয়ে বিভাজ্য কি না?
এখানে বিজোড় স্থানীয় অঙ্কগুলোর সমষ্টি = ৮+৬+৬+৩ = ২৩
এবং জোড় স্থানীয় অঙ্কগুলোর সমষ্টি = ৪+৫+১+১ = ১১
পাওয়া সমষ্টি সংখ্যা দুটির পাথর্ক্য = ২৩-১১ = ১২
যেহেতু এই পাথর্ক্য সংখ্যা ১২ বিভাজ্য নয় ১১ দিয়ে কিংবা এর মান শূন্যও নয়, অতএব প্রদত্ত ১৩১৬৫৬৪৮ সংখ্যাটি ১১ দিয়ে বিভাজ্য নয়।

গণিতদাদু

কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস